কাল্পনিক গল্পঃ আমরা যখন চাচা

আজকাল ক্যাডেট কলেজের পোলাপাইন গুলা খুব খারাপ হয়ে গেছে, বন্ধু বান্ধবদের আর আগের মত তেমন একটা খবর নেয় না। নাইলে এমন হয়, বলেন? কি দিনকাল যে আসছে। আরে আমার অফিসের পাশে অফিস হইল হাসনাইন মিয়ার কিন্তু ব্যাটার সাথে দুই মাস দেখা সাক্ষাত নাই। তাই একদিন ঠিক করলাম ক্ষেতা পুড়ি এইসব বন্ধু বান্ধবের, ঠিক এইসময় ফোন দিল বন্য। হাজার হইলেও ছেলেটা বন্য তাই ফোন না ধরে আর পারলাম না, নাইলে কোথায় আবার কোন গন্ডগোল লাগিয়ে দেয় তার ঠিক ঠিকানা নাই।

তবুও ফোন ধরে একটা ভাব নিলাম- কিরে কি হইসে? এতদিন পর আমাদের মনে পড়ল। বন্য বলে- আরে কইস না ব্যাটা ব্যস্ত ছিলাম। আমার কৌ্তূহল বেড়ে গেল- কেন কি হইসে? বন্যের সোজা জবাব- আরে বাপ মা ধরছে বিয়ে করতে হবে। গত দুই তিন মাস পাত্রীর পর পাত্রী দেখতে দেখতে জান শেষ। আর কইস না ব্যাটা এত ঝামেলা আগে জানলে রাজী হইতাম না। এইবার কৌ্তূহলে ফেটে পড়ে আমার প্রশ্ন- তা পাত্রী পাইলি শেষ পর্যন্ত? বিয়ে কবে? পাত্রী কী করে? সুন্দর তো? এইবার বন্য পালটা ঝাড়ি মারে- ধূর শালা, তুই দেখি কলেজের মত এখনো পুরা টিউবলাইট রয়ে গেছস। এত প্রশ্ন একসাথে মানুষে করে? আর তুই আমারে চিনস না? এইবার করুণ স্বরে আমার উত্তর- কেন দোস্ত তোরে তো সেই অনেকদিন ধরে চিনি কিন্তু সেইটার সাথে বিয়ের পাত্র পাত্রীর কি সম্পরক? বিরক্ত হয়ে এইবার বন্যের উত্তর- আরে বয়স তো মাত্র সাতাশ হইল। এই বয়সে বিয়ে করলে মৌজ মাস্তি করব কখন? ক্যাডেট কলেজে ক্লাবে তো এইমাত্র মেম্বার হইলাম। তাইফুর ভাই, কামস ভাই আর রিবিন ভাইয়ের টাকায় কিছু দিন রঙ্গীন পানি খাইয়া নিই তারপর, এই ধর আর বছর তিনেকের মামলা। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি- হুম। এইবার বন্যের ঝাড়ি- ঐ বিকেল ছয়টার মধ্যে চলে আয়, হাসনাইনরেও ডাকতাছি। ক্যাডেট কলেজ ক্লাব।

ফোন কাটতে কাটতে আমার দীর্ঘশ্বাস আর দীর্ঘ হয়। এই নাহলে কপাল। পোলার বাপ-মা ধইরা বাইধা বিয়ে করাইতে চায় আর পোলায় বিয়ে করবে না বলে ঠিক করছে। আর আমি? বাপ-মারে ইনায়ে বিনায়ে কতভাবে যে বুঝানোর চেষ্টা করি তার ঠিক নাই কিন্তু বাপ-মা যেন প্রতিজ্ঞা করছে আর যাই বুঝক এই ব্যাপারে তারা আমার আর কোন ইংগীত বুঝবে না।
আমি রাতে খাবার টেবিলে আমার বেতন যে গত মাসে বাড়ছে সেইটা বলি, মার বয়স যে অনেক হয়ছে এই বয়সে যে রান্না ঘরে যাওয়া ঠিক না সেইট বলি। সারাদিন বাসায় বাপ-মার কথা বলার যে লোক নাই সেইটাও কত বলি, কিন্তু কিসের কী? পাত্তাই নাই। তাই রাত জেগে বন্ধুদের বিয়ের ছবি দেখি ফেসবুকে। জিহাদ মিয়ার বিয়েতে ব্লগের সবার সাথে তুলা ছবিটা দেখি। সেইখানে কত কত লোক। মাস্ফু ভাই তার প্রাক্তন জাস্ট ফ্রেন্ডের সাথে, পাশে দিয়ে স্যাম আর সামিরেও দেখা যায়। ছবির এক কোণা দিয়ে অবশ্য আমারেও দেখা যায় কিন্তু একা বড় একা।

