~ সিরিয়ায় সাম্রাজ্যবাদের খেলা আর ক্ষমতার একক বলয় ভেঙ্গে দেবার পথে পুতিনের বিস্ময়কর পদক্ষেপ এবং অনাগত দুর্মর দিনের সম্ভাব্যতা ~

০৫ অক্টোবর ২০১৫। জাতিসংঘের সাহায্যপুষ্ট আরো বৃহত্তর জোট নিয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর জেহাদীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বার প্রস্তাব রাখলেন তিনি। গত এক দশকের মধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় তার এই প্রথম ভাষণে গঠনমূলক, অর্থবহ আর অবাক করা খোলামেলা বক্তব্যে স্পষ্ট ভাষায় মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসী হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করলেন। তিনি বললেন, “এর ফলেই গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আজ তৈরী হয়েছে এক নৈরাজ্যবাদী অঞ্চল। যা খুব দ্রুতগতিতে লাগাতারভাবে ওই এলাকায় তৈরী করে যাচ্ছে চরমপন্থী আর সন্ত্রাসী। ওই এলাকার বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের ফলে জাতীয় পুনর্গঠনের বদলে ওখানকার দেশগুলোতে ভেঙ্গে পড়ছে শাসন ব্যবস্থা আর পর্যদুস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। যারা এই সঙ্কট সৃষ্টিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের আজ আমি শুধু একটা প্রশ্ন করতে চাই। আদৌ কি বুঝতে পারছেন, কি ভয়ংকর কাজ আপনারা আসলে করেছেন ?”

“মধ্যপ্রাচ্যে এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে আপনারা যা করেছেন তাতে সেখানকার রাষ্ট্র ব্যবস্থাগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। সেই সুবাদে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জঙ্গীবাদী, সন্ত্রাসবা্দী, চরমপন্থী আর নৈরাজ্যবাদীরা। আমি জানি, আমার এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর এখানে মিলবে না। কারণ, যারা এই পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছেন, বদ্ধমূল ভাবে মনে করে্‌ তারা পুরোপুরি নিষ্পাপ এবং এটাই তাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল।”

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের সভায় এভাবেই দৃঢ়চিত্তের ভাষণ দিয়ে পাদপ্রদীপের আলোর সম্পূর্ণ মনোযোগটুকু কেড়ে নেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ বক্তব্য রাখবার আগেই তার সন্ত্রাস বিরোধী অবস্থানের সরব উপস্থিতির নজির রাখতে ওবামার সাথে বৈঠকে আইএস এর ওপর রাশিয়ার হামলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন পুতিন। আমেরিকা ও তার মিত্র রাষ্ট্রদের তাতে বিরোধিতা করবার কোনো কারণ বা সুযোগ কোনোটাই ছিল না। কেননা আমেরিকা আর তার মিত্র রাষ্ট্রের বারো সদস্যের জোট গত আগস্ট ২০১৪ থেকে বছরাধিক কাল যাবত সিরিয়ার ভূখন্ডে জন্ম নেয়া আইএসদের নির্মুল করার লক্ষ্যে যুদ্ধ করে যাচ্ছিল। রাশিয়া যদি সেই একই চরমপন্থী দানব নির্মূলে তার সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হয়, তাহলে তাকে স্বাগত না জানাবার পথ তো আর খোলা থাকে না।

কথা হলো আমেরিকা তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো সহ জোট বেঁধে যে হামলা চালাচ্ছিলো সিরিয়ার ভূখন্ডে আইএস সন্ত্রাসী নির্মূলে তার পেছনে না ছিলো জাতিসংঘের অনুমোদন, না ছিলো তাদের নিজ নিজ রাষ্ট্রের বৈধ কোনো অনুমোদন। ছিলো না সিরিয়ার আইনসিদ্ধ সরকারের কোনো আহবান বা অনুমোদনও। বিপরীতে রাশিয়া যখন আক্রমণে গেলো ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, ওরা গেলো খোদ সিরিয় সরকারের আহবানে এবং তাদের নিজ রাষ্ট্রের নিয়মতান্ত্রিক অনুমোদন নিয়ে। আইএস কে ঘিরে এ নতুন পরিস্থিতি আরো স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান করলো যে সত্য, তা হলো এই যে, পৃথিবীর পরম পরাক্রমশালী সর্ববৃহত সমরশক্তি তার সাথে আরো শক্তিমান বারোটি রাষ্ট্রের সমন্বিত আক্রমণে এক বছর ধরে যে আইএস-এর কিচ্ছুটি করে উঠতে পারলো না। মাত্র ছয় দিনের মধ্যে রাশিয়ার বিমান হামলা সে আইএস-এর সদর দপ্তর সহ তাদের বোমা, মাইন, সুইসাইড বেল্ট কারখানা সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম হলো অনায়াসে। দৃশ্যত আইএস জঙ্গীরা এই ছয় দিনেই ধরাশায়ী হয়ে পালাচ্ছে আর আত্মসমর্পণ করছে।

