কবিদের প্রতি আমার অনুভূতি সবসময়ই খানিকটা ঈর্ষা মেশানো সম্মানের। তাদের প্রতিভায় অবাক হই বারবার। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ,নির্মলেন্দু গুণ,সুনীল কিংবা সিসিবি র নূপুর দা সবার প্রতি একধরনের ঈর্ষা কাজ করে। তাদের কবিতা পড়ি আর মনে মনে বলি কিভাবে পারেন? আমি আমার ক্যাডেট লাইফে একজন কবি র পরিচয় পেয়েছিলাম। তিনি কলেজের ই একজন শিক্ষক ছিলেন।। সঙ্গত কারনেই নাম টা বলছি না। স্যার , বিভিন্ন অকেশনে কবিতা লিখতেন ও আবৃত্তি করতেন। সুতরাং স্যারের সেই সৃষ্টিকর্মের একদম জলন্ত সাক্ষী ছিলাম আমরা, মানে ক্যাডেট রা আরকি। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে আমি তার প্রতিও বাকি কবিদের মতো ঈর্ষা বোধ করি কিনা তাহলে এর জবাব দেওয়া মুশকিল।কেন মুশকিল সেই কারন নিয়েই আজ লিখতে বসলাম। স্যারের বিভিন্ন কবিতার অমর কিছু লাইন ও তার শানে নুজুল নিচে তুলে ধরছি।
১) সিগারেট খাওয়া ক্যাডেট কলেজে একধরণের গর্হিত অপরাধ। সিগারেট খেয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক ক্যাডেট ই ধরা খায়। সিগারেট বিষয়ক অপরাধের বিরুদ্ধে স্যার ছিলেন সোচ্চার ও প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।কবিতার পঙক্তির মাধ্যমে তিনি সকলের মাঝে পৌছে দিতে চেয়েছিলেন সতর্কবার্তা। তাই তিনি লিখেছিলেন,
“ওহে ক্যাডেটগণ করিওনা ধূমপান
কিছুদিন আগে ধরা খেল হালিম এন্ড সুলতান।”
অবশ্য কানাঘুষা শোনা যায় যে হালিম এন্ড সুলতান নাকি বরিশাল ক্যাডেট কলেজের দুজন হাউজ বেয়ারার নাম ! এ সত্যতা যাচাই করে দেখা হয়নি।
২) কলেজের প্রকৃতি তাকে আকৃস্ট করতো প্রচন্ড ভাবে। ক্যাম্পাসের সবুজ গাছ-গাছালি আর পাখিদের কূজন তাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করতো। এ বিষয়ে তিনি লিখেছেন ও প্রচুর কবিতা। বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে চলে যাওয়ার সময় ফেয়ারওয়েল ডিনারে তিনি আবৃত্তি করেছিলেন এক অবিস্মরণীয় কবিতা। ভরাট ও দরাজ কন্ঠে তিনি বলেছিলেন,
“মাঠে শত শত বক
করে কক কক,
কলেজ অধ্যক্ষ ,
করেন প্রত্যক্ষ !”
৩)বিদ্রোহী সত্তা তার মাঝে ছিল প্রবল ভাবে। বিদ্রোহের আগুনে পুড়ে নানা সময়ে তিনি রচনা করেছেন চমকপ্রদ কিছু কবিতা। সেই কবিতা গুলোতে তার বিদ্রোহী সত্তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মিথস্ক্রিয়া লক্ষণীয়। এই মিথস্ক্রিয়া প্রতিনিয়ত আমাদের যোগাতো ভাবনার খোরাক। অত্যাচারী হানাদার বাহিনীর প্রতি তার ছিল তীব্র ঘৃণা। তিনি লিখেছিলেন ,
“১৯৭১সাল, তখন আমি বরিশাল
মারব বাঁশ, পড়বে লাশ
লাশ নিয়ে করব উল্লাস ।
তারপর হবো ইতিহাস ।”
৪)বনের সবুজ প্রকৃতি , ধানক্ষেত কিংবা মাছে ভাতে বাঙালির সেই মাছ ও নানা ভাবে এসেছে তার শক্তিমান লেখনীতে। প্রকৃতির কোনো কিছুকেই তিনি অবজ্ঞা করেননি। সব কিছুই ঠায় পেয়েছে তার লেখনীতে। তিনি লিখেছিলেন,
“বনের মাঝে ধানক্ষেত,
মাছ করে ক্যাত ক্যাত।”
৫)ক্যাডেট দের মার্চ পাস্ট করে ডাইনিং এ যাওয়া তিনি অবলোকন করতেন পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে। দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনার কোনো কিছুই তার দৃষ্টি এড়াত না ! তাই , তো কোনো এক রাতে একটি বিব্রতকর ঘটনা দেখে তিনি লিখেছিলেন,
“মার্চ করে ডিনারে আসত ক্যাডেটের দল,
কখন যে মাথায় কাক ছেড়ে দিত মল !”
