খেলায় খেলায় পাওয়া পরিচয়ঃ

এবারে, অর্থাৎ বিশ্বকাপ ফুটবল-২০১৮ আমি পূর্ণ মনযোগ নিয়ে দেখছিনা। এর প্রথম কারণ বৈরী সময়, বেশী রাত জাগা স্বাস্থ্যের অনুকূল নয়। আর দ্বিতীয় কারণ আমি অন্যবিধ কাজে অর্থাৎ কিছুটা লেখালেখিতে ব্যস্ত। রাত দশটায় শুরু হওয়া খেলাগুলো এখনো দেখি, তবে বরাবরের মত টিভি’র সামনে বসে থেকে খেলা না দেখলেও মাঝে মাঝে লেখা থেকে উঠি আর দেখি। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার উন্মত্ত সমর্থকদের বাড়াবাড়ি দেখেও যারপরনাই বিস্মিত হই । আমার এক ফেইসবুক বন্ধু মন দিয়ে প্রতিটি খেলা দেখে থাকেন, নিজের ধারণা থেকে কিছু কিছু ক্যালকুলেশন করে মাঝে মাঝে কিছু ভবিষ্যৎবাণীও (প্রেডিকশন) নিজের ওয়ালে পোস্ট করেন। সেগুলো নিয়ে তার বন্ধুরা আলোচনা সমালোচনা করেন, আমিও একজন নীরব পাঠক হিসেবে সেগুলো উপভোগ করে থাকি এবং নিজেকে এ বিষয়ে আপডেটেড রাখি। যেহেতু পুরো খেলা মন দিয়ে দেখিনা, সেহেতু কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকি।

ওনার স্বভাব, যে দেশের খেলা হয়, সে দেশ সম্বন্ধে এবং সে দেশের ফুটবল ইতিহাস সম্পর্কে কিছু খুঁটিনাটি তথ্য ইন্টারনেট ঘেঁটে জেনে নেওয়া। আজকাল তো এসব খুবই সহজ, সব তথ্যই থাকে আমাদের হাতের মুঠোয়। গত ২১শে জুন আর্জেন্টিনাকে বিদায়ের পথ দেখানো (তখন, আপাতঃদৃষ্টিতে) দেশ ‘ক্রোয়েশিয়া’ (Republic of Croatia/ROC) সম্পর্কে ইতিহাস ঘাঁটাঘাটি করে তিনি ২২শে জুন তার পোস্টে লিখেছিলেনঃ

“দক্ষিন-পূর্ব ইউরোপে আড্রিয়াটিক সাগরের পারে মাত্র ২১,৮৫১ বর্গমাইল এলাকা আর ৪১ লক্ষ জনগোষ্ঠী’র দেশ ক্রোয়েশিয়া। ১৯১৮ সালে যুগোশ্লাভিয়া (Yugoslavia) এর অংশ। যুগোশ্লাভিয়া ভেংগে যাওয়ায় যে ৬টি নুতন দেশের জন্ম, ক্রোয়েশিয়া তার মধ্যে একটি, জন্মঃ ২৫ জুন ১৯৯১। রাজধানী ‘জাগরেব’, ভাষাঃ ক্রোয়েশিয়ান। ছোট্ট দেশটি NATO সদস্য।“

