অন্যরকম ক্যাডেট কলেজ – ৭

[এই ধারাবাহিক উপন্যাসের একেক পর্ব একেকজন লিখবেন। যে কেউ লিখতে পারেন। কেউ যদি পরের পর্ব লিখতে চান তাহলে তাকে এই পর্বে মন্তব্য করে তা বলে দিতে হবে। যিনি আগে বলবেন তিনিই লিখবেন পর্বটি।]
প্রথম পর্ব
গত পর্ব

১৬

ফর্মে চরম চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। দুই দিকে দুই বিষয় নিয়ে চরম ফাটাফাটি অবস্থা। সামনের দিকে সবাই ফুটবল নিয়ে আছে। বিশ্বকাপ চলছে তাই এটা স্বাভাবিক। তবে আজকে শুধু পঁচানো হচ্ছে। ব্রাজিল কালকে জিতে সেমিফাইনালে চলে গেল কিন্তু আর্জেন্টিনা তার আগেরদিনই হেরে বাদ পড়ে গেছে। সেদিন তো স্বাভাবিক ভাবে আর্জেন্টিনা পার্টি পঁচানো খেয়েছে কিন্তু আজকে অস্বাভাবিক ভাবে ব্রাজিল পঁচতেছে। ব্যাপার আর কিছুই না আর্জেন্টিনা পার্টিতে পোলাপান বেশি এবং সেদিকেই সব পঁচানোতে মাষ্টার্স পাস করা পোলাপান। তাই গতকাল থেকে ব্রাজিল জেতার পরও ব্রাজিল পার্টি কথা বলতে পারছেনা। উপল তো একবার চিৎকার করে বলেই ফেলল , গুনে গুনে ৩ টা গোল দিয়ে আমরা সেমিফাইনালে উঠলাম আর তোরা বাদ পড়লি তাও তোরা আমাদের পঁচাস। সেই থেকে নতুন পঁচানোর উপকরণ পাওয়া গেছে। সবাই মিলে এখন উপল কে পঁচাচ্ছে। উপল নাকি এই ভূঁড়ি দিয়েই ৩ টা গোল দিয়েছে। একটাও পায়ে বা মাথায় লাগেনাই। একেবারে ডিরেক্ট ভূঁড়ি দিয়ে গোল। হাসি পাচ্ছে সাজিদ এর। ও হল ইতালির সাপোর্টার তাই মজা পাচ্ছে। কিন্তু যারা ব্রাজিল এর তাদের আসলেই কষ্ট জিতেও পঁচতে হচ্ছে।
আর পিছনের দিকে রগরগে আড্ডা হচ্ছে। বিষয় হিন্দি সিনেমার নায়িকা এবং অন্যান্য।
এসময়েই ভিপি স্যারের চিল্লানি
– এইসব কি হচ্ছে? এইটা কি ক্লাস নাকি? স্যার না আসলে তোমরা আমার রুমে গিয়ে জানাতে পারোনা। ক্লাস ১২ এ উঠে যদি তোমরা এরকম কর। সাজিদ তুমি কি কর। নিজের ক্লাস না থামাতে পারলে কলেজ কন্ট্রোল করবা কিভাবে?
একনাগাড়ে বলেই গেলেন তিনি। কিন্তু তার চিল্লানিতে নয় পুরা ক্লাস থেমে গেল তার পিছনের জনকে দেখে। এ তো মনে হচ্ছে পরীস্থান থেকে উঠে এসেছে। কলেজের প্রথম ম্যাডাম। একেবারে ফুটন্ত গোলাপ। কিন্তু সৌন্দর্য্য নয় অন্য কিছু একটা আছে তার মধ্যে যা সহজেই সবাইকে মুগ্ধ করল। মিষ্টি হাসি , নাকি মায়াবী চেহারা?
