আকাশ সকাল সকাল অফিসে চলে এল। জুনিয়র কয়েকজন কলিগ আর মজিদ মিয়াকে গেটের কাজটা বুঝিয়েই ওর চলে যাওয়ার কথা। ঐ ওস্তাদদের আত্মবিশ্বাস দেখে আকাশ দ্বিধায় পড়ে গেল।তাই কাজটা একটু গুছিয়ে দিতে চাইলো ও। আর তাতেই এই সময় ব্যাটা আলগোছে পেরিয়ে গেল অনেকখানি বিনা নোটিশে।
এখন পৌনে বারটা বাজে। ভীড় ঠেলে মগবাজারে যেতে আরও কিছু সময় লাগবে। পথে যেতে যেতে আকাশ ঠিক করে ফেললো যে প্রথমেই যেয়ে লম্বা একটা দুঃখিত দিয়ে বাক্যালাপ শুরু।
অবস্থা বেগতিক দেখলে নীলিমার প্রিয় কোন কবিতা ঝেড়ে দিতে হবে। এলাহী ভরসা। : :-B
আকাশের ছোটবেলায় শখ ছিল বড় হয়ে সে পাইলট হবে।
সময়ের সাথে শখগুলো বদল হয়ে বহমান জীবনের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়।
যাইহোক, পাইলটের প্রসংগটা যে কারনে এলো। তা হচ্ছে- মোটামুটি প্লেনের গতিতে গাড়ী চালিয়ে আকাশ সাড়ে বারটার দিকে মগবাজার আরং এ পৌঁছে গেল।
সিড়িগুলো একপ্রকার টপকে পেরিয়ে উপরে চলে এলো প্রায় উড়েই।
সেখানে দেখা গেল নীলিমাকে পাঞ্জাবী সেকশনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবী দেখায় মগ্ন।
যাক পাঞ্জাবী যখন দেখছে, বোঝা গেল মেজাজ তত খারাপ হয়নি এখনও।
ওকে তখনও দেখেনি নীলিমা। তাই সে এই সুযোগে কায়দা করে নীলিমার আসার পথে একটা পুতুলের পাশে আকাশ পোজ মেরে দাঁড়িয়ে গেল। 😛
নীলিমা কাছে আসতেই আকাশ নিশ্বাস বন্ধ করে পুতুল সেজে রইলো।
ওরা মুখোমুখি হতেই আকাশ ফ্যাক করে হেসে দিল।
নীলিমা প্রথমে একটু অবাক হলো তারপর হাল্কা খুশীর ছটা দেখা গেল ওর চোখে।
কিন্তু পরক্ষনেই সে তা চেপে গেল। মুখে একটা কঠিন ভাব এনে বললো, দুই ঘন্টা পর এসে এখন আবার ইয়ার্কি মারা হচ্ছে, না !
উত্তরে সামনের দুপাটি দাঁত বের করে একটা তরল হাসি দেবার চেষ্ঠা করলো। 😀
তাতে অবশ্য তেমন কাজ হলো না।
নীলিমা বলে চললো, আন্টির সাথে কথা বলে জানতে পারলাম- সাহেবের অফিসে জরুরী কাজ পড়েছে। তা ব্যাপারটা আগে জানালে – সময় পরিবর্তন সম্ভব ছিল। বড় বড় সব মোবাইল কোম্পানী এত সব সুবিধা দিয়ে ভুড়ি ভুড়ি অফার দিচ্ছে; তা সেই মুঠো ফোনটাও কেউ কেউ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে ভুলে যান।
আকাশ এইবার খুব ভোলা ভোলা একটা চেহারা বানিয়ে দুইটা ঠান্ডা আড়ং চকলেট মিল্ক কিনে এনে নীলিমার হাতে একটা দিল। ইশারায় শুরু করতে বলে নিজেও স্ট্র তে টান দিল।
হুম্ম। এখন পরিস্থিতি হাল্কা নিয়ন্ত্রনে আসার কথা।
অন্তত মেজাজটা কিঞ্চিৎ ভালর দিকে যাওয়ার কথা।
আকাশ অবশ্য তেমন আলামৎ দেখতে না পেয়ে ওকে নিয়ে সবচেয়ে উপরের তলায় আইসক্রীম পার্লারে চলে গেলো। এখন ডাইরেক্ট অ্যাকশনে যেতে হবে। চকলেট ফ্লেভারই ভরসা। নীলিমা এখনও গাম্ভীর্য বজায় রেখেছে। ঐ সময়ে পার্লারে তেমন লোকজন ছিলনা। আকাশ এই ফাঁকে তার শেষ অস্ত্রটা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। ওদের দুজনেরই প্রিয় কবি সৈয়দ শামসুল হক এর ‘পরাণের গহীন ভিতর‘ থেকে আকাশ বেছে নিল তার কাঙ্খিত একটি ট্রাম্প কার্ড – 😉