ছয়টার সময় ক্লাবের কাছে গিয়ে দেখি হাসনাইন সিএনজি থেকে নামছে। কাছে গিয়ে আমি বললাম- কিরে কি খবর? মাথার এক হাত উপর থেকে হাসি দিয়ে শালা উত্তর দিল- হ্য, আমি তো ভালই আছি। ঘুম আর অফিস, খারাপ কী? আমি মনে মনে বললাম- হু, খারাপ কী? দুই জনে মিলে ক্লাবে ঢুকেই দেখি বন্য আগেই হাজির। পোলাটার জীবনে প্রথম এমন প্রোপার টাইমিং এ আমরা বিমোহিত। যাই হোক আমরা হইলাম ভদ্র পোলা তাই আমাদের আসল উদ্দেশ্য হল রঙ্গীন পানি। তাই এইকথা সেই কথা বলে, নানান পরিচিত বড় ভাইয়ের সাথে কুশল বিনিময় করে আসল জায়গায় রওনা হলাম। কিন্তু কিসের কি, সব শালা শয়তান। বন্যের কিছুদিন আগে জন্মদিন গেল, হাসনাইন নাকি এখন সারারাত জেগে কার না কার সাথে কথা বলে মোবাইলে কিন্তু কেও রাজী হইল না। বিলের টাকার দ্বায়িত্ব নিতে কেও রাজী হল না। এত এত উপলক্ষের পরেও শালারা বলে- হিজ হিজ হুজ হুজ। আমিও তাই মন খারাপ করে রাজী হলাম- হিজ হিজ হুজ হুজ। অবশ্য মন খারাপ হইলে একদিন দিয়ে লাভ আছে। যেইদিন মন যত বেশী খারাপ থাকে সেই দিন জমে তত বেশী।

মন খারাপের মাঝেও আমাদের বেশ জমে উঠেছে। হাসনাইনের মুখে গল্পের খই ফুটেছে আমরাও তার সাথে সাথে তাল রাখার চেষ্টা করি। এইসময় বেজে উঠল আমার ফোন। বিরক্ত হয়ে স্ক্রীনে দেখতেই দেখি মঞ্জুরের নাম। ফোন ধরতেই ঐপাশ থেকে মঞ্জুরের কন্ঠ- ঐ শালা কই তুই? এতবার ফোন করি ধরস না কেন? আমার নির্লিপ্ত উত্তর- এই তো ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে, বন্য আর হাসনাইনও সাথে আছে। এইবার মঞ্জুরের খুশি খুশি প্রশ্ন- খাওয়া কি শুরু হয়ে গেছে? আমি বিরক্ত হয়ে উত্তর দিলাম- শালা খাইতে আসছি খাব না তো কি বসে থাকব? এইবার আর খুশি খুশি স্বরে মঞ্জুরের উত্তর- দাড়া, আমি কাছেই আছি। আসতাছি।

মঞ্জুর আসতাছে এইটা শুনার পর হাসনাইন স্রেফ সোজা কথা- এই মাসের বেতনের টাকা কেমনে কেমনে যে খরচ হয়ে গেল, আজকে ক্লাবের বিল দেওয়ার পর আর কত যে থাকে। করুণ মুখে বন্যের মুখের দিকে তাকাতেই দেখি শালা অন্যদিকে তাকিয়ে “দিল দিল” বলে কি একটা হিন্দী গান গাচ্ছে। তাই আবার করুণ মুখে নিজের ম্যানি ব্যাগের দিকে তাকাই কারণ মঞ্জুর বলে অন্যের টাকায় এইসব না খাইলে মজাটা ঠিক জমে না।

