রেষ্টুরেন্টে বসে কি খাব মেনুতে চোখ বুলাচ্ছি। এমন সময় ,”আরে আপনাকে বসিয়ে রাখলাম” বলতে বলতে এক তরুণী এসে আমার সামনে বসল। আমি তো ভেবেই পাচ্ছিনা কারো কি আমার সাথে lunch করার কথা ছিল কিনা। কিন্তু তরুণী ভাবতেই মনে মনে পুলকিত হয়ে উঠতে গিয়েই হোঁচট খেলাম। চেহারাতে অতটা পুলকিত হবার কিছু নেই কিন্তু খুবই চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি। মেনুটা ওনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি যা বললেন তাতেই আমি তাকে চিনে ফেললাম।
“আমি তো লাঞ্চে ১ টার বেশি কিছু খাইনা।” মেনু হাতে নিয়েই বলল।
এ তো সেই পেটুক মহিলা উইলিয়াম সমারসেট মম কে যিনি ফতুর করে ছেড়ে দিয়েছেন। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝলাম আরে আমি যে ফয়েটে বসে আছি। কিন্তু ইনি এখানে কেন। একেবারে সেই চেহারা, “imposing rather than attractive” ভীত হয়ে উঠেই মানিব্যাগে হাত দিলাম আমি। উনি বসেই আমাকেও ফতুর করার মিশন শুরু করে দিলেন। আর আমি মনে মনে ভাবি সচলায়তনে আর ক্যাডেট কলেজের একটা ব্লগে লেখি কিন্তু ভক্ত হওয়ার তো চান্স নেই ইনি আমাকে পেল কোথায়। বেশিক্ষণ চিন্তা করতে পারলাম না, বিশাল একটা বিল এসে গেল আমার হাতে। কিন্তু মমের যা ছিল না তা আমার আছে একখানা ক্রেডিট কার্ড। তা দিয়ে বিল দিয়ে বেরুতেই তরুণী দেখি হাওয়া।
আমার চোখের সামনে ছেড়া জামা আর বিশাল এক নাবিক টুপী পড়া ancient mariner. জীবে দয়া করার উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে।এবার আর আমার চিনতে দেরী হয় নি। সাথে সাথেই চিনতে পেরেছি। এলবাট্রসটাকে যে কেন উনি মারতে গেলেন সেটা জিজ্ঞেস করতে এগুবো তখনই পেছন থেকে বাচচা একটা ছেলে আমার জামা টেনে ধরল। চিনতে পারলাম জেরীকে। একেই তাহলে বলে integrity। হায়রে কত ভাবে পড়েও এর মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারিনি । ওর হাতের ভারী জিনিস কিভাবে বহন করছে জিজ্ঞেস করতে গিয়েই বুঝে ফেললাম কি বলবে ও। “size dont matter chopping wood”
আমার চারপাশে ছোটবেলায় পড়া সব চরিত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার আমি রেষ্টুরেন্টে ঢুকে পড়লাম জিম আর ডেলাকে খুঁজে বের করার জন্য। কোনার দিক একটা কাপল পেয়ে গেলাম। চুপটি করে ওদের পিছনে বসে ওদের পুতুপুতু প্রেমময় কথাবার্তা শুনেই চিনতে পারলাম ওদের। দুজন দুজনে এত ব্যস্ত তাই আমি আর জানতে পারলাম না ডেলার চুল লম্বা হতে কত সময় লাগল আর জিমই বা ঘড়ির চেইনটা দিয়ে কি করল।
ঘড়ির কর্কশ এলার্মে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আরে চমতকার একখানা স্বপ্ন দেখলাম তো। গতরাতে প্রথম আলোতে luncheon এর বাংলা অনুবাদ পড়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে hsc তে পড়া ইংরেজির গল্পগুলার কথা মনে পড়ছিল। সেটাই আমার জীবনের প্রথম ইংরেজী সাহিত্য পড়া। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের ইংরেজি সিলেবাস একই থাকার কারণে অনেক বড় ভাইয়াদের সাথেও এই কথা গুলা মিলে। “size dont matter “, ” imposing rather than attractive” এই কথা গুলা সবার সামনে বললেই বুঝে ফেলে। এখনকার পোলাপান এইগুলা বুঝে না। ওরা মনে হয় অনেক জানে তবে আমার মনে হয় ইন্টারে থাকতেই ইংরেজি সাহিত্যের ৪টা ছোট গল্পের সাথে পরিচয় অন্তপক্ষে আমার জন্য একটা বিশাল ব্যপার ছিল।
তোমার সবগুলো লেখার মতো এই লেখাটাও আমার খুব ভালো লেগেছে। রস-আলোতে luncheon এর অনুবাদটা পরে আমার ও পুরনো সেই ইংরেজি গল্পগুলোর কথা মনে পড়লো। এখনো মনে আছে সেই বিখ্যাত উক্তিঃ "I was too young to say no to a woman" 🙂
মাথা তো ঘুড়বার লাগচে...
আমাদের মুরুব্বিরা কি "টুনি /মন্তুর" প্রেম কাহিনী জানেন??
আপনাদের সাথে এইসব কথা বলে এক্কেবারেই মজা পাই না 😀
অ্যান্টেনার ডাইমেনশন বাড়াইতে হৈবো। উপর্দিয়া যাইতাছে 🙁
তয় গল্প গুলা ছোট বেলায় আম্মুর কাছে শুনছি, ইংলিশে পড়ার জোশ পাই নাই।
ইন্টারের বইয়ে এগুলো পড়ার সৌভাগ্য আর হলো না। আগের বই থেকে দুই একটা পড়েছিলাম। লেখাটা খুব ভাল লাগলো। এরকম স্বপ্ন দেখতে পারলে খুব ভাল হতো। এখন থেকে ঘুমানোর আগে বেশী বেশী ভাববো। দেখি কিছু দেখা যায় কি-না।
:))
ekhono mone ache, "irony" word ta 1st e luncheon ei sikhesilm. eto valo kore j, ekhono kothau irony kichu dekhlei luncheon er kotha mone pore.
ইন্টারে না থাকলেও জীবনের কোন না কোন সময়ে এই চারটা গলপ মানুষকে পড়তে হয়ই, যেমন পড়তে হয় নজরুলের বিদ্রোহী কিংবা, রবীন্দ্রনাথের যেতে নাহি দিব। সিলেবাস dont matter reading them, 😉
*মিস্টেক, চারটা গল্প নয়।