এটা আমার কাল্পনিক সিরিজ।
আমার আপুসোনা – ৬
ঠান্ডায় বরফ হয়ে যাওয়া হাত দুটো ওর গালে লাগিয়ে বললাম, “আজ চলে যাইরে আপুসোনা”।
-উফফ, কি ঠান্ডা হয়ে আছে তোর হাত। তোর হাতমোজা সাথে নাই কেন।
-বুঝতেই পারিনি রাতে এত ঠান্ডা পড়বে। সকালে তাই নিয়ে বের হইনি।
-থেকে যা না পিচ্চি আজকে। কি এমন রাজকার্য তোর বাসায়। গিয়ে তো একা একাই বসে থাকবি।
-নারে আপু কাল সকালে ল্যাবে যেতেই হবে। পরশুর মধ্যে একটা সাবমিশন জমা হয়ে আছে।তোকে হঠাৎ দেখতে ইচ্ছা হল দেখেই ভার্সিটি থেকে চলে আসলাম।
-চলে যাবি?
-আপুসোনা এইভাবে বলিস না। তুই তো ভালো করে জানিস এইভাবে গেলে আমার গিয়ে খুব খারাপ লাগবে। কাজ না থাকলে তো থেকে যেতাম।
-তুই আমার হাতমোজা নিয়ে যা।
-আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোর লেডিস হাতমোজা নিয়ে যাব। আমার কিছু হবে না পকেটে হাত ঢুকিয়ে স্টেষন পর্যন্ত চলে গেলেই তো হল।
– তোর ভাইয়ার হাত মোজা নিয়ে যা তাহলে।
-হাহাহা। নিলে তোরটাই নিতাম। তাহলে অন্তত যতক্ষণ পড়ে থাকব মনে হবে তুই হাতটা ধরে আছিস।
এতক্ষণ মন খারাপ করে ছিল আমার যাবার কথা শুনে। এই কথা শুনে মনে হয় কেঁদেই দিবে। তাড়াতাড়ি করে বিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমে আসলাম আমি। একবার ও পিছনে তাকাইনি জানি যতক্ষণ দেখা যাবে আমার যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকবে আমার জান আমার আপুসোনাটা। আজ না ফিরলে পরশুদিনের ডেডলাইন কোনমতেই আমার পক্ষে মিট করা সম্ভব না। যদিও ৯ টা বাজে আমার বাসায় ফিরতে ফিরতে ১২টা পার হয়ে যাবে। সকালে ল্যাবে যাবার পথেই এত মনটা কেমন কেমন করে উঠল না এসে পারলামই না।
শীতের রাতে রাস্তায় হাটতে নিলেই আমার মনে হয় সিগারেট খাবার অভ্যাস থাকলেই হত। সিগারেট খেলে নাকি ঠান্ডা কম লাগে। গুডিগুডি বয় ইমেজ রাখার জন্য ছোটবেলায় আর সিগারেট ধরা হয়নি। এখন আর এই বয়সে শুরু করা যায় না। এইসব ভেবে ভেবেই প্রায় স্টেশন চোখের সামনে এসে গেল। এমন সময়ই পকেটে রাখা মোবাইল ভাইব্রেট দিয়ে জানিয়ে দিল এমন সময় কারো আমাকে মনে পড়েছে। আপুই হবে ভেবে ভেবে মোবাইল হাতে নিলাম।
-তুই কই?
-এইতো ভাইয়া স্টেশনে চলে এসেছি।
– তোর বোনকে এসে সামলা ?
– কেন কি হয়েছে?
– তুই যাবার পর থেকে আমার কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করছিল। তোর জন্য নাকি মনটা হুহু করছে। কেন তুই চলে গেলি আমি কেন অন্য শহরে তোর শহরে কেন থাকি না হাবিজাবি শুনে একটা ঝাড়ি দিয়েছি এখন গিয়ে লেপ মুড়ি দিয়েছে। এতক্ষণে মনে হয় বুক ভাসিয়ে দিয়েছে চোখের পানিতে। কান্নার তো তার এই স্টাইল।
– জরুরী কাজ ছিল কি আর করা এখন তো আর যেতে পারি না। আমি ফিরে আসতেছি।
বের হবার সময়ে শেষ ডায়লগটা বেশি ইমোশনাল হয়ে গেছে। সহ্য করতে পারেনি আমার মায়াবতী আপুটা। বাস্তবতা যে কি, পাশাপাশি শহরে থাকি তাও দেখা হয় মাস দুয়েকে একবার। প্রথম দিকে পালা করে আমরা দুজন দুজনের সাথে দেখা করতে যেতাম প্রতি উইকে। এখন আর হয়ে উঠে না। এবার অনেকদিন পর আসলাম ওর এখানে।
-কই ও?
