এটা আমার কাল্পনিক সিরিজ।
আমার আপুসোনা – ৫
মোবাইলের এসএমএসটা পড়ার সাথে সাথে আমার মধ্যে প্রথমেই যে অনুভূতি আসল সেটা হল অভিমান। তীব্র অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছা হল। তীব্র ভাইব্রেশনে মোবাইল যখন একটি এসএমএস এর আগমনবার্তা জানাল প্রবল ভাল লাগায় সাথে সাথে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি আমার আপুসোনার এসএমএস। একরাশ আনন্দ চোখেমুখে নিয়ে যখন এসএমএস পড়ছি তখন আস্তে আস্তে সেই জায়গায় অভিমান চলে আসল।
“পিচ্চিসোনা, কেমন আছিস ভাইয়া? অনেকদিন তোর সাথে গল্প করা হয় না। কি করছিস এখন? কোন কাজ না থাকলে মেসেঞ্জারে আয়। আজ তোকে অনেক মনে পড়ছে, ভাইবোন আড্ডা মারি… ”
ছোট্ট একটা মেসেজ কিন্তু কি অসীম তার ক্ষমতা। অনুভূতিকে পাশ কাটিয়ে প্রথমেই আমি যেই কাজ করি তা হচ্ছে আমার ল্যাপটপের বাটন অন করি। এই প্রথম বুঝতে পারি ভিসতা আসলে অনেক স্লো ওপেন হতে এত দেরী হয়। কেন যে পিসি এখনো টিভির মত অন করলেই স্টার্ট হয়ে যায় না। একসময় প্রতিদিন আমার আপুসোনার সাথে আমার কথা হত। ওর সাথে কথা না বললে ওর আদর না পেলে আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কেন যে সবাই ব্যস্ত হয়। কতদিন ওর ব্যস্ততাকে অভিশাপ দিয়েছি নিজেই নিজেই অভিমান করেছি আর প্রতিদিন ভাবতাম আজ বুঝি ওর সময় হবে কথা হবে।
পিসি ওপেন হবার সাথে সাথে মেসেঞ্জার এ লগইন করি। একটা অতি প্রিয় নামের স্ট্যাটাস যখন অনলাইন দেখে মুখের কোনে এমনিতেই হাসি ফুটে আমার।
– আপুসোনাআআআআআ
-আস্তে, সামনে পেলে তো মনে হয় চীৎকার দিয়ে গলা ফাটিয়ে দিতি।
-কি বলিস তুই কত্ত কত্ত দিন পরে তোর সাথে নেটে কথা হচ্ছে।
-কেমন আছিসরে পিচ্চি? স্যরি ভাইয়া তোর সাথে নিয়মিত কথা বলতে পারি না…
– আমি কিন্তু প্রতিদিন তোর সাথে কথা বলি।
– কিভাবে?
-রাতে ঘুমানোর আগে প্রতিদিন মনে মনে তোকে ফোন করে কত কথা বলি।
– কি কথা বলিস?
-সব তো বলা যাবে না। তবে বেশীরভাগই অভিমানের কথা।
-খুবই স্যরিরে ভাইয়া। আসলে বিয়ে হয়ে গেলে মানুষের নিজের জন্য কোন কর্ণারই খুঁজে পাওয়া যায় না। তার উপর চাকরী। দেখা যায় সপ্তাহে ৫ দিন অফিসে গিয়ে বাকি দুইদিন এমনিতে বাসায় হাজার কাজ থাকে। আর সাথে আরেকজন যখন থাকে তখন আর নেটে আসা হয় না। রাগ করিস না লক্ষী ভাইয়া আমার।
– তুই কৈফিয়ত দিতে হবে না আপুসোনা। আমি সবই বুঝি কিন্তু তাও অভিমানটা হয়েই যায়। আর রাগ? ওই একটা জিনিস তোর সাথে আমি করতে পারি না।
– তুই তো আমার লক্ষী ভাইয়া।
-তুই কেমন আছিস আপুসোনা। কতদিন পর আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তোর সাথে কথা বলছি।
-ঐ তোকে না আমি প্রতিদিন মেইল করি। অফিসে গিয়ে আমার প্রথম কাজই তো হল তোকে মেইল করা।
-ঐটা দিয়েই তো বেঁচে আছি। নইলে তোকে আমি যে প্রচন্ড মিস করি। তবে মেইলে কি আর মনের কথা সব বলা যায়। সাথে সাথে কোন উত্তার আসে না যে।
– তুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি
– আমি তোর কাছে আজীবন বাচ্চাই থাকব আপুসোনা।
– থাক তুই আমার পিচ্চিসোনা হয়ে।
-আপুসোনা ভাল আছিস তুই? নতুন জীবন কেমন লাগছে।
– নতুন কইরে? ১ বছর তো প্রায় হয়ে গেল।
– তাই? ইশশ কতদিন তোকে দেখি না।
– তুই এবার দেশে আসলি না তাইনারে?