ওনার এই মন্তব্য পড়ে আরো কিছু অনুসন্ধানী পাঠক ক্রোয়েশিয়া সম্পর্কে আরো কিছু খোঁজ খবর নিয়ে নতুন কিছু তথ্য উপাত্ত সংযোজন করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ক্রোয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষিতা প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার কিতারোভিচ সম্পর্কিত তথ্যাবলী। সেসব মন্তব্য পড়ে আমিও তার সম্বন্ধে জানতে কিছুটা আগ্রহী হই এবং উইকিপিডিয়ায় তার সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে বিমোহিত হই। কোলিন্দা গ্রাবার কিতারোভিচ জানুয়ারী ২০১৫ তে ক্রোয়েশিয়ার চতুর্থ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার আগে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্রোয়েশিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নে সমন্বিত হবার ব্যাপারে প্রধান আলোচক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি ওয়াশিংটনে ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। NATO এর ইতিহাসে একজন নারী হিসেবে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল’ এর পদটিও (এ যাবত সর্বোচ্চ) তিনি অলংকৃত করেন। তিনি একটি স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে নিউ মেক্সিকোতে পড়াশোনা করেন, জাগরেব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী ও স্প্যানিশ সাহিত্যে এবং ভিয়েনাস্থ ডিপ্লোম্যাটিক একাডেমী থেকে ডিপ্লোমেসীতেও ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করেন। ক্রোয়েশিয়ান, ইংরেজী এবং স্প্যানিশ ভাষা ছাড়াও তিনি পর্তুগীজ ভাষায়ও অনর্গল কথা বলতে পারেন এবং জার্মান, ফরাসী এবং ইতালীয় ভাষা বুঝেন। ৫০ বৎসর বয়স্কা এই সুদর্শনা প্রেসিডেন্ট তার স্বামী জ্যাকভ কিতারোভিচ এর সাথে সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করে আসছেন এবং তাদের সম্বন্ধে কখনো বিচ্ছেদের কোন গুজবও এ যাবত শোনা যায়নি। কাতারিনা (১৭) এবং লুকা (১৫) নামে তাদের দু’টি মেয়ে রয়েছে।

গতকালও আমার সেই বন্ধু ক্রোয়েশিয়া বনাম রাশিয়ার খেলা দেখতে দেখতে লক্ষ্য করলেন যে ক্রোয়েশিয়ার অনিন্দ্যসুন্দরী, উচ্চশিক্ষিতা প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা ভিআইপি গ্যালারীতে বসে ক্রোয়েশিয়া বনাম রাশিয়ার খেলা দেখছেন এবং নিজ দলের খেলোয়াড়দেরকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। উনি পোস্ট দিলেন, “ওয়াও, সুদর্শনা প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা ভিআইপি গ্যালারীতে বসে ক্রোয়েশিয়া বনাম রাশিয়ার খেলা দেখছেন!” একটু পরে ওনার একজন বন্ধু যোগ করলেন, উনি যখন ন্যাটোর “‘অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল” পদে কর্মরত ছিলেন, তখন তাকে SWAMBO নামে ডাকা হতো। এ নামের মানে নাকি “She, Who Must be Obeyed”। বাহ, নামে আর তার মানেতে কি চমৎকার একটা সাযুজ্য! দেখতে চোখ ধাঁধানো সুন্দরী হয়েও কর্মক্ষেত্রে তিনি একজন “hard nut to crack!” খুবই কার্যকর তার কমান্ড! আনুগত্য তার অঙুলি হেলনে পিছু নেয়। কিন্তু এ ক্ষমতাটুকু তিনি কোন পারিবারিক অধিকারে অর্জন করেন নি, করেছেন নিজ যোগ্যতাবলে, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে। নামের মানেটা যিনি ইংরেজীতে এভাবে অনুবাদ করেছেন, তিনি সেটা কতটা সঠিকভাবে করেছেন জানিনা, তবে অনুবাদটা আমার ভাল লেগেছে। “She, Who Must be Obeyed”- এ কথাগুলোর সাথে একটা স্বৈরাচারী দ্যোতনা থাকলেও, লন্ডন স্কুল অভ ইকনমিক্স কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে তিনি “A Defining Moment in European and Trans-Atlantic Resilience- the Croatian Perspectives” এর উপরে যে চমৎকার ভাষণটি দিয়েছিলেন, সেটা শুনে আমার মনে হয়েছে, এরকম একজন প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই তার নাগরিকদের “Obey” করা উচিত। সে ভাষণের লিঙ্কটা এখানে দিলামঃ

সৌজন্যেঃ Shanto Rahman

ঢাকা
০৮ জুলাই ২০১৮

৬,২৮৪ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।