তোমারে যে ভালবাসে এর থিকা আরো পাঁচ গুন
আল্লার কসম আমি দিমু তারে এই জামাখান,
আমার কলম আমি দিমু তারে, শরীলের খুন
দোয়াত ভরায়া দিমু, অনুরোধ খালি একখান-
সে য্যান আমার থিকা আরো ভালো পদ্য লেখে আর
যাদুমন্ত্রে রুপার শিকল হাতে দিতে পারে তার।
তোমারে যে ভালবাসে এর থিকা আর দশগুন
আল্লার কসম আমি দিমু তারে এই বাড়িখান,
আমার উঠান আমি দিমু তারে, শীতের আগুন-
নিজেই সাজায়ে দিমু, অনুরোধ খালি একখান-
সে য্যান আমার থিকা আরো ভালো নিদ্রা যায় আর
তারেই নিকটে পায় কথা যার নিকটে থাকার।
(এখনও পর্যন্ত নীলিমা ভাবলেশহীন, কবিতার বাকি আর দুই লাইন। আকাশ দ্বিগুন উৎসাহে শেষ দুই লাইন নাটকীয় ভঙ্গীতে বলে উঠলো…)
নচেৎ নষ্টামি জানি, যদি পাছ না ছাড়ে আমার
গাঙ্গেতে চুবান দিয়া তারে আমি শুকাবো আবার।
এইবার নীলিমা হেসে দিল। 🙂
যাক বরফ গলানো গেল। সাথে সাথেই আইসক্রীম হাজির।
আর তাই বরফ গলা পানি যেন বহতা নদীর স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে গেল ওদের দুজনকে ভাললাগার মিঠা সমুদ্রে। মানুষের জীবনে এই সময়টুকু থাকে সবচেয়ে রঙীন। আর তারা দুজনই জানে – নীলিমাই এখন আকাশের জীবনে একমাত্র রঙীন প্রতিচ্ছবি।
😡
দুপুরের খাওয়া শেষে ওরা নীচে নেমে এলো।
ঘুরে ঘুরে আকাশের জন্য নীলিমা একটা পাঞ্জাবী কিনলো। বুকের কাছে হাতের কাজ করা। আকাশে কতগুলি রঙীন ঘুড়ি উড়ছে। চমৎকার কালার কম্বিনেশন।
নীলিমা মিটিমিটি হাসছে।
আকাশ চোখ বড় বড় করে বললো – কি সাংঘাতিক ! এখানেও টেলিপ্যাথী ? ;;)
নীলিমা উত্তরে বললো – জী না স্যার। আপনার দেরী দেখে- আপনার মুঠো ফোনে কল দিয়েছিলাম। সংযোগ প্রদান করা সম্ভব না হওয়ায় বাসায় ফোন দিয়েছিলাম। আন্টির সাথে কথা হলো। তখনই আপনার সাম্প্রতিক ‘ঘুড়ি প্রেম’ সম্পর্কে অবগত হলাম। বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে তেমন গবেষনা করেন নি। তবে জনাব -আপনি অবশ্য ব্যাপারটিকে Empathy বলতে পারেন।
আকাশ বিজ্ঞের মত মাথা নাড়ালো।
স্বভাবজাত ভঙ্গীতে তার চুলে হাত বুলালো দুবার।
তারপর প্রফুল্ল চিত্তে বললো – না। শুধু শুষ্ক ধন্যবাদে কাজ হবে না।
চলো- তোমায় আমার ডিজাইন করা গেটটা দেখিয়ে আনি।
নীলিমা সায় জানাতেই পরবর্তী আলাপের অপেক্ষা না করেই ওরা হাটাঁ ধরলো। ওদের গন্তব্য এখন বনানীতে।
বিকালের শেষ আলোয় আকাশদের অফিসের গেট টি তখন দাঁড়িয়ে গেছে।
ওরা একটু তফাতে থামলো।
দূর থেকে নীলিমা অপলক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।
আকাশ তখন ওকে পুরো থীমটা বুঝিয়ে দেয়।
সব শুনে নীলিমা গর্বিত সুরে বলে উঠলো – টুকরো টুকরো রঙ্গীন স্বপন গুলো যেন ছড়ানো রয়েছে পুরো আকাশ জুড়ে। সত্যি অপূর্ব হয়েছে – ওরে আমার ঘুড়ি মানব !