যে আমেরিকা তার বৈশ্বিক সাম্রাজ্যের মোড়লীপনা জোরদার করবার জন্য পৃথিবী জুড়ে ১২০ টি দেশে ১৪০০ এরও বেশী সামরিক ঘাঁটির শক্তিমত্তায় বিকশিত। তারা যা পারলো না আরো আরো দেশের মৈত্রীশক্তির সমন্বয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পাশে একমাত্র একখানা সামরিক ঘাঁটি নিয়ে দুই দশক ধরে ঘুমন্ত রাশিয়া ছয় দিনে তা করে দেখালো। এ ঘটনাটি কি কেবলি অবাক হবার নাকি ‘বিটুইন দ্যা লাইন্স রিড’ করে আরো বড় রকমের সত্য উপলব্ধি করবার !

আমেরিকা কি আসলেই আইএস দমন ও নিঃশ্চিহ্ন করতেই চাইছিলো নাকি এই মওকা জিয়িয়ে রেখে আরব বিশ্বে বা মধ্যপ্রাচ্যে অরাজক পরিস্থিতির মঞ্চ তৈরী ও বিদ্যমান রেখে সেখানে তাদের সাম্রাজ্যবাদের থাবাটিকে আসলে আরো জোরালো ও সম্প্রসারিত করতে চাইছিলো ! আরব রাষ্ট্রগুলো, যারা সিরিয়ার গণতন্ত্র নিয়ে আমেরিকার লেজুড়বৃত্তিতে ঘুম হারাম করছিলো, তাদের নিজ দেশে কবে কোন দিন মানুষ ভোট দিয়েছে ! ভোট দেয়া তো দূরের কথা ওসব দেশের মানুষ কস্মিনকালে ভোটের বাক্সই সম্ভবত দেখেনি।

আর এক আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই যে, ইজরায়েলের মতোন মুসলিম বিরোধী দেশ এবং আরব রাষ্ট্রগুলো অভাবনীয় ভাবে এক্ষেত্রে ঠিক একই সফল্যে কামিয়াব হতে চাইছিলো। ইজরায়েলের স্বার্থ হলো সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করা গোলান মালভূমির মালিকানাটা নিষ্কন্টক করা আর পারলে দখলী সীমানা আরো কিছু সম্প্রসারিত করা। সেই সাথে সবচেয়ে জোরালো ও সক্রিয় ইজরায়েল বিরোধী শক্তির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে সিরিয়ার সমমনা চার দেশীয় জোটের শক্তি খাটো করে দেয়ায় পারঙ্গম হওয়া। অপর দিকে অন্তঃসারশুণ্য আরব রাষ্ট্রগুলোর কর্ম হচ্ছে চোখ বুঁজে আমেরিকার লেজুড়বৃত্তি করা, যাতে তাদের ভাঁড়ারের সওদা আমেরিকা ইচ্ছে মাফিক সাফাই করতে পারে।

