কোয়াড্রোলজি ~ পর্ব ২ | . . . কেমনে সকাল হবে !!!

যতো মিথ্যে বলা হয় ততোই নাকটা বড় হতে থাকে পিনোকিওর গল্পের মতোন । বাড়তি বেঢপ নাক ছাঁটতে, মিথ্যেবাদীর পরিচয় আড়াল করতে, একেবারে সহজতম সমাধান যেনো নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা । ইচ্ছে হচ্ছে চারপাশের ঘটমান অবিমৃষ্য ধারাবাহিকতা নিয়ে নতুন ধরনের রূপকথার গল্প লিখে ফেলি কয়েক ঝুড়ি ।

আমাদের ছেলেমেয়েদের ইস্কুল নেই বেতাল রাষ্ট্রযন্ত্রের মোহনীয় উপহার শিক্ষা বিরতির কল্যাণে । যা কিছু দু-এক চিলতে খেলার মাঠ খুঁজে পেতে বাচ্চারা হাত-পা ছুঁড়তে যায় – সেখানে যেতে দিলেও যখন তখন না ফেরার দেশে নিখোঁজ হবার ভয় । ঘরে বসে, বই পড়ার অভ্যাস খোয়ানো প্রজন্ম, এই সুবাদে হয়তো পড়েই ফেলবে আমার নব্য রূপকথা ।

উনাদের সন্তানেরা অবশ্য পড়বেন না । কারণ, তারা সবাই ব্যস্ত বিদেশ-বিভূঁই এর তারা তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাড়া তাড়া অর্থের বিনিময়ে উচ্চমান শিক্ষা গ্রহণের জোরালো আয়োজন বাস্তবায়নে । পড়বে আমাদের সম্ভাবনাময় উত্তরসুরীরা, যারা সম্ভাবনার কড়িকাঠ গুনতে গুনতে নিরেট প্রাণহীন কাঠে পরিণত হবে, বছরের পর বছর ব্যহত শিক্ষাক্রমের অব্যর্থ শিকার হয়ে ।

চারিদিকে এতো আলো ! ঘরে, বাড়ীতে, পথে, বাসে, ট্রেনে সর্বত্র আলোকিত আজ লেলিহান অগ্নিশিখায় । উদযাপনের এতো শব্দ যজ্ঞ ! ক্রুড বোমা, পেট্রল বোমা, হাত বোমা, ককটেল, গান পাউডার, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, বুলেট । সভ্যতার বিবর্তনের নামে উদাম নিতম্বের তোরণ সাজিয়ে চলছে উতসব আনন্দের হোলি । কাপালিকের হাতে প্রতিদিন উঠে যাচ্ছে রক্ত মাংসের ভোজ । যেনো উতসব রোজ রোজ ।

৩৬৫ দিনের বছরে ১০৪ দিন সাপ্তাহিক, ৬০ দিন উতসব-দিবস-ঈদ-শীত-গ্রীষ্ম ছুটি, ৩০ দিন পরীক্ষা, ১৫০ দিন হরতাল-অবরোধ । বাকী ২১ দিনে আমাদের ছেলে-মেয়েরা আইনস্টাইন, আর্কিমিডিস হয়ে দ্যুতি ছড়াতে ছড়াতে শিক্ষা জীবন শেষ করে মধ্যবয়সের বিমর্ষ বদনে বিষন্ন কাটাকুটি খেলার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা করবে ।

এই মহান অবদানের জন্য আসুন আমরা ‘মানুষের স্বার্থে রাজনীতির বদলে রাজনীতির স্বার্থে মানুষ’ – সভ্যতার এই উত্থিত মার্গে নির্ভেজাল উত্তরণের জন্য আজীবন সন্মাননা জানাই সকল রাজনীতিজীবীদের । হাতে সময় বড্ড কম । এ বিজয়ের মাসে যে কোনো দিন অনন্য অতিমানব সকল রাজনীতিজীবীরা অবসরে চলে যেতে পারেন । তার আগেই পুরষ্কার-সন্মাননার আনুষ্ঠানিকতাটা সম্পন্ন করা খুব প্রয়োজন ।

