[ গল্প অথবা গল্পের ছায়া ]
বাসাটার সামনে টানা তিনশ ফুটের রাস্তা। সেই পত্তনি থেকে দিনে দিনে বেড়ে এতোদূর এসেছে। এটাই শেষ সীমান্ত আজ অব্দি। আদপে ঠিক শহরের প্রান্ত বলে না মানলেও জনবসতির এখানেই শেষ। তিনশ ফুট রাস্তার পরে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ। মাঠ ঠিক নয় পরিত্যাক্ত বিরান ভূমি। প্রস্থে প্রায় এক কিলোমিটারের কাছাকাছি, দৈর্ঘ্যে সাতের বেশী। খুব বেশীদিন অবশ্য এর আয়ু বোধ করি আর নেই। ভূমি ব্যাপারী আর দখলদস্যুদের থাবা একে ঠেলে বাড়াবে অচিরেই।
যা হোক, ছিলো বলেই খোলা প্রান্তর সকালের মৃদু সমাগম আর বিকেল থেকে গুরু সমাগমে মেতে ওঠে। বাকী সময়টা যদিও একেবারে বিপরীত, জনমানবহীন শুনশান।
বাড়ির গ্যারাজে নতুন গাড়ীটা উঠে এসেছিলো তা প্রায় বছর পাঁচেক। পুরোনোটায় বাবার প্রথম জীবনের স্মৃতি। এই পাঁচ বছর আগে অব্দি বাড়ী শুদ্ধ সবার বোঝা সে নিত্য বয়ে গেছে। বাবার কাছে যে জানতে চাইবো – পুরোনো গাড়ীটা কি করবো। তার সাহস হয়নি। আমার নিজেরইতো কত্তো কত্তো স্মৃতি মিশে আছে ওটার ইঞ্চি ইঞ্চি শরীর জুড়ে। ভাবনা চিন্তার সময় নেবো বলে সাময়িক নিয়ে রেখেছিলাম সেই অবারিত প্রান্তরের ধারে। ঠিক বাসার সামনে রাস্তার ওপাড়ে, দশ কি বারো গজ দূরত্বের ভেতরেই।
দোতালার বারান্দায় বসে বাবা রোজ তাকিয়ে দেখতেন। শেষ ক’বছর সকালের আর বিকেলের চা টা বাবার খাওয়া হতো দোতালার খোলা ঝুল বারান্দাটায়। জানিনা কতো নিযুত স্মৃতি তার উথলে উঠতো, কখনো কোনো শ্রান্ত বিকেলে বা নিত্যদিন সকালে। সেই চায়ের পেয়ালা থেকে উঠে আসা ধোঁয়ার সাথে হয়তো তা মিলিয়ে যেতো। হয়তো সেই বাষ্পে চশমার দৃষ্টগ্রাহ্যতা নিত্যই ঘোলা হতো। কর্পোরেটের প্রমোশন রেস আর প্রাত্যহিক নানান ব্যস্ততার ঘণঘটায় স্মৃতিভাবনায় অমন ভাসবার পালা তখন আমার আসতো কেবল সপ্তাহান্তে।
বছর দুই হলো বাবা গেছেন আমাদের মায়া ছেড়ে। সেই থেকে আমার দ্বৈত স্মৃতি রমণ ওই ঝুলবারান্দায় বসে। ইদানিং অবশ্য শুধু সপ্তাহান্ত নয়, সপ্তার ভেতরও প্রায়শই বসা হয়। আজ হঠাৎ যেনো নতুন করে খেয়াল করলাম গাড়ীটার শরীর থেকে কতো কি খুলে পড়েছে। বাতিঢাকনাগুলো তো ছিলো যে কোনোকালে, সেটাই বোঝা কষ্ট। আশ্চর্য ! এতোদিন কিছুই বুঝি চোখে পড়েনি আমার। গাড়ীটার দিকে তাকিয়ে কোন মন্ত্রমুগ্ধতায় অন্ধ বিভোর থাকতাম, কে জানে!
আজ এখন অকারণেই বুঝি মনে এলো যাবার মাসে বাবার সাথে শেষ বিকেলের কথাগুলো। বহুবার চারণ করা বাবার সেই স্মৃতিকথা, শত চেনা, শেষবার শোনা। নতুন কেনা ওই গাড়ীটায় কি করে হাসপাতাল থেকে দুদিন বয়সী আমাকে নিয়ে প্রথম বাড়ী ফিরেছিলেন। বারান্দায় বসে থেকেও মনটা যেনো ঘুরঘুর করতে থাকে গাড়ীটার সারা শরীরে, সীটের গায়ে গায়ে … বাবার মায়ের গন্ধ শুঁকে শুঁকে …
একমাত্র অনুজাটি থাকে জার্মানীতে। এলেই শুধু বলে নিত্য নাকি হিংসে করে আমাকে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ হলে আদৌ সম্ভব হতোনা অমন বিলাসিতা। আমি কপট হাসি, তার সংগে নানান খুনসুটি করি আর বুকের ভিতর সহস্র দীর্ঘশ্বাস পাথর চাপা দেই। সেই পাথরের চারপাশ থেকে ইতিউতি তবু উঁকি মারে লতাগুল্মে পত্রপল্লবে কতশত স্মৃতির টুকরো।
০৯ এপ্রিল ২০১৬
:thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছু লেখা তৈরী তকতে চাইছি। সেই সূত্রে এখানে দেয়া পাঠক মতামত বা প্রতিক্রিয়া বুঝবার জন্য।
পড়বার ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আহসান।
চমৎকার শিরোনামে সুন্দর স্মৃতিকথা।
সিসিবি আজ ঘুমিয়ে পড়েছে, লুৎফুল। প্রায় মাসখানেক গড়িয়ে গেলেও মাত্র একটা প্রতীকি সমর্থন নিয়ে লেখাটা আজও প্রথম পাতায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
আসলেই সিসিবি যেনো ঘুমিয়ে পড়েছে। অনেক দিন আসা হয়নি। গতদিন দুটো পোস্ট দিয়ে আর দেখার সুযোগ হয়নি। আজ দেখে আর এ লেখায় আপনার মন্তব্য পড়ে সত্যিই এক রকম বিমর্ষ হয়ে পড়লাম যেনো।
মনে হচ্ছে দেশ জুড়ে বিরাজমান থমথমে ভাবটা যেনো এখানেও ভির করেছে জোর।
ভীড়*