১
কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ; আন্তঃ ক্যাডেট কলেজ বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা- ২০০৬; ফাইনাল ম্যাচ।
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ (ম ক ক) বনাম ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ ( ঝ ক ক)
স্কোর বোর্ডে মকক ৫৫ বনাম ঝকক ৫৭, স্টপ টাইম কীপারের হাতে স্টপ ওয়াচ এ সময় আছে মাত্র ১৫ সেকেন্ড। মেজর রাশিদ চিৎকার করে বলবেন, “টেক থ্রী পয়েন্ট শট। জাস্ট রিলিজ দি বল নাজের।“ অ্যাডজুট্যান্টের কথা অনুযায়ী থ্রী পয়েন্টের জন্য শট নিলেও তা রিং এ লেগে বেরিয়ে যেতেই রেফারী বাঁশি বাজিয়ে সময় সমাপ্তির ঘোষনা দিতেই ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের উৎফুল্ল দর্শকরা জয়ধ্বনি করতে করতে মাঠে প্রবেশ করে উল্লাসে মেতে উঠলো। এ নিয়ে টানা তৃতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে তারা। এই দিনটি তাদের। এই মুহূর্তটুকু আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার শতভাগ অধিকার তাদের রয়েছে। উপরন্তু প্রতিপক্ষ যখন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ – প্রাপ্তিটুকু যেন আঠারো আনা। এবার মির্জাপুর’ই ছিল হট ফেভারিট। কারন হিসেবে কলেজ অ্যাডজুটান্ট এর নিরলস প্রচেষ্ঠা এবং অনুপ্রেরনায় গড়ে ওঠা একটি ব্যালেন্সড টিম -‘এম সি সি ফাইটারস’।
প্রাণের জোয়ারে ভাসমান ঝিনাইদহ ক্যাম্পের উলটো পাশে শাব্দিক অর্থেই অসহ্য নীরবতা। সবার চোখেই অশ্রু। মেজর রাশিদ এর চেহারাতেও স্পষ্ট বিশাদের ছাপ। তবে ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যার সাথে সাথে দেখা গেল তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে। তিনি যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না যে – বিধাতা আজ ১২ বছর বাদে তাকে সেই পুরাতন জায়গায় এলে দাঁড় করিয়েছেন। সেবার প্রতিপক্ষ ছিল ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ – আর, নাজের এর জায়গায় ছিলেন তিনি। শেষ তিন সেকেন্ডে ছুঁড়ে দেয়া বলটি রিং ছুয়ে ছিটকে গিয়েছিল। সাথে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নটুকু। আজ যেন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো চরম কাকতালীয় ভাবে।
কলেজ স্টাফ’কে টীম নিয়ে হাউসে (নির্ধারিত ডরমিটরি’তে) ফেরত নেয়ার আদেশ দিয়ে বিদায় নিলেন। চ্যাম্পিয়ন হলে রাতে শহরে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট এ ডিনার এর পরিকল্পনা ছিল। ফলাফলের প্রেক্ষিতে সে প্রোগ্রাম টা বাতিল হওয়ার কথা হলেও স্টাফ জানালেন – অ্যাডজুট্যান্ট সবাইকে নিয়ে আট’টার মধ্যে পৌঁছাতে বলেছেন ভেন্যুতে।
মেজর রাশিদ অবশ্য ভেন্যুতে পৌনে আট’টায় চলে এলেন। আজ তিনি টীম’কে হোস্ট করবেন। সাথে এনেছেন নিজের ল্যাপটপ। মেস এ ফিরে পাঁচ মিনিটের একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরী করেছেন। ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলতেই তারা তাদের বিশাল এলসিডি’তে তা কানেক্ট করে দিল।
ঘড়িতে পাঁ মিনিট বাকি থাকতেই স্টাফ’এর নেতৃত্বে ‘এম সি সি ফাইটারস’ প্রবেশ করবে রেস্টুরেন্টে। অ্যাডজুটেন্ট সবাইকে হ্যান্ড শেক করে আভিবাদন জানাবেন – তার চেহারায় উদ্দীপ্ত আহবান। ছেলেদের চোখে মুখে তখনো পরাজয়ের গ্লানি। সবাই একে একে টেবিলে বসার পর মেজর রাশিদ – কলেজ অ্যাডজুটান্ট কাম কোচ এন্ড ম্যানেজার দাঁড়িয়ে তার প্রেজেন্টশন দিবেন।
