মহল্লার মাস্তানের চা চক্র আর নোবেল নিয়ে বিশ্ব জুড়ে ঝড়

ভুখাকে এক বেলা খাওয়ালে খুশী । আরেক বেলার খাবার সাথে দিয়ে দিলে আরো খুশী । কিন্তু তাকে খেটে রোজগার করে ওই খাবারের যোগান জোটাবার জন্য কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দিন । খুব একটা মনঃপুত হবে না অধিকাংশের । অথচ কারো উপকার করতে চাইলে শেষের পথটিই সত্যিকার অর্থে কার্যকর । যা অবশ্য বাস্তবে আমি-আপনি চাইলেও খুব একটা বেশী ঘটাতে পারবো না ।

আবার ধরুন বাহবা দেয়া । বেশ সহজ । কিন্তু বাহবা পাওয়ার মতোন কাজটা করবার জন্য যথার্থ সহযোগিতা দেয়া । পরামর্শ-প্রশিক্ষণ্‌ দেয়া, রসদ জোগানো । এগুলো বাহবা দেবার মতোন অতো সহজ কাজ নয় ।

পশ্চিমা বিশ্ব পূবের ভুখা-নাঙ্গা সমস্যা সংকুলতায় এক বেলা খাওয়াবার মতোন, এক খানা জামা উপহার দেবার মতোন, উপকার করবার পাশাপাশি খেটে খাবার ব্যবস্থাপনাতেও খুব একটা কম অবদান রাখেনি । হ্যাঁ ! আপনারা অনেকে হয়তো বলতে চাইবেন সেটা হলো গিয়ে জলের দরে তার নিজের জামাটা-জুতোটা-খেলনাটা বানিয়ে দেবার কাজটাইতো আমাকে দিয়েছে । নিজের স্বার্থেই । আমার জন্যই কি শুধু ! আরে ভাই আপনি অন্যের উপকার করেন কি লোকে আপনার নামে সুনামের গান গাইবে, পরকালে আপনার জন্য হুর-পরী সুরার নহর নিয়ে বসে থাকবে এই জন্য না ! কি বলেন ভাই ! খামোখা খামোখা নিজের নাম মুছে দিয়ে অন্যের উপকার করবার মতোন বোকা মানুষও কি পৃথিবীতে আছে নাকি !

এই যে প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন করে তার ত্রিসীমানা ধরে ড্রাই ওয়াশে পাঠাবার কাজে মত্ত হয়ে আছে আমেরিকা-ইউরোপময় পাশ্চাত্য । সেটার সূত্রপাত কোথায় ! শান্তির লক্ষ্যে ইউরোপ থেকে ইহুদীদের প্যালেস্টাইনে পাঠাবার সনদ পাশ করে নিয়েছিলো কে ! ইউরোপীয় লীগ অব নেশনসের মাতব্বরেরা । যারা ইহুদীদের নিজ সীমানা ছাড়া করতে যারপরনাই মরিয়া এবং বদ্ধপরিকর । তারাই আবার সেই ইহুদীদের পুনর্বাসনে মহান মানবতাবাদীর ভূমিকায় বিশ্বের মোড়ল ।

প্যালেস্টাইনী আরব মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসী পরিচয়ে গোটা পৃথিবীতে পরিচয় করিয়ে দেবার বিষবাষ্প ছড়াতে ব্যাস্ত যে আমেরিকা । সে সেটার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে কিংবা সম্ভাব্য প্রতিরোধ নির্মূল করে নিতে আগে থেকেই প্যালেস্টাইনী যীশুর চেহারা আর লেবাসে সুচারু সম্পাদনা ঘটিয়ে তাকে একজন শ্বেতাঙ্গের অবয়বে প্রতিষ্টা করে নিয়েছে । ভাই, দ্বিমত করবার আগে একটু আমেরিকার গীর্জাগুলো আর ঘরে ঘরে যে যীশুকে তারা সাজিয়ে রেখেছে তা দেখে আসুন । নব্য পাগান তৈরীর কারখানার সক্রিয় সাফল্যের সুবাদে আজ সাধারণ আমেরিকানদের অনেক ধর্মবিশ্বাসীর মন থেকে এ তথ্য মুছে গেছে যে, তাদের উপাস্য ঈশ্বরপুত্র, যীশু, নিজেই একজন প্যালেস্টাইনী আরব ছিলেন ।

