আজকে কেন জানি হঠাৎ অংকের মতিউর রহমান স্যারকে বারবার মনে পড়ছে। একেবারেই কাদামাটির অন্তর, প্রাতঃস্মরণীয় মানুষ, পরম শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ। আমাদেরকে তিনি নিজের সন্তানদের মতই দেখতেন।
স্যারের একটা অদ্ভুত অভ্যাস ছিল। কোন একজনকে ধমক দিতে হলে তিনি বলতেন, “ইডিয়েটস!”, আর একাধিক জন হলে বলতেন “ইউ ইডিয়েট!” গনিতের লোক বলেই বোধহয় গ্রামারের নাম্বারকে খুব একটা তোয়াক্কা করতেন না। তাঁর একটি কথা আমার মাথায় আজও ঘোরে (এবং আমি সবসময় অনুসরণ করার চেষ্টা করি) সেটা হল, তিনি বলতেন, “আই অলওয়েজ appreciate your দুষ্টুমি but not বেয়াদবি”। সাধারনতঃ এই দুষ্টুমি আর বেয়াদবির মাঝের ফাইন লাইনটা কে কখন কোথায় যে টানবেন সেটা আনুমান করা খুবই মুস্কিলের ব্যাপার। কিন্তু স্যারের এই বেঞ্চমার্ক লাইনটা এতই উপরের দিকে ছিল যে, আমাদের শত দুষ্টুমিও সেই লাইন অতিক্রম করে বেয়াদবি হিসেবে পরিগনিত হতে পারে নি।
স্যার ছিলেন চারণ কবি। ক্লাসে ফাঁকি দেবার দরকার বোধ করলেই আমরা স্যারকে অনুরোধ করতাম, একটা কবিতা লেখার জন্য। স্যার প্রথমে কপটরাগে ধমক দিতেন, তারপরে খাতা কলম নিতে ডায়াসে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসতেন আর কবিতা লিখতেন। খানিকটা এরকম টাইপের কিছু একটা –
আজ শীতকালে পড়েছে ভিষন ঠান্ডা,
ক্যাডেটস রা খুশি, খায়নি যে কেউ ডাণ্ডা।
মুজিব মিয়ার দুষ্টুমি গেছে বেড়ে,
বুঝবে সবাই কলেজ শেষে যখন যাবে ফিরে।।
কখনো খুব রেগে গেলে তিনি বলতেন, “পিটিয়ে লোম্বা করে দেব, ইডিয়েটস!” আমি ছিলাম আমাদের ব্যাচের (এবং আশেপাশের বেশ কয়েকটা ব্যাচের) মধ্যে সবচেয়ে ছোটখাট। তাই স্যারের এই কথাটাকেই সেসময়ে পাথেয় হিসেবে আঁকড়ে ধরেছিলাম। চোখের সামনে মাহমুদ, আশরাফ, আরো কতজন ধাঁই ধাঁই করে লম্বা হয়ে গেল, কিন্তু আমি ক্লাস টেন পর্যন্ত সেই এক-গজ-দেড়-গিরা ই থেকে গিয়েছিলাম। তাই হিংসার বশে লম্বা হবার আশে স্যারের ক্লাসে কত দুষ্টুমি করলাম, কত উৎপাৎ করলাম, কিন্তু তিনি একটাকেও ছিটেফোঁটা বেয়াদবি মনে করলেন না। কোনদিন আমাকে পিটিয়ে লম্বাও করলেন না।
স্যার, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার আশির্বাদ থাকুক আমাদের সবার মাথার উপর।
স্যারের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম ক্ষনিকের জন্য। বড্ড ভাল মানুষ তিনি।
লেখাটাও মন ছুয়ে গেলো। সুন্দর লেখার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
:hatsoff:
গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।
ভাই আপনারে হ্যাজাক জ্বালাইয়া খুঁজতেছি।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
মুজিব ভাই, আপনার লেখা পড়ে হাসপাতালে হাত ভেঙ্গে আপনার সাথে কাটানো মুহুর্তের কথা মনে পড়ে গেল। ক্লাস সেভেন এ ছিলাম, হাসপাতালে থাকার কারনে আমার সাত খুন মাফ ছিল বলে মনে হত, তাছাড়া আপনার মত ক্লাস নাইনের সিনিয়র এর এমন মধুর ব্যবহার , এক সাথে কার্ড খেলার দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা, সেই সাথে যখন খুশি খাওয়া দাওয়া লেখা পড়ার সুযোগ পেয়ে হাতপাতালেই চিরস্থায়ি ভাবে থাকার ইচ্ছা হয়েছিল। মতিউর রহমান সার এসে আপনার আমার ডায়েরি তে তাতক্ষনিক ভাবে সুন্দর ছড়া লিখে ছিলেন, যা আমার কাছে এখনও আছে। ভাবতেই অবাক লাগে, এতগুলি দিন কিভাবে কেটে গেল, মনে হয় যেন কিছুদিন আগেরই ঘটনা।
মুজিব ভাই,
স্যার ইন্তেকাল করেছেন অনেক বছর হলো। স্যার সত্যিই অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা স্যারকে পিছনে মতি নানা বলে ডাকতাম, স্যারের বিশাল শ্বেত শুভ্র দাড়ি ছিলো। স্যারের মেয়ের বিয়েতে সকল ক্যাডেটকে ডাইনিংহলে স্যার মিষ্টি খাইয়েছিলেন। আমাদের কলেজে থাকাকালীন স্যার অবেসরে যান।
মুজিব ভাই, কোন ব্যাচের ভাইয়েরা স্যারের সাইকেলের হাওয়া ছেড়ে দিতো ? স্যারের সাইকেল হুনাইন হাউসের পুকুরে ফেলে দিয়েছিলো, জানেন? আমরা অবশ্য এই গল্প সিনিয়র ক্যাডেটদের মুখে শুনেছি। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
বিবেক হলো অ্যানালগ ঘড়ি, খালি টিক টিক করে। জীবন হলো পেন্ডুলাম, খালি দুলতেই থাকে, সময় হলে থেমে যায়।