কলেজে ছয় বছর পার করার পরও অনেক ক্যাডেটের অর্জনের খাতাটা থাকে শূন্য। কলেজ থেকে পাসআউটের সময় বুকে থাকে অনেক কিছু না পাওয়ার বেদনা। কলেজের অনার বোর্ডে নিজের নামটি চিরস্মরণীয় না করতে পারার ক্ষোভ নিয়ে পার করতে হয় বাকি জীবন। এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে ক্যাডেট জীবনের শুরু থেকেই সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। তাই নিজের ছয় বছরের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি থেকেই বর্তমান ক্যাডেটদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ দিচ্ছি। বলা বাহুল্য, এখানে আপাতদৃষ্টিতে নৈতিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় নি। যে কোন ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য লেখককে দায়ী করা চলবে না।
ক্লাস সেভেনঃ
ক্লাস সেভেন হচ্ছে ক্যাডেট কলেজ জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। কথায় বলে, “First impression is the best impression”। তাই প্রথম থেকেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। সবার সুনজরে থাকলে উন্নতি অবশ্যম্ভাবী।
- কলেজে ঢোকার পরপরই বন্ধুদের মাঝে নিজের একটা আলাদা ইম্প্রেশন তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বন্ধুদেরকে নিয়মিত মোটিভেট করা, বিভিন্ন কম্পিটিশনের আগে স্পিরিট দেয়া ইত্যাদি করা যেতে পারে।
- ক্লাস সেভেনের জীবন কেমন হবে তা অনেকাংশেই রুম প্রিফেক্টের ওপর নির্ভর করে। তাই শুরু থেকেই বিভিন্নভাবে তাকে খুশি করার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমার এক বন্ধুর উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। একদিন রেস্ট টাইমে রুম প্রিফেক্ট রুমে থাকা অবস্থায় সে ডায়রি লিখছিল। রুম প্রিফেক্ট কৌতূহলবশত ডায়রিটি দেখতে চান। সে লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে ভাইকে ডায়রিটি দিল। ডায়রি খুলে তো উনার চক্ষু চড়কগাছ। সেখানে লেখা, “আমার দেখা সবচেয়ে ভাল মানুষ হচ্ছেন …… (রুম প্রিফেক্টের নাম) ভাই”। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত তৈল খাওয়ার পর সেই ভাই আমার সেই বন্ধুকে কখনো একটি ফুলের টোকাও দেননি।
- গাইডের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্যারেন্টস ডে তে মাঝে মাঝে মিস্টান্ন খাওয়ানো যেতে পারে।
- প্রতিটি কম্পিটিশনের আগে যখন সিনিয়ররা কে কে যেতে ইচ্ছুক জানতে চাইবে, তখন “আগে গেলে বাঘে খায়” নীতি পরিহার করে সবার আগে নাম জমা দিতে হবে।
- ক্লাসে কখনও স্যারকে বিরক্ত করা যাবে না। স্যার ক্লাসে ভুল পড়ালেও সবার সামনে কিছু বলা যাবে না। দূর থেকে দেখলেই জোরে সালাম দিতে হবে। প্রতি প্যারেন্টস ডে তে অভিভাবক নিয়ে স্যারের ডিপার্টমেন্টে যেতে হবে।
- হাউস বেয়ারাকে মাঝে মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
- প্রত্যেকটি খেলায় অংশগ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য। এতে বন্ধুদের কাছে কাবিল উপাধি পেলেও ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক হবে।
ক্লাস এইটঃ
- জুনিয়র আসার পরপরই তাকে মোটিভেট করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে, ক্যাডেট কলেজে বড় ভাইরাই মা-বাপ। অতএব কোন শিক্ষক কিংবা কর্মচারীকে কিছু বলা যাবে না।
- জুনিয়র সংক্রান্ত ছোটখাটো কাজ যেমন নভিসেস প্যারেডের জুতো পালিশ করা, জুনিয়রকে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন শেখান ইত্যাদি নিজের কোন বন্ধুকে দিয়ে করিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- মাঝে মাঝে ভোজন রসিক ভাইদেরকে পরোটা, কাস্টারড, পুডিং ইত্যাদি পাঠিয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক সুসংহত করতে হবে।
ক্লাস নাইনঃ
- যেহেতু এস এস সি পরীক্ষার দুই বছর বাকি, পড়ালেখার দিকে খুব বেশি জোর না দিয়ে জুনিয়র গ্রুপের লিডিংয়ে বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত।