৬)তিনি বিশ্বাস করতেন যে সবার উপরে মানুষ সত্য , তাহার উপর নাই ! তার মাঝে বিশ্ব প্রেম ছিল লক্ষণীয়।আফ্রিকার নিপীড়িত সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য তার কলমের ডগায় স্ফূলিঙ্গের মতো ঝলসে উঠতো কবিতার লাইন গুলো। তাদের কথা ভেবে তিনি বিচলিত হতেন আর লিখতেন ,
“জাম্বিয়া মোজাম্বিক,
তুমি আমি দিগ্বিদিক।”
৭)ক্যাডেট কলেজের চার দেয়ালের জীবনের মাঝে একটু এডভেঞ্চারের খোজ পেলে ক্যাডেট রা তা কখনোই মিস করে না ! গাছের কাচা পাকা কাঠাল চুরি করে খাওয়াকে কলেজে বেশ প্রেস্টিজিয়াস এডভেঞ্চার হিসেবে গন্য করা হয়। এ বিষয়ে স্যার ছিলেন অবগত। ক্যাডেট দের নাড়ি নক্ষত্র সবই ছিল তার জানা। একজন সদা জাগ্রত প্রহরীর দৃষ্টিভঙ্গিতে এ বিষয়ে তিনি লিখেছিলেন,
“রাতের অন্ধকারে,
কাঁঠাল চলে যাচ্ছে দরজার ওপারে ”
৮)ছোটবেলা থেকেই কবি ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ দৌড়বিদ। উনি উনার জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত ছন্দের মাধুরী মিশিয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপন করতেন। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম আর আনমনে বিড়বিড় করে বলতাম ,”কিভাবে পারো? হে , ফরেস্ট গাম্প” কোনো একদিন কবি বলেছিলেন,
“কাক ডাকা ভোরে, শিশির ভেজা সকালে
গ্রামের মেঠো পথ ধরে আমি মাইলকে মেইল দউরাতাম
অন্ধকারে দেখতে পেতাম না কিছুই,
গর্তে পড়ে, গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে আমার পা গুড়ো গুড়ো হয়ে জেত
আমি তাও থামতাম না
আমি দৌড়ে জেতাম
দৌড়াতে দৌড়াতে আমার বুকে ব্যাথা হত
মা বলত, বাবা **ব , আর দোউরাস নে বাবা
তোর অসুখ করবে
বুকে ব্যাথা হবে।
আরে মা কি জানে??? হ্যা মা কি জানে?”
৯)দুর্বোধ্য অর্থের কিছু বিমূর্ত কবিতা ও তিনি লিখেছেন। এ জাতীয় কবিতা গুলোর মানে বোঝা আসলে সাধারণ পাঠকের জন্য বেশ কঠিন। অনেকে একে উচুদরের সাহিত্য কর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, আবার অনেকেই এর অর্থ বুঝতে না পেরে একে ননসেন্স রাইম বলে কবির গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা চালিয়েছেন। কোনটি সত্য তা সময়ই বলে দিবে। এমনি একটি বিমূর্ত কবিতায় তিনি লিখছেন,
“বন থেকে এল এক গাধা
কৃষ্ণর প্রেমে পড়ল রাধা।”
একটা জোকসের বই পড়েছিলাম ছোটবেলায়। ৯৯৯ টা জোকস ও ১ টা ফাও ! ফাও কিছু সাথে দেওয়া এখন এ যুগেরই নিয়ম ! এখানে আমার পছন্দের ৮ টি অবিস্মরণীয় কবিতা র লাইন দেওয়ার পর আরো ১/২ টা ফাও পঙক্তি দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না ! তাই আরো দুটো বিখ্যাত কবিতার চরণ দিয়ে দিলাম নিচে। এগুলোর রচয়িতা কিন্তু এই স্যার নন, বরং এই কবি দুজন সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তি।
ফাও নাম্বার ১: “হাসি বলে হাসা
হাসা বলে হাসি,
এই বলে হাসাহাসি
করে হাসাহাসি।”
ফাও নাম্বার ২:”জল পড়ে, পাতা নড়ে ,
পাতা নড়ে, জল পড়ে,
জল জল , পাতা পাতা,
আমার তো নেই ছাতা।”
(বিভিন্ন কবিতা মনে করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সহায়তা করেছেন রায়হান,ইমতিয়াজ,মুক্তাদির,নোমান,নাজমুল ভাই,রাহুল রায়হান ভাই, খালিদ ভাই)
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : কবির আসল নাম কমেন্ট সেকশনে উল্লেখ করা হতো বিরত থাকুন !
