সেই তারুণ্যের একটা সময় প্রেম ছিলো আগ্নেয়াস্ত্রের সাথে । বুকের ভেতর পাহাড় পাহাড় বারুদ । মনের মধ্যে ক্ষুদিরাম, তীতুমীর, চে’গুয়েভারার আগুন চাপা ছাই । আমার সমস্তটুকু আমি তো আমি নই – ফিলিস্তিনের ভোর, গাজার দুপুর, বাংলাদেশের গাছ-নদী-আকাশ-সবুজ ধানের মাঠময় প্রাণবান রক্তিমাভায় আঁকা গোধূলি বেলা । আসাদের রক্তমাখ শার্ট আমার প্রাণের পতাকা ।
দুই হাত দুই অদম্য মারণাস্ত্র । পাঁচ পাঁচ দশটা আঙ্গুল ভর্তি ট্রিগার । কন্ঠজুড়ে নায়াগ্রার জল পতনের চাইতে তীব্র উচ্চারণের প্রতিবাদ চিতকার । এ শহর, এ রাজপথ, মাঠ, পার্ক, নিয়ন, লাইটপোস্ট সব কিছু ভীষণ আমার । ভীষণ আমার । চেতনে ও অবচেতনে আমি আর কেউ নই । দুর্বার অদম্য এক রাজাধিরাজ ।
স্লোগান আমার কবিতা, মিছিল প্রিয়ার কথকতা । শহরের প্রতিটি ইঞ্চি আমার প্রিয়ার শরীর । যতিহীন সময় জুড়ে তখন প্রতিটি ঘাসের সঙ্গে ছিল শুধু শর্তহীন জীবনের অনন্য কথকতা ।
সেই লাগামহীন প্রেমে কোনো প্রতিদ্বন্দী ছিলো না । ছিলো অগণন সুহৃদ বান্ধব সহযোদ্ধা । ছিলো বীভতস হন্তারক রাজা আর তার কতিপয় পাইক পেয়াদা বরকন্দাজ । তাদের ছুঁড়ে দেয়া সহিংসতার তীর যখন তখন তাক করতো আমাদের প্রেম । শরবিদ্ধ হতো জানা অজানা প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা । সুহৃদ সখ্যের পৌণঃপৌণিক সশোক সন্তাপের শব হয়ে ক্রমাগত ক্রুশবিদ্ধ হৃদয়ে ঝরেছে অবিরল রক্ত-কান্না-জল । তবু সীমাহীন নির্মমতায়ও তারা এক বিন্দুও থামাতে পারেনি আমাদের অদম্য ভালবাসা আর বল্গাহীন সাহস ।
দিবস দুপুর কি মধ্যরাত, হালকা-গাঢ় নীল কিংবা জলপাই সবুজ হুঙ্কার, কিছুই ডাকেনি, নাড়েনি, একটুও কাড়েনি নজর, স্থিরকল্প আমার, শহরের ভাঁজে ভাঁজে বেড়ে ওঠা প্রিয়ার দুর্বিনীত শরীর ছাড়া । যতোই হুমকি আর হুংকার চেয়েছে পরাতে লাগাম আমার সাহসে, পিচ গলা তপ্ত দুপুর কিংবা রাতের অন্ধকার ফুঁড়ে বের হয়ে এসেছি অনির্বাণ । বার বার, যত বার, হয়েছি অবরুদ্ধ, শরবিদ্ধ লাশের সমান ।
আজ কেবলি মনে হয় সেই সব রাতের শহরে হয়তোবা ভুল করে অন্ধকারে অনবধানে ফেলে রেখে এসেছিলাম দু একটা লুকোনো রাক্ষস রাবন অথনা অন্ধকারের আড়ালে মিশে থাকা বিষধর কেউটে !
আজ তাই সময়ের অবিমৃষ্য হেলায় খোলা আকাশের নীচে অহম উল্লাস স্পর্ধায় রাক্ষস কিবা বিষধর নাচে ক্ষ্যাপাটে ! জননিরূপিত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসী নতজানু হয় আমৃত্যু কারাদন্ড রায়ে !
আহা ওরা তো জানে না । প্রেম অবিনাশী । আর বুকের ভেতর লুকোনো আগুন কিংবা আঙ্গুল ভর্তি ট্রিগার । মৃত্যু অপার । যতনে রাখা আছে গভীর সংগোপনে । জানে না সে আদৌ ভালো যাকে বেসেছি, অনাদি বসত তার বুকের বাগানে আমার । সৃষ্টির সীমানা জুড়ে যেখানেই থাকি তবু নগর প্রিয়া সে আমার, সে শুধু কেবলি আমার ।
প্রেম ও প্রণয়ের লাগি তাই চাইলেই যুদ্ধে যাবার পারি আবার । আমারে দাবায়ে রাখে এমন স্পর্ধা আছে কার !!!
