বেশ কিছু দিন ধরে লিখা লিখা করে লিখা হচ্ছে না। আমার একটা ফালতু টাইপ assignment due ছিল আজ। তো assignment এর দোহাই দিয়ে নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করেছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। গত কয়েক দিন প্রচুর ঘটনা মনে পড়ছিল, কিভাবে লিখব, কিভাবে শুরু করব, টাইটেল কি হবে সব কিছুর খসড়া মনে মনে রেডী। but এখন কিছুই মনে পড়ছেনা। আমার খুব একটা বাজে স্বভাব হইছে ১০/১৫ মিন পর পর এক বার ব্লগ চেক্ না করলে কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগে। মনে হয় আমি বোধ হয় কিছু মিস্ করলাম। আনেক বক্ বক্ করলাম এখন দেখি একটা ঘটনা লিপিবদ্ধ করি;
ডাব চুরি করে না খেলে যেন ক্যাডেটশীপ টা পরিপূর্ণ হয়না। আমার মনে আছে আমাদের ব্যাচ্ এর প্রত্যেক ক্যাডেটকে চুরি করা ডাব খাওয়ানোর একটা কর্মসূচী আমরা সফল ভাবে বাস্তবায়ন করেছিলাম। ক্যাডেট নম্বর সিরিয়াল মেন্টেন করে চুরির মাল খাইতাম। যাই হোক, জীবনে কত বার ডাব চুরির মিশনে গেছি তার সঠিক সংখ্যা বলা কঠিন। আমাদের ব্যাচ্ এ মাত্র তিন জ়ন নারিকেল গাছে ওঠার এক্সপার্ট ছিল। শেরে বাংলা হাউসের যুবায়ের (৯২০), রুবেল (৯২৪) এবং শরিয়তুল্লাহ হাউসের মাহমুদ (৯১১)। যুবায়ের আমাদের সাথে SSC পর্যন্ত ছিল। ১১/১২ এ বাকি দুই জনের উপরে খুব বেশি চাপ পড়ায় আমরা দুই জন গাছে ওঠার এক্সপার্ট জুনিয়রের সহযোগীতায় একটা ডাব চোর উপকমিটি গঠন করেছিলাম।
সেই দুই জুনিয়রের সাথে আমাদের ব্যাচে্র একটা সখ্যতা গড়ে ওঠে। সবাই জানে ওরা দুইজন আমাদের খুব কাছের লোক কিন্তু কেন সেটা বেশীর ভাগ ক্যাডেটরাই জানতনা, আজ সেই গোপন ফাসঁ করে দিলাম। আমাদের দায়িত্ব ছিল ওদের JP এবং HP,CP এর কাছ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া। ওদের কাছে সত্যি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলাম। পরে আবশ্য শুনেছি ওই দুই জনের শেষ রক্ষা হয়নি, একসাথে আউট হয়েছে।
আমরা তখন ক্লাস ৯ এর শেষের দিকে অথবা ১০ এর প্রথম দিকের কথা। ডাব চুরির দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিতে হবে। একদিন রাতে ২টার দিকে ঠিক হলো আজ ডাব চুরি না শুধু গাছে ওঠার রিহার্সাল হবে। রুবেল তখনো sure না সে গাছে উঠতে পারে কি না? ওর জন্যই এই রিহার্সাল। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার। আমাদের সাথে আছে মামুন (৯০৫) আরেক জনের নাম বলা যাবে না IUT পার্টি খুব ভাল করে চেনার কথা। সে এখন ওখানকার সম্মানিত শিক্ষক। তো আমরা চার জন দলে। গাছ সিলেক্ট করা হলো ক্যান্টিনের পিছনে একটা গাছ আছে ওইটা। সিলেকশন এর কারন গাছ টা ছোট পড়ে গেলে বেশি ক্ষতি হবে না আর গাছ টা হাউসের এত কাছে যে ধরা পরার কোন চান্স নাই। জীবনে প্রথম ডাব চুরি। সে কি আনন্দ, আহা কি সুখ!!! তিন জন ছড়িয়ে পড়লাম নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। প্রয়োজনের চাইতে বেশি এলার্ট। সবাই জানি হাউসের এই দিকটা বেশ নিরাপদ তাও খুব এক্সাইটিং। হাউস ক্লিয়ার কোন সিনিয়ার দেখছে না, সামনের রাস্তা ক্লিয়ার কোন গার্ড নাই। রুবেল গাছ তলায় পজিশন রেডী। O.K. একশন!! রুবেল হুরপার করে গাছে উঠে গেল। দূর থাকে দেখলাম ও গাছের চুড়াতে। খুশিতে সবাই গাছের নিচে গেলাম। সফলতা সেলিব্রেট করছি। রুবেল বলল দোস্ত একটা ডাব নিয়া নামব?? সবাই এক সাথে বলে উঠলাম অবশ্যই। এই ডাব হবে আমাদের সুভেনিয়র, কলেজ থাকে যাবার আগ পর্যন্ত এটা সংরক্ষণ করা হবে। জীবনে প্রথম নিজেদের একটা ডাব, নিজেদের একটা অর্জন। মনে মনে এই কথা গুলি ভাবছি। রুবেল তখন ডাব হাতে নিয়েছে। এমন সময় হঠাৎ ওই!!! ওই!!!! ডাব চুরি করলে!!! ডাব চুরি করলে!!!!!! বেরসিক গার্ড কোথা থেকে হাজির বলতে পারিনা। আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়!!! গার্ড বেটা ঠিক ক্যান্টিনের সামনে আর আমরা ঠিক পিছনে। BCC পার্টি ভাল বুঝবে ব্যাপারটা। আমাদের যা করার এখনি করতে হবে। অন্য গার্ড আসার আগে সরে পড়তে না পারলে ধরা খাওয়া নিশ্চিত। আমরা দুই জন করে দুই দলে ভাগ হয়ে ক্যান্টিনের দুই কোনায় চলে গেলাম। গার্ড বেটা ঠিক করতে পারছেনা কোন দল কে ধরবে। সে বোকার পরিচয় দিয়ে আমার দলের দিকে ছুটে আসলো। আমাদের পাতা ফাঁদে বেটা ধরা দিল। আমাদের দিকে আসা শুরু করতেই বাকি দুই জন এক দৌড়ে হাউসে। আমাদের কাছাকাছি আসতেই ভো দৌড় উল্টা দিকে ক্যান্টিনের পিছন থেকে সোজা হাউসে। তারপর শরিতুল্লাহ হাউস থাকে পাইপ বেয়ে যার যার হাউসে। পরে দেখলাম গার্ড কিছুক্ষুণ ওই খানে দাঁড়িয়ে ছিল অন্য এক গার্ড এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলো, আমাদের ডাব টা নিয়ে গেল। দূরে দাঁড়িয়ে দেখলাম আমাদের অর্জিত সেই স্বপ্নের ডাব টা গার্ডের হাতে। বেচারা রুবেল সেদিন ওর বুক আর পেটের বেশ খানিকটা ছাল-বাকল গাছের সাথে রেখে এসেছিল। গার্ড দেখে দ্রুত গাছ থেকে নামতে গিয়ে এই অবস্থা। সেদিন আমাদের সবচাইতে বড় প্রাপ্তি আমাদের ব্যাচে্র কেউ গাছে উঠতে পারে। তারপর থাকে নিয়মিত ডাবের পানি খেতাম। একবার ২০০ ডাব পেরে কি করব বুঝতে পারছিলাম না সেই ঘটনা আরেক দিন বলবো।
শুধু ডাব না কলেজ এ থাকাকালীণ সময় চুরির তা লিকায় ছিল আলু, টমেটো, ফুল কপি, মাছ। এই সব কিছু সিদ্ধ, রান্না অথবা ফ্রাই করে খেয়েছি। সব অভিজ্ঞতাই আস্তে আস্তে শেয়ার করব।
১৫ টি মন্তব্য : “ডাব চুরির ইতিকথা!!”