এতো এতো ব্যাপক ব্যপারগুলো হাওয়া থেকে আপনা আপনি কোনো ভাবেই ঘটে যায় নি। উইলিয়াম রোয়বাক যখন সিরিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। সেই ২০০৬ সাল থেকে এই নীল নকশার পরিকল্পনার সূত্রপাত। চক্রান্তটা স্পষ্ট ভাবেই ছিলো এই যে, শিয়া সুন্নী বিভেদ কে কাজে লাগিয়ে জনসাধারণ আর সরকার সকল ক্ষেত্রেই ইন্ধন জুগিয়ে তৈরী করা হবে এক উগ্রবাদী শ্রেণী যাদের দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটাতে ঘটাতে নানান চরমপন্থী গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটানো যায়। যার ফলে জনসাধারণের আস্থা হারিয়ে অভীষ্ট রাষ্ট্রগুলোর সরকাররা হয় আরো নাজুক থেকে নাজুকতর এবং ক্রমাগত আরো আরো ক্ষমতাহীন। লক্ষ্য ছিলো সৃষ্ট সেই নৈরাজ্যকে জিইয়ে রেখে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এমনতরো ভয়ের এক হিস্টিরিয়া ছড়িয়ে দেয়া যাতে করে ওই সব দেশের মানুষ নিজেরাই বদ্ধমূল হয় যে সন্ত্রাসবাদ তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রোথিত। সেই ভয় রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে করে রাখবে নাজুক। জনগণকে করে রাখবে আত্মবিশ্বাসহারা সন্ত্রস্ত, যারা তাদের সরকার বা রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিও কিছুমাত্র আস্থাশীল থাকবে না। সর্বক্ষেত্রে আরাজকতার ষোল কলা পূর্ণ হবে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আর ঘোলা পানিতে জুত করে মতস শিকার করবে সাম্রাজ্যবাদের সম্রাট।

দক্ষিণ আমেরিকান দেশগুলোতে এই কাজটি করতে আমেরিকা পারঙ্গম হয়নি। কেননা তাদের ভেতরকার আঞ্চলিক সহযোগিতার সমীকরণটি ছিল জোরালো। প্রতিটি রাষ্ট্রই নানান বিচারে সমস্বার্থ সচেতন ও আমেরিকান আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাবাপন্ন হওয়ায় কারো ভেতরে সেঁধিয়ে যাবার মতোন সুযোগ সেভাবে তৈরী করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। আর তার বিপরীতে আঞ্চলিক সহযোগিতার সমীকরণটি যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে দিয়েছে সোনার সুযোগ। একের মাধ্যমে অন্যকে ঘায়েল করতে করতে আজ অধিকাংশ আরব রাষ্ট্রই সূতোয় বাঁধা পুতুল নাচের পুতুল বৈ অন্য কিছু নয়।

সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক, বাহরাইন, আরব আমিরাত, মরক্কো, জর্ডান এই সব মধ্যপ্রাচ্য বা ইসলামী রাষ্ট্ররাই আজ ইজরায়েলের মিত্র শক্তি আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে জোট বেঁধেছে সিরিয়া, ইরাক, ইরাণকে কাবু করতে। তাদের অপরাধ তারা আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত করতে অসম্মত। বাহ্যত যাকে শিয়া সুন্নী বিভেদ আর নানান কুমন্ত্রণায় বিবাদমগ্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোত্রের সমষ্টি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে মার্কিন ও মিত্র শক্তি দ্বারা। সৌভাগ্য যে রাশিয়া এই ত্রয়ীর বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আজ কিছু দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছে। হতাশার কথা হলো এই, সিরিয় শরনার্থী নিয়ে পৃথিবীব্যাপী যে আলোড়ন পড়লো তাতে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ আমেরিকার মিত্র আরব মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে ঘুম একটুও ভাঙ্গেনি। নারী হত্যা, শিশু হত্যা, ধর্মের বিকৃতি বিকিয়ে ধর্ষণের মতোন বিষয়ও তাদের সেই ঘুম ভাঙ্গাতে পারে না। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে সবচেয়ে ঘোর মুসলিম বিরোধী রাষ্ট্র ইজরায়েলও আইএস যোদ্ধাদের সর্বান্তকরণ সহায়তা দিচ্ছে, চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। বোঝা যায়, তারা জানে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার গল্পটি ভালোই। নিরে পেরেশান না হয়ে এক মুসলিমকে দিয়েই সে কৃতকার্য আর এক মুসলিমকে নিধনে।

