(ডিসক্লেমারঃ ইদানিং আমার মাথার মধ্যে খালি ক্যাডেট কলেজের কাহিনী ঘুরে। সব ছোট ছোট ঘটনা। কিন্তু না লিখেও থাকতে পারছিনা। ছোট ছোট লেখাগুলা তাই অনুঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছি। আর ইদানিং আমার লেখা কেমন যেন গবেষণা টাইপ হয়ে যাচ্ছে)
ক্যাডেট কলেজের প্রেস্টিজ টা এক বিশাল ব্যাপার। খুব সেনসিটিভ বিষয় অল্পতেই ফট করে প্রেস্টিজ চলে যায় সবার। এখানে দেখি কিভাবে কাদের প্রেস্টিজ চলে যায় সেটা নিয়ে একটু ব্লগরব্লগর করি।
ক্লাস সেভেনঃ কলেজে এদের কোন প্রেস্টিজ যায় না কিছুতেই। তাই সিনিয়র এর কাছে পাংগা কিংবা আরো কিছু হাস্যকর কাজ কিছু কাজ আগেও বলা হয়েছে যেমন কিছু ছাড়াই ড্রেস চেঞ্জ এসব কোন কিছুতেই তাদের প্রেস্টিজ যায়না। তবে প্রেস্টিজ এর ব্যাপারটা আসে বাসায় আসলে। কলেজ থেকে আসার দিন কিংবা যাওয়ার দিন নিজের ছোট ভাই কিংবা পাশের বাসার দুষ্ট ছেলেটা যখন ঠোলা বলে ডাক দেয় তখনই সেভেনের প্রেস্টিজ চলে যায়। এ ব্যাপারে তাদের কিছু বলা লাগে না বাসার মুরুব্বিরাই তখন অবস্থা সামাল দেয়। তুই পারবি ওই ড্রেস পড়তে কিংবা জানিস ওই ড্রেস পড়তে কত ভাল ছাত্র হতে হয়। এসব তখন ব্যবহার হয়।
ক্লাস এইটঃ ক্লাস ১১ কিংবা প্রিফেক্ট এর কাছে পাংগা খেতে এদের প্রেস্টিজ যায়না তবে প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি পরে যখনই সেটা ক্লাস সেভেন দেখে ফেলে। কত্ত বড় সাহস মাথা নিচু না করে আমাদের পানিশমেন্ট এর দিকে তাকিয়ে ছিল প্রেস্টিজ আর থাকল না। আবার মাঝে মাঝে ডায়নিং হলে ফলোয়ার যদি কোন ভুল করে থাকে তাহলেও ক্লাস এইটের প্রেস্টিজ নিয়ে টানাটানি পড়ে।
ক্লাস নাইনঃএরা আবার জুনিয়র ব্লকের লিডার গোত্রের। এক রুমে যদি ক্লাস এইট বেশী গ্যাদারিং করে সবসময় রুম ক্রিকেট খেলে তাহলে সেই রুমের রুম লিডার নাইনের অন্য ক্লাসমেটের কাছে প্রেস্টিজ থাকে না। আবার ক্লাস নাইনের সামনে যদি ক্লাস এইট সেভেন কে শান্টিং দেয় তাহলেও এদের প্রেস্টিজ এর দারুণ টানাটানি পড়ে। তখন কার কথা বার্তা অনেকটা এই রকম ” তুমি সেভেন পাংগাবা ঠিক আছে কেউ তো মানা করে নাই। কিন্তু আমি যখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন তুমি চিল্লাইলা কেন আমি ক্রস করার পর কি পারতা না। আমাদের কি একদম চোখে লাগে না?”
ক্লাস টেনঃএরা আবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে এই ভাবে নিজেদেরকে ক্লাস ১২ এর সমকক্ষ ভাবতে চেষ্টা করে। তাই প্রিটেস্ট কিংবা টেস্ট এর সময় ক্লাস ১২ এর মত সুযোগ সুবিধা না পেলে কিংবা ব্লক এ থাকার অনুমতি না পেলে কিংবা রাতে পড়ার পারমিশন , চা খাওয়ার সুবিধা না পেলে এদের আর প্রেস্টিজ থাকে না। তখনকার কথা বার্তা এইরকম ” আরে আগের ব্যাচ ৩ মাস আগে থেকে একাডেমী ব্লকে যায়নাই। ১২ এর ভাইয়াদের এখনো টেস্ট শেষ হয়নাই তাও তারা চা খায় আমাদের দেয় না। প্রেস্টিজ থাকে নাকি জুনিয়র দের কাছে?”
