ভোর না হতেই কোকিলের ডাকটা অনবরত কানের পাশে বাজতেই থাকলো। দীর্ঘক্ষণ। অথচ তাতে আমার কিছুমাত্র ভালো লাগছিলো না। নিশ্চিত ভাবেই জানি এই কংক্রিটের শহরে খুব কম মানুষই এমন কোকিল ডাকার শব্দ শুনতে পান। তবুও এই ভয়ানক শ্বাপদসম শহরে যেনো বড্ড বেশী বেমানান শোনাচ্ছিলো এই কুহু কলতান।
এ শহরে যখন প্রথম শ্রেণী আর পঞ্চম শ্রেণীর শিশুদেরও অশালীন অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয়। রাজধানীর বুকে বসে সেখানে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার পদক্ষেপহীন বসে থাকার স্প্র্ধা দেখাতে পারেন। রাষ্ট্রযন্ত্র ফাইলের ফিতার প্যাঁচে সংশয়গ্রস্ততাও নয় নিরেট নির্বিকারতা নিয়ে বসে থাকেন। তখন এ শহরে কোকিলের ডাকটিকে বড় বেমানান লাগে।
যখন জলে ভাসমান স্বপ্নাবিষ্ট মানুষ জল ও জীবনের বিস্কিট দৌড়ে সপে দিয়ে প্রাণের নিয়তি স্বপ্ন ভংগের বিহবলতায় চেয়ে থাকে সভ্যতার দিকে। আর আমি দেখি তাদের রক্তে, মজ্জায়, জিরজিরে শরীরে, আমারই স্বাধীন দেশের পতাকার ছবি। তখন কেবলি বিভ্রম খেলা করে মাথার ভেতর! কুনতা-কিনতের সেই শেকড় যেনো শতাব্দীর অপার সময়ের ভাজেও আমরা মাটি চাপা দিতে পারিনি।
এই স্বাধীন দেশে আমরা মানুষের কাছে ন্যূনতম অধিকার সম্পৃক্ততার সত্যের আলোক পৌঁছাতে পারিনি। পারিনি তার ভাগ্যান্বেষনের সোনালী ঘুড্ডির গায়ে সুতো আর নাটাইয়ের সামান্য সখ্যতাটুকুন জুড়ে দিতে।
আমরা পারিনি বাম্পার ফলনের পুরষ্কার মাটি ও প্রাণের প্রণতি মাখানো সেই তামাটে কৃষকের হাতে তুলে দিতে। বিপরীতে তার অর্জনের বাহবাটুকু নিদারুন কুশলী প্রয়াসে তুলে নিয়েছি আপন পকেটে।
আমরা পেরেছি ধর্ষকের জানের ও মানের হেফাজত করতে। আমরা পেরেছি জলে ভাসা জীবনেরে নির্বিকার অবজ্ঞা আর অবহেলা দিতে। আমরা পেরেছি কৃষকের নায্য প্রাপ্তির পথে ফড়িয়ার অট্টহাস্য ফায়দার মজবুত ব্যবস্থা করতে।
আমাদের শহরে কি আদৌ মানায় কোকিলের কুহু কলতান! জীবনের জয়গান!
১৭ মে ২০১৫
প্রথম প্রহর
এই একই ভাবনার অবসাদ থেকে এর পরই এসেছে এই পরেরটুকু তাই দিলাম একসাথে।
~ একা ও একাকীত্বের সখ্যতা ~
রাতের শহরে একাকী গিয়েছিলাম নিরিবিলি রাজপথের সখ্যতার কাছে।
স্মৃতির শরীর থেকে নক্ষত্রের আলিংগনে যাওয়া বন্ধুরা একাকীত্ব কেড়ে নিয়েছে।
লাইটপোস্টগুলো আমার ছায়ার পাশে ছায়ার মিছিলে ঢেকেছে আপন আলোক।
পুরোটা পথের বিস্তৃতি জুড়ে ছায়াগুলো বলে গেছে নিযুত কথার শ্লোক ;
মিছিলের, শ্লোগানের, সাত সতেরো দাবী দাওয়ার হাজারো দফা পাঠে।
চেনা বৃক্ষের আধারিতে একা হতে চেয়েছিলাম তার বাঁধানো পাদপীঠে,
পাতারা সব নেমে আসতে শুরু করলো সংখ্যাতীত পতনের ঐকতানে ছুটে।
বৃষ্টিদানার মতো তাদের কথার খই ঝরে পড়তে লাগলো অগুনতিতে।
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ভোরের আলোর কাছে পৌঁছুতে চাইলাম একাগ্রতার সাথে।
চিলতে আলোর আগে তাদের কথারা ছুটে এলো বেগুনী রশ্মিময় অগণন সতর্কবাণী নিয়ে।
এতো কোলাহল একাকী আমাকে লক্ষ অলৌকিক জিভ নেড়ে ভেংচি কাটতে লাগলো।
চেনা উদ্যানটির কাছে যেতে চাইলাম, মগ্ন একাকীত্বের তীব্র আকাংখা বয়ে,
সহস্র ঘাসেরা ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো প্রাতভ্রমণকারীদের একান্ত যন্ত্রণার গল্পগুলো।
নদীর কাছে যাবো ভাবলাম, দুপাশের নর্দমারা সেখানে তাদের আধিপত্যবাদের হুমকী শোনালো।
অবশেষে বাতাসের কাছে আক্রমণমুখী প্রতিবেশ থেকে বাঁচাবার আকুল আর্জি জানাতেই,
সাপের মতোন হিসহিসিয়ে দু’কান বিদীর্ণ করে ওরা জানালো আমার নির্দয় অপরাধের ফিরিস্তি।
আমার সাথে কেবল আমারই কিছু অনন্য সখ্যতার লাগি এবার যখন আকাশের আনুকূল্য চাই।
তীর্যক হেসে উঠে গাঢ় মেঘের চাদরে আদিগন্ত নিজেকে আড়াল করলো সে নিমিষেই।
১৮ মে ২০১৫ ~ ভোর
বড় বিচলিত আছেন।
বড় ক্ষুব্ধ আছেন। অবিচল থাকা কি সম্ভব?