:)) =)) :pira2: :tuski: :awesome: :frontroll: :brick: :awesome: ::salute:: ::salute::
হাসতে হাসতে স্যাশ
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
এবার :teacup: খা ! 😛
একদিনের হিসাবে অমানুষিক ডোজ খাইলাম! :duel: :duel: :duel: (সম্পাদিত)
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
এ কমেন্ট স্যার দেখলে হয়তো আজ তিনি লিখতেন :
"একদিনের হিসেবে অমানুষিক ডোজ,
ক্যাডেট রা খাচ্ছে আজ কাঙ্গালী ভোজ "
=))
এইটাই বটমলাইন।
অত্যন্ত উচু মার্গের কাব্য।
মার্গে না উঠলে বুঝা সম্ভব না।
কবিকে ::salute::
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কবির পক্ষ থেকে স্যালুট গ্রহণ করা হলো ::salute:: 😛
:khekz: :khekz:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:awesome:
:bash: :chup: :gulli2: =)) :pira2:
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
:hatsoff:
=)) :just: :pira: :pira2:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
😀
আরেকটা মনে পড়লো
উনি নিজের জীবন কাহিনি বর্ণনা করতেন কবিতার ঢঙ্গে
ঐতিহাসিক ভাষণের ঢঙ্গে তার কবিতা বের হতঃ
"কাক ডাকা ভোরে, শিশির ভেজা সকালে
গ্রামের মেঠো পথ ধরে আমি মাইলকে মেইল দউরাতাম
অন্ধকারে দেখতে পেতাম না কিছুই,
গর্তে পড়ে, গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে আমার পা গুড়ো গুড়ো হয়ে জেত
আমি তাও থামতাম না
আমি দৌড়ে জেতাম
দৌড়াতে দৌড়াতে আমার বুকে ব্যাথা হত
মা বলত, বাবা **ব , আর দোউরাস নে বাবা
তোর অসুখ করবে
বুকে ব্যাথা হবে।
আরে মা কি জানে??? হ্যা মা কি জানে?"
ইহা আপাত পক্ষে কারো কবিতা মনে হবে না কিন্তু উহা উনার কন্ঠে শুনলে হাসতে হাসতে যে কেউ শহীদ হবে এটা নিশ্চিত
=)) =)) =)) =))
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
আল্লাহ গো ! এইডা মেইন লেখায় এড করে দিলাম ভাই =)) =))
প্রথম অট্টহাসি মহান কবিদের পাশে নিজের নাম দেখে।
=)) =)) =)) =)) =))
তারপর 'কবিতা'গুলো আর তার বিদগ্ধ সমালোচনা পড়ে হাসি আর থামতেই চায়না।
=)) =)) =)) =)) =)) =))
এদিকে আমি জাম্বিয়াকে পড়লাম 'জাঙ্গিয়া'
=)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =))
😀 😀 নূপুর দা, প্রথম কারনে কিন্তু অট্টহাসি দেওয়ার কিছু নেই...
হালিম ও সুলতান আসলেই হাউজ বেয়ারাদের নাম। পোস্ট পরে হাসতেই আছি, থামে না।
আকাশে বক
করে কক কক :)) =))
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
আমাদের ফেরদৌস খুব ভালো লং রানার ছিল.. ক্লাস নাইন পর্যন্ত সবসময় মেডেল পেতো লং রান ইভেন্টে। একদিন স্যার কি মনে করে জানি এথলেটিক্স গ্রাউন্ডে ফেরদৌস এর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন যে ফেরদৌস জীবনে অনেক বড় এথলেট হবে.. থেকে শুরু। ফেরদৌস আর মেডেল পায় না ! দোয়ায় উল্টা রিয়েকশন হয়েছিল। উনার কবিতা গুলোতেও আশপাশের সবার উল্টা রিয়েকশন হতো... 😛
এই মাস্টারপিসটা আমি আরো আগে কেন পড়লাম না!! :pira:
মনটাই ভালো হয়ে গেল। ধন্যবাদ নাফিস।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
অনেক ধন্যবাদ সানাউল্লাহ ভাই ! 🙂
এক স্যারের পোস্ট-মডার্ণ কবিতা না বলে পারছি নাঃ
তীর ছুঁড়লাম আকাশে
লাগলো গিয়ে কলাগাছে
হাঁটু বেয়ে রক্ত ঝরে
চোখ গেলো রে বাবা
কি বলমু? যদি কিছু বলার না থাকে