মন্তব্য করুন
ডাব, হসপিটালের পাশের আমড়া, সাত মাইল আর রহমতপুরের খেজুর গাছ গুলাও রেহাই পায়নাই আমাগো হাত থেইকা। শীতে খেজুরের রস চুরির হিরিক পইরা যাইতো। আর হাউজের পিছে ভেজিটেবল্ গার্ডেন তো নাকের ডগায়। 😀
কি কি কি...আপনারা দুইশ ডাব পাড়ছেন...আমরা ভাবছি আমাদেরটাই রেকর্ড। ১৭৮ টা... সেদিন ডাবের পানি গায়ে পর্যন্ত ঢালছিলাম...
যাউজ্ঞা!! আইইউটির স্যার রে চিনা ফেলছি... 😉
@রায়হান,
ভাইরে ২০০ ডাব ঠিকই পারছিলাম, কিন্তু হযম করতে পারি নাই। ১০০ টার মত ডাব হাউসের ছাদে সংরক্ষণ করছিলাম। কিভাবে ওই ডাব গুলা যেন অথরিটির কাছে চলে যায়, অবশ্য কেউ ধরা পড়েনি।
২০০৬ এ রিইউনিয়নে গিয়াও ডাব চুরি করে খাইছি। তবে ক্যাডেট অবস্থায় চুরির মজাটা পাই নাই। রিইউনিয়নে ডাব চুরির কিছু ফোটো ফেস্বুক এ আছে। লিঙ্ক দিলাম কেউ চাইলে দেখতে পারে।
http://www.facebook.com/photo.php?pid=2745143&id=876435712#pid=2745149
ছবিগুলো দেখলাম। কিন্তু আমাদের ভাবীকে চিনতে পারি নাই।
কষ্ট করে tag করে দিবেন।
পোলাপান রে নিয়া আর পারলাম না!!!!
দেখতে কইছি ডাব চুরির ফটো তারা খুজে ভাবীরে।
এখনও বিয়া করতে পারি নাই ভাই। (যদি জীবনে বিয়া হয় আমার!!!!!) তারপর শুধু ছবি কেন গায়ে হলুদ, বিয়া, বৌ-ভাতের ভিডিও সহ CCB-তে upload কইরা দিমু।
😀 এই না হইলে ক্যাডেট!!! 😉
😀 এই না হইলে ক্যাডেট!!! 😉
আসলে আপনারে চিনতে পারি নাই। (ছবির অর্ধনগ্ন লোকটা কি আপনি?)
তবে আপনি at least নিজেকে tag করে দিতেন, তাইলেই হইতো। সিনিয়ররে তো directly কওয়া যায়না! 😉
পরের ছবিতে গিয়ে কিছু আপা/খালাম্মাদের দেখা পাইলাম তো। তাই...।
"যদি জীবনে বিয়া হয় আমার!!!!!......" সন্দেহজনক। কোনো "ভীতি" কাজ করছে নাকি?? 😆
tag না দিলেও সমস্যা নাই।ঝাঁকের মধ্যে যাকে সবচে সুন্দরী মনে হব যার কাছে সেইটাই আমাগো ভাবী।সাব্বির ভাই কি কন? 😉
নাউযুবিল্লাহ্!!!!!!!!
এই গুলা তো আমাদের রিইউনিয়নের ফটো। জিহাদ ভাই তোমার এই কমেন্ট বড় ভাই রে দেখলে তোমারেতো পিটাবে, সাথে আমারেও ২/৪ টা E.D. দিয়া দিবে সন্দেহ নাই।
ভাই লজ্জা পাইয়েন না ...উপরে উপরে এইসব কথা সবাই বলে 😉
@MahmudulAlam
অর্ধনগ্ন লোক টা রায়হান এর স্যার। মানে IUT পার্টির স্যার। সন্দেহর কিছু নাই বিয়া করতে তো আমি এক পায়ে খাড়া। আমার বাপ-মা তো কিছু বলেনা। তাদের ধারণা আমার বয়স হয় নাই 🙁
@সাব্বির ভাই
আপনে কি তাইলে ওই চিমটা-লম্বা পোলাটা? সিগারেট হাতে?
(কানাকানিঃ
ভাইরে, এই দুঃখ সবারই। আমিও আফসোস করি, "২৫ বছর কেটে গেল, কেউ কথা রাখেনি।" 😉
যাহোক, ব্যাপার না। আগে বাড়ী, পরে নারী। চালায়া যান।)
😆
😀