মনে পড়ে তোকে বন্ধু আমার!
সে আমার বন্ধু ছিল।
তার নামে উঠতো গেয়ে নাম না জানা পাখি,
তার টানে রঙ্গীন ফুলে বসতো যে প্রজাপতি।
তার পানে চলতো ধেয়ে চঞ্চলা স্রোতস্বিনী,
তার ধ্যানে ঘন অরন্যে চলতো কানাকানি ।
তার ছন্দে ঝংকারিতো পায়ের নুপুর রিনিঝিনি,
তার ইশারায় ব্যক্ত হতো এ জীবনের হাতছানি…।
সেই যে আমার বন্ধু ছিল।
যাকে নিয়ে লিখছি আমি
সে আমার বন্ধু ছিল।
চোখ বুজলেই যাকে দেখি
সে আমার বন্ধু ছিল।
আমার সুখে উঠতো নেচে
সে আমার বন্ধু ছিল।
আমার সুরে গাইতো গান
সে আমার বন্ধু ছিল।
আমার শোকে সমান দুঃখী
সে আমার বন্ধু ছিল।
সব বিপদে ছিল পাশে
সে আমার বন্ধু ছিল।
মিছিলে যে সবার আগে
সে আমার বন্ধু ছিল।
সবুজ যুবক ডাকতো মোরে
সে আমার বন্ধু ছিল।
আজ সে নেই যে কাছে
সে আমার বন্ধু ছিল।
যাকে নিয়ে এত্ত কথা
সেই আমার বন্ধু ছিল।
অসময়ে যে চলে গেল
সে আমার বন্ধু ছিল।
যারে আমি হারায়ে খুঁজি
সেই আমার বন্ধু ছিল।।
(কবিতাটি অপর একটি ব্লগে পূর্ব প্রকাশিত)
আমাদের প্রিয় বন্ধু রাশিদুল (বাবু) এর মৃতুবার্ষিকী ১৯ শে সেপ্টেম্বর।
ওর জন্য এখানে এই কবিতাটি উৎসর্গ করলাম।
যেখানেই থাকিস বন্ধু অনেক ভাল থাকিস।
রাশিদুলের ছেলেটাও দিন দিন বড় হয়ে উঠছে মাশাআল্লাহ।
শাবাব’এর দিকে তাকালেই আমার চোখে ভেসে ওঠে রাশিদুল এর প্রিয় মুখটি।
উচ্ছ্বল আর রাশভারীত্বের অনুপম সমন্বয়ে গড়া এই ছেলেটি ছিল আমার যাবতীয় জীবনবোধের বেত্তা। আমি গোড়া থেকেই ফাঁকিবাজ ছিলাম। সে সময় আমি হুমায়ুন আহমেদ জ্বরে ভুগতাম। আর ও ইন্ডিয়ান সব লেখকদের মোটা মোটা বই পড়ে বুঝে নিয়ে আমায় সে গুলোর সারমর্ম করে খাইয়ে দিত।
রাশিদুল ছিল আমার বাস্কেটবল খেলার শ্রেষ্ঠ পার্টনার। আমরা দুজন এক দলে খেললে আর ব্যাকে মেহেদী থাকলে আর কিছু লাগতো না। ক্যাডেট কলেজ থেকে বেরিয়েও ওয়ার্ক শপের মাঠে বাস্কেটবল খেলেছি বেশ কয়েক দিন। আমাদের খেলা শেষে কোন দিন পেট ভরে কোক কিংবা কোন দিন পেট ভরে আইসক্রীম খেতাম। আহ!
আমরা খুব কাছের ছিলাম। এমন কি বি এম এ তে’ও বৃহস্পতিবার আমরা আড্ডায় মেতে উঠতাম।
আর্মিতেও সে ছিল সমান ভাবে জনপ্রিয়। দীর্ঘদেহী আমার বন্ধুটিকে অনেকেই বলতো-
“যত বড় দেহ; তত বড় মন! ”
কঙ্গোতে জাতিসংঘ মিশনে যাওয়ার আগে হঠাৎ করে ভাইরাল এনকেফালাইটিস (viral encephalitis) এ আক্রান্ত হয়ে ও ঢাকা সি এম এইচে ভর্তি ছিল। কৃত্রিম ভাবে ক’দিন জীবনের সাথে যুদ্ধ করে শেষে যেয়ে আমারদের এই বন্ধুটি অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস মেনে নিয়ে বিদায় নেয়।
আমরা হারালাম আমাদের সব চাইতে কাছের বন্ধুটিকে। বিধাতা সব ভাল জানেন। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় কি দারুন অভিমান নিয়ে আমাদের বন্ধুটি শুয়ে আছে টাঙ্গাইলে।
….ক্যালেন্ডারের পাতায় এই দিনটি আসলে ভেতরে কি দারুন হাহাকার দানা বাঁধে আমি তা বোঝাতে পারব না। কোন ভাবেই তার এমন অসময়ে চলে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না।
আমি যখন ঘাটাইলে ছিলাম, কয়েকবার গিয়েছি ওর বাসায়। আংকেল এর সামনে দাঁড়ালে কষ্ট লাগে খুব। কেননা, এই যান্ত্রিক জীবনের বিষম স্রোতে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হয়ে ওঠে না।
যাক, তবু এই জেনে আশ্বস্ত হই আমাদের মাঝে যারা ঢাকায় থাকে তারা নিয়মিত যোগাযোগ করে।
তাদের কে অন্তর থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমার সাথে দেখা হয় না বন্ধুদের সাথে অনেক দিন হলো।
দোওয়া করি মনে প্রাণে – আল্লাহ যেন সবাইকে ভাল রাখুন।
(আমিন)
১...