– ইনি তোমাদের নতুন ইংরেজীর ম্যাডাম। সামিয়া জামান। আজ সাঈদ সাহেবের বদলা উনি তোমাদের ক্লাস নিবেন। আর আমি বলে দিলাম কোন রকম শয়তানীর কথা যদি আমি জানি তাহলে কারো কিন্তু রক্ষা…
-স্যার ঠিক আছে আপনি যান, বাকি পরিচয় আমি করে নিব। আর ওরা নিশ্চয়ই আমার সাথে কোন শয়তানী করবেনা। আপনার চিন্তা করা লাগবেনা। ভিপি স্যারকে কথা শেষ করতে দিলেন না ম্যাডাম।
-ম্যাডাম আপনি নতুন তো , আপনি জানেন না ক্যাডেট কত হারামী হয়।
– আমার মনে হয় এরা অনেক ভাল , এই কিউট কিউট বাচ্চা গুলাকে আমার কিছুতেই হারামী মনে হচ্ছে না। আর যদি কিছু করে আমি তো আপনাকে জানাবই।
রাগে গজরাতে গজরাতে ভিপি স্যার চলে গেলেন। যাওয়ার সময় এমন একটা চাহনি দিলেন যার অর্থ দেখবেন পরে আমার কথা ঠিক কিনা। আর শুধু এই কারণেই ম্যাডামকে সবার ভাল লেগে গেল।
-বাচ্চারা আমার নামতো শুনলে। আমি ক্যাডেট কলেজে নতুন এসেছি। আজই আমার প্রথম ক্লাস। তোমাদের সবার নাম জানা যাক। তারপর না হয় আমি ক্লাস শুরু করব।
-ম্যাডাম । হাত তুলে পারমিশনের অপেক্ষা না করেই জিহাদ বলল আমরা কিন্তু বাচ্চা না ম্যাডাম। আমরা এখন ১২ এ পড়ি ।
হেসে দিলেন সামিয়া জামান।
-ওহহো। আসলেই তো তোমরা তো অনেক বড় হয়েছ। আমি তো খেয়ালই করিনাই। স্যরি স্যরি , হাসতে হাসতেই বললেন তিনি।
খুব সহজেই ক্লাসের সবার সাথে সম্পর্কটা সহজ হয়ে গেল। মনে হচ্ছে যেন এই ম্যাডামকে সবাই কত দিন ধরেই চিনে। একই সাথে ক্লাস ১২ বি ফর্মের ২৬ টা ছেলে মনে মনে শপথ করে ফেলল শুধু তারা যে এই ম্যাডামকে টিজ করবেনা তা নয় এই ম্যাডামের কলেজে থাকা অবস্থায় যেন কোন ক্যাডেটের থেকে কিছু না হয় তা তারা নিশ্চিত করবে।
সবার পরিচয় শেষে ম্যাডাম নিজের পরিচয় দিলেন তারপর জিজ্ঞেস করলেন কারো কোন প্রশ্ন আছে কিনা।
ক্লাসের ফাজিল দের মধ্যে অন্যতম জাহিদ দাঁড়িয়ে বলল ম্যাডাম একটা ঠিক প্রশ্ন না কথা আছে।
– কি বল?
-ম্যাডাম আপনি খুব সুন্দর ।
-thanks for your complement
প্রশ্নটা শোনার সাথে সাথে সাজিদের বুক কেঁপে উঠেছিল । এই বুঝি ম্যাডাম ক্ষেপে যান কিন্তু ম্যাডামের সহজ সরল হাসি আর উত্তর শুনে হাঁপ ছেড়ে বাচল। সামিয়া আপু এইবার ঠিকই পারবে ভিপিকে শায়েস্তা করতে। যদিও ও নিশ্চিত না এইটাই কি সেই সামিয়া আপু কিনা তবে মনে মনে সে তাই ভাবছে।
১৬