:clap:
এইটুকু মাত্র কথা।
অথচ চকিতেই গত ক’দিনের পরিশ্রম -ক্লান্তি, অফিসের সবার সাবাশি -উৎসাহ, সকালের ওদের বরফ -পানি… সব …সব কিছুই কেমন যেন ফিকে হয়ে আসে !
ভালবাসার মানুষটির এতটুকু ভাললাগার অনুভূতি এক নিমিষেই তখন আকাশে যেন ঝাকে ঝাকে অগনিত রঙীন ঘুড়ি উড়িয়ে দিল।
আকাশ নীলিমার হাতটি ধরে ওর ঘুড়ির বাক্সের কাছে গেলো।
সন্ধ্যা তখন নামি নামি করছে। হ্যালোজেন লাইট দুটো জ্বালানো হলো।
মায়াবী আলোয় উদ্ভাসিত হলো আকাশের ঘুড়ি বাক্স থেকে বেরিয়ে আসা হরেক কিসিমের রঙীন ঘুড়িগুলো। একদম উপরে ২৫ লেখা বড় ঘুড়িটা ঝিরঝিরে বাতাসে তির তির করে কাঁপছে।
কেউ বুঝি লাটাই হাতে আপন মনে উড়াচ্ছে সেই রঙীন ঘুড়ি।
আকাশ বিড়বিড় করে বললো – সাবাশ ঘুড়ি মানব !
:hatsoff:
১ম,
পড়েই
সাবাশ।
:clap:
সৈয়দ সাফী
নাজ কে নিয়ে লেখা কবিতার লিঙ্কটা আপনাকে জিজ্ঞেস না করেই আমি মনি-কে পাঠিয়েছি, আর মনি (এবং মালিহা) এখন ইংল্যান্ডে, উচ্চশিক্ষার্থে।
ব্যাস মেটকে আপনি বলার জন্য সেলিনাপুর ব্যান চাই.. 😛
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ঠিক কথা, ভ্যান গাড়ি চাই। :thumbup:
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
সেলিনা আপু শিক্ষক মানুষ, উনি ভ্যান দিয়া কি করব ??
তাই উনার ভ্যাঞ্চাই ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
এই খানে দেখি সবাই বিরোধী দল, খালি চায় ... আবার যুক্তাক্ষরেও চায়, নাহ শান্তি নাই,
সেলিনা,
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
ঐ লেখার লিংক মনি'কে দিয়েছো জেনে আমার সত্যি ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ আবারও।
সৈয়দ সাফী
আহা :dreamy: 😡 😡 😡
গল্পটা ভাল লেগেছে বস্ :thumbup:
অনেক ধন্যবাদ রহমান।
গল্প ভাল লাগলো জেনে সুখী হলাম।
🙂
সৈয়দ সাফী
ভাইয়া, দেরীতে হলেও আপনি যে সিসিবির সদস্য হয়ে লেখা দিচ্ছেন তাতে আমাদের চরম সৌভাগ্য।
গল্পটা খুব ভাল লাগল। :clap: :clap: :clap:
আমাদের মনের রঙ্গীন ঘুড়ি উড়তে থাকুক সবসময়।
তানভীর,
ভুল হলো হয়তো - দেরীতে সিসিবি'তে আসা বোধকরি আমার দূর্ভাগ্য।
অনেক ধন্যবাদ তোমায় ভাইয়া।
🙂
সৈয়দ সাফী
:boss: :boss: :boss:
:hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ আহসান আকাশ।
শুভেচ্ছা নিও।
🙂
সৈয়দ সাফী
অসম্ভব এক মিষ্টি ভালো লাগা ছড়িয়ে পড়ল লেখাটি পড়ে। =)) =)) =))
অফটপিক: বস আপনি কোন হাউসে ছিলেন?( সাম্পরদায়িক প্রশ্নের জন্য আমার ব্যঞ্চাই!!!!)
