কুয়েট ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ছাত্রীর প্রতি আমার টান দেখে অনেকে হাসে, অনেকে আবার অবাক হয়। আমার জীবনের প্রথম প্রেম কিন্তু এক জ্যেষ্ঠ নারীকে ঘিরেই, তাও আবার সেই তৃতীয় শ্রেণীতে! ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চে বসে আজকের এই লেখা কিন্তু শুধু সেই সব সিনিয়ারদের নিয়ে নয়, এখন পর্যন্ত যাদের চোখে লেগেছে বা ভাল লেগেছে, তাদের নিয়ে।
তখন পড়ি নীলফামারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, তৃতীয় শ্রেণীতে, ১৯৯৮ সাল। স্কুলের সামনে বাদাম বা বুট কিনতে গিয়ে দেখি সেও আচার কিনছে, সে মানে চতূর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। মেয়েদের স্কুল ইউনিফর্ম নীল স্কার্ট আর সাদা শার্টে সেই মেয়েটিকে কেন জানি খুব ভাল লাগল! জীবনে সেই প্রথম ভাললাগার অনূভূতি! তখনও স্কুল ফাকি দেয়া শিখিনি। স্কুল ফাকি দেয়া শুরু হল এবার! আমাদের স্কুল বাড়িটা তখন ছিল দোতলা, এখন অবশ্য তিনতলা হয়েছে। নিচ তলায় চতূর্থ শ্রেণীর ক্লাস, মুখোমুখি তৃতীয় শ্রেণীর পদ্মা শাখা। দুদিন দরজার সরাসরি বসলাম, কিন্তু মেয়েরা বসে ভেতরে। আশার গুড়ে বালি পড়ল, অতঃপর ক্লাস ফাকি দেয়ার হল শুরু। স্কুলের পেছনে চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাসরুম বরাবর গলির ওপাশেই একটা ছোলা-পাপড়ের দোকান। দোকানটা চালাত মফেল নামের এক মোটাসোটা লোক। আমরা ডাকতাম মফেলদা। মফেলের দোকানে অনেক ঘটনা আছে যা পরে বলব। তো সেই দোকানে গিয়ে ছোলা পাপড় খেতাম আর বসে বসে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আসলে সেসব ছিল শৈশবের কল্পনা বিলাস। রূপকথার বই পড়ে রাতে স্বপ্নে দেখতাম পঙ্খিরাজে চেপে যাচ্ছি অজানা দেশে, সেখানে বন্দি আছে এক অপরূপ রাজকন্যা। আমার কল্পনায় চতূর্থ শ্রেণীর ক্লাস রুম হয়ে গেল সেই দৈত্যের প্রাসাদ, ভেতর বন্দি সে আর মফেলের দোকানের বেঞ্চটা পঙ্খিরাজ ঘোড়া! মানুষ কল্পনায় যা ভাবে , অনেক সময় বাস্তবে সেরকম কথা বলে বা আচরন করে। এটাকে খুব সম্ভবতঃ neuromotor effect বলে(যদি কেউ সঠিক নামটা জানেন, জানাবেন দয়া করে)। একদিন তলোয়ার বের করতে এগতে গিয়ে হঠাত সতবিত ফিরে পেয়ে দেখি, হাতে চামুচ নিইয়ে দাঁড়িয়ে গেছি! আর মফেলদা হা করে আমার দিকে চেয়ে বলে, “চামুচ ময়লা নাকি? বদলে দিব?” আমি সাথে সাথে চামুচ বদলে নেই ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়ার জন্য। কারন দোকানে আরও অনেকে ছিল। যার জন্য এত কিছু, সে ব্যাপারটা বুঝে গেল! মাঝে মাঝেই জানালা দিয়ে আগুনঝরা দৃষ্টি দিত। কিন্তু আমি তখন রুপকথার সৈনিক বা রাজকুমার। দৈত্যকে ভয় পাই না, বিষধর সাপের মাথা থেকে মণি খুলে নেই অবহেলায়; সেই দৃষ্টি তাই কোন ভয়ই ধরাত না। তার ঠোটের একদম ডান পাশেই ঘেষে থাকা একটা তিল, আমার কাছে; কি বলে যে উপমা দেব? তখন তো ছিলাম ছোট, তাই কোন উপমা দেবার কথাও আসেনি। এখন যে কি উপমা দেব, জানি না। তবে এক রুপকথায় আর কতদিন থাকব সেই সময়, আমাদের ক্লাসেই ভর্তি হল আরেক রাজকন্যা(!)। আমাদের স্কুলে দ্বিতীয় শিফটে হত ক্লাস থ্রী, ফোর আর ফাইভের ক্লাস। ছয়টা ক্লাসের ফাকে আবার এক ঘনটার বিরতী। এসময়েই একদিন দেখলাম মাঠের একদিকে সে চুপ করে বসে তার বান্ধবীদের ছি বুড়ি(বউ ছি) খেলা দেখছে। ব্যাস, হয়ে গেল!