বিপর্যস্ত অচল শিক্ষাক্রম যে শিশু-কিশোর-তরুণের গড়ে ওঠার সোনালী সময় থেকে ছিনতাই করে নিচ্ছে দিনের পিঠে অগুন্তি দিন, তার এই বেড়ে ওঠার দৈণ্যতা সৃষ্টি করতে কোনো ভিনদেশী হার্মাদ হামলা করেনি । এদেশের নাক কাটা রাজনীতিজীবীরা সেই হার্মাদের চরিত্র ষোলো আনার জায়গায় একশ আনা প্রতিপাদন করেছে । নিজের নাক কেটে অমন যাত্রাভঙ্গের আহলাদী উদ্যোগের কারণ তাদের এক দল এমন মূর্খ যে এর নির্মম ফলাফলের বিন্দু মাত্র ধারণা তার বোধগম্যতার হাজার আলোকবর্ষ দূরে । আর আরেক দল আলোর গতির চেয়ে দ্রুতবেগে আমাদের পেছনে ফেলে নিজ ভাগ্য শনৈ শনৈ অর্জনের তাকতে এতোই তীব্র ছুটছে যে তার আশেপাশের সকল বাস্তব দৃশ্যাবলী অন্ধকারের মতোই অস্পষ্ট ।

এ অন্ধকার রাতের সমাপ্তি কখন, কিভাবে হবে ? আমার উত্তরসূরী কি আপন ও সমষ্টির মাথা উঁচু করবার সম্যক প্রজ্ঞা ও সাহসে তৈরী হয়ে পৌঁছাবে সেই আগামীতে ! যে স্বপ্নবীজ বুনে জন্ম হয়েছিল এ দেশ ও জাতির ।

আমরা কেউই সম্ভবত জানিনা সেই সকাল কখন হবে । আদৌ হবে কিনা । জানি কি ? অন্ধকারের দেয়াল ভেঙ্গে সূর্যের সখ্যতার পথ তৈরী না করলে এ অর্গলবদ্ধ অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কখনো কোনো দিনই ভোরের আলো পৌঁছাবার কোনো সম্ভাবনা নেই । আমরা যে তিমিরে থেমে আছি সে তিমিরের আলিঙ্গনেই স্তিমিত হবে জীবন । কেবল আমার একার নয় । পুরুষ পরম্পরায় সমগ্র জনতার ।

হ্যাঁ যদি নিদ্রামগ্ন স্বপ্ন ঘোর ভেঙ্গে আমার সৌভাগ্য সদাই করা রাজনীতিজীবী বর্গীদের সরিয়ে মানুষকে বসাতে পারি কান্ডারীর আসনে, তবেই সম্ভব অন্য রকম কিছু ।

সেই আলোর গন্তব্যে পৌঁছাবার লক্ষ্যে নির্ভুল মানুষ নির্বাচনে এবারো আপনি কতোটা ভুল করবেন তা আপনার এবং একান্ত আপনার স্বাধীন গণতান্ত্রিক অধিকার । সেখানে যদি অধীনতা আর সুযোগলোভী মোসাহেবীর প্রেম থাকে – তবে সেটা আপনার । আমার নয় । আমার সন্তানেরও নয় ।

০২ ডিসেম্বর ২০১৩
সম্ভাবনা অপেক্ষামগ্ন স্থবির জনপদ, বাংলাদেশ
[ কোয়াড্রোলজির দ্বিতীয় পর্ব ]
প্রেক্ষাপট লেখার সময়কালের । যার ছটা সময়াত্তীর্ণ ।

