অতঃপর ব্লগর ব্লগর !

‘রাশি মিলছে না।‘- এই ডায়লগটি আমার বর্তমান কর্মস্থলে এখন সেই রকম হিট । কোন গড়মিল দেখলেই পাশ থেকে কেউ বলে বসছে- ‘উঁহু। রাশি মিলছে না।‘
আমারও আসলে সেই দশা এখন; রাশি মিলছে না একদমই। 🙁

আচ্ছা। একটু খোলাসা করে বলি।
চলমান কর্মক্ষেত্রে লড়াই এ টিকে থাকার জন্য সামনে একটা এসিড টেস্ট আছে। সে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আমাকে আমার পূর্বের অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে অতিরিক্ত করা হয়েছে । কিন্তু প্রস্তুতি পর্বের এখন প্রস্তুতি সম্পন্ন করে শুভ সূচনা হয় নি। জোর করে টেবিলে বসেও পড়াশোনা শুরু করা আর হয়ে উঠছে না। ব্যাপারটা অনেকটা ঘোড়াকে পানির কাছে নিয়ে যাওয়ার মত- কিন্তু পানি আর খাওয়ানো যাচ্ছে না।

ঘোড়া কেন পানি খাচ্ছে না – এ বিষয়ে ভাবতে গিয়ে দেখি যে সে এক বিরাট ইতিহাস !
(হুমায়ুন আহমেদ এর -‘ঘরেতে ছিলনা কেরোসিন‘ টাইপ আর কি !)।

নাহ্‌, ভয় পাওয়ার দরকার নেই। কেননা, পরীক্ষা বা পড়াশোনা’র মত নিরস বিষয় নিয়ে লেখবার মত সুবোধ ছাত্র আমি কোন কালেই ছিলাম না। আজকের পরিস্থিতি বিশ্লেষন করতে যেয়ে একটি ভূমিকার প্রয়োজনেই কথা গুলো এসে যাচ্ছে।

শৈশব কালে আমার মা আমায় পড়াতেন। আমি টেবিলে বসে থাকতাম আর মা যতক্ষণ থাকতেন বসে ততক্ষণই ঈমানদারীতে পড়াশোনা হতো। আর এভাবেই টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার থেকে শুরু করে ষষ্ঠ শ্রেনীর পাঠ্য বই গলধঃকরন সসম্মানে সম্পন্ন হলো। ক্যাডেট কলেজ এ চান্স পাওয়ার পর স্বাধীনতার ঝান্ডা উড়িয়ে আপন মর্জির মালিক হয়ে গেলাম।

ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠলাম অর্ধশত ছাত্রের মধ্যে ৪৫তম হয়ে। কেননা, ততদিনে প্রেপে বসে একেবারে সোজা কাঠ হয়ে ঘুমানোতে আমি ঝানু হয়ে গিয়েছিলাম ( শুধুমাত্র একদিন মাহফুজুর রহমান স্যার ডেস্ক এর উপর থেকে বই সরিয়ে নেওয়ার পরও আমার অনড় অবস্থানে বিশাল ধরা খেয়েছিলাম এবং পরেরটুকু আর নাই বা বললাম… 😛 )

শ্রদ্ধেয় স্যার-ম্যাডাম’দের অবদান ছাপিয়ে আমার বন্ধুদের সহানুভূতি- সহমর্মিতা আর প্রচেষ্ঠায় – এই আমি দিব্যি হাইয়ার সেকেন্ডারী সার্টিফিকেট হাসিল করে ফেললাম। ক্যাডেট লাইফে কয়েকটি ক্ষেত্রে হাল্কার উপর ঝাপসা ফলাফল নির্ভর ইতিহাস হয়েছিল। ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠার সময় (সাইন্স পাওয়ার লক্ষ্যে), টেস্ট পরীক্ষার সময় (পরীক্ষায় অ্যালাউ হওয়ার জন্য), এস এস সি (সব বিযয়ে লেটার পেয়ে রীতিমত লজ্জাকর একটি পরিস্থিতি কেননা সবটাতেই ৮১-৮২-৮৩ টাইপ) এবং এইচ এস সি পরীক্ষার সময় (কানের পাশ দিয়ে বুলেট গিয়ে তারকা প্রাপ্তিতে)।
– এই বিররণটা দেয়া জরুরী ছিল এই কারনে যে আমার থেকে আমার বন্ধুদের অবদান বেশী ছিল সব ক্ষেত্রেই। নোট সরবরাহ থেকে শুরু করে বুঝানো এবং সর্বোপরি জোরপূর্বক পড়াশোনা করিয়ে তারাই এই দুঃসাধ্য সাধন করেছে। আজ মিস করছি অনেককে। হয়তো বা ওদের অনেকেই এই লেখা পড়বেও না। কিন্তু সে যাই হোক, আমি আমার কৃতজ্ঞতাটুকু এই প্রিয় ব্লগে টুকে রাখলাম।