[ লেখার সময়কাল ~ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | শেষ প্রহর ]
( যেদিন জননিরূপিত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসী নতজানু হলো আমৃত্যু কারাদন্ড রায়ে )
সেই কীটের জানাজায় আবার লোকে লোকারণ্য।
তবু অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে মরেছে -- বন্দী অবস্থায় মরেছে এটুকু সান্ত্বনা।
ঠিক বলেছো নূপুর ।
এই আমাদের নিয়তি !
আমরা এমনই রাজা জিতিয়ে আনি মিলে সকল প্রজা
যে তাদের এক একটি মাতাল বিলাসিতায় স্বাধীনতা বিরোধীর
গায়ে ওড়ে শহীদের রক্তে আঁকা জাতীয়পতাকা ।
ওরাই শাসায় বেশী, বকে ঝকমারী, মনে হয়
দেশকে ভালোবাসে যাঁরা ওরাই আনাড়ী ।
আসাদের রক্তমাখা শাটর্ের পাশেই
ক্ষুধাতর্ শকুনি
দাঁতাল শুয়োর ভাগাড় ছেড়ে নগর পরিভ্রমণে
ভোরের সূর্যোদয়ের আর কত দেরী!
আসাদের রক্তমাখা শাটর্ের পাশেই
ক্ষুধাতর্ শকুনির শ্যেনচক্ষু
দাঁতাল শুয়োর ভাগাড় ছেড়ে নগর পরিভ্রমণে
ভোরের সূর্যোদয়ের আর কত দেরী!
ভাগাড়ে কি শুয়োর থাকে নাকি? শকুনিরা থাকে ভাগাড়ে, রাইট? অকবির কী অবস্থা দেখুন ভাইয়া, কি লিখতে কী লিখলাম। এডিটও করতে পারছিনা!
"ক্ষুধাতর্ শকুনির শ্যেনচক্ষু
দাঁতাল শুয়োর ভাগাড় ছেড়ে নগর পরিভ্রমণে"
- কোনো কিছুতেই কোনো সমস্যা নাই ।
দাঁতাল শুয়োর বলে কথা । ভাগারই তাদের যথাযথ স্থান ।
যেখান থেকে নগরে ঢুকে পড়ে ...
আর কবিতায় এবং পরাবাস্তববাদিতায় কোনো সীমানা টানা নেই ...
এভরিথিং ইজ পারফেক্ট । নো ওরিজ এট অল ।
আমিতো ভাবছিলাম উল্টোপাল্টা কথা বলার অপরাধে শূলে না চড়তে হয় এবার, ভাইয়া! আপনি বাঁচালেন সত্যি।
রাজ্য আমাদের ... রাজাওতো আমরাই ...
শূলে চড়াবেটা কে !!
😀
"প্রেম ও প্রণয়ের লাগি তাই চাইলেই যুদ্ধে যাবার পারি আবার । আমারে দাবায়ে রাখে এমন স্পর্ধা আছে কার !!!"
সাবাস! সাবাস!!
ভাই এক সময় সত্যি এমন মনে হতো ।
মনে হতো তোয়াক্কা করি না কিছুই ।
মনে হতো দুঃসাহসে রুখে দাঁড়ালে সব পালাবে ...
অমনি অজানা সংখ্যক মানুষের তোপে একাকী এগিয়ে গেছি ...
দুঃখের বিষয় হলো । এখন মনে হয় তখন অনেক কম বুঝেছি ।
তবু সেই আবেগের জিভ আজো লকলকিয়ে বের হয়ে আসতে চায় যেনো ... কখনো কখনো ...
পড়ে ভাল লাগলো এই ভেবে যে কি সব দিনই না কেটেছে আমাদের!!!
আবার মন খারাপও হলো, এখনকার তরুনদের কথা ভেবে। ওরা সেই সব উত্তাপগুলো থেকে বঞ্চিত।
আর হয়তো এই কারনের অনেককেই দেখি সারাক্ষন হিসাব নিকাশে ব্যাস্ত থাকতে: "কি করবো? কেন করবো?? কি লাভ এসব করে??? ইত্যাদি......
আমরা কোন পথে এগুচ্ছি????
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
সেইটাই। সেই উত্তাপ, সেই উদ্দামতা, সেই সাহসের ঈগল ডানা তো দেখেনি সবাই।
রংধনু যে দেখেনি তাকে কি কখনো বোঝানো যাবে সেটা দেখতে কেমন !
তাছাড়া যুগের সাথে সাথে সব বোধ বিবেচনার পরিমাপকগুলো পাল্টাতে থাকে।
তাই সেভাবে বোধের বৃত্তে কখনোই যাবে অতীতকে ধরা।
কি আর করা।