কিছুক্ষণ পর এসেই মঞ্জুর স্বভাবমত বলে- দোস্তরা আজকে হোস্ট কে? আমি করুণ মুখে বলি- দোস্ত, আজকে হিজ হিজ হুজ হুজ। কিন্তু এইবার মঞ্জুরের পালটা উত্তর- আরে হিজ হিজ হুজ হুজ কেন, আজকে যত পারস খা। বিল আমি দিমু। হঠাৎ করে আমাদের ঘোর কেটে যায়। বন্যের হিন্দী গানের সুর বন্ধ হয়ে যায়, হাসনাইন তার চশমা ঠিক করে আর আমি বড় বড় চোখ করে মঞ্জুরের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমাদের দেখে হাসতে হাসতে বলে- দোস্তরা আজকে আমার দারুণ খুশির দিন। আজকে তোদের বিল আমার। ভয়ে ভয়ে আমি প্রশ্ন করি- কেন দোস্ত? এইবার অট্টহাসিতে মঞ্জুরের উত্তর- দোস্তরা তোমরা চাচা হইতে যাইতেছ।

৫৯ টি মন্তব্য : “কাল্পনিক গল্পঃ আমরা যখন চাচা”

  1. মঞ্জুর (১৯৯৯-২০০৫)
    আজকে দারুণ খুশির দিন। আজকে তোদের বিল আমার। ভয়ে ভয়ে আমি প্রশ্ন করি- কেন দোস্ত? এইবার অট্টহাসিতে মঞ্জুরের উত্তর- দোস্তরা তোমরা চাচা হইতে যাইতেছ।

    😕 😕 😕 😕
    ডরাইছি দোস্ত।

    জবাব দিন
  2. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    রাত জেগে বন্ধুদের বিয়ের ছবি দেখি ফেসবুকে।

    ইংগিতপূর্ণ।...। কি দেখস।...। 😛

    মঞ্জুর বলে অন্যের টাকায় এইসব না খাইলে মজাটা ঠিক জমে না।

    😀

    মঞ্জুরের উত্তর- দোস্তরা তোমরা চাচা হইতে যাইতেছ।

    সাতাইশ বছরে বুড়া বানায় দিলি???? :grr:

    মজাক পাইলাম পইড়া।। কিন্তু যেই স্বপ্ন দেখাইলি।...। রঙ্গিন পানি, আড্ডা, হিজ হিজ হুজ হুজ।...। :dreamy:

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    কবে সাতাশ বছর বয়স হবে, আর কবে ক্লাবে যাইবা??আগে তিন প্রহরের বিল না বলে কি আছে, ওইডা দেইখ্যা আসো! ;;;
    শুনলাম মেম্বার বেশি বাইড়া যাইতাছে বইল্যা সিসিসিএল মেম্বার হওনের বয়স বাড়াইয়া ৫০ করতাছে!!
    আমি অবশ্য তোমাদের মুখের দিকে চাইয়া এই প্রস্তাবে রাজি হই নাই......
    :grr: :grr: :grr:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  4. আমাদের দেখে হাসতে হাসতে বলে- দোস্তরা আজকে আমার দারুণ খুশির দিন। আজকে তোদের বিল আমার। ভয়ে ভয়ে আমি প্রশ্ন করি- কেন দোস্ত? এইবার অট্টহাসিতে মঞ্জুরের উত্তর- দোস্তরা তোমরা চাচা হইতে যাইতেছ।

    শালা মঞ্জুর...। 😡 😡
    বিয়া কইরা এত্তোকিছু কইরা ফেললি, আর কইলিও না!!

    খোঁচা মারার বেলা তো কোন কমতি নাই......
    তোরে পাইয়া লই আগামীতে 😡 😡

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।