হ্যাঁ । লোকে বলে তালেবানও নাকি পশ্চিমা বিশ্বেরই সৃষ্টি । যে সাদ্দাম কে নিয়ে এতো তোলপাড় হলো দুনিয়া । সেই সাদ্দামকে সাদ্দাম বানিয়েছে তো সেই পশ্চিমা বিশ্বই । যেন তেন রকমে ঘটে যায় না এমন কুশলী এদের সব নির্মাণ কিংবা বিনাশ । ওরা যেটাই করে, অনেক কসরত করে অনেক তেল ঘি পুড়িয়েই তা করে। ।

মালালা শব্দের অর্থ বলা যেতে পারে শোকার্ত । মালালা ইউসাফজাই । জন্ম ১২ জুলাই ১৯৯৭ । পাকিস্তান আর আর আফগান সীমান্ত এলাকার সোয়াত শহরে, যাকে কেউ কেউ পাকিস্তানের সুইজারল্যান্ড বলে । সেখানে মাতোড়পেকাই ইউসুফজাই আর বাবা কবি ও স্কুলচালক জিয়াউদ্দীন ইউসুফজাই-এর পশতুন পরিবারে পাকিস্তানের এক শোকার্ত সময়েই তার জন্ম । মাত্র ১১ বছর বয়সে পেশোয়ার প্রেস ক্লাবে বক্তব্যের ভেতর দিয়ে শিক্ষা বিস্তারের পথ পরিভ্রমন তার শুরু ।

২০০৮ । সেই সময় টেলিভিশন, গান-বাজনা, আর নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ করতে ততপর তালেবান সন্ত্রাসে যখন স্কুলে যাবার মতোন ছেলে-মেয়ে পাওয়া যাচ্ছিলো না । কোনো মেয়ে ছাত্রী তো ছিলোই না । এমন সময়ে কবি জিয়াউদ্দীন স্কুল চালু করতে নিজ মেয়েকেই এগিয়ে দিলেন ।

২০০৯ সালের একেবারে শুরুতেই বিবিসির উর্দু ব্লগে মালালার লেখা প্রকাশ পেতে শুরু করে । এর পর তা কেবলি এগিয়ে যেতে থাকে আরো বিস্তৃতিতে । পাশ্চাত্যের মিডিয়া জোঁকের মতোন লেগে ছিল তার পেছনে । তার কাছে এমন কি পৌছে গিয়েছে বারাক ওবামার বিশেষ দূতও ।

০৯ অক্টোবর ২০১২ তাকে হত্যা প্রচেষ্টার পর দূর থেকে তার জন্য করার বদলে সরাসরি অন দ্যা স্পট করবার সুযোগ আসলো পশ্চিমা বিশ্বের । তার চিকিতসা, পড়াশোনা, তার জন্য বক্তৃতা তৈরী করা থেকে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ১০০ জনের মধ্যে তার নাম এনে সর্বকণিষ্ঠ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সেলিব্রিটি হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে পশ্চিমারা তাকে গোটা বিশ্বের সামনে ।

কিন্তু লিলিপুটের দেশে একজন গালিভারকে দিয়ে কি কি উদ্ধার হতে পারে ! মালালার উচ্চকিত কন্ঠ পাকিস্তানে নারী শিক্ষার সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে না পারলেও সংকটটাকে সামনে এনে দিয়েছে, সর্ব-সাধারণের বিশ্বজনীন উন্মুক্ত দৃষ্টিগোচরতায় । কিন্তু নারী শিক্ষাকে কেন্দ্র করে যে অন্ধকার বসত করে পাকিস্তানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে । তা কি করে নির্মূল হবে !