ভালো লাগার সবকিছু যেনো কেমন লোপাট হয়ে যাচ্ছে। অধম অক্ষমের ক্ষোভ ছাড়া আর কি আছে !
🙁 🙁
আমরা পাথরের মত বসে থাকি ভাই,
শ্যাওলা ধরে যায় গায়ে
গায়ে কে দেবে ঢেলে ঝর্নার জল
দেখব দুচোখ মেলে।
শ্যাওলায় যাচ্ছি পড়ে ঢাকা।
থাকা বলতে এখন ওইটুকুনই থাকা।
সত্যি ।
খেঁউড় খিস্তি বাদে অনেক সুন্দর করে এই শহরের অবস্থা বলেছেন। ভালই বলছেন ভাই। :clap:
কিস্তি খেউড়েরই বা সাধ্য কি ওদের ছোঁয় ।
অনেক আগেই "কোকিল মুক্ত এলাকা"। এখন "পক্ষীমুক্ত" এলাকা হবে। তার পর হবে "বিবেক মুক্ত" এলাকা। বিবর্তন বাদের অমোঘ ক্রমঃ উর্ধগমন।
আমার বাসার আশে পাশে বেশ গাছপালা। আর ভোর হবার সময় অগুনতি পাখীর কলতান মুখরিত হয়ে ওঠে। যেটার সৌভাগ্য ঢাকা শহরের খুব কম মানুষই হয়। খুব ভালো লাগায় মন ভরে যায়। কিন্তু সেদিন সকালে সত্যিই যেনো বড্ড বেমানান লাগছিলো।
পাখীরা যদিওবা এমন কোথাও মিলে যায়। বিবেকের দেখা বুঝি মেলা খুব ভার।
লুৎফুল
মাঝে মাঝে একদম তোমার মত চিন্তা মাথায় আসে কিন্তু খুব ভীতু মানুষ আমি, কিছু করার সাহস পাইনা।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
সাহস তো আমারো ওই কাগজ কলম কী বোর্ড পর্যন্ত। জীবন যে অংকের পাকে পড়েছে তাতে সাহস আমাদের পকেটের ভেতর লুকিয়ে পড়েছে।
মাঝে মাঝে দু:সাহসী হবার স্বপ্ন উকি দিয়ে যায় বটে। কিন্তু সন্তান সংসার আর ইঁদুর দৌড়ের তোড়ে তা হয় বানে ভেসে যায় নাহয় সোনার শেকল পরে বসে থাকে।
কোকিলের ডাক আমিও শুনি। না মানালেও শুনি ও শুনতে চাই। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও তো সুন্দর কিছু অনুভূতি মনে গেঁথে থাকে!
"আমরা পারিনি বাম্পার ফলনের পুরষ্কার মাটি ও প্রাণের প্রণতি মাখানো সেই তামাটে কৃষকের হাতে তুলে দিতে" - এটা আমাদের নিদারুণ ব্যর্থতা!
এক সময়ে রাজনীতি করলে লোকে বলতো ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। এখন রাজনীতি মানে বনের মোষ জবাই দিয়ে ঘরে নিয়ে আসা।
বন তো আর নয় সেই বন তা হলো আম জনতা, যারা রাজার নীতির বলি হচ্ছে অষ্ট প্রহর।
কি নির্মম আমাদের পুরষ্কার। যাদের ঘামে আমরা পরি সাফল্যের সোনালী মেডেল তাদের দায় আর গন্ডী বাধা শুধু হাপড়ের আগুনে।
আমি কিন্তু এত কিছুর পরেও আশাবাদি থাকতে চাই।
জানি, এইরকম নির্বুদ্ধিতা পূর্ন আশাবাদ মন ভেঙ্গে দেবে তবুও আশা ছাড়তে ইচ্ছা হয় না...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আশাই সকল ভরসা।
আশা নিয়ে ঘর বাঁধি, আশায় পকেট ভরি...
সব বৈরীতার বিপরীতে আশাই সেই শেষ খড়-কুটো যা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে ।
আর আমাদের দেশের মানুষ নিয়ে তো কতো রকম গল্প আছে ...
ওই যে এক বিদেশী প্রথম প্রথম এদেশে খালি গা, ছঁড়া গেঞ্জী-লুংগি, আধপেটা মানুষকে অনাবিল হাসতে দেখে প্রথম প্রথম ভেবেছিলো এগুলো আসল নয়, নির্ঘাত মেকি । পরে তার ধারনা পাল্টেছিলো, আর সে যার পর নাই অবাক হয়েছিলো । এতো নিঃস্ব এবং ন্যূনতম চাহিদার বৃত্ত থেকে দূরে থেকেও মানুষ কি করে এতো সুখী হতে পারে তা তার বোধগম্য হয়নি কোনো ভাবেই ।
আর সেই দেশে আশা-ভরসার রংগীন ঘুড়ি আমাদের স্বপ্নছবি হয়েই তো ওড়ে আকাশে ...