- স্টেজ কম্পিটিশনের আগে নিজ দায়িত্বে জুনিয়রদেরকে প্র্যাকটিস করাতে হবে। এবং অবশ্যই এমন কোন স্থানে করাতে হবে যাতে কোন স্যার বা সিনিয়রের দৃষ্টিগোচর হয়।
- ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি কম্পিটিশনের আগে প্র্যাকটিসের সময় নিজে ভাল খেলার পাশাপাশি জুনিয়রদেরকে ভাল খেলার জন্য প্রেষণা দান করতে হবে।
ক্লাস টেনঃ
- ক্লাসমেটদের পাল্লায় পরে কখনই কোন অভিযানে (যেমনঃ কলেজের বাইরে যাওয়া, আম-কাঠাল ইত্যাদি পাড়তে যাওয়া) যাওয়া যাবে না।
- এস এস সি পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে পড়াশুনা করা অবশ্য কর্তব্য।
- বিভিন্ন ধরনের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে (ফর্ম গোছানো, স্যারের জন্য বই, ডাস্টার ইত্যাদি নিয়ে আসা ইত্যাদি) স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করতে হবে।
ক্লাস ইলেভেনঃ
- ওয়াল পেপার, চলতি ঘটনা প্রদর্শনী ইত্যাদি প্রতিযোগিতার আগে নানা রকম আইডিয়া নিয়ে প্রিফেক্টদের কাছে যেতে হবে। কোনক্রমেই রাত তিনটার আগে ঘুমানো যাবে না।
- জুনিয়র ক্যাডেটদেরকে নিয়মিত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত করতে হবে।
- খুব সতর্কতার সাথে স্যারদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কারণ, একটি ভুল সারা জীবনের কান্না।
- ইডি খাওয়া অনেক ক্ষেত্রে পার্টের বিষয় হলেও ক্যারিয়ারের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকারক।
- বিভিন্ন পরীক্ষার পরে জুনিয়রদের একাডেমিক রেজাল্ট তৈরি করতে হবে এবং ভবিষ্যতে রেজাল্টের উন্নতির জন্য দৃশ্যমান এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
- হাউস মাস্টার অফিসে গিয়ে নিয়মিত হাউসের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে স্যারদের সাথে আলোচনা করতে হবে।
- ৭ দিনের শিক্ষাসফরে গিয়ে হাউস মাস্টার এবং হাউস টিউটরদের জন্য কিছু উপহার আনা যেতে পারে। জীবনে সফলতার জন্য শিক্ষকদের দোয়া অতীব জরুরী। এই পদ্ধতিটির কার্যকারিতার বাস্তব প্রমাণ রয়েছে।
- জুনিয়র প্রিফেক্ট হতে না পারলেও হাল ছাড়া যাবে না। সুযোগ এখনো আছে।
ক্লাস টুয়েলভঃ
- সফল হলে তো কথাই নেই। আর যদি সফলতার দেখা না মেলে, তবুও আশা রাখতে হবে। ক্যাডেট কলেজে নেতৃত্বের পরিবর্তন হরহামেশাই ঘটে। সে লক্ষে কাজ করে যেতে হবে।
"Handbook of Cadet College Leadership"
এটা প্রিন্ট করে ক্যাডেট ভাইদের হাতে হাতে দিতে হবে! আজকের শিশু আগামীর বিশু! B-)
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
বিশুর কথা কি বুইঝা লেখছেন না মিলায়া লিখছেন জানিনা। তয় আমাগো ব্যাচে একজন ছিল, সে ক্লাস ১১ পর্যন্ত এই নিয়ম ফলো কইরা গেছে। তারে আমরা তার নামের সাথে মিলায়া বিশু বইলা ডাকতাম।
চরণ মিলাইসি। এমনে কোন মানে নাই। কিন্তু বিশু বলতে আমরা যারে বোঝাই উনি ক্যাডেট ছিলেন না! বিখ্যাত আবু সাইদ বিশ্বাস স্যারের (জীববিজ্ঞান) আরেক নাম ছিল ভয়ঙ্কর বিশু। 😛
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
এবং বিশু ভাই ক্রসবেল্ট পেয়ে সফল হয়েছিলেন 😀
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
২০১১ তে IDCOL এ চাকুরী করতাম। সেখানে এক ডিরেক্টরের নিক নেম ছিল বিশু (বিশাল + শিশু)
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:awesome:
:tuski: যা লিখসো ভাই। হাহাহাহা! আরেকবার পইড়া মজা পাইলাম।
টুয়েলভের পরের ফেভারিট হইলো সেভেনের ৪ এবং ৭ নম্বর! =))
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
=)) =)) ক্লাস ১২ এর টা বেস্ট ছিল....
🙂 🙂
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
😀
দোস্ত,
তোকে শান্তিতে নোবেল প্রাইজ দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
সাহিত্যে দরকার, শান্তিতে ইউনূস আছে না? 😉
শুধুমাত্র এই পোস্টে কমেন্টাইতে এত্তদিন পর লগ ইন করলাম... মুয়ায, তুই কি তিন তারা ছিলি নাকিরে? এই রুল ফলো করলে তো ক্রসবেল্ট মিস নাই 😉
মাসরুফ ভাইকে দেখা যায় নাকি? 😛
ভাই চিন্তা করতে পারেন এই লেখক "৬ দাগ" ছিল !!!!!