মানুষগুলো মরে যায় কেনো? মরে যদি যাবেই তবে পৃথিবীতে আসে কেনো?
আগে বিশ্বাস হত না মরে যাব একদিন, কবরের বিছানায় শুতে হবে।
এখন মনে হয়, যদি মরার আগে দু'এক সেকেন্ড টাইম পাই তবে খুব অবাক হবো না, মনে হবে এই তো ছিল চুড়ান্ত গন্থব্য।
২...
রশিদুল ভাইকে আল্লাহ ভালো রাখুন।
খুব ঠিক বলেছো তুমি তৌফিক ভাইয়া।
একদিন আমরা সবাই চলে যাব।
হয়তো চলে যাওয়ার জন্যই আমাদের এই আসা।
ক্ষণে ক্ষণে তাই প্রতীক্ষা করি আমরা সেই শেষ ঠিকানার।
মন্তব্যটুকু ভাল লাগলো।
আল্লাহ রাশিদুল কে বেহেশ্ত নসীব করুন।
আমিন।
সৈয়দ সাফী
সে আমাদের মাহফুজের বড়ভাই মনে হচ্ছে? টাংগাইল বাড়ীকি ভাইয়ার? আল্লাহ্ তাকে বেহেস্ত দান করুন..আমিন
হুম্ম ভাইয়া।
ঠিক বলেছো।ওর বাড়ি টাঙ্গাইল।
রাশিদুল হাসান তালুকদার - আমার প্রয়াত বন্ধুর পুরা নাম। ডাক নাম বাবু।
ধন্যবাদ তোমাকে।
আল্লাহ রাশিদুল কে বেহেশ্ত নসীব করুন।
আমিন।
সৈয়দ সাফী
রশিদুল ভাইকে আল্লাহ ভালো রাখুন।
অন্তর থেকে উনার জন্য দোয়া করি।
আল্লাহ উনার পরিবারকে ভালো রাখুন।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ধন্যবাদ ফৌজিয়ান।
রাশিদুল কে আল্লাহ বেহেশ্ত নসীব করুন।
আল্লাহ ওর ছেলে আর পরিবারের সবাইকে অনেক ভাল রাখুন।
আমিন।
সৈয়দ সাফী
বিদায় ব্যাপারটা সবসময়ই অনেক দু:খের। আর দু:খ জিনিসটা চিরন্তন। আমরা চাই, না চাই , পেতে হবেই।
উনি ভাল থাকুক, এই প্রার্থনা।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
হুম্ম।
ঠিক বলছো ভাইয়া।
পরপর দুটি মন খারাপ করা পোস্ট দিলাম।
দুঃখটুকু বুকে নিয়ে নাজের- রাশিদুল এর জন্য অনেক অনেক দোওয়া করি আমরা সবাই।
প্রিয় বন্ধুদের জন্য শুভ কামনা জানানোর জন্য এই প্রিয় ব্লগকে বেছে নিলাম অন্তর থেকেই।
আল্লাহ সবাইকে ভাল রাখুন।
আমিন।
সৈয়দ সাফী
রাশিদুল স্যারের (আর্মিতে আমি 'স্যার' বলাতেই কমফোর্টেবল) অসুস্থতার কথা শুনেছিলাম
অফিসারদের মুখে মুখে। মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাসায় যাবার পথে সিএমএইচ'এ আইসিইউ
এর কাঁচের দেয়ালের বাইরে থেকে এক নজর দেখেছিলাম যান্ত্রিক উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা মানুষটিকে। কুমিল্লায় দেখা সেই ভীষন প্রাণবন্ত মানুষটার সাথে এই দেখার কত পার্থক্য!সবাই তখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরবর্তী সপ্তাহের কোন এক রাত্রে অফিসার্স মেসের নিচ তলায় ফোনের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মোটর সাইকেল থেকে নেমে রেইন কোট খুলতে খুলতে শামীম স্যার বললেন, "আমার কোর্সমেটটা চলে গেল আজকে"।
আমি এখন জানি সেই রাতটা ছিল ১৯ সেপ্টেম্বরের রাত। সেদিনের অঝোরে ঝরা বৃষ্টি রাশিদুল স্যারের জন্য প্রকৃতির কান্না ছিল কি? হয়তো না। তবে সেটাই ভাবতে আমার ভালো লাগে।
আল্লাহ তাকে বেহেশতে নসীব করুন।
Life is Mad.