চীন ঘেঁষা, ভারত বিরোধী, কট্টর ইসলামী চিন্তা চেতনার ঝান্ডাবাহী পাকিস্তানে প্রবেশ বা অনুপ্রবেশের জন্য এরকম কোনো মালালার মই চড়বার বড্ড বেশী প্রয়োজন পশ্চিমা বিশ্বের । সেই ভেট-ভেংচি শেষমেষ তাই এসে থামলো নোবেল শান্তিতে । এর পট প্রস্তুতিতে অনুগত পাকিস্তান সরকার প্রথম একখানা সন্মাননা জানিয়ে যে যাত্রা শুরু করেছিলো । তা পরে এক কুড়িরও বেশী সন্মাননা জুটিয়েছে তার জন্যে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে ।

অন্যদিকে কৈলাশ সত্যার্থী । জন্ম ১১জানুয়ারী ১৯৫৭ । মধ্য প্রদেশের বিদিশা শহরে কূলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নেয়া মানুষটিও শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিন দশকের বেশী সময় ধরে কাজ করছেন এমন একটা বিষয় নিয়ে। যে পাঁকে ডুবে আছে গোটা ভারত । শিশু পাচার, শিশু শ্রম এগুলো নির্মুল হবার বাস্তব সম্ভাব্য কোনো দিনে ভারত কোনো কালে পৌঁছুতে পারবে কিনা সে বিষয়ে ভারতের কোনো মুনি-ঋষিও সম্ভবত ঠাহর করে পূর্বাভাস দেবার সাহস দেখাবেন না । কিন্তু সত্যার্থী সেই অসম্ভবের ইতি টানবার লক্ষ্যেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বহু বছর ধরে ।

ভারত সরকারকে দিয়ে কোনোভাবে পুরষ্কৃত করবার নাটকটি মঞ্চস্থ করাতে সক্ষম না হলেও আধা ডজন খেতাব-পুরষ্কার আমেরিকা নিজেই দিয়েছে । তালিকায় তার সাথে আছে জার্মানী, ইটালীর মতোন ইউরোপীয় দেশ । অর্থাত পশ্চিমা বিশ্ব অনেক আগে থেকেই তাক করে ছিলো । যখন সময় হবে তখন ভারতে প্রবেশের কিংবা নাক গলানোর জন্য একটা জানালা হিসেবে প্রেক্ষাপটটি গড়ে রাখা ছিল ।

মালালা বা সত্যার্থী এদের কারো ব্যাক্তিগত চেষ্টা, উদ্যম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান, অবদান কোনো কিছুকেই আমি একবিন্দু বিতর্কিত দৃষ্টিকোণে স্পর্শ করতে আকাঙ্খী নই । কারণ আমরা যারা তাদের সমালোচনা করবো মুখে ফেনা তুলে, তাদের কারোই এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনাকরবার মতোন ন্যূনতম যোগ্যতাটুকুন নেই । মানি আর না মানি, এটাই সত্য ।

তবে এটুকু অনস্বীকার্য যে এশিয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর বাজার দর বাড়ছে । বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এসব দেশে নোবেল পুরষ্কার তাই বৃষ্টির মতোন ঝরছে । রাজনীতি বড়ই নচ্ছার ! বাণের জলের মতোন কি করে কি করে যেনো সে ঠিক ঠিকই নিজ গতিপথের নিশানা খুঁজে বের করে ফেলে !

আবার পাশাপাশি এ কথাটাই নিশ্চিত ভাবে সত্যি যে “ইনফরমেশন ইজ পাওয়ার” । রবীন্দ্রনাথও তার পাশ্চাত্যের সংযোগ এবং পরিচিতি না থাকলে হয়তো কোনোভাবেই নোবেল পেয়ে উঠতে সক্ষম হতেন না । আমাদের ডঃ ইউনুসও না । আরে ভাই তাদের চেয়ে হাজার গুন গুণী মনীষী কেবল কোথাও থাকলেই তো হবে না । লোকে তাকে পুরষ্কৃত কিংবা তিরষ্ৃত করবার জন্য তার হদিসটুকুন তো পেতে হবে । তার কর্মকে জানার সুযোগ পেতে তো হবে ! এখন সেখানে আপনি নাকটাকে পিনোকিওর মতোন একটুখানি বেশী লম্বা করে গলাতে গেলে ঘি এর মাঝে পনিরের পঁচা গন্ধ খুঁজে বের করতেই পারেন ।

বেচারা আলফ্রেড বার্ণহার্ড নোবেল কামিয়েছিলেন দেদার টাকা । কারণ তিনি তো আর যেনো তেনো পণ্যের বেণিয়া ছিলেন না । কামান আর যুদ্ধাস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় লোহা ইস্পাত এসব নিয়ে কারবার । তার উপর জগত বিখ্যাত হয়েছিলেন মানব ও সভ্যতা বিদ্ধংশী ডায়নামাইট এর আবিষ্কর্তা হিসেবে । পৃথিবীজোড়া লোকে তাকে জানতো “মার্চেন্ট অব ডেথ” নামে । যা তার এপিটাফে লেখা থাকুক এটা উনি কোনো ভাবেই চাননি ।

