আমার আপুসোনা – ৫

[ এইটা আমার কাল্পনিক সিরিজ। আমার একটা বড় বোন এর অনেক শখ। সেটা নিয়ে প্রায়ই কল্পনা করি। সেটার বহিঃপ্রকাশ এই সিরিজ। খুব মজা পেলাম মাহমুদ ফয়সালের কথা শুনে ও নাকি বুঝতেই পারেনি এইটা কাল্পনিক সিরিজ। ইশশ খুব ভাল হত এইটা যদি কাল্পনিক না হয়ে সত্য হত ]
এই সিরিজের আগের পার্ট আমার আপুসোনা

ক্রিংক্রিংক্রিং………
ধুর ঘুমের মধ্যে রিং ভাল লাগে না। কানের উপর বালিশ দিয়ে আবার ঘুমাবার ট্রাই নিলাম। কিন্তু কে যে এই ফোনটা দিচ্ছে তার কোন বিরক্তি নেই। বালিশ সরিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে আগে ঘড়ি দেখলাম। ৮টা বাজে ইশশ ভার্সিটি বন্ধের এই সময়গুলাতে একদিনও আমি ১২টার আগে উঠিনি। এতক্ষণে আমার কলার এর নাম নজরে পড়ল।
-আরে আপুসোনা তুই?
-কিরে ঘুমাচ্ছিস নিশ্চয়ই। তোর ঘুম ভাঙ্গালাম এজন্য স্যরি।
-ধুর কি যে বলিস আপুসোনা। বিয়ের আগে তো সবসময় আমার ঘুম তুইই ভাঙ্গাতিস। কতদিন আসিস না বাসায়। তোর জামাইটাকে পাইলে আমি এমন মাইর দিতাম।
-হাহাহা, কেনরে আমার জামাই তোর কি ক্ষতি করল।
-না ক্ষতি করবে কেন। এমনি ওনার উপর আমার রাগ। আমার আপুসোনাকে আমার থেকে নিয়ে গেল এই জন্য। কেমন আছেরে ভাইয়া?
-আছে অনেক ভাল আছে। কাল আমরা হেভভি মজা করলাম।
-কি মজা করলি?
-সেটা ফোনে নয় সামনাসামনি বলব।
-তুই আসবি আজ বাসায়? ওয়াও এক্ষুণি চলে আয় আপুসোনা। আমার বন্ধ আছে। আসলে কিন্তু ২-৩ দিন থাকতে হবে।
-নারে আসব না।
-আসবি না? তুই খুব খারাপ একটুও আমার কথা, আম্মুর কথা মনে পড়ে না। কতদিন আসিস না।
-কিরে সেদিন না আসলাম।
-২ সপ্তাহ হয়েছে, আসছিস কিন্তু থাকিস তো না। তোর তো বাবু হয়নি এখন কি এত সংসার। ঘুরবি ফিরবি…
-হাহাহা , তুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেছিস।
– তোর সাথে কেন যে আমি কথা বলি এখনো , তোর উপর আমার কত রাগ তুই জানিস? তোকে যে আমি দুদিন আগে তোর জন্মদিনে চিঠি লেখলাম একটু বললি ও না চিঠি পেয়ে কেমন লাগল।
– ঐ তোকে না আমি সাথে সাথে এসএমএস করে জানালাম যে তোর চিঠি পেয়েছি, খুশি হয়েছি।
-ব্যাস এটুকু? চিঠির উত্তর তো চাইনি বাবা জাস্ট চিঠি পেয়ে একটা বড় মেসেজ দিয়ে বলবি পিচ্চিসোনা তোর চিঠি পাইছি খুব ভাল লাগছে , তুই আমাকে এত ভালবাসিস জেনে চোখে পানি চলে এসেছে……, আমিও তোকে অনেক ভালবাসি হ্যান ত্যান তা না ১ লাইনের একটা এসএমএস। আমার চিঠি লেখাটাই ভুল হইছে তোকে।
-ওরে বাবা আমার পিচ্চিটার দেখি অনেক রাগ হইছে আমার উপর। সেদিন অফিসে কাজ ছিলরে বাবুয়া। আজ তোর রাগ ভাঙাব আয়। আজ আমি অফিসে যাই নি। ইচ্ছে হচ্ছিল না। পেপার খুলে দেখলাম শেরাটনে ঈগলু ফেস্টিভাল চলছে। তুই এসে আমাকে নিয়ে যা। আজ সারাদিন তোর সাথে ঘুরব।
-ওয়াও। তাই নাকি দাড়া আমি এখনই রেডি হয়ে আসছি তোকে নিতে।
-দাঁড়া দাঁড়া, এখনি আসিস না। আমি গাড়ি নিয়ে বের হব। গাড়িটা তোর ভাইয়াকে নামিয়ে দিয়ে আসুক। এরপর। তুই ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হ।
-যো হুকুম আপুসোনা।
-ওহহ শোন , তোর কি রাতে কোন কাজ আছে?
-থাকলেও এখন নাই হয়ে গেল। তোর জন্য আমার সব কিছু বাদ।
-তাহলে আইসক্রিম খেয়ে একটু শপিং এ যাব। সেখান থেকে রাতে চাইনিজ খেয়ে বাসায় ফিরব।
– এই আপুসোনা তোকে একটা রিকোয়েস্ট করি?
-নাহ তোর রিকোয়েস্ট রাখতে পারব না।
-কি রিকোয়েস্ট করব না শুনেই।
– আমি জানি তুই কি বলবি। রাতে বাসায় চলে আয় না আপুসোনা। কালকে তো শুক্রবার।
-তুই কিভাবে আমার কথা আগে থেকে বুঝে যাস আপুসোনা।