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে সায়েদ।
তোমার মন্তব্যটুকু হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
আজো চোখে লেগে আছে সেই দিনের অমোচনীয় দৃশ্যটুকু।
বুকে বিঁধে আহে অকালে প্রিয় বন্ধু হারানোর জ্বালা।
আল্লাহ তাকে বেহেশ্ত নসীব করুন।
ওর পরিবারের উপর তাঁর অপার রহমত বর্ষিত হোক।
আমিন।
সৈয়দ সাফী
ওবায়েদ,
কিছু কিছু ব্যাপার আছে যা চোখের পানির বাধকে আটকে রাখতে পারেনা...।
রাশিদুল নামটা তেমন...। ওর মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলাম সেটে...আমি তখন কঙ্গোতে একটা অপারেশনে। মৃত্য আমার সামনে আসন্ন জেনেও এস এম জি টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে অনেক্ষণ কেঁদেছিলাম...। ওর কলেজের না হয়েও বিভিন্ন ঘটনার কারণে আমার সাথে ওর সম্পর্কটা একটু বেশী ভালো ছিলো।
২/৩ দিন আগে ভাবীর সাথে কথা হলো আনিকের। নিজের লেখা পড়া আর ছেলেকে মানুষ করা নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেটার কথা বলতে গিয়ে জানালেন, "আমি আর বাবু হলাম শান্ত অথচ ছেলেটা এত চঞ্চল...।"
ভাবীর খুব ইচ্ছা বড় হলে ছেলেকে ক্যাডেট কলেজে দিবেন। ...মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে... যেখানে ওর বাবা ৬টি বছর কাটিয়েছে। ছেলেকে কেন ক্যাডেট কলেজে দেবেন জানতে চাইলে বিষাদমাখা কন্ঠে জানালেন, "বড় হলে আমি যদি ঠিক মত কন্ট্রোল করতে না পারি? বাপ ছাড়া অনাথ ছেলে...। কে দেখবে ওকে...?"
দোস্ত, আর কিছু শুনতে পারিনি...। নীরব কিছুক্ষন কান্না ছাড়া আমার কাছে তখন আর কিছু ছিলনা...।।
হুম্ম। দোস্ত।
জীবনের দুঃখ গুলো এমনতর গভীর হয়ে যায়। সেই ক্ষত আমরা বয়ে বেড়াই সারা জীবন।
শাবাব আর ভাবী ভাল থাকুক অনেক।
আল্লাহ ওদের ভাল রাখুন আর আমাদের বন্ধুটিকে জান্নাত নসীব করুন।
আমিন।
সৈয়দ সাফী
আল্লাহ তাঁর বেহেস্ত নসীব করুন।এত কষ্ট লাগে এ খবরগুলো শুনলে...
ধন্যবাদ মাসরুফ।
আল্লাহ ওকে বেহেশ্ত নসীব করুন।
আমিন।
সৈয়দ সাফী
আল্লাহ উনাকে ভালো রাখুক।
ইনশাআল্লাহ।
অনেক ধন্যবাদ আপু।
সৈয়দ সাফী
আমি যে কতটুকু মিস করি রাশিদুল ভাইকে ...
ঘাটাইলের শেষ দিনগুলো, ফুটবল মাঠে গোল বা পাস মিস করলে গালি (চরম ফুটবল খেলত রাশিদ ভাই), বাসায় গেলেই টাংগাইলের চমচম, ডিভিডি বদলা বদলি ...
রাশিদ ভাইয়ের ফিউনারেলে কাঁধ দিতে পারাটা এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ আর কষ্টের অভিজ্ঞতা।
কবিতাটা যদি রাশিদ ভাই পড়তে পারত ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
হুম্ম।
রাশিদুলকে কিছু বলতে গেলেই গলার কাছে এসে কথা গুলো জমাট বেঁধে যায়।
বন্ধু তুই ভাল থাকিস - অনেক ভাল থাকিস ঐ পাড়ে...
সৈয়দ সাফী
ওবায়দুল্লাহ ভাই,
রাশিদুল ভাই আর নাজের ভাইয়ের খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগলো...
রাশিদুল ভাইয়ের কথা ভালই মনে আছে...ক্যাডেট নম্বর সম্ভবত ১৪০৫, নীচতলার থ্রি সিটার টায় থাকতেন...হাউস বাস্কেটবল কম্পিটিশনের কথা বেশি মনে পড়তেসে...
আমরা যখন ক্লাস সেভেনে ভর্তি হই, নাজের ভাই খুব সম্ভবত ফজলুল হক হাউসের জেপি ছিলেন...
আল্লাহ উনাদের দুইজনকেই বেহেশত নসীব করুন...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"