মালায়শিয়ার চিঠি – ০৭

সিতি হাজার, ৩৩ বছর বয়সের এই মহিলা, নিজের দেশ ছেড়ে মালায়শিয়ায় এসেছিলেন ২০০৬ সালে । বিবাহ বিচ্ছেদের পর দেশে কোন কাজ না পেয়ে, তিনি একটু বেশি টাকা পয়সা আয়ের জন্য পাড়ি জমান মালায়শিয়ায়। এখানে এসে তিনি ৪৩ বছর বয়সী এক মহিলার দুটি সন্তানদের দেখা শোনার কাজ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার মালিক তাকে সব সময় মারধর করত আর ঠিক মত খেতে দিত না। মাঝে মাঝে খালি ভাত খেতে দিত আবার কোন সময় শূকর খেতে বাধ্য করত।

মালায়শিয়ায় কাজ করছেন এরকম হাজার হাজার বাংলাদেশিদের জন্য এই গল্প হুবহু মিলে যাবে। অনেকেই এর চেয়েও কষ্টে আছেন। কিন্তু সিতি হাজার তো আর বাংলাদেশী না। তাই তিনি এক সকালে বাসা থেকে পালিয়ে একটা টেক্সি নিয়ে চলে গেলেন ইন্দোনেশিয়ান হাইকমিশনে। হাইকমিশন তাকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যায়। এবং পুলিশকে জানান হয়। কিছুক্ষনের মধ্যে তার মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। হাইকমিশন তাকে সাহায্য করার জন্যে একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছে এবং সে তার দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেছে। এখানেই শেষ নয়, গতকাল ইন্দোনেশিয়ান রাষ্ট্রপতি নিজে ফোন করেছিলেন সিতির কাছে। তাকে “শক্ত হতে ” বলেছেন এবং দেশে ফিরলে সব ধরনের সহয়াতা দেবার কথা বলেন ।

অফ টপিকঃ মালায়শিয়ায় এ রকম হাজার হাজার বাংলাদেশী আছেন । আমাদের একটা হাইকমিশন আছে, কিন্তু আমাদের দেশী লোকজন সেখানে যেতে ভয় পায়। আমি নিজের চোখে দেখেছি, আমাদের হাইকমিশন এর ভিতরে এসে মালায়শিয়ান ছেলেরা বাংলাদেশীদের পিটায়। কোন খোদা আমাদের এরকম পুরুষত্বহীন মানুষ হিসাবে সৃষ্টি করেছেন ?

২,৫২৫ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “মালায়শিয়ার চিঠি – ০৭”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আমি নিজের চোখে দেখেছি, আমাদের হাইকমিশন এর ভিতরে এসে মালায়শিয়ান ছেলেরা বাংলাদেশীদের পিটায়

    আমার বিসিএসে প্রথম ক্যাডার পছন্দ পররাষ্ট্র।সম্ভবত হবেনা,পরীক্ষা খুব একটা ভাল হয়নাই।কিন্তু এই বেলা বলে রাখি-পররাষ্ট্র আমার প্রথম পছন্দ হবার কারণ ডিপ্লোম্যাটিক স্টাটাস নয়,যাতে কুয়েত থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে লড়তে পারি আর মেহেদী ভাইয়ের বর্ণিত বাংলাদেশিদের সহায়তা করতে পারি।

    কি হবে জানিনা,কিন্তু লড়ার স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই-কি বলেন আপনারা?

    জবাব দিন
    • মাসরুফ ভাই,
      আমারও একই ইচ্ছা। আমি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ঢুকতে চাই প্রশাসনে। শুধু এই স্বপ্ন নিয়ে-- যেন আমি সারাজীবন যেই দৃশ্যগুলো দেখে অন্য জাতিদের বড় হতে দেখেছি, যেই সিদ্ধান্তের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন পাল্টে যেতে দেখছি; সেরকম কিছু যেন আমি করতে পারি। এখন একটা কিছু দেখে নিরব ক্ষরণ ছাড়া কিছু হয়না বুকের ভিতর। কাউকে ঠিকমত বলতেও পারিনা আমি কতটা কষ্ট পাই...
      অন্যান্য জাতির দেশপ্রেমের নজীর দেখে বিভ্রান্ত হই--- বারবার মনে হয়, সেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর কী আমার দেশে আর দেশপ্রেমিক আসে নাই? চল্লিশ বছরেও এত রুগ্ন কেন এই জাতি? চল্লিশ বছরে পাশ্ববর্তী ভারত কোথায় গেছে!! মালয়েশিয়া তো চোখের সামনেই বদলে গেলো--সেইটা তো আমাদেরই জীবদ্দশায়।
      কী জানি! কবে যে গালভরা কথা বন্ধ করে কিছু করে দেখাতে পারব জানিনা।
      🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁

      জবাব দিন
      • মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)
        কী জানি! কবে যে গালভরা কথা বন্ধ করে কিছু করে দেখাতে পারব জানিনা।

