০১ অক্টোবর ২০১৫। যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগন রাজ্যের ওম্পকুয়া কমিউনিটি কলেজে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় বন্দুকধারীর গুলিতে ১৩ জন নিহত এবং কমপক্ষে ২০ জন আহত। ওখানকার সংবাদ মাধ্যমগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বন্দুকধারীকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে কিংবা হয়তো সে মৃতের তালিকায় আছে। ঘটনার সময় প্রথমে ৭ জনের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত ছিলো। পরে দুপুর না পেরোতেই ১৩ জন বলে নিশ্চিত করা হয়। স্বল্প জনবসতিপূর্ণ ওরিগনের এই রোজবার্গ এলাকাটিতে এটাই একমাত্র কলেজ। ১৯৬১ সাল থেকে পাঠক্রম শুরু করা এই কমিউনিটি কলেজটিতে বর্তমানে প্রায় ৩,৩০০ জন পূর্ণকালীন এবং ১৬,০০০ জন খন্ডকালীন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করেন। বলা হয়েছে, হামলাকারীর বয়স বিশের নীচে। হত্যাকান্ডের কারন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত এর কিছু জানা যায়নি।
উল্লেখযোগ্য যে ২০০৬ সালে এই কলেজে আরো এক বার বন্দুকধারীর গুলি ছোড়ার ঘটনায় দু’জন মারা যায় এবং জোসেফ মন্টি নামের এক জন তিন তিনটে গুলি খেয়ে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।
এখন কথা হলো এই যে, এ হত্যাকান্ডের পেছনে কি কারণ তা এখনও আমরা জানি না। মৌলবাদ, বর্ণবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ঔপনিবেশবাদ, না কি অন্য কোনো বাদ ! তবে এটুকু জানি যে, ওরিগন রাজ্যে বিনোদনের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ মারিজুয়ানা (গাঁজা) প্রকাশ্যে বিক্রিকে আইনসিদ্ধ ঘোষণার পর এই একই দিন থেকে তার ক্রয়-বিক্রয় উন্মুক্ত করা হয়েছে। বিষয় দুটো সম্পৃক্ত তা বলছি না। কিন্তু সামাজিক সুস্থিরতার প্রশ্নে বৈপরীত্যের একটা সংযোগ নিশ্চিত এ দুয়ের মাঝে আছে।
এই মর্মন্তুদ ঘটনায়, অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে অনাকাংখিত ও অনভিপ্রেত ভাবে যারা মারা গেছেন তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি সন্মান ও প্রত্যেকের আত্মার শান্তি কামনা করি। পরিবার ও স্বজনদের সমবেদনা জানাই।
সেই সাথে তবু একটা কথা না বলে পারছি না। এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে কি আমরা আমেরিকার রাষ্ট্রযন্ত্রের তাদের নাগরিকদের জীবন রক্ষায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে, সুশাসন ইস্যু নিয়ে, শিক্ষাঙ্গণে অস্ত্রের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থতা নিয়ে কথা বলতে পারি না ! প্রশ্ন তুলতে পারি না ! আমাদের বিপুল সংখ্যক অভিবাসী ওই দেশটিতে বসবাস করেন। আমাদের বিশাল প্রবাসী জনগোষ্ঠীর বিপুল বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের প্রথম সারির দেশ আমেরিকা। সেই প্রশ্নে আমরা কি আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে রেড এলার্ট জারীর প্রস্তাব করতে পারি না !
নিরাপত্তার প্রশ্নে জাতিসংঘের সভা নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে আমাদের দেশের এক প্লেন সভাসদকে দ্রুত দেশে ফিরে আসতে প্রস্তাব রাখতে পারি না !
কিন্তু আমরা করি না। কথা হলো, পাশ্চাত্যে যখন এমন খুন খারাবী হয়, আমরা যাই না তার খবরের উছিলায় খবরদারী করতে। কারন আমাদের সেই বাড়ীতে সিঁদ কাটার সাধ নেই, যা তাদের আছে। আর হ্যা, আমাদের খাল কাটার মুরোদ আছে কুমীরের গল্প জেনেও। ওদের সেই মুর্খতা নেই।
অবশ্য এবার মনে হয় নড়ে বসার তাগিদটা বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের বোঝা উচিত। নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করলো। বৃটিশ কূটনীতিক সফর বাতিল করলো। আর সর্বোপরি মনে রাখতে হবে ঘটনা তেমন কিছু ঘটবার অনেক আগেই বৃটিশরা সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছিলো। অবশ্য ইতালীয় নাগরিক হত্যাকান্ডের যে ঘটনাটি ২৯ সেপ্টেম্বর ঘটলো, তার পেছনের কারণটি এখনও প্রমাণিত ভাবে উদঘাটিত হয়নি। যদিও আইএস এটা ঘটিয়েছে বলে দাবী করেছে। এটা নিয়ে সত্যিই গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের ভালো করে জানা বা বোঝা উচিত আইএস এর মতোন একটা জংগী গোষ্ঠী তার আশেপাশের এতোগুলো সমর শক্তিমান দেশের নাকের উপর বসে এতো অনায়াসে কি করে জন্ম নিলো ! আলাউদ্দীনের চেরাগের কল্যাণে নাকি অন্য কোনো নয়া ঔপনিবেশিকতার স্বার্থ মন্ত্রে ! তাদের শক্তিমত্তার উতস কোথায় ! আর সেই আইএস-এর গন্ধ সুদূর প্রাচ্যের এই দেশে ছড়াবার কি সুপ্ত হেতু থাকতে পারে !
