দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীগন আন্দোলন করিয়া সরকারী চাকুরি হইতে সর্বপ্রকার কোটা প্রথাকে উচ্ছেদ করিয়াছেন জানিতে পারিয়া অতিশয় আহ্লাদিত হইলাম। এতদিনে সরকারি চাকুরিতে কেবলই মুক্তিযোদ্ধা অথবা তাহাদের সন্তানাদি অথবা নারীকুলের একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করিত। এক্ষনে সেই উপদ্রব বিদূরিত হইলো।
দিব্যচক্ষে বেশ দেখিতে পাইতেছি – সরকারী দপ্তরসমূহ মেধাবীতে সয়লাব হইয়া গিয়াছে। নিত্যকার দাপ্তরিক কর্মকান্ডে তাহারা ক্রমাগত মেধার স্বাক্ষর রাখিয়া সরকারী বিভাগসমুহকে শণৈ শণৈ উন্নতির চরম শিখরে লইয়া যাইতেছেন। দিকে দিকে বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীদিগের সুনাম সুনামির বেগে ছড়াইয়া পড়িতেছে।
ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর নানান দেশের সরকারগন দিনের পর দিন বাংলাদেশের দুয়ারে ধর্না দিয়া কাকুতি মিনতি করিয়া বলিতেছে, আহা আমাদিগের নাদান কর্মচারীদিগকে যদি কোনরূপে তোমাদের এইসকল মেধাবীদিগের সংস্পর্শে আনিতে পারিতাম তাহা হইলে কতই না উত্তম হইতো!
দিব্য চোখে ইহাও দেখিতে পাইতেছি যে, দেশ বিদেশের লোকজন লোকপ্রশাসনের উপরে ট্রেনিং লইবার আশায় বাংলাদেশে আসিয়া ভীড় করিতেছে। তাহাদিগকে বহন করিবার তরে বাংলাদেশ বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা শতগুন বাড়াইবার পরেও অনেক যাত্রীকে দাঁড়াইয়া ভ্রমন করিতে হইতেছে।
চতুর্দিক হইতে বানের জলের ন্যায় আগত এইসব প্রশিক্ষনার্থীদিগকে সামলাইবার নিমিত্তে ইমিগ্রেশন পুলিশের তিনটি বিশেষ শাখা খুলিবার পরেও তাহারা হিমশিম খাইয়া যাইতেছে।
দেশে দেশে প্রবাসী বংগসন্তানেরা কোচিং সেন্টার খুলিয়া রাতারাতি মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাউন্ড কামাইতেছে। সেই সকল সেন্টারে কিরূপে বাংলাদেশ দুতাবাসে ভিসার জন্য দাঁড়াইতে হয়, কোন প্রশ্নের কি উত্তর দিতে হইবেক, কিরূপে আত্মবিশ্বাস সহকারে মেধাদীপ্ত কথাবার্তা বলিয়া বাংলাদেশের ভিসা কর্মকর্তার মন গলাইতে হয়, ইত্যাকার নানান বিষয়ে বিশদ পরামর্শ দেওয়া হইতেছে।
মওকা বুঝিয়া আমিও বিলেতে আমার বহির্বাটিতে একখানা পরামর্শদান কেন্দ্র খুলিয়া বসিলাম। দেখিতে দেখিতে আমার ব্যাংক একাউন্ট ফুলিয়া ফাঁপিয়া ঊঠিতে লাগিলো। অকস্মাত গিন্নির হুংকার শুনিয়া কাঁপিয়া উঠিয়া বাস্তব জগতে ফিরিয়া আসিলাম।
ঘোর কাটিয়া একটু ধাতস্থ হইবার পরে বুঝিলাম তিনি ব্যাপক ঊষ্মা সহযোগে এই মর্মে অনুযোগ করিতেছেন যে, আমি নাকি হাতে ছুরি আর একটি পেঁয়াজ লইয়া বিগত অর্ধঘন্টাকাল ধরিয়া দিবাস্বপ্নে মগ্ন হইয়া হেঁসেল মাঝে মূর্তিবৎ দাঁড়াইয়া আছি! (এইদন্ডে জানাইয়া রাখা উত্তম যে, তাহার রন্ধনকর্মে সহায়তা করিবার নিমিত্তে প্রায়শই আমাকে রসুইখানায় মাছটা, সব্জিটা কোটাবাছা করিয়া দিতে হয়)।
নিজের মুখ বাঁচাইবার তরে অনন্যোপায় হইয়া গিন্নির ধমকের উত্তরে বড় গলা করিয়া বলিলাম, “অদ্য হইতে সকল কোটাবাছা বন্ধ! জানোনা আমাদের পিতৃভূমি এখন সম্পুর্নরূপে কোটামুক্ত?”
অতপর হতবাক গিন্নিকে কোনপ্রকার বাক্যালাপের সুযোগ না দিয়া মনের সুখে বুক ফুলাইয়া রান্নাঘর ছাড়িয়া টেলিভিশন যন্ত্রে আইপিএল দেখিতে বসিলাম।
আফটার অল, খান বংশের সন্তান হইয়া রান্নাঘরে খানাদানার প্রস্তুতিকর্মে লিপ্ত হওয়াটা বড়ই শরমিন্দার বিষয়!
“অদ্য হইতে সকল কোটাবাছা বন্ধ! জানোনা আমাদের পিতৃভূমি এখন সম্পুর্নরূপে কোটামুক্ত?”
- রম্য রচনাটি ভাল লাগিল।! 😀
Brilliant as always !