-এই জানিস আজ আমাদের নতুন ম্যাডামকে দেখলাম। এক্কেবারে ঝাক্কাস।
-কোথায় দেখলি ?
-আরে আমি একতু লাইব্রেরীতে যাচ্ছিলাম তখন।
দুই ক্লাস নাইনের ছেলে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল তাদের কথাবার্তা কানে আসল রায়হানের। সাথে সাথেই মেজাজটা ঝা করে চড়ে গেল। এত বড় সাহস ম্যাডামকে নিয়ে খারাপ কথা বলে
-এই you two, come here.
-ভাইয়া আমরা?
-yes , start frontrole. quick
শান্ত শিষ্ট রায়হানভাই (প্রিফেক্ট না কিন্তু ) হঠাৎ করে কেন তাদের পানিশমেন্ট দিচ্ছে কিছুই বুঝলনা তারা

১৮ টি মন্তব্য : “অন্যরকম ক্যাডেট কলেজ – ৭”

  1. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    তপু ভাই অসাধারণ লিখছেন। আমি সেদিন বাসে যেতে যেতে ভাবছিলাম আহারে আমাদের উপন্যাসটা মাঠে মারা গেলো। সামিয়া ম্যাডাম এতো কিছু করতে পারে মাগার আমাদের সামিয়া একটা পার্ট লিখতে পারলো না... 🙁

    উপন্যাসের চেয়েও আমাদের যেটা বেশী লক্ষ ছিল, ক্যাডেট জীবনটাকে ফুটিয়ে তোলা সেটা বেশ ভালো ভাবেই হচ্ছে। ভুড়ির কাহিনী শুনে তো আমি হাসতে হাসতে শেষ।

    এখন তো অনেক সদস্য, কেউ পরের পার্টটা লিখবেন আশা করি।

    জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    যাক, উপন্যাসটা আবার শুরু হইল। >:D< এখন পরীস্থানের সামিয়া জামান ম্যাডাম নেক্সট এপিসোডটা লিখতে সম্মত হলেই আমরা ধন্য হয়ে যাই ;)) তপু ভাই, আপনাকে :salute:


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  3. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    "শান্ত শিষ্ট রায়হানভাই (প্রিফেক্ট না কিন্তু ) হঠাৎ করে কেন তাদের পানিশমেন্ট দিচ্ছে কিছুই বুঝলনা তারা" 😀

    তপু ভাই,
    অনেক ভাল লাগল...।ক্যাডেট লাইফের সাথে অনেক কিছু মিলে যায়।

    জবাব দিন
  4. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    @রায়হান
    আমি তো প্রায়ই এইসব পুরান সিরিয়ালের কথা ভাবি। যেমন আমার সেই ক্যাডেট কলেজ-২০৫০, জিহাদের ছড়া সেগুলার কথা। সেই চিন্তার জন্যই এইটা লেখা হইল। মনে হইল মাঝে তো অনেক কিছু হইল জায়গা বদল এইসেই এই জন্য মনে হয় সবাই ভুলে গেছে আরেকবার সবাইকে মনে করাই দিলে মনে হয় চলবে।
    @সামিয়া
    তোমাকে আপু ক্ষমা করা গেলনা। হাত তুলে এইটাকে এতদিন ঝুলাই রাখলা। এখন একটা পর্ব লেখে ফেল তাহলে ক্ষমা করে দিব। তুমি তো অনেকদিন কিছু লেখ না।
    @ বোকাসোকা
    ব্যাপার কি ভাই তুমি শুরু করে তুমিই ঘাপটি মারলা কেন?

    আমাদের কলেজে প্রথম ম্যাডাম এসেছিল ফারজানা ম্যাডাম। ইংরেজি। আমরা তখন ক্লাস ১০ এ পড়ি। আর তখন আমাদের ভিপি ছিল পামোশ। অনেকেই চেনার কথা। এই ঘটনা আমি অনেকটাই ওনাদের দুজনকে চোখের সামনে রেখে বানিয়েছি।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।