গোটা পরিস্থিতি আজ পুরো বিশ্বকে সম্ভবত এক নতুন অধ্যায়ের খুব কাছাকাছি কোথাও নিয়ে এসেছে। জাতিসংঘে সিরিয়া আক্রমনের বৈধতার বিলে ভেটো দেয়া অপর শক্তি চীনও তাই সমভাবনার অগ্রণী রাষ্ট্র রাশিয়ার আইএস-এর চরমপন্থী সন্ত্রাস নির্মূলের যুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থনে তাদের রণতরী নিয়ে এগিয়ে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্র সীমার কাছাকাছি।

গোটা পরিস্থিতি এখন বিশ্ববাসীর কাছে এটা স্পষ্টত দৃশ্যমান করে দিচ্ছে যে, মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বময় বিরাজমান সন্ত্রাসের বর্তমান চেহারাটি অনেকাংশেই প্রাকৃতিক ও সহজাত নয় বরং প্রস্তুতকৃত (মেনুফ্যাকচার্ড)। যার পেছনে করিৎকর্মা হাতটি সাম্রাজ্যবাদী মহাশক্তির। যা তার সহযোগী ও অন্ধ অনুসারীদের সহায়তা ও মদদপুষ্ট বা অনিচ্ছাকৃত সহয়তাকারীদের শক্তি-সামর্থ্যের বরপ্রাপ্ত। ফলত একটা চিন্তা অকস্মাত বিশ্ববাসীর মাথায় জোর টোকা দিয়েই যাচ্ছে যে একমুখী শক্তির দাপুটে আগ্রাসনের যুগ হয়তো একটা ক্রান্তিকালের মুখোমুখি দাঁড়াতে যাচ্ছে উদ্ভূত এ পরিস্থিতির জের ধরে।

সময় আর মানুষের সচেতন স্পৃহা ও আকাংখাই মানুষকে ও তার পৃথিবীকে পৌঁছে দেবে সেই সম্ভাবনা আর সত্যি ভবিষ্যতের বাস্তব আগামীতে। মানুষ ঘুরে দাঁড়াক। মানুষ জীবন বুঝুক। মানুষ মানুষ হয়ে উঠুক। মনুষত্ব মহিমান্বিত হোক তার শৌর্যে। অস্তমিত হোক সকল অ, অপ, অন্ধকার।

০৭ অক্টোবর ২০১৫

৩,৫৪৭ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “~ সিরিয়ায় সাম্রাজ্যবাদের খেলা আর ক্ষমতার একক বলয় ভেঙ্গে দেবার পথে পুতিনের বিস্ময়কর পদক্ষেপ এবং অনাগত দুর্মর দিনের সম্ভাব্যতা ~”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    এই প্রথম কোন সামরিক অভিযানে ব্যাপক আনন্দ পেয়েছি।
    নানা কারণে এই এটাকের খুব দরকার ছিলো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      একেবারে ।
      সেই এক নাটক, সেই এক কমীরছানা, সেই এক প্রতারণা ...
      একঘেঁইয়েমীর চরম অবস্থা চলছিলো ...
      ভারসাম্যের দাঁড়িপাল্লা এন্টিএয়ারক্রাফট গানের অনুরূপ কৌণিক অবস্থানে দুলছিলো ...
      এখন জল কিভাবে কোথায় কতোটুকুন গড়ায় !!!

      জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    ভারসাম্যটা সবখানেই জরুরি। এক দিকে হেলে পড়া বা বাধ্য হওয়া কাজের কথা নয়।

    পুতিনকে আমার শয়তানের চেলা মনে হয়। তবু হয়তো এক মেরুর অচলায়তনটা ভাঙতে শয়তানকেই প্রয়োজন। খেলা কতোদূর যায় দেখা যাক।

    লেখাটির জন্য ধন্যবাদ লুৎফুল। (সম্পাদিত)