তো তাহলে নামের ওপর থেকে ওই রক্তের দাগ আর কালিমা ধুয়ে নেবার ইচ্ছাতেই তার আয়ের সিংহভাগ অর্থ নিয়ে এই নোবেল পুরষ্কারের প্রবর্তন করলেন তিনি । নোবেল সাহেব যত নোবেল উদ্দেশ্যে আর ইচ্ছায়ই এর প্রবর্তন করুক না কেনো ! রক্তের দাগ তো আর অতো সহজেই মোছা যায় না । তাই বারাক ওবামারও নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেতে কোনো বাধা আর থাকে না । কারণ এক দিকে অস্ত্রের হাট আর শ্যুটিং রেঞ্জ হিসেবে ব্যাবহার হয় যে ফিলিস্তিন । সেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী ইয়াসির আরাফাত । আর অন্যদিকে ফিলিস্তিনের চরম বিরোধিতাকারী ইজরায়েলের নেতা শিমন পেরেজ এবং আইজ্যাক রাবিন একইসংগে পান নোবেল শান্তি পুরষ্কার । এটা ভাই মশকরা না । সহজ হিসাব, যার বাড়ী ডাকাতি করবো, মহল্লার মাস্তান তারে বিকাল বেলায় চায়ের সাথে আফিম খাওয়াইয়া নয়তো ভরপেট ভাত খাওয়াইয়া ভাত-ঘুমে একটুখানি আয়েশে রাখলে ব্যাপারটা এর চেয়ে ভালো হয় আর কোন দিক থেকে । তাই না !

যা হোক, সংযোগ এবং পরিচিতি নিঃসন্দেহে এমন কোনো নেতিবাচক বিষয় নয় যার জন্য এই বিশাল বৈশ্বিক খেতাব ও সন্মাননা এক বিন্দু ছোটো হতে পারে । দুধের বদলে চুন-পানি দিয়ে যদি কেউ চা বানাতে চায় । তাতে তো চায়ের দোষ নেই । তা সেই চা খাওয়ার নাম করে যদি বাড়ী বাড়ী বেড়ানো যায় ! ডাকাতি, খবরদারি, সিঁদ কাটা, আগুন দেয়া, কুড়াল চালানো, পরের বাড়ীর মেয়েকে/ছেলেকে নিয়ে পালানো – কতো কি ই তো করা যায় চাইলেই । মন্দ কি !

এই মায়ানমারেও ম্যালা ফায়দার গন্ধ মিলতেই পশ্চিমারা লেগেছিলো সিঁদ কাটতে । সুকী পেলো নোবেল । স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে মানবতাবাদী অবস্থানের জন্য । তো নাটক শেষ তো সেই স্ক্রিপ্ট আর বাড়ে না । তাই রোহিংগা সমস্যা যখন গোটা বিশ্বকে ছুঁয়ে যায় তার রাক্ষুসে নখের আঁচড়ে তখন কিন্তু সুকীর স্ক্রিপ্ট শাদা কাগজ । মানবতারও তো ঘুম পায় । নাকি ! তাই সুকীর মানবতা এখন ঘুমায় ।

কয়লা ধুইলে যেমন ময়লা যায় না । তেমনি নোবেল পুরষ্কার দিয়ে আর কতোটুকু রক্তের দাগ মোছা যাবে ! মাঝখান থেকে আমাদের ইউসুফ/সুকী/মালালা/সত্যার্থীরা সহজ সোজা পথের মধ্যে জমাট রক্তের পলেস্তারাতে কেবলি পিছলে যায় ।

[ ১১ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে লেখা এবং শেষের আগের স্তবকটি পরে সংযোজিত ]

৩,৪৯৮ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “মহল্লার মাস্তানের চা চক্র আর নোবেল নিয়ে বিশ্ব জুড়ে ঝড়”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাল লাগলো ভাই। নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রাপ্তদের তালিকায় চোখ বুলালে এটাকে শান্তির নামে প্রহসন ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।