আমি সত্যি ভাগ্যবান। আমার বন্ধু ভাগ্য ঈর্ষনীয় বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না।
কেননা, একই ঘটনা ঘটেছে বি এম এ এবং পরবর্তীতে যাবতীয় কোর্সে। একে একা বসে হু হু করে পড়ার পাবলিক আমি না। আমাকে পোলাপান নিয়ে পড়তে বসে। হয় ওরা বুঝায় আমাকে -না হয় আমি বুঝাই । মোট কথা মিলেঝিলে -গাল গপ্পো করে পড়াশোনা করাটাই আমার ধাতে সয়ে গেছে।
…এই হচ্ছে রাশি না মিলার কুইক ফ্ল্যাশব্যাক।

আর বোধ করি সে কারনেই, ঘোড়াকে পানির কাছে এনেও আমি পানি খাওয়াতে পারছি না। আর তাই, টেবিলে বসে কতক্ষন আর অহেতুক বই এর স্তুপের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়, বলুন?
শেষ মেশ ল্যাপটপটা খুলে বসি। শুরু করি ব্লগর ব্লগর। এখানে মনের কথা গুলো বলতে তো আর কোন ছন্দ বা ফরম্যাট খুঁজতে হবে না। রাশি মিলুক আর নাই মিলুক – এখানেই তো আছে ডানা মেলে ইচ্ছে মতোন উড়ে বেড়াবার সুবিশাল নীল আকাশ…
“ক্যাডেট কলেজ – আমাদের সিসিবি- স্বপ্নের শুরু যেখানে !”

পরিশষে, ফেলে আসা সোনালী দিনের কথা বলতে গ

৩৩ টি মন্তব্য : “অতঃপর ব্লগর ব্লগর !”

  1. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    চলমান কর্মক্ষেত্রে লড়াই এ টিকে থাকার জন্য সামনে একটা এসিড টেস্ট আছে।

    আন্তরিক প্রার্থনা এই যে আপনার এসিড টেস্ট শতভাগ সফল হোক।
    অচিরেই ঘোড়ার পানি খাওয়া শুরু করুক।
    (চোথাপত্র রাইখা দিয়েন 😛 😛 )


    Life is Mad.

  2. আহসান ভাইয়ের অভাব অনেকটাই দূর হয়ে যায় আপনার নিয়মিত লেখা পেলে। :thumbup:

    কাছে দূরের- সব বন্ধুদের - সবার বন্ধুদের জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

    আপনিও ভালো থাকুন, সব সময়-সারা বেলা।। 😀

    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)
      আহসান ভাইয়ের অভাব অনেকটাই দূর হয়ে যায় আপনার নিয়মিত লেখা পেলে।

      দূরও বেকুব, কেউ কারও অভাব পুরাইতে পারে নাকি? যে যার তার তার।

      তয় গেটিস দিতে পারে, প্রক্সি আর কি?