        এভাবে চিন্তা কোরোনা মাহমুদ। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। তুমি যদি কষ্ট করে হলেও নিজেকে সৎ রাখতে পারো, তোমাকে দেখে, তোমার মতন প্রতিভাবান আরো অনেকেই সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে সৎ থাকতে উৎসাহিত হবে।

        জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        @মাহমুদ,

        সরকারী চাকরিতে বেতন কম,সৎ থাকলে সুযোগ সুবিধা বেশি পাওয়া যাবেনা-কর্পোরেট চাকুরির মত অর্থ নেই বলে গ্ল্যামারও অনুপস্থিত এগুলো তো সবাই জানে।করপোরেট চাকরি অবশ্যই চমৎকার চাকরি এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আমার।অল্প বয়েসে যে তরুণ বিবিএ পাস করেই ৫০/৬০ হাজার টাকা উপার্জন করে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করছে-তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এক্ছাড়া আর কিছুই দেবার নেই আমার।তবে এটা কিন্তু সত্য যে দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো কিন্তু নেয় রাজনীতিবিদরা, আর তার পরেই সরকারী আমলারা।কাজেই রাজনীতিতে যোগদান করা সম্ভব না হোক, আমাদের দেশে অবশ্যি নির্লোভ,সৎ কিছু বুরোক্র্যাট দরকার যাদেরকে পদোন্নতির লোভ বা ঘুষের টাকা দিয়ে কেনা যাবেনা।বিষয়টা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।আমার আব্বা আমাকে বলেন-"আমাদের প্রজন্ম নিজের জীবন দিয়ে তোদের একটা স্বাধীন দেশ দিয়েছে-সেই স্বাধীন দেশ তারা দেখে যেতে পারবে কিনা সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে একটা পেশাদার খুনী বাহিনীর মুখোমুখি হয়নাই।তাহলে তোদের প্রজন্ম কি এতই কাপুরুষ যে সৎ থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ন পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেনা?কত কষ্ট সৎ থাকা?তা কি পাক হানাদারদের নির্যাতনময় মৃত্যুকূপের চেয়েও ভয়ঙ্কর?

        বাবার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমার সিভিল সার্ভিসে পরীক্ষা দেয়া।আমি জানি আমি ক্যাডেটকূলকলঙ্ক-বলার মত কোন মেধা আমার নেই।কিন্তু তাও,চেষ্টা করতে দোষ কি?একটা দেশকে বদলাতে কিন্তু খুব বেশি মানুষ লাগেনা-অল্প কয়েকজন খাঁটি মানুষ দিয়েই কিন্তু তার চেহারা পালটে দেয়া যায়।

        খাঁটি মানুষ হতে না পারি,নিজের মাধ্যমে আমাদের অনেকে এটুকুও যদি নিশ্চিত করতে পারি যে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে অন্ততঃ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কম-সেটাই বা কম কি?

        আমি প্রার্থনা করি যাতে তোর স্বপ্ন সফল হয়।যদি কোন ধরণের সাহায্য/পরামর্শ লাগে অবশ্যই অবশ্যই আমাকে জানাবি।আমি যেহেতু বয়স থাকা পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব-দরকার হলে একসাথে বসে পড়াশোনা করতেও আমার আপত্তি নেই।এই মুহূর্তে গাছে কাঁঠাল গোফে তেল মনে হতে পারে কিন্তু আমার কেন জানি ভাবতে খুব মজা লাগছে যে একই জেলায় তুই সহকারী কমিশনার আর আমি পুলিশের এসপি হয়ে জেলাটাকে গড়ে তুলছি(আর অফিসে এনে তোকে লং আপ করিয়ে রাখছি সবার আড়ালে 😀 )

        জবাব দিন
        • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

          তারপর একসাথে সরকারি কাজে ঢাকায় এসে কোন সিসিবি মাহফিলে দুই সহকারী কমিশনার আর পুলিশের এসপি একসাথে লং আপ হয়ে আছে লেট করে আসার জন্য এটা ভাবতে আমাদেরও খুব মজা লাগছে :grr: :grr:


          সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

          জবাব দিন
        • আমাদের প্রজন্ম নিজের জীবন দিয়ে তোদের একটা স্বাধীন দেশ দিয়েছে-সেই স্বাধীন দেশ তারা দেখে যেতে পারবে কিনা সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে একটা পেশাদার খুনী বাহিনীর মুখোমুখি হয়নাই।তাহলে তোদের প্রজন্ম কি এতই কাপুরুষ যে সৎ থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ন পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেনা?কত কষ্ট সৎ থাকা?তা কি পাক হানাদারদের নির্যাতনময় মৃত্যুকূপের চেয়েও ভয়ঙ্কর?