    সব ক্ষমতাধরদের রাজনৈতিক চালের অংশ।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      অনেক ধন্যবাদ পড়বার ও মতামত দেবার জন্য । ভাই আহসান আকাশ ।
      স্রল মনে যে শ্রদ্ধা আর আপ্লুত মনের উচ্ছ্বলতা নিয়ে নোবেল পুরষ্কারকে দেখতাম ও মানতাম ।
      সেই সারল্যে যেনো কঠোর কুঠারাঘাত হয়েছে এর সত্যিকারের চিত্রটি উন্মোচন করে ।

      জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ভেস্টেড গ্রুপ নোবেল শান্তি বা অন্য যেকোন পুরস্কারকে যত মিস ইউজই করুক না কেন, এই ধরনের এক একটা পুরস্কার বিভিন্ন এওয়ারনেস বিল্ডিং এর জন্য এখনও কিন্তু একটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
    মামালার জন্য পাকিস্তানের অন্ধকার ওভার নাইট কাটবে না সত্য, কিন্তু যদি কখনো কাটে, হয়তো দেখা যাবে, এই পুরস্কারটি তার সুচনায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল...


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      শুরুতে হয়তো আন্তরিকতা ছিলো । কারন তখন আপন কলংক মাখা রক্তের দাগ মুছবার জন্যই এটাকে চালু করেছিলেন আলফ্রেড বার্ণহার্ড নোবেল । আর তার পেছনে যদি কোনো চক্রান্ত থেকেই থাকে তো সেটা ছিলো বোধগম্যতার অপার সূক্ষ্ণতার দক্ষতায় । ছিলাম যারপরনাই আপ্লুত ।
      কিন্তু শাদা দৃষ্টিতে সন্মাননা আর এওয়্যারনেসের ইস্যু যতোই থাকিক না কেনো আরাফাতের সংগে একই সাথে ইজ্রায়েলের কর্তাব্যক্তির নোবেল পাওয়াটা এক রকম প্রহসন । আর সেই নোবেলের পর থেকেই যেনো আরাফাতের তেজ কমতে থাকে ।
      মালালা ইস্যুটাও তাই । এসাইনমেন্ট ভিত্তিক । আর সুকী ! তাকে কিভাবে পরিমাপ করবে !
      বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার খেতাব যদি প্রত্যাহার করবার রেওয়াজ থেকে থাকে তো নোবেলও প্রত্যাহারের নিয়ম প্রবর্তন করা উচিত ।
      এখন মানবতা আর সুকী যে একতালে ইয়াবার কারখানায় ঘমায়, মায়ানমারে ! তার কি জবাব আছে !
      নোবেলকে কি এখন আর নোবল বলা যায় ! নাকি কমার্শিয়াল পরিচয়েই ভালো মানায় !

      জবাব দিন
  3. নাফিস (২০০৪-১০)

    আমার একটা পোস্ট এর পুরাতন কমেন্ট। আবার দিলাম এখানে।
    মহাত্মা গান্ধী ১২ বার নমিনেশন পেয়েছিল , কিন্তু একবারও পায়নি।কুইক ট্রিভিয়া: ২০১২ সালের নোবেল বিজয়ী সংস্থা কোনটা ?

    গেজ হোয়াট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন 🙂 নট ইভেন এ জোক..
    কিসিঞ্জার, ওবামা , শিমন পেরেজ, আরাফাত এরা খুব কমন ও পরিচিত নন-ডিজার্ভিং উইনার এর নাম। এরা ছাড়াও অনেক নিকৃস্ট নাম চলে আসে.. ওয়াগ্নারী মাথাই, আল গোর আনডিজার্ভিং। ২০০৮ সালে তো বলতে গেলে টাকা দিয়েই এই পুরস্কার কিনে নেওয়া হইলো।
    আরেকটা ইনফো দেই , ইন্টার এর কেমিস্ট্রি টেক্সট বুকের ফ্রিট্জ হেবার এর এমোনিয়া সিনথেসিস এর বিক্রিয়ার কথা মনে আছে ? (হেবার বোস রিয়েকশন ) এই আবিষ্কারের জন্য কিন্তু ফ্রিট্জ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল ১৯১৮ সালে। এই লোকই আবার এমন এক সংস্থার ডিরেক্টর ছিল যারা বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস বানাতো। কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ার এর অন্যতম জনক শান্তিতে নোবেল পেয়েছিল।
    আয়রনিক 😛

