গতরাতে ইংল্যান্ড আর কলাম্বিয়ার খেলাটা টান টান উত্তেজনা নিয়ে ১-১ গোলে শেষ হলো। ঘরোয়া আলোচনায় কেউ কেউ রেফারীর বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের পক্ষে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনছিলেন। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের পক্ষে দেয়া ঐ পেনাল্টি কিকের বৈধতা নিয়ে। আবার কেউ কেউ কলাম্বিয়ার খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে অত্যধিক ফাউল করে খেলার অভিযোগ আনছিলেন। এসব আলোচনা সমালোচনার মাঝেই পেনাল্টি শুট আউট শুরু হলো। প্রথম মিসটা অবশ্য একজন ইংলিশ খেলোয়াড়ই করলেন। তারপরে একই অকাজ করলেন কলাম্বিয়ার দু’জন খেলোয়াড়। ফলে পেনাল্টি শুট আউটে ইংল্যান্ড ৪-৩ গোলে জিতে গেলো। শুরু হলো মাঠব্যাপী ইংলিশ খেলোয়াড় আর সমর্থকদের উল্লাস, অপরদিকে কলাম্বিয়ার খেলোয়াড়দের মুখে নেমে এল আষাঢ়ের কালো মেঘ। বিশেষ করে যে দু’জন খেলোয়াড় পেনাল্টি মিস করেছিলেন, ওরা জার্সি দিয়ে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। গোল কীপার বেচারার আর দোষ কি! কিন্তু সে বেচারাও কাঁদছিলেন না বটে, তবে মুখে রাজ্যের বিষণ্ণতা নিয়ে শ্লথ পায়ে, অনেকটা পা টেনে টেনে মাঠ ত্যাগ করছিলেন। কেউ কেউ উদাস দৃষ্টি মেলে ইংলিশ খেলোয়াড়দের উল্লাস দেখছিলেন।
জর্ডান পিকফোর্ড ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক। চটপটে সুদর্শন যুবক, বয়স মাত্র ২৪। কলাম্বিয়ার দুটো মিস এর মধ্যে একটা পিকফোর্ড ফিরিয়ে দেন, অন্যটা মিস। ফলে পিকফোর্ড মাঠের বীর, বীরোচিত সম্বর্ধনাই তিনি পেয়ে যাচ্ছিলেন। আলিঙ্গণ, চুমু, পিঠ চাপড়ানি, আদরে মাথার চুল বুলানি, ইত্যাকার সব ধরণের আদর আপ্যায়নের মাঝ দিয়ে তিনি মাঠ ত্যাগ করছিলেন। হঠাৎ তার দৃষ্টি গেল এতক্ষণের যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিপক্ষ কলাম্বিয়ান গোলরক্ষক ড্যাভিড অসপিনার উপর। অসপিনা তখন মাঠের একটা জায়গায় থির হয়ে বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অসপিনার বয়স ২৯, তার চেয়ে বয়সে ৫ বছরের বড়। দেহের গড়নেও তার একটু ভারিক্কী ভাব ছিল, কিন্তু মুখে সরলতার ছাপ। পিকফোর্ড আস্তে আস্তে অসপিনার কাছে গেলেন, তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। অসপিনা তার কাঁধে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বাকরুদ্ধ পিকফোর্ড তার মাথায় হাত বুলাতে থাকলেন। একসময় আবেগ স্তিমিত হয়ে আসলে ওরা পৃথক হয়ে যার যার জায়গায় চলে গেলেন। প্রতিপক্ষের প্রতি এমন সহমর্মিতা, শিষ্টাচার এবং ভব্যতার নান্দনিক দৃষ্টান্ত দেখে আমার চোখ মন জুড়িয়ে গেল। আমি মনে একটা প্রশান্তি নিয়ে বাকী রাতের ঘুমের জন্য শয্যায় ফিরে এলাম।
ঢাকা
০৪ জুলাই ২০১৮