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      একেবারে যথার্থ বলেছেন সানাউল্লাহ ভাই। কেজিবি চালিয়ে দেশ চালাবার সীটে কে আসে, কজন আসে। তাও তিন নম্বর পর্ব চলছে।
      রাশিয়া যে মানবতার সেবার ব্রতে এগিয়ে আসেনি তা তো অবশ্যই আমাদের সবার জানা।
      বিষয়টা হলো এই যে, এক দিকে হেলে হেলে দু'দুটো দশক। একঘেঁয়ে আর লাগামছাড়া হয়ে পড়েছিলো।
      এমন একটা সময়ে, আর তার ওপর যখন স্কুলে, হাসপাতালে, এমন কি বিয়ে বাড়ীতে বোমা আমাদের গিলতে হচ্ছিলো অম্লান বদনে, তখন পুতিনের এই নাটকীয় ভূমিকা ব্যাপক বৈচিত্র, বিনোদন, উৎসাহ, নতুনত্ব উপহার দিয়েছে নি:সন্দেহে।
      কিন্ত পরিণতি আমাদের কোথায় নিয়ে যায় তা ভাববার জটিল এক বিষয়। নিশ্চিত।
      আপনার মন্তব্য ঋদ্ধ হলাম ভাই। (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বময় বিরাজমান সন্ত্রাসের বর্তমান চেহারাটি অনেকাংশেই প্রাকৃতিক ও সহজাত নয় বরং প্রস্তুতকৃত (মেনুফ্যাকচার্ড)।"
    এই জায়গাটা ভাল লেগেছে কারন এখানে মেনে নেয়া হয়েছে যে সংকটের একটি অংশ দৈব অন্যটি কুকড আপ।
    এটা যদি সবাই মানতে পারতো, সমাধান খোজা সহজ হতো।
    কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই ভাবে, এটা কোন মিক্স নয় হয় দৈব (তারমানে কোন সমাধান নাই) আর না হয় তো কুকড আপ (কন্সপিরেসি অব বেনিফিশিয়ারি)।
    আশা করছি, এই চক্র থেকে বেরুনো যাবে।

    ভাল লিখেছো বন্ধু....


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      চক্রান্তের জালটি এতোই সুচারু যে সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার বাইরেই থেকে যায় এর গভীর বুণন।তার ওপর এর যা কিছু বিভৎসতা তা যে সুস্থ্য স্বাভাবিক মস্তিস্কে মানুষই ছকে কষতে পারে তা অনেকটা অবিশ্বাস্যই বটে।
      এমন পরিস্থিতিতে তার আপাত এবং অভাবনীয় উপস্থিতিটি সাধারণের কাছে দৈব বৈ অন্য রূপে আর আসে কি করে !
      ভীষণ লাগসই মন্তব্য। বন্ধু।
      এই যে সিরীয় শরণার্থী নিয়ে নির্মম যে প্রচারণা চললো ক'দিন আগে। আমি যদি বলি তাতেও অনেক নির্মম ও অমানবিক কাটো কষা ছিলো। লোকে আমাকে মারতে আসবে নিশ্চিত।
      কিন্তু আমার জানতে ইচ্ছে করে ডুবে মারা গেলে স্কটা মৃতদেহ কি অবস্থায় থাকবে আর এমন একটা নির্মম মৃত শিশুকে উদ্ধারের পর উদ্ধারকারীকে মিডিয়া কতো দীর্ঘ বিরতিতে প্রথম মন্তব্যের জন্য পেতে পারে !
      আমাদের তবে দৈব হোক আর তৈরী হোক, এর বিপরীতে কি বলার থাকতে পারে। স্তব্ধ, মুক, অভিব্যাক্তিহীন হওয়া ছাড়া।

      জবাব দিন
  4. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    এক দানব থেকে অন্য দানবের অবয়বে খানিক পার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু দিনশেষে তারা উভয়েই দানব।

    আমাদের এদিকে গল্পটির সুরটি পুরো ভিন্ন; আফটার অল আমরা দানব সর্দার।

    জবাব দিন
  5. ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)
    মানুষ ঘুরে দাঁড়াক। মানুষ জীবন বুঝুক। মানুষ মানুষ হয়ে উঠুক। মনুষত্ব মহিমান্বিত হোক তার শৌর্যে।

    :thumbup:



     

    এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...

