শান্টিং

“এই কামরুল এদিকে আস”। শুনেই বুকে দুরুদুরু শুরু হয়ে গেল। লাঞ্চ করে আজ পর্যন্ত একদিন ও সরাসরি রুমে যেতে পারলাম না। আমার রুম নাম্বার ১০১ আর আমার গাইডের রুম নাম্বার হল ১০৫। আমি আসার আগে আগেই কিভাবে যেন উনি এসে ওনার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন আমি বুঝি না। যেদিন আস্তে আস্তে করে ১০৫ নাম্বার রুমটা পার হয়ে যায় সেদিন খুব সাবধানে একটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচি। কিন্তু বেশিক্ষণ লাগে না। পিছন থেকে ডাকটা শুনতে পাই।
তারপর শুরু হয় একগাদা শান্টিং। আমার গাইড আবার ভদ্র মানুষ আমাকে মারধোর করে না। কিন্তু শান্টিং দিয়ে রাখেনা। একটা দুপুর ও যায় না যেদিন আমার চোখের পানিতে বালিশ ভিজে না। সেটা আবার লুকিয়ে রাখতে হয়। দেড় মাস পরেও শান্টিং খেয়ে কাঁদছি সেটা আমাকে টিজ করার জন্য যথেষ্ট। তাই কি আর করা। শান্টিং গুলা অদ্ভুত, “কেন তোমার খাওয়া এত আগে শেষ হয়?”, “ডাল খাও না কেন”, “আমার যে ভাত লাগত দেখ নাই কেন হাত তুলতে কি কষ্ট হয়। ” আরো কত কি? আমি কলেজে ঢুকার পরদিনই ফুটবল খেলতে গিয়ে হাত ভেঙ্গে আমার গাইড কে ১ মাসের জন্য ছুটি দিয়েছিলাম। ওনার মনে হয় সেটা পছন্দ হয়নি তাই সেই এক মাসের পাওনা সহ আমাকে বুঝিয়ে দিতে তিনি তৎপর ছিলেন। প্রথম যেদিন কলেজে ঢুকলাম আম্মুর সে কি আদর মাখা কথা সেই ভাইয়ার উদ্দেশ্যে যাতে আমাকে না জ্বালায়। পরে আম্মু ওনার কথা শুনে সেই যে একটা ডায়লগ দিয়েছিল আজো আম্মুর মন থেকে যায়নাই ” ছেলেটাকে কত ভাল ভাবছিলাম …” ।
একদিন উনি আমাকে ওনার রুমেই ডাকলেন। বুঝলাম আজকে আমার কপালে খারাপি আছে। রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ শান্টিং খাওয়ার পর আমাকে বললেন হাওয়াই চেয়ারে বস। আমি তো হা। এই ফার্স্ট এই জাতীয় কিছুর নাম শুনলাম। পাশেই ওনার আরেক ক্লাসমেট ছিল। দেখলাম আমার গাইড থেকে ওনার উৎসাহ বেশি। আমাকে শেখানো হল কিভাবে চেয়ারে বসার ভান করে থাকতে হবে কিন্তু চেয়ারটাই থাকবে না। সেই ভাইয়া এখন জাপানে। অনেক গল্প হয় আর ফাঁকে ফাঁকে সেই সময়ের কথা তুলে আমি তাকে বিব্রত করে দেই।
ক্লাস ৭ এ অদ্ভুত সব কারণে শান্টিং খেতে হত। এক ভাইয়া আমাদের কাকে যেন ডেকে বললেন,” তুমি যে হাঁটার সময় আমার শার্টটায় ধাক্কা খেলা সরি বলেছ? সে তো তাড়াতাড়ি সরি বলল। সেই ভাইয়ার সুফী উত্তর ” তুমি কি আমাকে ধাক্কা দিছ নাকি আমাকে সরি বলছ যে? যাও সেই শার্টকে সরি বলে তবে ২০ বার”। আমি এখন চিন্তা করি একটা ছেলে শার্ট এর সামনে গিয়ে বলছে সরি সরি সরি। হাহাহা এ কেবল ক্যাডেট কলেজেই সম্ভব।

৬ টি মন্তব্য : “শান্টিং”

  1. কি আর কইতাম...। ক্লাস সেভেনে ছিলাম ২৭ নম্বর রুমে। ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাই ডর্ম লিডার, আন্যান্য রুমে ক্লাস নাইন ডর্ম লিডার ছিল। ক্লাস এইটের কোন ভাইয়ের মুড অফ থাকলে কিংবা পাংগাইতে ইচ্ছা করলে আমাদের রুমে চলে আসত। আমরা সম্পূর্ন ফ্রি সার্ভিস দিয়া পাংগা খাইতাম, অনেক সময় জানতামই না কি কারণে পাংগা খাইলাম। 😆

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।