    জবাব দিন
  4. সাইদুল (৭৬-৮২)

    নব্য পাগান তৈরীর কারখানার সক্রিয় সাফল্যের সুবাদে আজ সাধারণ আমেরিকানদের অনেক ধর্মবিশ্বাসীর মন থেকে এ তথ্য মুছে গেছে যে, তাদের উপাস্য ঈশ্বরপুত্র, যীশু, নিজেই একজন প্যালেস্টাইনী আরব ছিলেন ।

    একেবারে যেন মনের কথাটাই লিখে ফেলেছো।
    খুব ভালো হয়েছে


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      অনেক ধন্যবাদ ভাই ।
      দেখুন বিষয়টা কিন্তু বাস্তবিকই ম্যানুফ্যাকচার্ড ।
      অন্য কোনো কিছু যেনো তেনো দেখুন কি নৈপুণ্যে ধর্মীয় অনুভূতিও ম্যানুফেকচার করেছে ওরা ।
      ধর্ম আর যাজকেরা সভ্যতার আদি থেকেই শাসককূলের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লেগে এসেছে ।
      কখনো কদাচ কারো উইসডম উটের কুঁজের মতোন উঁচু হয়ে উঠতে চাইলে পানির অভাবে জীবন্ত উটের জমানো পানির থলেতে ছুরি-তরবারী চালিয়ে যেমন নৃসংশতার পরিচয় দিতো সুদূর অতীতের পথিক-কাফেলা । তারো বেশী নির্মম ভাবে সেই যাজককে প্রাণ বিসর্জন দিতে হতো শাসককূলের অংগুলি হেলনে ।

      জবাব দিন
  5. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    চমৎকার লেখা লুৎফুল ভাই।
    নিচে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরলাম।

    "ভুখাকে এক বেলা খাওয়ালে খুশী । আরেক বেলার খাবার সাথে দিয়ে দিলে আরো খুশী । কিন্তু তাকে খেটে রোজগার করে ওই খাবারের যোগান জোটাবার জন্য কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দিন । খুব একটা মনঃপুত হবে না।" - যথার্থ লিখেছেন। এই বিষয়টি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি।

    ঠিক বলেছেন, ইউরোপীয়ানরা যীশুকে ইউরোপীয়ান বানিয়েছে। আমি একবার ইউরোপীয় বন্ধুদের বলেছিলাম, "খ্রীষ্টান দর্শনটি কিন্তু প্রাচ্য দর্শনই।" তারা একটু থমকে গিয়েছিলো। কথাপ্রসঙ্গে বলি, চাইনিজ যীশু কিন্তু দেখতে চাইনিজদের মতোই।

    যীশু কি আরব ছিলেন? আমি তো জানি তিনি ইহুদী ছিলেন।

    "এশিয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর বাজার দর বাড়ছে।" এটা খুবই স্বাভাবিক, প্রকৃতির নিয়মেই এটা ঘটছে। বাংলাদেশ, মায়ানমার দুটিই খুব সম্পদশালী রাষ্ট্র, এটা আমরা যতটা না জানি ইউরোপীয়ানরা তার চাইতে ভালো জানে।

    "লোকে তাকে পুরষ্কৃত কিংবা তিরষ্কৃত করবার জন্য তার হদিসটুকুন তো পেতে হবে ।" খুবই ঠিক কথা। যেমন বিদগ্ধ সমাজের লালন ফকিরের ফিলোসফির খোঁজ পেতে পেতে তিনি আর পৃথিবীতেই ছিলেন না।