প্রেক্ষাপট – ১৯৯৪
ফৌজদার হাট ক্যাডেট কলেজ; আন্তঃ ক্যাডেট কলেজ বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা; ফাইনাল ম্যাচ।
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ (ম ক ক) বনাম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ (ফ ক ক)
স্কোর বোর্ডে মকক ৬৫ বনাম ঝকক ৬৭, স্টপ টাইম কীপারের হাতে স্টপ ওয়াচ এ সময় আছে মাত্র ১২ সেকেন্ড। শেষ তিন সেকেন্ডে ছুঁড়ে দেয়া বলটি রিং ছুয়ে ছিটকে গিয়েছিল। সাথে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নটুকু। আজ যেন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো চরম কাকতালীয় ভাবে।
তার জায়গায় আজ ছিল নাজের। তিনি ছিলেন ক্লাস টুয়েল্ভে আর নাজের ইলেভেন এ। ইতিহাস এর এহেন পুনরাবৃত্তি সকলকেই চমকে দিল। এরপর
একে একে সেই সময়কার কিছু ছবি ভেসে উঠবে পর্দায়। কিশোর রাশিদ আর তৎকালীন সময়ের হাত ধরে পরদ্দায় ভেসে আসে বর্তমান। পেরিয়ে আসা মাসগুলোতে এম সি সি ফাইটার্সের অনুশীলন এবং খেলার বেশকিছু উত্তেজনাপূর্ণ ছবি শেষে শেষ স্লাইডটি ভেসে উঠবে পর্দায়। সেখানে লেখা আছে – “Perhaps, we didn’t get the trophy; But we knew the day could be ours. Never mind the result. You all are still my Champions. Andm I am so proud to be a MCC fighter. But, let me promise here tonight; in 2007 We shall win the trophy inshaAllah.”
লেখা গুলো ছাপিয়ে ভেসে উঠবে এম সি সি ফাইটার্সের একটি গ্রুপ ফটো।
জুম করে ছবিটি ক্লোজ শটে আসবে। শেষ এসে হোয়াইট আউট।
লিংকঃ ৯ মাস পর। ক্যাডেট কলেজ এ টার্ম ব্রেক।
নাজের আর ফাহিম ছুটিতে সেকেন্ড ডিভিশন ক্যান্টনিয়ান ক্লাব এর হয়ে খেলতে এসেছে। খেলা হচ্ছে স্টেডিয়াম এর ইন ডোর কোর্টে। প্রতিপক্ষ রাইজিং স্টারস। দর্শক সমাগম ভালই। অধিকাংশই তরুন-তরুনী। কম বয়েসী ছেলেও আছে কিছু। নাজের এর বান্ধবী শীতিও এসেছে। ও থাকলে নাজের এও কাঁধে যেন মাইকেল জর্ডান ভর করে। দুর্দান্ত জোশে মাঠ কাঁপিয়ে তোলে ও। সাথে ফাহিম এর ম্যাচ মেকিং যেন সোনায় সোহাগা। রাইজিং স্টারস’দের কে ভরপুর ভরাডুবি করিয়েই ক্ষান্ত হলো ওরা।
সেদিন রাতে নাজের একটা বহুল প্রতিক্ষীত ফোন রিসিভ করলো। ওদের অ্যাডজুটান্ট। শুরুতেই জানতে চাইলেন – সেকেন্ড ডিভিশন খেলার রেজাল্ট। (নাজের অবাক হলো ভীষন, এই লোকটা সব খবর রাখে কি ভাবে?) স্যার যা বললেন – তা শুনে নাজের এর চেহারাতেও ফুটে উঠলো উত্তেজনা। খবরটির সারাংশ হলো – এবছর আই সি সি এস এম (বাস্কেট বল) আয়োজন করবে মির্জাপুর। ওর মন বলছে – এই বার ; এই বার আমাদের পারতে হবে। পারতেই হবে…।
চলবে…
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂 থাঙ্কু থাঙ্কু...
সৈয়দ সাফী
দারুন শুরু স্যার, পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ আকাশ।
ভাল থেকো প্রিয়।
সৈয়দ সাফী
ভাইস্যার্বস ...
না লগাইয়া থাকতে পার্লাম্না ...
নষ্ট+লজিক হইয়া গ্যালাম ... দশ তারা ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
আকাশে তে লক্ষ তারা আম্র ঘরে দশ টা রে... 😉
কিরে - খবর কি? আছিস কোথায় বাহে...
🙂
সৈয়দ সাফী
চলুক... :clap: :clap: :clap:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
ধন্যবাদ মাহমুদ।
থেমে থেমে চলবে রে ভাই...
ততক্ষণ সাথে থাকুন...