    জবাব দিন
  6. কৌশিক(২০০৪-২০১০)

    সা'দত আলি আখন্দের অবিস্মরণীয় বই 'তেরো নম্বর লর্ড সিনহা রোড' এ বাংলার ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লব সম্পর্কে অবিশ্বাস্য(তাই বলে অসত্য নয়) এক বিবরণ রয়েছে। নামকরা অনেক বিপ্লবী নিয়মিত পুলিশের টাকা খেয়ে তাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন বা বেশকিছু বিপ্লবী দল তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার ম্যানুফ্যাকচার্ড- এসব তথ্য হজম করতে কষ্ট হলেও বাস্তব। তেমনি বর্তমান সময়ের চরমপন্থি সংগঠনগুলো যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রবাহিনীর গোয়েন্দা সদর দপ্তরে জন্মলাভ করেছে- এ কথাও দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

    হয়তো একদিন সবই পরিষ্কার হবে। কিন্তু যারা ঘর হারালো, আপনজন হারালো তাদের কি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ হবে তাতে? মানুষ কি সত্যিই মানুষ হয়ে উঠবে? অন্ধকার আর অপকে অস্তাচলে পাঠানোর মূল্য যে বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছে, লুৎফুল ভাই !

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      সত্যিই। আমরা দর্শকের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেই যাচ্ছি। আর আমাদের দৈব অনানুকুল্যের শোকে দীর্ঘশ্বাস ফেলছি। আবার মাঝে মাঝে আপন জনদের সতকার করে বিলাপের ভাঁজে চোখ মুছছি। আমরা আবার যেই কি সেই জীবনের আবর্তে জাবর কাটছি।
      আসলে অপই সংঘবদ্ধ। অপই জোর কন্ঠস্বর। অপই ক্ষমতাধর। অপই বিত্তশালী। অপই দানব। অপই উপাসনার অর্ঘ্য গ্রহণের কোচড় সাজিয়ে বসে আছে। অপই দখলদার। অপই বিচারক। ............ এর পর আর সাধারণের কি থাকে ! প্রণাম, ভেট, উপহার, কুর্ণিশ, প্রাণের অর্ঘ্য সেই অপর বেদীতে উপহার দিয়ে আসা ছাড়া।
      হুজুর যদি একবার নাম নেয়, একবার বলে কিছু প্রজায় প্রাণ দ্যায় হেসে।
      হুজুর একবার যদি পিঠ চাপড়ায়, প্রজায় পরিবার ধরে এনে বলি দিতে তড়পায়।
      হুজিরের আর অতশত দোষ কোথায় !

      ~ সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কৌশিক।

      জবাব দিন
  7. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    বেশ চমৎকার একটা লেখা পড়লাম। বিদ্যমান ও প্রসারমান একটি আন্তর্জাতিক সমস্যার উপর অন্তর্দৃষ্টিময় আলোকপাত, খুব ভালো লাগলো।
    আশায় আছি, কবে শিয়া সুন্নীরা তাদের অন্তর্বিরোধ মিটিয়ে ফেলবে। রাষ্ট্রীয় ভাবে এর প্রয়োজন রাষ্ট্রগুলো না্ বুঝলেও, জাতিগতভাবে মানুষগুলো বুঝে তা নিরসনে এগিয়ে আসবে।
    ইউনিপোলার বিশ্বের একচেটিয়া দাপট ও দৌ্রাত্ম থেকে মুক্তি চাই, কিন্তু এক দানবের বদলে একাধিক দানব, সেটাও বা কত ভালো হবে কে জানে!
    তোমার লেখার শেষ তিনটে লাইন দিয়ে বাজী মাৎ করে দিয়েছো লুৎফুল!

    জবাব দিন
  8. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    কিন্তু বিভেদেই হঠকারীর ফায়দার ফলবান বৃক্ষটি লুকিয়ে থাকে। এই বিভেদকে গত পাঁচ দশক ধরে পাশ্চাত্য পরম যত্নে লালন করেছে,পালন করেছে, খাইয়ে পরিয়ে (অস্ত্র আর সহিংসতা) নধর করেছে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখন্ড জুড়ে (আরো আরো জায়গায়ও)।
    ইউনিপোলার আর হবে কি করে। আর রাশিয়াওতো জন সেবা নয়, তার অস্ত্রের বাজার-বানিজ্য চাংগা করতে এই ভূমিকায় নেমেছে।
    তবে বহুদিনের একচ্ছত্র জ্বালাতন একঘেঁয়ে হয়ে উঠেছিলো। তার উপর পুতিন বেশ ফিলমী আমেজে একটা বিনোদোন্মূলক ঢংয়ে ঘটনাগুলো ঘটিয়ে একসংগে অনেক আনন্দই দিয়েছে।

    আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ অফুরান খায়রুল ভাই।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।