১,৪৪৯ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “কোয়াড্রোলজি ~ পর্ব ২ | . . . কেমনে সকাল হবে !!!”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    আজকের শিশু কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে তাদের খেলার মাঠ কেড়ে নেয়া আর সংকুচিত পাঠ্যক্রম। হরতাল, অবরোধ ইত্যাকার রাজনৈতিক হঠকারী কর্মসূচীর পাশাপাশি থাকে বিনা কারণে কিছু অনাবশ্যক ছুটি, যাতে ছাত্রদের চেয়ে শিক্ষকদের আগ্রহ থাকে অনেক বেশী। ধীরে ধীরে জাতির মেধার উপর এর কুপ্রভাব প্রকটতর হচ্ছে। তবুও আমরা এমন নেতাই নির্বাচিত করি যারা এসব বিষয়ে উদাসীন। যারা ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে পদাধিকার বলে স্কুল কলেজ কমিটিসমূহের সভাপতি বনে গিয়ে সবার আগে স্কুলের মাঠটিকে খেলার পরিবর্তে হাট বাজার বসানোর জন্য ইজারা দিয়ে টু পাইস কামানোর ব্যবস্থা করে নেন।
    একটা বার্নিং ইস্যুর প্রতি আলোকপাত করার জন্য ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      শিক্ষা ব্যবস্থা সত্যিই জটিল ভাইরাসে আক্রান্ত । এটা এখন পণ্যে পরিনত হয়েছে। আর দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশে কোনো পণ্যেরই মান নিশ্চিতকরনের সুব্যবস্থা চর্চায় নেই ।
      দুদিন আগে আমাদের প্রাচীনতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৯৬ বছরে পদার্পণ করলো । প্রতিষ্ঠার শুরুতে আর তার পরে ক্রমশ এই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড তার বৈশ্বিক মানে ছিলো প্রোজ্জ্বল। মানের বিচারে উল্লেখযোগ্য ছিলো তার অবস্থান। আজ তার নাম বিশ্বের প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় অনুপস্থিত। এর কারণ কি আমরা কেউই কম বেশী বুঝি না ! স্বজনপ্রীতি, গবেষণার নগণ্য উপস্থিতি, শিক্ষাক্রমের আধুনিকায়নের উদ্যোগহীনতা, কতো কতো কারণ যে আছে এর পেছনে । তা বলার জন্য অনেক লম্বা স্ময় ও কথার প্রয়োজন। সংক্ষেপে এটুকু বলা যায় যে এই ভুতের পায়ে হাটার জন্যে কিছুমাত্র বিচলিত নয় রাষ্ট্রযন্ত্র ও শিক্ষা ব্যবস্থা। ঠিক যেনো, কার কি এসে যায় টাইপের একটা মানসিকতা নীতি নির্ধারকদের, উন্নয়নের চালিকাশক্তির ক্ষমতাপ্রাপ্ত মানুষগুলো ।
      আর এই যে রাজনীতির নামে ব্যহত শিক্ষাক্রমের ফলস্বরূপ সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার পথটিকে আমরা বিঘ্নিত করছি তার দায় আমাদের এবং এর ফল ভোগ করবো আমরা ও আমাদের সন্তানেরাই । কথা হলো এতে তাদের কিছু যায় আসে না । তাদের এই বোধ কে কবে কিভাবে জাগাবে সেটাই যেনো এক গভীর গবেষণার বিষয় আজ ।

      জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    ৩৬৫ দিনের বছরে ১০৪ দিন সাপ্তাহিক, ৬০ দিন উতসব-দিবস-ঈদ-শীত-গ্রীষ্ম ছুটি, ৩০ দিন পরীক্ষা, ১৫০ দিন হরতাল-অবরোধ । বাকী ২১ দিনে আমাদের ছেলে-মেয়েরা আইনস্টাইন, আর্কিমিডিস হয়ে দ্যুতি ছড়াতে ছড়াতে শিক্ষা জীবন শেষ করে মধ্যবয়সের বিমর্ষ বদনে বিষন্ন কাটাকুটি খেলার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা করবে ।

    ভালো বলেছো। রাজনীতিবিদ এবং তাদের তোষণকারিরা এটি অনুধাবন করার সুযোগই পাবেন না। তাঁদের ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়ে, বিদেশে থাকে। দৈবাৎ কেউ ফিরে এলে নিজের অথবা বন্ধুর ব্যবসা বানিজ্যের হাল ধরে


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      রাজনীতিবিদ এবং তাদের তোষণকারিরা এটি অনুধাবন করবেনই না কোনো কালে । তাদের গায়ে যে এসব অননুধাবনের মলম লাগানো । অনেক পুরু সেই মলমের প্রলেপ । যা ভেদ করে সাধারণের কোনো দৈণ্যতাই তাদের ছুঁতে পারার সম্ভাবনা কিছুমাত্র নেই ।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।