    আবারো বলছি খুব সুন্দর লিখেছেন লুৎফুল ভাই।

    জবাব দিন
  6. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    নোবেল পুরস্কার উপযুক্ত ব্যক্তিদের দেয়া হয়েছে নাকি এটা নিয়ে তো অনেক কথাই আছে। করমচাঁদ গান্ধী নমিনেশন পেয়েছিলেন কিন্তু পুরষ্কার পাননি, শেরে বাংলা ভাষাণী-তো নমিনেশনই পাননি, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে উনাদের অবদান কি কম ছিলো? (বিস্তারিত বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে অবশ্য) সাহিত্যে লেভ তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি ও আন্তন চেখভ নোবেল পাননি, আরো পাননি এমিলি জোলা, মার্ক টোয়েন, ভ্লাদিমির নাবোকভ। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ যদি পেতে পারেন কাজী নজরুল ইসলাম কি দোষ করেছিলেন? কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো নজরুল ইসলামের কাজ রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। পদার্থবিজ্ঞানে গিবস, গিওর্গি গামোভ (জর্জ গ্যামো), নোবেল পাননি। পদার্থবিজ্ঞানে রমন-এর সাথে যৌথভাবে কৃষ্ণাণ-এরও পাওয়া উচিৎ ছিলো বলে অনেকে মনে করেন। পদার্থবিজ্ঞানে আরো নোবেল পাননি সত্যেন্দ্রনাথ বোস। আধুনিক রসায়নের ভিত পর্যায় সারণী-র নির্মাতা দিমিত্রি মেন্ডেলিফ নোবেল পাননি। রসায়ন বিজ্ঞানে আরো পাননি হেনরি এইরিং Henry Eyring (1901–1981)।

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      সব যোগ্য ব্যক্তি নোবেল পাবেন এমনটা সার্বৈব সৎ উদ্যোগের ভেতর দিয়েও নিশ্চিত করা যেতো না কখনোই । আবার এর বিচারের কোনো সর্বজন গ্রহণযোগ্য পরিমাপক মানদন্ডও নেই । সেই প্রেক্ষিতে যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবার মতোন কেউ পাওয়াটা যেমন গ্রহণযোগ্য নয় । তেমনি তৈরী করা চরিত্রগুলোকে নোবেল পাইয়ে দিয়ে তাদের খোমা ও গলায় কথা ও কুটকৌশল বেচাকেনা করাটাকে মানা যায় না কোনো ভাবেই ।
      নিরংকুশ পক্ষপাতদুষ্টতা এক জিনিস আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতা সম্পূর্ণ অন্য আরেক জিনিস । প্রথমটা বেশ সহজেই মানা যায়, বলতে গেলে । কিন্তু পরের টা !

      জবাব দিন
  7. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ভাবতে খারাপ লাগে ছোটবেলায় এই 'সুকি'ই ছিল আমাদের হিরো। ওকে মনে করতাম ম্যান্ডেলার মতন...

    গতকাল নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে দারুণ এক মেমে দেখলাম! সত্যিই এটা হলে তা কিন্তু অন্য অনেক সময়ের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে! 😀

    নোবেল ফর বিসিবি! (সম্পাদিত)


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      মানি আর না মানি, নিও কলোনিয়ালিজমের নতুন চেহারাটি মিডিয়ার মারকুটে সন্ত্রাসের চেহারায়ই আজ বিশ্বে দৃশ্যমান। সেই মিডিয়ায় নিউজ বার্গার, গসিপ পিতজা, প্রপাগান্ডা স্যান্ডুইচ এসব মজাদার রেসিপির বানানো খবর খাওয়াবার জন্য তকমা আটা বিক্রয়যোগ্য কিছু শেফের তো দরকার অবশ্যই আছে।
      সেই প্রয়োজন মেটাতেই আজ মাস্টারশেফ আর নোবেল গলাগলি করে বিপণনের তিন পায়ে দৌড় দিচ্ছে।
      সুগার কোটেড মেনুফ্যাকচার্ড ট্রুথ আমরাই কিনে নিচ্ছি আপন উদ্যমে। কখনো আন্তর্জাতিক সংস্থার বান্ধব হাতের আড়ালে, কখনো মেডেল-ট্রফি-মালার মোড়কে, কখনো মানবাধিকারের সোল এজেন্টদের ডিস্কাউন্টেড রেটে মানবাধিকারের হোলসেল প্যাকেজে।

      জবাব দিন
  8. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "রাজনীতি বড়ই নচ্ছার ! বাণের জলের মতোন কি করে কি করে যেনো সে ঠিক ঠিকই নিজ গতিপথের নিশানা খুঁজে বের করে ফেলে !" - চমৎকার পর্যবেক্ষণ!
    কিছু কিছু মুকুট অখ্যাত শিরকে খ্যাত করে, আলোকিত করে, আবার কিছু কিছু শির উজ্জ্বল মুকুটের দ্যূতিকে ম্লান করে দেয়।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।