– এবার এত ঝামেলা কাটালাম আমার মনে হচ্ছে যুগ যুগ দেশে যাই না।
– তোর শরীর এখন কেমন রে ভাইয়া? পেইন কি আর হয়?
– নাহ এখন আর অত হয় না। তবে বেশি প্রেসার পড়ে গেলে রাতে একটু ব্যাথা করে।
– কেন? প্রেসার পড়বে কেন? তুই হচ্ছিস একেবারে একটা কেয়ারলেস ছেলে। নিজের কথা সবার আগে মনে করবি না? খাওয়া দাওয়া করেছিস আজ?
– আমি প্রতিদিনই খাওয়া দাওয়া করি কিন্তু তুই এমন দিন শুধু জিজ্ঞেস করিস যেদিন কেন যেন আমার খাওয়া হয় না।
– তুই হচ্ছিস ফাজিলের ফাজিল…
– প্লিজ আপুসোনা এখনই খেতে যেতে বলিস না? কথা দিলাম তোর সাথে কথা বলে ফ্রিজে যা আছে সব খেয়ে ফেলব তাও আজ এখনই আমাকে খেতে পাঠাস না।
– তোর মাথায় গিটার স্ম্যাশ করা দরকার।
– যাই করিস আপুসোনা তোকে নেটে রেখে এখন খেতে গেলে আমার হজম হবে না।
– তুই এভাবে কথা বলিস এত মায়া লাগে ভাইয়া।
– আপুসোনা তোর সাথে প্রতিটা সেকেন্ড আমার অনেক ইম্পর্ট্যান্ট । একটা সেকেন্ডও আমি মিস করতে চাই না। তার উপর আজ কতদিন পর তোকে পেলাম।
– তুই আমাকে এত মিস করিস পিচ্চি… তোর আপুসোনাটা খুব খারাপ।
– এই কথাটা যদি তুই ছাড়া অন্য কারো মুখ থেকে বের হত তার জিহবাটা টান দিয়ে ছিড়ে ফেলতাম। আমার আপুসোনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আপু।
– বিচারকটা কে ছিল তুই? তোর তো একচোখা বিচার।
– বিচারক লাগবে না আমার আপুসোনা কেমন তা তো আমি জানি।
– এই যে তোকে সময় দেই না। তুই যতটা মিস করিস তার ফিডব্যাক দিতে পারি না। মাঝে মাঝে তোর এসএমএস রিপ্লাই দিতে ভুলে যাই…
– যত যাই করিস তুই যে আমাকে আদর করিস, ভালবাসিস এই বিশ্বাস তো ভাঙতে পারিস নাই এখনো। আমি জানি তুই আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভালবাসিস। আমিও যদি অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন হয়ত আমিও তোকে এত মিস করব না আর তাই বলে কি তোর প্রতি ভালবাসা কমে যাবে?
– ঐ তুই আবার কখন ব্যস্ত হবি? আমাকে ভুলে যাবি মানে? এমন মাইর দেব…
– হাহাহা তোকে ভুলতে পারলে তো আমার ভালই হত। এত মিস করতে কষ্ট হয় আপুসোনা।
– বড় হওয়া ভাল নারে পিচ্চি। এত সব আজাইরা কাজ বাড়ে। নিজের ইচ্ছামত থাকা যায় না একেবারেই।
– আমি অনেক লাকি আপুসোনা তোকে পেয়ে।
– তুই আমাকে এত ভালবাসিস কেন বাবুয়া?
– আমার ছোটবেলা থেকে অল্প অল্প করে বানানো আপুসোনা তুই। তোকে ভাল না বেসে আমি কই যাব আপুসোনা।
৪১ টি মন্তব্য : “আমার আপুসোনা – ৬”
মন্তব্য করুন
😀
অনেকদিন পর তপু, আর তপুর সুইট আপুসোনা।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
🙂
আপনার না একটা লেখার কথা ছিল ভাইয়া?
আসলেই অনেকদিন লেখা হয় না। আসলে কেন যেন হঠাৎ লেখার প্রায়োরিটি কমে গেছে।
বহুতদিন পর ঘুম থেকে জাগলেন তপু ভাইয়া। কেমন আছেন আপনি এবং আপনার আপুরা????
এখন আর আপনাকে ঈর্ষা করি না, আমারো আছে আপুসোনা :goragori: :goragori: :goragori:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
তাই নাকি?