মিষ্টি ভালো লাগায় তুমি অনেক হাসতেছো দেখি ! :clap:
ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ।
অফটপিক:
ফজলুল হক হাউস।
সৈয়দ সাফী
বাহ খুব সুন্দর লিখেছ। তুমি একের পর এক চার ছক্কা মারতেছ দেখি।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
বস,
অনেক ধন্যবাদ।
আসলে পুরানো লেখা দিয়ে আপনাদের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক রাখার চেষ্ঠায় আছি।
শুভেচ্ছা নিন।
:salute:
সৈয়দ সাফী
হ্যাপি এন্ডিং আমার খূব ভাল লাগে.. 😀
ডায়াবেটিস হবার আগেই এরকম একটি মিষ্টি প্রেম করতে চাই.. B-)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
হুম্ম - যা গল্পে খুব সম্ভব।
দোওয়া করি হ্যাপি এন্ডিং তোমার জীবনেও আসুক - ইনশাআল্লাহ।
🙂
সৈয়দ সাফী
অনেকদিন পর সৈয়দ হকের কবিতাটা পড়লাম। আহা! একসময় দিনরাত 'পরানের গহীন ভিতর' পড়তাম। অনেক ধন্যবাদ ওবায়দুল্লাহ ভাই। 😀
জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,
চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচর আদিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷
চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,
বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান,
নিজেই তাজ্জব তুমি - একদিকে যাইবার চাও
অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান৷
সে তোমার পাওনার এতটুকু পরোয়া করে না,
খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়,
ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না,
সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধূলায় ৷
এ বড় দারুন বাজি,তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর ৷
-পরানের গহীন ভিতর
সৈয়দ শামসুল হক
তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ কামরুল।
এই কবিতাটাও অসাধারন।
এছাড়া -
" সে কোন বাটিতে কও দিয়াছিলা এমন চুমুক,
নীল হয়া গ্যাছে ঠোঁট।"...
কবিতাটাও দুর্দান্ত।
শুভেচ্ছা নিও।
সৈয়দ সাফী
মির্জাপুর'এর পোলা গুলা এত ভস ক্যান ...
(ও ... আমিও তো মির্জাপুর)
ওবায়দুল্লাহ ভাই, চ্রম সব লেখা'র জন্য ধন্যবাদ। কন্সিস্টেন্সি শব্দটা'র যথাবিহিত প্রয়োগ ... আপনার লেখার ক্ষেত্রে করাই যাই ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
বস্ কে ভস বলে অবমাননা করার জন্য ব্লগ এডুর নিকট তাইফুরকে ২টি ইবি (এক্সট্রা ব্লগ) ইস্যু করার আবেদন জানাই।
উল্ল্যেখ্য তিনি দীর্ঘ একমাস আগে একটি সিরিয়াস পোষ্ট লিখে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে শীতনিদ্রায় চলে যান। ইদানিং শুধুমাত্র কমেন্ট করে ডজিং মারছেন 😛
তাইফ,
তোর কন্সিটেন্ট মন্তব্যের জন্য তোকে ধন্যবাদ দেয়া হলো।
শুভেচ্ছা।
🙂
সৈয়দ সাফী
বস্ চমৎকার সুখী গল্প :clap: :clap: লিখছেন যথারীতি সেইরকম :boss: :boss:
ইশ কবে যে আমাগো কপাল এইরম হবে :bash: :bash:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ধন্যবাদ ফৌজিয়ান।
চেষ্ঠায় মিলায় বস্তু।
:thumbup:
সৈয়দ সাফী
:clap: :clap: :clap: :clap:
Life is Mad.
ধন্যবাদ সায়েদ ভাইয়া।
সৈয়দ সাফী