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

  3. তানভীর (৯৪-০০)

    ভাইয়া, অনেক সাবলীল লেখা। পড়তে বেশ আরাম লাগে।
    ফয়েজ ভাইয়ের খেরোখাতার মত এটাকেও একটা সিরিজ বানিয়ে ফেলেন প্লিজ।

    আপনার এসিড টেস্টের জন্য রইল অনেক শুভকামনা।

    আপনিও ভালো থাকুন, সব সময়-সারা বেলা।
  4. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    শ্রদ্ধেয় স্যার-ম্যাডাম’দের অবদান ছাপিয়ে আমার বন্ধুদের সহানুভূতি- সহমর্মিতা আর প্রচেষ্ঠায় - এই আমি দিব্যি হাইয়ার সেকেন্ডারী সার্টিফিকেট হাসিল করে ফেললাম। ক্যাডেট লাইফে কয়েকটি ক্ষেত্রে হাল্কার উপর ঝাপসা ফলাফল নির্ভর ইতিহাস হয়েছিল। ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠার সময় (সাইন্স পাওয়ার লক্ষ্যে), টেস্ট পরীক্ষার সময় (পরীক্ষায় অ্যালাউ হওয়ার জন্য), এস এস সি (সব বিযয়ে লেটার পেয়ে রীতিমত লজ্জাকর একটি পরিস্থিতি কেননা সবটাতেই ৮১-৮২-৮৩ টাইপ) এবং এইচ এস সি পরীক্ষার সময় (কানের পাশ দিয়ে বুলেট গিয়ে তারকা প্রাপ্তিতে)।

    বস্ চোথা পাতি ছাড়াইতো দেখি আমি আপ্নারে পুরাপুরি ফলো করছি 😀 😀

    কাছে দূরের- সব বন্ধুদের - সবার বন্ধুদের জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

    আপনাকে সহ সকল ক্যাডেট জাতিকে এই সুযোগে :salute:

    এবং পরিশেষে ,

    চলমান কর্মক্ষেত্রে লড়াই এ টিকে থাকার জন্য সামনে একটা এসিড টেস্ট আছে।

    এসিড টেস্টের জন্য পুরা কেমিস্ট্রি ল্যাব মিশানো শুভকামনা জানাচ্ছি 🙂


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    • ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

      খুব ভাল লাগলো ফৌজিয়ান।

      বস্ চোথা পাতি ছাড়াইতো দেখি আমি আপ্নারে পুরাপুরি ফলো করছি

      চোথা পাতি ছাড়াই যখন ফলো কইরা ফালাইছো তয় সামনে তোমার বিরাট সুদিন ওস্তাদ। :gulli2:

      এসিড টেস্টের জন্য পুরা কেমিস্ট্রি ল্যাব মিশানো শুভকামনা জানাচ্ছি

      এই লাইন দেইখ্যা আমি ব্যাপক মজা পাইছি। :hatsoff:

      অনেক ভাল থেকো।
      🙂


      সৈয়দ সাফী

  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    প্রার্থণা করি,
    ঘোড়া পানি খাক... O:-)
    রাশি মিলে যাক... O:-)
    এসিড টেস্ট সফল হোক... O:-)
    আমরাও যেন নিয়মিত লেখা পেতে থাকি... :-B


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

  6. টিটো রহমান (৯৪-০০)
    এখানেই তো আছে ডানা মেলে ইচ্ছে মতোন উড়ে বেড়াবার সুবিশাল নীল আকাশ…
    “ক্যাডেট কলেজ - আমাদের সিসিবি- স্বপ্নের শুরু যেখানে !”

    :boss: :salute: :thumbup:

    সবাই ভাল থাকুন। অনেক ভাল।
    আনন্দমঃ। আনন্দমঃ।
    সব সময়-সারা বেলা।।

    আপনিও ভাল থাকুন। অনেক ভাল।
    জয়তু।জয়তু।
    সব সময়-সারা বেলা।।


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

  7. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    বস জটিল লিখছেন :salute: :salute: :salute: :salute:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

  8. রহমান (৯২-৯৮)

    বস,
    লেখা খুবই ভাল হইছে।

    ফয়েজ ভাইয়ের খেরোখাতার মত এটাকেও একটা সিরিজ বানিয়ে ফেলেন প্লিজ।

    একমত :thumbup:

    আমিও দোয়া করিঃ
    ঘোড়া পানি খাক…
    রাশি মিলে যাক…
    এসিড টেস্ট সফল হোক…
    এবং আমরাও যেন নিয়মিত লেখা পেতে থাকি... :guitar: 🙂

    চোথাপত্র রাইখা দিয়েন

    😀