আপুসোনা নাম কিন্তু পেটেন্ট করা 😉
খুব সুন্দর ......... :boss: :boss: :boss:
ধন্যবাদ ভাইয়া
কেমন আছেন আপনি?
তোর আপুসোনাগুলো সত্যিই অসাধারন হয়... :hatsoff: :hatsoff:
পড়তে পড়তে মুগ্ধ হয়ে যায় ... 😀 😀
🙂
লেখাটা পড়ে ভাল লাগল তপুসোনা 🙂 😀
আগের মতো নিয়মিত লেখনা কেন?
ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
হেভী লাগলো তপু ভাই 😀
ইশশহ আমারো যদি একটা আপুসোনা থাকতো :dreamy: :boss:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
😛
কিরে... আছিস কেমন?
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ব্যস্তরে। জানুয়ারীতে থিসিস জমা দিতে হবে।
লেখাটা পড়ে ভাল লাগল তপুসোনা :clap:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ধন্যবাদ ভাইয়া
লেখাটা পড়ে ভাল লাগল তপুসোনা 😀
লেখাটা পড়ে আমার অপুর কথা মনে পড়ে গেল। কতদিন কথা হয় না। 🙁
দেন ভাইয়া আপুকে একটা ফোন এখনি
আমার কোনো বোন নাই :((
আমার বোন আছে, সো আমার সব আছে :awesome: :awesome:
ও হ্যা, বজায়িং দ্যা সমসাময়িক ধারা, লেখাটা পড়ে ভাল লাগল তপুসোনা 😀
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
তাই নাকি ভাইয়া , জেলাসিত
😀
😮 😮 ক্যাডা এইটা!
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
এখন চিনতাসস না ক্যাডা? :bash:
বত্রিশ পাডি দাত দেইখায় সন্দ করছিলাম, আর এখন মাথা বাইড়ানি দেইখ্যা সিউর হইলাম :hug: :awesome: :awesome:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
মায়াবতী ধরনের আপুসোনাদের দেখি খুব বড় বাজার। একটু রুক্ষ ধরনের আপুসোনাদের কী কোন ভাত নেই?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপু ডাকটাই তো আপু মায়াবী।
:thumbup: :thumbup: :thumbup:
🙂
আমার মায়াবতী কিংবা একটু রুক্ষ ধরনের- কোন প্রকার বোনই নাই। 🙁 🙁
লেখা ভালো লাগল তপু। :thumbup:
ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার কমেন্টের অপেক্ষায় ছিলাম
ভাইয়া, অনেকদিন পর এই সিরিজ দেখে কমেন্ট করার লোভ সামলাতে পারলাম না... বরাবরের মতনই অনেক ইমোশোনের বন্যা... 😛
আমার আপুটাও পচা হয়ে গেছে। যেই আপুর সাথে আমার প্রতিদিন অন্তত সকাল বিকেল দুইবার কথা হত, এখন তিনদিন একবার কয়েকমিনিট করেও হয়না! 🙁 ওর বাবুটা ওকে নতুন করে অনেক ব্যস্ত রাখে-- সেইটা আর বলতে...
আমার আপুটাও অনেক সুইট 😉 আর আমার কাছে আমার সবচাইতে প্রিয় 😀
ভালো লাগলো ভাইয়া। আমার আপুকে যদি এইটা পড়াইতে পারতাম! তাইলে একটু আহলাদ করা শিখত। এমনি অসম্ভব আদর করবে সে ঠিকই, কিন্তু আহলাদ করলে বলে, "ফয়সাল, ঢং করবি না বেশি" 🙁 আমি যে ওরে আসলেই অনেক মিস করি, সেইটা বললেও দোষ...
হাহাহা , আপুর পিচ্চিটা তোমার কম্পিটিটর হয়ে গেছে। আপুকে আমার শুভেচ্ছা দিও। তুমি তো একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে। হারিয়ে যেও না সাথে থেকো।
তপু এবং আপু দুইজনেই ড়ক্করে 🙂
🙂 😛
তপুসোনা লিখা বরাবরের মত ভালো হয়েছে 🙂
ধন্যবাদ ভাবী,
আপনারা কেমন আছেন?
আমি আমার পিচ্চি ভাইয়া কে খুউউউউউউউ.........উউউউবববববব মিস্ করছি 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁
ভাইয়া লেখাটা ঝাক্কাস হইসে..... :clap: :clap: :clap: :clap:
ধন্যবাদ আপু, তোমার পিচ্চি ভাইয়াটাকে এখনই একটা ফোন করে দাও।
মন হালকা ক্যারাব্যারা, তপুসোনা আর আপুসোনার গল্প পড়ে ভালো করে গেলাম 🙂
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
pichhi,
tor o compititor chole ashche 🙂 Manalshona :))