🙂
সৈয়দ সাফী
ভাইজান ভুল হইলে ক্ষমা কইরা দিয়েন অথবা ফ্রন্টোলের নাম্বার কইয়া দিয়েনঃ মেকা ১১তম রিইউনিয়ানে কি আপনি আসছিলেন? ছয় ফুটিয়া এক বড় ভাই সকালের দিকে প্র্যাকটিস করতেসিলেন। আর্মিতে আছেন বোঝা গেছিলো কারণ সম্ভবত ইউনিটের কিছু একটা পরা আছিলো। খেলা দেইখা বোয়াল মাছের মত মুখ হা করতেই ইমিডিয়েট জুনিয়ার ক্যাপ্টেন আসিফ কইলো এই ভাই সাফ গেমসে ন্যাশনাল টিমে খেলসেন।
সেই ভাই কি আপনে আছিলেন?
মোকাব্বির (মকক, ৯৮-০৪)
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
মোকাব্বির -
গালতিসে মিসটেক হয়ে গেছে... ভুল নম্বরে ডায়াল করার জন্য কোন মাসূল লাগবে না।
বাস্কেট পাপীদের সাত+সাত চোদ্দ খুন মাফ...
😉 (সম্পাদিত)
সৈয়দ সাফী
:boss: :boss:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
মোকাব্বির মামু,অই ভাই সম্ভবত জিয়া স্যার।
আচ্ছা। আমার খালি উনার খেলা মনে আছে। কোর্টে সুপারম্যানের মত উড়াউড়ি করতেসিলেন!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ব্র্যাকে ইন্ট্রা সেমিস্টার বাস্কেটবল আয়োজন করা হয় ২০০৫ সালে। দুই সেমিস্টার মিলায় এক টিম হবে। ঝাড়া দিতেই ১০ জনের টিমে ৮টা ক্যাডেট বাইর হইলো। ঐ খেলার সেমিফাইনালে এরকম কাহিনী হইসিলো। তবে পার্থক্য হইলো জয় পাইসিলাম। ৩৪-৩৬ পয়েন্ট। সাইড লাইনে বইসা জেসিসির শারেক চিৎকার দিয়া কইলো আতিক (রাজউকের) ৫ সেকেন্ড। পয়েন্ট গার্ড আতিক কোর্টের একদম সাইডে তখন। রিং এর দিকে তাকাইলো। কেউ ওর কাছেও গেল না। কারণ ঐ পজিশন থেইকা থ্রি-শুট নেয়াটা সোজা কিছু না। আর আছেই কয় সেকেন্ড। একদম আরাম কইরা বলটা ছাড়লো, বাঁশি দিলো, বিপক্ষের সিনিয়ার সেমিস্টারের প্রায় কয়েক ডজন সমর্থক চিৎকার দিয়া উঠলো, কিন্তু বলটা সুন্দর কইরা কোন বাড়ি না খায়া রিং এ ঢুইকা গেল, আমাদের পয়েন্ট ৩৭ হইলো তারপরে ইনডোর কোর্টে নাইমা আসলো পিনপতন নীরবতা। কেউ বুঝতাসেনা কি হইসে। প্রায় ১০-১৫ সেকেন্ড পরে আমাদের দুই তিনজন অতি উৎসাহী দর্শক দোস্ত বন্ধু চিৎকার দেয়া শুরু করার পর বুঝলাম জিতা গেসি। 😀 😀 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
দারুন।
দারুন... মনে হলো অ্যাকশন রিপ্লে দেখালে হে...
খেলে যাও... জিতে যাও...
হিপ হিপ হূররে...
:clap:
সৈয়দ সাফী
বহুদিন পর আপনাকে দেখা গেল ভাই। ভালোই আছেন আশা করি 😀
আমি তো শুরুতে ভাবসি সত্যি ঘটনা। দারুণ হচ্ছে ভাই। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম :thumbup:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ধন্যবাদ জিহাদ।
জীবন আর জীবিকার ঠুকাঠুকিতে ইচ্ছেগুলি হার মেনে যায়।
চেষ্ঠায় আছি প্রিয়।
ভাল থেকো।
সৈয়দ সাফী
দারুণ :clap: :clap: :clap:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
অনেক ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই।
আপনাদের প্রশ্রয় এহেন পাগলামির জ্বালানী; তাই সময় করে আবার লিখতে বসব ইনশাআল্লাহ।
ভাল থাকুন।
সৈয়দ সাফী
🙂 🙂
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
🙂 🙂
ধন্যবাদ ভাই।
ভাল থাকুন সারাক্ষন - সারা বেলা।
সৈয়দ সাফী