যতোদূর বোঝা যাচ্ছে পৃথিবীতে পারমানবিক অস্ত্রের পরের অস্ত্রটির নামে সম্ভবত “ভয়”। নব্য ঔপনিবেশিকতার হাতিয়ারটি হলো “ত্রাস”। আর যে প্রদীপ পৃথিবীতে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের একমাত্র সোল এজেন্ট হবার দাবীদার তার নীচের অন্ধকারে কতো কি ঘটে তার আমরা কতোটুকু জানি আর কতোটুকুই বা বুঝি !
কথা হলো নানান ছুতায় পৃথিবীতে মানুষের রক্ত ঝরতেই থাকবে। আর এই অবিরাম রক্তস্রোত থামানো যেতো তখনই, আমাদের সবার বোধ যখন সত্যালোকে হতো আলোকিত।
বাস্তবের নিষ্ঠুর বৈপরীত্য হলো এই যে, আধারের কিঞ্চিত আড়াল আমাদের বড্ড প্রয়োজন। আমরা যে ভাবি আমাদের ভোগ দখলের দৌড় অনন্তকালের।
০২ অক্টোবর ২০১৫
শুধুমাত্র ওবামার ক্ষমতায় থাকা কালীনই নাকি এটা ১৫তম বারের মতন স্কুলে মাস কিলিং এর ঘটনা।
অস্ত্র রাখার স্বাধীনতা যুক্তরাষ্ট্রের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবুও ওদের ভ্রক্ষেপ নেই।
শুনলাম ঘাতক ক্রিস হারপার মার্সার সম্পর্কে অনেক কিছুই মিডিয়াতে আসছে।
কোনটা যে ঠিক, কোনটা ভুল- কে জানে?
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
চিনি বেচার বানিজ্য করে বলে ঘরে চিনি খেতে (রাখতে) মানা করে কি করে !
নীতি বলে কথা !
নাকি !
শেষ পর্যন্ত দেবতার মর্জি মাফিক খবর আর ব্যাখ্যাই আমাদের গিলতে হবে।
আর আসল সত্যটা আমরা জানি বটে । তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ঘটনার পরম্পরাটি ফসিলে রূপান্তরিত হবার পর ।
নগর পুড়িয়ে আগুন কি দেবালয়ের দ্বারে সমাগত? কে জানে? [ এই যে নতুন খবর! ] 🙁
এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...
বন্দুকধারো একজন বেসামরিক আইটি বিশেষজ্ঞ । অবশ্য তাঁর কাজ ছিলো পুলিশকে সহায়তা করা ।
তার মানে এখানে অন্তর্গত কোনো দ্বন্দ ছিলো । যাতে এমনকি পুলিশ বাহিনীর ভেতরের কারো স্বার্থ বিঘ্নিত হতে যাচ্ছিলো ।
অথবা আরো যে কোনো কারণ।
তবে কথা হলো এই যে সন্ত্রাসবাদ আর খুনোখুনি সব দেবতাদের অর্ঘ্য নির্মাণের স্বার্থেই ব্যবহৃত পথ ও প্রক্রিয়া মাত্র ।
মাঝখানে সন্ত্রস্ত আর জানে ও মালে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমজনতা। এই যা।
হায়রে আম্রিকান গান ল। রাইটস টু বিয়ার আর্ম 🙁
সব বুলশিট।
অস্ত্র বেচার ব্যবসায়ী বলে কথা ।
চিনির গুদামে পিঁপড়ের বাড়াবাড়ি তো হতেই পারে ।
কিন্তু তাতে করে আমদের পরিত্রাণ দেবে কি !
আমাদের দেশে পুকুরে ডুবে মরলেও তাতে ওদের নজরদারী থাকবে। সন্ত্রাস আর মৌলবাদের গন্ধ সেঁটে দেবার চেষ্টা থাকবে।
মানবাধিকার ডিসেকশন টেবিলে যাবে ।
ওদের হলে কিছু । আর তাতে কালো বা বাদামী বা জোব্বা ওয়ালা কেউ না থাকলে তা নিছক হালকা পাতলা সাময়িক উত্তেজনা বা মানসিক অসুস্থতা বাদে কিচ্ছুটি থাকবে না।
তবু যদি এবার কোনো পরিবর্তন আসে।
ওবামা তো বক্তৃতায় বলেছে, শুধু শোক প্রকাশই করনীয় নয়। আরো কিছু করবার আছে ।
দেখা যাক।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
সেই রকমই নয় কি ! অনেক ধন্যবাদ পড়বার আর মন্তব্যে ঋদ্ধ করবার জন্য।
বেশ কিছু গভীর ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই লেখাটিতে।
"আমরা যাই না তার খবরের উছিলায় খবরদারী করতে" - কিন্তু তারা আসে, আসবেই।
"নব্য ঔপনিবেশিকতার হাতিয়ারটি হলো “ত্রাস”। আর যে প্রদীপ পৃথিবীতে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের একমাত্র সোল এজেন্ট হবার দাবীদার তার নীচের অন্ধকারে কতো কি ঘটে তার আমরা কতোটুকু জানি আর কতোটুকুই বা বুঝি !" - জানলে, বুঝলেও, করার কিছু নেই।
"এই অবিরাম রক্তস্রোত থামানো যেতো তখনই, আমাদের সবার বোধ যখন সত্যালোকে হতো আলোকিত।" - চমৎকার কথা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ খায়রুল ভাই।
পড়বার ও মন্তব্যে অনুপ্রাণিত করবার জন্য।