          ভাইয়া, অসাধারণ কিছু কথা এইগুলা। সত্যিই চিন্তার বিষয় এইটা।

          আসলে ভাইয়া, সত্যি কথা হলো, আমি আমার আগের কয়েকটা পোস্ট-এ উল্লেখ করেছিলাম-- একটা অর্থপূর্ণ লক্ষ্য আমার সামনে না থাকায় আমার কাজের প্রতি কোন আগ্রহ আর ভালোবাসা পাইনা। আমার সম্পূর্ণ জীবনের মাঝে এই গ্রাজুয়েশন পিরিয়ডটা আমি এই জিনিসের খোঁজ পাচ্ছিলাম না-- একটা পরিবেশ অথবা ভালো কিছু স্বপ্নদেখা মানুষের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছিলাম কলেজ থেকে বের হবার পর। আফসোস! কুয়েটের ক্যাম্পাসে কোন পরিবেশ খুঁজে বের করতে পারিনি।

          সিসিবি তে এসে মন খারাপ করা পোস্টগুলো দিয়ে আমি ফয়েজ ভাই, স্বপ্নচারী মইনুল ভাই, কাইয়ুম ভাই, ইউসুফ ভাই, তানভীর ভাই এবং অবশ্যই আপনার মত কিছু মানুষের সাথে কথা বলে অনেক ভালো বোধ করছি ভাইয়া। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং এই সিসিবি'র প্রতিও।

          আমি যেই গল্প শুনি-- দেশের কেবিনেটে গেলে সেখানে নাকি সৎ থাকা ভীষণ কঠিন-- জীবন নাকি বিপন্ন হওয়ার ভয় থাকে... অর্থ-সম্পদ নাই...
          আমার শুনে কষ্ট লাগে, চেষ্টা করে দেখতে ইচ্ছে করে... আমি যতদিন এভাবে বসে মাথা কুটবো-- কোন লাভ নাই। আমি কিছুই করতে পারবো না।
          যদি বুর‌্যোক্রাট একজন হতে পারি-- আল্লাহর রহমতের ফলে আমার সুস্থ আর সুন্দর চিন্তার প্রতিফলন পড়তে পারবে পুরো দেশের উপর। ওই একটা পথ ছাড়া আমি বড় ধরনের কিছু করতে পারার যোগ্যতা দেখি রাজনীতিবিদ দের। কিন্তু সেই পথ তো অগম্য...

          ভাইয়া, সুন্দর মন্তুব্যের জন্য বুকের গভীর থেকে ধন্যবাদ

          জবাব দিন
    • মাসরুফ,
      তোমার আগ্রহের কথা শুনে ভাল লাগল। গতকালই একটা ঘটনা শুনলাম, তুমিও শুনে রাখ, কাজে লাগলেও লাগতে পারে।
      মধ্যপ্রাচ্যের কোন একদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে লেবার এ্যটাসে হিসাবে এক তরুণ অফিসার সদ্য নিয়োগ পাওয়ার পর পরই সে দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কিছু সমস্যা দেখা দেয়। অনেক শ্রমিককে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তিনি তার নিজের যোগ্যতায় প্রায় ৪টি কোম্পানীকে এমনভাবে motivated করেন যে তারা কথা দেয়, বাংলাদেশী কোন শ্রমিককে আর তারা ফেরত পাঠাবে না বা হয়রানি করবে না।
      এরকম একটা পরিস্থিতে ত্রাণকর্তা হিসাবে আভির্ভুত হন রাষ্ট্রদূত স্বয়ং। তিনি ঐ তরুণ অফিসারকে নসিহত দেন যে, "এই দেশে নতুন এসেছ, আবহাওয়া, পরিবেশ, পরিস্থিতির সাথে পরিচিত হও, আরাম - আয়েশ কর, তারপর ধীরে সুস্থে কাজ শুরু কর। এই বয়সে এত কাজ করলে বাকী জীবন কিভাবে কাটাবা?" যাইহোক রাষ্ট্রদূতের এই technical threat যখন ব্যর্থ হয় এবং তরুণ অফিসার যথা নিয়মে কাজ করে যেতে থাকেন, তখন ঐ অফিসার কে হুট করেই ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়।
      এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আসলেই তো ক্যাম্নে কি?

      জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        ভাইয়া আমি জানি আমার কাছেবাইরে থেকে কমেন্ট্রি দেয়া খুব সহজ,বাস্তব অনেক কঠিন। তাই আপনার কথার গুরুত্ব অবশ্যই অনুভব করছি।কিন্তু ভাইয়া বলেন তো ব্যাপারটি কেমন হবে যদি পরিবর্তে বদলি হয়ে আসা নতুন অফিসারটি আগের জনের চাইতেও কর্মতৎপর হয়?আর তাকে বদলি করা হলে পরের জন আরো দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করে?কয়জনকে বদলি করবে আগের পচে যাওয়া সচিবের দল?এ কারণেই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞাণে আমি মনে করি যত বেশি সম্ভব ভাল ও যোগ্য লোকদের সরকারী চাকুরিতে যোগ দেয়া উচিৎ।আমার কথায় কিছু মনে নেবেন না ভাইয়া আমি কিন্তু আপনার কথার প্রত্যুত্তর দেইনি-আমার মতামত ব্যক্ত করেছি মাত্র।আমার মতামত ভুল হলে শুধরে দেবেন প্লিজ।

        জবাব দিন
  2. সুমন ভাই,
    লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
    আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন যে আমরা আমাদের নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলতে ভালোবাসি... ...

    পৌরুষত্বহীন জাতি
    বড়ই সত্য কথা। 🙁

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।