নামটা আবার পড়লো নাদিয়া। নাহ,ভুল না। নাদিয়া ইসলাম। মিরপুর,ঢাকা । তার মানে ওর গল্পটাই প্রথম হয়েছে। ছুটির দিনে ঈদ সংখ্যা হাতে পেয়ে নাদিয়া কিছুক্ষন চুপ করে রইল। গল্প প্রকাশের চেয়েও সবচেয়ে বড় ব্যপার হচ্ছে হঠাত্ করেই হাতে কিছু টাকা আসবে। তিন হাজার টাকা। টাকার অংকে তিনহাজার খুব কম টাকা হলেও নাদিয়ার কাছে অনেক। ফয়সালের একার উপার্জনে সংসার চলেনা। মাস শেষে চার থেকে পাঁচশ টাকার কমতি পরে যায়। এ মাসের খরচ ও মাসে নিয়ে,মাছ মাংস একবেলা কম খেয়ে কোন মতে তবুও সংসারটা টিকে আছে। অথৈ হবার পর খরচটা আর একটু বেড়েছে। প্রতিমাসে দুধ কিনতে হয়। যখন বুকের দুধ খেত তখন এই খরচটা লাগতোনা। এখন বাচ্চা দুধ পায়না। অন্তুর স্কুল ব্যগটাও বেশ পুরনো হয়ে গেছে। এক বাক্স রঙ পেন্সিলের জন্যে অনেক আগ থেকেই প্যাঁনপ্যাঁন করছে। হাতে টাকা থাকলে নাদিয়া কিনে দিত। ফয়সালকেও বলতে সাহস হয়না। মাঝেমাঝে নিজের অক্ষমতার কথা মনে হতেই নাদিয়ার কান্না আসে। গৃহিনী হবার এই এক অসুবিধা। ছোট খাট একটা চাকরী করলে মনের ছোট ছোট স্বাদ গুলো পূর্ন করা যেত। ফয়সাল যদিও মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা নাদিয়াকে হাত খরচ দেয় তবুও এই টাকায় কিছুই হয়না। নাদিয়াও লজ্জায় আর চাইতে পারেনা। ফয়সালটা এম্নিতেই অনেক কষ্ট করে। সংসারের চাপে বিপর্যস্ত। আগে বেশ হাসি খুশী থাকতো। ইদানিং শেয়ার বাজারে বড়সড় একটা ধাক্কা খাওয়ায় সেই হাসিটুকুও বিলীন হয়ে গেছে। অযথা মেজাজ দেখায়। এইতো সেদিন ফয়সালকে এত অনুরোধ করে বললো,ছুটির দিনের জন্য একটা গল্প লিখেছি। ঈদ প্রতিযোগীতার জন্য চেয়েছে,তুমি কি একটু এটা পৌঁছে দেবে,তোমার অফিসে যাওয়ার পথেই তো পরবে। নাদিয়ার কথা শুনে ফয়সাল ধমক দিয়ে বলল,ছুটির দিন টা আবার কি?
নাদিয়া বলল,প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন। প্রতি শনিবার বের হয়। ফয়সাল বিরক্তির সুরে বলল, ঐ সব গল্প টল্প প্রথম আলো ছাপায়না। সম্পাদক তো আর তোমার স্বামী না যে লেখা ছেপে দেবে। এইসব চিন্তা বাদ দাও. . .
ফয়সাল চলে গেলে নাদিয়া ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মানুষটা অনেক নিচে নেমে গেছে। অন্তুকে স্কুলে পৌঁছে দেবার পর নিজেই হেঁটে এসে প্রথম আলো অফিসে লেখাটা জমা দিয়ে গেছে। সেই মানুষটা যদি শোনে নাদিয়া প্রথম হয়েছে তাহলে নিশ্চই খুব খুশী হবে। একটা কাজ করা যায়। পুরস্কারের টাকায় একটা শার্ট কেনা যায়। সেই এক শার্ট ফয়সাল অনেক দিন ধরে পরে। মাঝেমাঝে নাদিয়ার ই বিরক্ত লাগে। নতুন শার্ট পেয়ে নিশ্চই ফয়সাল খুব সারপ্রাইজড হবে। অনেক গুলো চিন্তা মাথায় নিয়ে নাদিয়া প্রথম আলো অফিসের দিকে গেল। সম্পাদকের সাথে দেখা করে টাকাটা নিয়ে আসা যায়। যদিও ব্যপারটা বিব্রতকর তবুও এছাড়া কিছুই করার নেই।
পুরস্কারের টাকাটা পাওয়া যতটা কঠিন হবে বলে মনে হয়েছিল তার কিছুই হলনা। শুধু রিসিপশনে নিজের পরিচয়টা দিতে হল। সম্পাদক হাসি মুখেই টাকাটা তুলে দিলেন। আর বললেন,এসেছেন ভালই হয়েছে। আমাদের আর ডাক যোগে পাঠাতে হলনা। সবাই যদি আপনার মত হত। নাদিয়া কি বলবে ভেবে পেলনা। প্রথম আলো অফিস থেকে বেরিয়ে আসল। ভেনিটি ব্যগে তিনহাজার টাকা। ভাবতেই ভালো লাগছে। শিকড় পরিবহনের একটা বাসে চড়ে নাদিয়া মিরপুরের দিকে রওনা হল। আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। লোকাল বাসে এম্নিতেই প্রচন্ড ভীড় থাকে। এরমধ্যে গাদাগাদি করে কোন মতে গন্ত্যবে পৌঁছা। বাস থেকে নামার সময় প্রচন্ড ধাক্কাধাক্কি হল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভীড়ের মধ্যে কেউ একজন ওর ভ্যানিটি ব্যাগটা টান দিয়ে নিয়ে গেল। নাদিয়া শুধু তাকিয়ে দেখলো একটি মটর সাইকেল খুব দ্রুত ছুটে চলছে। পেছনের আরোহীর হাতে ওর ব্যাগটা। যে ব্যগের মধ্য ছোট ছোট কিছু অপ্রকাশিত ইচ্ছে,স্বপ্ন কিংবা সাধ। একহাজার টাকার তিনটি নিঃষ্প্রান নোটের মধ্যে একটি প্রানের একান্ত গভীর কিছু আকুতি। নাদিয়া দাড়িয়ে রইল অনড় হয়ে। বাসায় ফিরে আবার কলম ধরতে হবে। পরবর্তী ঈদ সংখ্যার জন্য নতুন একটা গল্প লিখে ফেলাটা খুব জরুরী। খুব।
রাব্বী আহমেদ
:clap:
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"
🙂
:hatsoff:
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
বরাবরের মতো :thumbup:
🙂 🙂 🙂 🙂 : ধন্যবাদ)
:thumbup:
চলো বহুদুর.........
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
🙁
🙂 🙂 🙂 🙂
ভালো থাকা অনেক সহজ।
🙂 🙂 ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂 🙂