-যা ভিতরের রুমে যা শুয়ে আছে। আমি খেলা দেখতেছি।
-আপনার বউ মন খারাপ করে শুয়ে আছে আর আপনি খেলা দেখতেছেন। পুরা বেরসিক আপনি। আপনার হাসব্যান্ড পয়েন্ট এবং রোমান্টিক পয়েন্ট কমায় দিলাম।
-সব রোগের এক ওষুধ হয় না শালা। আমার জন্য যদি তোর বোন এমন কাঁদত তাহলে আমি এখন আকাশে উড়তাম।
হাসতে হাসতে এসে আপুর রুমে ঢুকলাম।
-আপুসোনা এই জন্যই তোকে আমি এত ভালবাসি। আর কান্না লাগবে না আমি আছি এই উইকএন্ড তোর বাসায়।
-আমি জানতাম তুই যেতে পারবি না। ঠিকই ফিরে আসবি। তুই যাবার পর কিছুতেই তোর মুখটা ভুলতে পারছিলাম না।
মুহূর্তের মধ্যে আলো ঝলমলে হয়ে গিয়েছে ওর মুখ কে বলবে একটু আগেই শুয়ে শুয়ে ফোপাচ্ছিল। ইতিমধ্যেই উঠে বসেছে, আমি শুয়ে পড়েছি ওর কোলে মাথা রেখে আর ও আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। ছোটবেলায় এইভাবে আমার ঘুম পাড়িয়ে দিত ও। খুব কৌশলে নিজের চোখের কোনায় জমা হওয়া জলটুকে মুছে নিলাম। ও বকেই যাচ্ছে। আমাকে নিয়ে উইকএন্ড প্ল্যান, রান্না প্ল্যান হাবিজাবি। আমি কিছু বলি না এত বড় হয়েও পিচ্চি বাচ্চার মত ওর আদরটুকু উপভোগ করতে থাকি। বড় বোন গুলা একসময় মায়ের মত হয়ে যায়। হঠাৎ করে আম্মুর কথাও মনে পড়ে খুব।
-স্টেশন পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম। তোর জামাই ধরে বেঁধে নিয়ে আসল।
-জীবনে খুব কম ভাল কাজই করে ও। আজ একটা বাড়ল।
-আমার নামে বদনাম ছাড়া কিছু শুনিনা তোমার মুখে। নিজের নাম কানে যাওয়াতে চলে এসেছে ভাইয়া।
-আরে ভাইয়া কি যে বলেন আপনার হাসব্যান্ড পয়েন্ট বাড়িয়ে দিয়েছি আমি, বৌ এর মন ভাল করার জন্য আমাকে ডেকে আনছেন এই জন্য। এখন পিৎসা অর্ডার দেন খাব।
-ইশশ আগে জানলে কি আর তোকে আনতাম। তোর বোন তো ভাই পেয়ে আগামী দুদিন আর আমার দিকে তাকাবেই না আর তুই এখন আমার মানিব্যাগ খালি করবি।
-কিপটা একটা, আমার ভাইটা কতদিন পরে আসছে তোমার মানিব্যাগ খোলা লাগবে না অর্ডার দাও আমি বিল দিব।
-খুব বেশি দিন পরে আসেনি ডিয়ার, মাত্র ৩ মাস।
-এই আপুসোনা চল সিনেমা দেখতে যাই। খালি পিৎসা দিয়ে তোর জামাই এর পকেট কাটা যাবে না ওনারে আজকে ভাল ছিল দেই।
সিনেমার কথা শুনে জামাই বৌ দুইটাই লাফ দিয়ে উঠে। দুইটাই হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পছন্দ করে। ওদের রেডি হবার সুযোগ দিয়ে আমি বের হয়ে আসি রুম থেকে। সাবমিশন মিসের আত্মগ্লানি আর প্রফেসরের ঝাড়ির বিনিময়ে আগামী দুটা দিন ভালই যাবে আমার।
ভাল হয়েছে। তোমার আপুসোনা সিরিজ নিয়ে এবারে একটা বই বের করো।
🙂
:thumbup:
sohomot 😀
আমার কোনও বোন নেই ভাইয়া। লেখা টা একবারে মন ছুয়ে গেল।
লেখাটা সার্থক হল।
কামরুল ভাই, দুনিয়া জুইড়া এত বোন বানাইলে আমরা ভাবী ডাকুম কারে?
:))
তোমার শরীর এখন কেমন আছে।
অ-নে-ক দিন পর......
লেখা যথারীতি ভালো লেগেছে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
কেমন আছেন ভাইয়া। অনেকদিন পর না ভাইয়া। লেখি তো মাঝে মাঝেই।
তপু,
তোমার এই সিরিজটার আগের সব লেখাই পড়ে নিয়েছিলাম।
কিছু বলে উঠতে পারিনি কখনো।ইমোশনের খুব কাছাকাছি যেতে আমার খুব ভয় করে, কেমন বিপন্ন বোধ করি। তাই চুপ ক'রে থাকি শুধু.....
ধন্যবাদ ভাইয়া।
তোর লেখা প্রথম পাতায় 😮
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
সবাই আমারে ভুলে যাইতাছে তাই একটু সবারে মনে করায় দেওয়ার জন্য।
🙁
হ্যাপি বার্থ ডে দোস্ত।
ধন্যবাদ দোস্ত।
একটা ব্যাপার আমার বার্থডে কারোই মনে থাকে না। তোর কেমনে মনে থাকে এইটা একটা রহস্য। ভাল আছিস তো।
শুভ জন্মদিন তপু। ভালো থেকো। জীবন একটাই, একে পুরো উপভোগ করো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
pichhishona,
keu to believe i korbe na, je lekha gula kalponik.
amar chokhe pani chole ashlo but training room e boshe to r chokher pani fela jay na 🙂
আপুসোনা,
তুই আমার প্রতিদিনের ফ্যান্টাসি। 🙂