এই গেল আমার তৃতীয় শ্রেণীর কথা। চতুর্থ শ্রেণিতেও CUPID ছাড় দিল না। কবিতা আবৃত্তি করতাম, মাইক্রফোনের সামনে ছিলাম সাবলীল। তাই সেই অজুহাতে এক সমাবেত সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় আমাকে পাঠান হল, তাও আবার দলনেতা হিসেবে! পাঠক, নিজের সত্যিগুল এভাবে আজ লিখতে কেন জানি ভালই লাগছে। তার জন্য একসাথে সঙ্গীত চর্চা করতে গিয়ে যার প্রতি হেলে পড়লাম, সে ততদিনে পঞ্চম শ্রেণীর কয়েকজনের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। প্রেম পত্রকে উরোজাহাজ বা দলা পাকিয়ে নাকি হাতে গুজে দিতে গিয়ে তাদের একজনকে রোদে একঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। তো তার সাথে নির্বিবাদে মেশা হল বেশ কয়েকদিন। এটা কখনই ভাবিনি সেভাবে, তবে এখন ভাবলে মনে হয় আসলেই কি তখন ভাবতাম? চিন্তার বিষয় বটে।পঞ্চম শ্রেণীতে উঠে, সব শেষ? না, তা কি করে হয়! Cupid তখন প্রতীজ্ঞা করেছে যে তীরে তীরে আমাকে একেবারে ছেয়ে দেবে। এবার ক্লাসে যে আসল, তার আবার চোখ দুট নীল! খাইছে! মানে একেবারে খাইছে! আমি তারপর আর কাউকে তেমন আর খুব একটা ভাল লাগেনি। পরে একটা দীর্ঘ সময় সে সুযোগ ছিলই না, ক্যাডেট কলেজে থাকা আর ছুটিতে গিয়ে নিজের ভেতর ডুব দেয়া।
পাঠক, আপনাকে ৮/৯ বছর পেরিয়ে প্রাইমারি স্কুল থেকে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম বর্ষটা আমার খুব খারাপ কেটেছে। তীব্র সংকটময় বাস্তবতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম আর তার মাঝে বুকের ভেতর কেমন একটা অদ্ভুত খারাপ লাগা বা ফাকা লাগা অনূভুতি। ক্যাম্পাসে চলতে ফিরতে দেখতাম জুটিগুলকে। আমার হয়ত তখন জীবনের দায়ভার আর নানা হিসাবের দুঃচিন্তা। যখন অনেকটা গুছিয়ে এসেছে জীবনের হিসেবগুল, তখন হঠাত পিতৃবিয়োগ। তখন সেই ক্লান্ত, শোকাহত, পাথর আমি হঠাত একজনকে ক্যাম্পাসে দেখি, বাসের অপেক্ষায়। জানি না, হয়ত মরুভূমির বুকে মরূদ্যান ছিল। ভিশন ভাল লেগেছিল, যদিও বিশ্বাস করি যে চোখের দেখায় আসলে কিছুই হয় না, মনের ব্যাপার সম্পূর্ন আলাদা। কিন্তু তখন আমি তৃতীয় শ্রেণীর মত আবার উম্মাতাল। কিন্তু কপালের লিখন যায় না খন্ডান। খোজ নিয়ে প্রথমে জানতে পারলাম সে খুলনার স্থানীয়, আমার দুই বর্ষ উপরে। পরে সঠিক খবর হল সে এক বর্ষ উপরে অর্থাৎ এক ব্যাচ সিনিয়ার। আমার ডিপার্টমেন্টেই আছেন একজন এক ব্যাচ সিনিয়ার যার পেছনে পুরো কুয়েট পাগল। আমার উনি অবশ্য অন্য ডিপার্টমেন্টে। তিনি অন্য একজনের সাথে সম্পর্কে রয়েছেন। তাই কি আর করা, উনি তাছাড়া আমাকে জানেন মাঝে মাঝে তার দিকে তাকনো এক জুনিয়ার ইচরে পাকা ছেলে। কি করব, কথা বলতে গেলে উনি জুনিয়ার দেখে কেমন জানি এড়িয়ে যান। আমাকে আবার কয়েকবার ধূমপানরত অবস্থায় দেখেও ফেলেছেন। বাদ হয়ে গেল সেই অধ্যায়।
দ্বিতীয় বর্ষ গেল ফাকাই। সব শেষে তৃতীয় বর্ষে এসে শুরুতেই এল এক ভয়াবহ বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ের কথা আমি কোন দিনই বলব না।
পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, তোরে দিব পচানি ,কিন্তু শেষ লাইনে এসে গুবলেট পাকিয়ে গেল 🙁 (সম্পাদিত)
ভাইয়ের খালি দেহি সিনিওর চয়েস, কাহিনী কি??? :-/ :-/ :-/
MH
কিছু কিছু ব্যাপার বয়স মানে না রে পাগলা
যদি তোর বিপর্যয়ের কথা না'ই বলিস তবে কেন স্বীকারোক্তি নাম দিলি? ১০০ :frontroll: দে।
এই যে ভাই দিচ্ছি :frontroll:
বাহ্ বেশ বেশ... ;))
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ভাইয়া মজা পাইলাম...... ;)) ;)) ;))
হো হো..... মজা পাইলাম। এইরকম ঘটনাগুলো মনে হয় সবার জীবনেই আছে... 😕
হ্যা সবার জীবনেই আছে। কিন্তু সবাই অকপটে স্বীকার করে না। 🙂
আশলেই ছোটোবেলাটাতে সিনিঅর এ ভাল লাগে। আমার ত ভারসিটি টেও কোনো জুনিওর ভালো লাগতনা খালি সিনিওর ভালো লাগটো।মজা লাগসে। সবারেই এরকম হই :))