ক্লাস ইলেভেনঃএদের প্রেস্টিজ সবচেয়ে কড়া। কথায় বার্তায় এদের প্রেস্টিজ হাতছাড়া হয়ে যাবার ভয় থাকে। মোটামোটি এদের প্রেস্টিজ বজায় রাখার জন্য পুরা কলেজ এমন কি ক্লাস ১২ কেও তটস্থ থাকতে হয়। ডায়নিং হলে প্রিফেক্ট যদি কিপ কোয়ায়েট বলে তাহলেও ১১ এর প্রেস্টিজ চলে যায় কারণ তারাই বেশি কথা বলে। সিপি বেশি ভাব মারে আমাদের কে উদ্দেশ্য করে এইটা না বললেও হত। সেখানে যদি জুনিয়র কাউকেউ পানিশমেন্ট দেওয়া হয় তাহলেও ১১ মনে করে এটা বুঝি ঝি কে মেরে বউকে শিখানো। ফল ইনে তাড়াতাড়ি আসলে কিংবা খুব প্রপার থাকলেও ইলেভেন এর প্রেস্টিজ আর থাকেনা। ১১ আবার ডিসিপ্লিন মারে এই হল তখনকার জনপ্রিয় ডায়লগ।
জুনিয়র প্রিফেক্টঃইলেভেন এর জেপি বলে যে গোত্র থাকে তাদের আবার প্রেস্টিজ নিহিত হল হারি আপ দেওয়ার সময়। কোন কারণে যদি হারি আপ শুনেও কোন জুনিয়র না দৌড়িয়ে হাঁটে তাহলে এদের প্রেস্টিজ একেবারেই পাংচার। হারি আপে তারা তাই পুরো কলেজ কাঁপিয়ে দেয়।
ক্লাস টুয়েলভঃএদের যে কখন কোথায় প্রেস্টিজ চলে যায় নিজেরাই বুঝতে পারে না। এডজুট্যান্ট পানিশমেন্ট দিক সমস্যা নাই এমন কি রুমে ডেকে বেতের বাড়ি দিলেও সমস্যা নাই তবে অন্য ক্যাডেট এর সামনে ঝাড়ি দিলেই প্রেস্টিজ শেষ। ফল ইনে নেমে যদি দেখে ক্লাস ১১ এখনো আসেনাই তাহলেও পাংচার হয়ে যায় প্রেস্টিজ। ইডি খাওয়ার ঘোষণা যদি সবার সামনে বলে দেয় কেউ তাহলেও খবর আছে। আর পরীক্ষা এগিয়ে আসলে যদি রাতে লাইট তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাও তাও তাদের একটু কেমন কেমন লাগে
কলেজ প্রিফেক্টকলেজ প্রিফেক্ট এর সাথে জুনিয়ররা কথা বললেই অন্যদের কাছে তার প্রেস্টিজ শেষ। কলেজ প্রিফেক্ট হবে সেইরকম ভাবের। জুনিয়র স্যাররাও তাই তাদের সাথে একটু গলা উঁচু করে কথা বললেও পাংচার এর আওয়াজ পাওয়া যায়। এক এডজুট্যান্ট এর রুমের ভিতর ছাড়া আর সব জায়গাতেই কলেজ প্রিফেক্ট এর প্রেস্টিজ পাংচার হওয়ার একটা সমূহ সম্ভাবনা সব সময়ই থেকে যায়।
১১ টি মন্তব্য : “অনুঘটনা-১(প্রেস্টিজ পর্ব)”
মন্তব্য করুন
মারাত্মক হইসে
গবেষণা ধর্মী কাজে আপনার হাত আছে। মজা পাইলাম।
গবেষক...
জটিল
ভালো হইছে। বিস্তর গবেষণা করতে হইছে মনে হয়। 🙂
fatafati hoise....ami hashte hashte goragori ditesi....
kothin analysis
আজকে আমার পুরান সব গুলা লেখা আবারো পড়তে ইচ্ছে করতেছে।
পড়তে থাক...পরীক্ষায় পাস সুনিশ্চিত... 😀 😀 😀 😀
আরে!!এই লেখাটা আমিও আইজকা পইরা গেসিলাম!!! :clap: :clap: :clap:
@তুহিন
তুমি পুরান লেখা পরে কমেন্ট করে পুরান কথা মনে করাই দিচ্ছ। আহারে তখন ঘুমাতে পারতাম না ঘুমাতে গেলেই মনে পড়ে যেত এই লেখাটা দেই।