Proud to be a Cadet,
Proud to be a Faujian.
ছয় দাগ পাওয়ার পরেই তো বুঝলাম এই কাজগুলার মাহাত্ম্য। আফসোস, আগে কেউ লিখে নাই, তাইলে আমি চাইর তারা পাইতাম 😉 । (সম্পাদিত)
ক্লাস টুয়েলভের টা অস্থির ছিল 😀
B-) বুঝেনই তো
অনেক রিসার্চ আর বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপূর্ণ সংমিশ্রণ 🙂
এইডা কি কইলেন আমিনভাই???বাস্তব অভিজ্ঞতা???আপ্নিও এই পথে হাটছিলেন নাকি???
যাহা বলিব,সত্য বলিব,সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না
বাস্তব অভিজ্ঞতা নাই ভাই, তবে আশাপাশের মানুষদের দেখেই কিছু অভিজ্ঞতা আসছে। ;;;
:)) :)) =)) =))
:boss: :boss:
:hug: :hug: :hug:
Eto din e bujlam keno amar vagge tara jutlo na............ 😛 😛
=)) =)) :pira: :pira:
😉
বিদিক লিখা :boss:
MENON MCC
ধন্যবাদ ভাই।
এটা কি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা নাকি আক্ষেপ থেকে? যাই হোক, শহীদ/শাহীন/গুরুগৃহ টাইপের কোচিং এর সামনে এই জিনিষ এর প্রিন্ট কপি বিলি করা হউক।
এইরকম একটি হ্যান্ডবুকের অভাবে কলেজের শেষ বর্ষটিতে অফসোসের শেষ ছিল না।
এখন খালি জলিলের গানটাই মনে পড়ছে -
"এতদিন কোথায় ছিলে"
:(( :(( :(( :(( :((
Proud to be a Cadet,
Proud to be a Faujian.
আমারো তো একই অবস্থা।
nothing 2 say!...hahahahhhahhaha......... =)) =)) =))
😀
বেশিরভাগই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। (সম্পাদিত)
ব্যাপক বিনোদন :))
অবিলম্বে লেখাটা বর্তমান ক্যাডেটদের হাতে পৌছানর ব্যবস্থা করা হোক 😉 (সম্পাদিত)
মুক্তি হোক আলোয় আলোয়...
হোক।
একি ভয়ানক পোস্ট...
এটা ঠিক, এইসব মেনে চললে ক্লাসমেটদের পঁচানি খাইলেও এট লিস্ট এ্যাসিস্টেন্ট হাউস প্রিফেক্ট হওয়া সম্ভব। এর নিচে কিছুতেই নামবে না।
কলেজে তারা পাওনি, পোস্টে পাঁচ তারা নিয়ে খুশি থাক।
;;; ;;;
দেরী হয়ে গেলো আসতে, ব্লগে স্বাগতম। টিউটোরিয়াল পোস্ট চরম হইসে। :)) B-)
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
ধন্যবাদ ভাই।
জুনিয়র প্রিফেক্ট হয়েও প্রিফেক্ট না হতে পারা আমার আরও আগে দরকার ছিল এই লেখাটার ;)) ;))
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
দারুন পোষ্ট, পাঁচ তারা দিলাম 🙂
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:thumbup: :thumbup:
হায় হায়, পোষ্টের নিচে তারা দেওয়ার অপশন কই গেলো?!! - কবেত্থেকে এই অপশন বাতিল করা হলো?
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
x-( x-( x-(
ব্লগে স্বাগতম... কঠিন জিনিস লিখস ভাই, কলেজ জীবনে বহু পাবলিক রে কুরআন/গীতা/বাইবেল মানতে দেখসি উপরের কথাগুলা...!!! 😛
:clap: :clap: :clap:
ধন্যবাদ ভাই...
পোলায় কয় কি?
হোয়াট আ পোস্ট!
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
সেরা উদীয়মান সিসিবিয়ানের মুকুটটা মুয়াজের মাথায় পরিয়ে দিতে চাই :ahem:
বেসম্ভব এক পোষ্ট :gulli2: :gulli2: :gulli2:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
এত আনন্দ কোথায় রাখি? থ্যাংক ইউ ভাই...
নেক্সট জন্মে ক্যাডেট হইলে অথরিটিরে তেল মাইরা ফাটাইয়া ফেলবো।
এই জীবনটা বৃথা গেলো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:gulli: :gulli:
ছয় দাগ তো বাতিল করে ছয় তারা দেয়া উচিৎ এই পোস্টের জন্য :thumbup: :thumbup:
ধন্যবাদ আপু... ;;) ;;)
আপু তো মনে হয় ছয় তারা ছিলেন, দুই কাঁধে ৩+৩=৬ টা! 😀
আমাকে আমার মত থাকতে দাও...