-কারণ তুই তো ভাবিস তুইই শুধু আমাকে ভালবাসিস। আমি বাসি না।
-বাসলে কি আর আমার কথাটা ফেলতি। আম্মুও কিন্তু বলছিল অনেকদিন তুই আমাদের বাসায় থাকিস না।
– নারে ভাইয়া কাল তোর ভাইয়ার সাথে একটা পিকনিকে যেতে হবে। আমার যদিও কোন ইচ্ছে নাই তাও ও শখ করেছে না গেলে কেমন হয় তাই না। রবিবার দিন এসে আম্মুর সাথে দেখা করে যাব।
-ঠিক আছে কি আর করব। চাইনিজ কি তুই খাওয়াবি? নাকি আমি মানিব্যাগ নিয়ে বের হব।
-বড় হইছিস মনে হয়?
– আরে না পার্ট নিলাম। গতকাল স্কলারশীপের টাকা পাইছি। শপিং এ যখন যাবি তাহলে ভালই হল, আম্মুর জন্য একটা শাড়ি কিনব আর তোর জন্য কিছু একটা যেটা তোর পছন্দ হয়। আমি অবশ্য শাড়িই প্রেফার করব কিন্তু তোর যেটা খুশি।
– তুই প্রতিবার স্কলারশীপ পেলেই আমাকে শাড়ি দেস। আমার তো লাগবে না ভাইয়া। গত ঈদেই তো একটা দিলি।
-প্রতিবার দেই এইবার কেন বাদ যাবে?
-ওক্কে পাগলা।
-তুই কি কিনবি?
– আমার দেবরের জন্য একটা শার্ট কিনব।
-কেন?
-ওর জন্মদিন সামনে। গিফট।
-কেন??? তোমার দেবরের জন্য তোমার মায়া বেশি। আমার একটুও সহ্য হয় না। কেন তাকে গিফট দিতে হবে। ভাইয়াকে বল উনি দিবে তুমি কেন।
-ঐ শয়তান। কি বলিস তুই? তোর ভাইয়া তো তকে জন্মদিনে গিফট দে তাহলে ঐটা কি?
– তা জানিনা তুই অন্য কাউকে আদর করলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়। আমার আদরের ভাগ কমে যায় বলে মনে হয়।
-তুই একটা আস্ত পাগল আছিস। কবে যে তুই বড় হবি?
-কেন বড় যে হতেই হবে এমন কোন কথা আছে?
-আছে না। তোকে বিয়ে দিব তো। বাসায় একটা বউ আনব না।
– আসলেই দিবি? কবে দিবি বল । আমি তো শুধু তোর কাছেই বাচ্চামি করি। অন্য সব জায়গায় আমি অনেক বড় হয়ে গেছি।
-ইশশ বিয়ের কত শখ? তোকে এখন মেয়ে কে দিবে।
-দরকার নাই তাহলে বিয়ে করার পরেই করি কি বলিস।
– এই তুই খালি কি কথা বলতেই থাকবি? তোর ভাইয়া অফিসে যাবে গুছিয়ে দেই। আমার ও তো রেডি হতে হবে। আজ সারাদিন ভাই বোনে অনেক কথা বলব । অনেকদিনের অনেক কথা জমে আছে ।
– ওক্কেরে আমার জাআআন আপ্পি রাখছি। আমি এখনই চলে আসছি তোর বাসায়। একসাথেই বের হব। তুই আমার জন্য নাস্তা বানা। তোর বাসায় এসে নাস্তা খাব। আম্মু নিশ্চয়ই এখনো আমার জন্য নাস্তা বানায় নাই আমি তো প্রতিদিন ১২টায় ঘুম থেকে উঠছি এখন। তুই ঘুম থেকে জাগালি তুইই নাস্তা খাওয়া।
-চলে আয়, কি খাবি বল?
-তুই যদি ছোটবেলার মত খাওয়ায় দেস তাহলে যা দিবি তাই ।
-পাগল ভাই আমার।
-রাখলাম রে আপু। খুব খুশি লাগছে অনেকদিন পর তোর সাথে আজ সারাদিন ঘুরব।
-ওক্কে বাই ডিয়ার।

২৫ টি মন্তব্য : “আমার আপুসোনা – ৫”

  1. ভাই,

    আমার আপুর সাথে আমার এতটা মজা হয় !!

    খুব ভালো লাগল। আমার আমার মনে হইলো। আমার আপুটা আমার ৫ বছরের বড়। ও আমাদের বাসায় গত কয়েকদিন ছিলো। সকালে সত্যিই আপু ছাড়া নাস্ত করিনাই কয়টা দিন।
    আজকে ও চলে গেছে 🙁 🙁

    সুন্দর লেখা ভাইয়া
    :boss: :boss:

    জবাব দিন
  2. শাওন (৯৫-০১)

    তপু (কামরুল),
    খবর কি তোর?
    আপুসোনা সিরিজটা পুরো পড়লাম। অতিমাত্রায় জোশশশশশশশ।

    কেনো যেন মনে হচ্ছে গল্পটা আমি কেন লিখলাম না?? মানে একদম আমারি মনের তথা ভেসে আসছে।দারুণ।


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  3. শাওন (৯৫-০১)

    এইতোরে ভাই....চলছে কোন রকম....ভালো থাকিস...আর দোয়া করিস...দেশে আসবি কবে??


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।