আমার আপুসোনা – ৬

এটা আমার কাল্পনিক সিরিজ।
আমার আপুসোনা – ৫
মোবাইলের এসএমএসটা পড়ার সাথে সাথে আমার মধ্যে প্রথমেই যে অনুভূতি আসল সেটা হল অভিমান। তীব্র অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছা হল। তীব্র ভাইব্রেশনে মোবাইল যখন একটি এসএমএস এর আগমনবার্তা জানাল প্রবল ভাল লাগায় সাথে সাথে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি আমার আপুসোনার এসএমএস। একরাশ আনন্দ চোখেমুখে নিয়ে যখন এসএমএস পড়ছি তখন আস্তে আস্তে সেই জায়গায় অভিমান চলে আসল।
“পিচ্চিসোনা, কেমন আছিস ভাইয়া? অনেকদিন তোর সাথে গল্প করা হয় না। কি করছিস এখন? কোন কাজ না থাকলে মেসেঞ্জারে আয়। আজ তোকে অনেক মনে পড়ছে, ভাইবোন আড্ডা মারি… ”
ছোট্ট একটা মেসেজ কিন্তু কি অসীম তার ক্ষমতা। অনুভূতিকে পাশ কাটিয়ে প্রথমেই আমি যেই কাজ করি তা হচ্ছে আমার ল্যাপটপের বাটন অন করি। এই প্রথম বুঝতে পারি ভিসতা আসলে অনেক স্লো ওপেন হতে এত দেরী হয়। কেন যে পিসি এখনো টিভির মত অন করলেই স্টার্ট হয়ে যায় না। একসময় প্রতিদিন আমার আপুসোনার সাথে আমার কথা হত। ওর সাথে কথা না বললে ওর আদর না পেলে আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কেন যে সবাই ব্যস্ত হয়। কতদিন ওর ব্যস্ততাকে অভিশাপ দিয়েছি নিজেই নিজেই অভিমান করেছি আর প্রতিদিন ভাবতাম আজ বুঝি ওর সময় হবে কথা হবে।
পিসি ওপেন হবার সাথে সাথে মেসেঞ্জার এ লগইন করি। একটা অতি প্রিয় নামের স্ট্যাটাস যখন অনলাইন দেখে মুখের কোনে এমনিতেই হাসি ফুটে আমার।
– আপুসোনাআআআআআ
-আস্তে, সামনে পেলে তো মনে হয় চীৎকার দিয়ে গলা ফাটিয়ে দিতি।
-কি বলিস তুই কত্ত কত্ত দিন পরে তোর সাথে নেটে কথা হচ্ছে।
-কেমন আছিসরে পিচ্চি? স্যরি ভাইয়া তোর সাথে নিয়মিত কথা বলতে পারি না…
– আমি কিন্তু প্রতিদিন তোর সাথে কথা বলি।
– কিভাবে?
-রাতে ঘুমানোর আগে প্রতিদিন মনে মনে তোকে ফোন করে কত কথা বলি।
– কি কথা বলিস?
-সব তো বলা যাবে না। তবে বেশীরভাগই অভিমানের কথা।
-খুবই স্যরিরে ভাইয়া। আসলে বিয়ে হয়ে গেলে মানুষের নিজের জন্য কোন কর্ণারই খুঁজে পাওয়া যায় না। তার উপর চাকরী। দেখা যায় সপ্তাহে ৫ দিন অফিসে গিয়ে বাকি দুইদিন এমনিতে বাসায় হাজার কাজ থাকে। আর সাথে আরেকজন যখন থাকে তখন আর নেটে আসা হয় না। রাগ করিস না লক্ষী ভাইয়া আমার।
– তুই কৈফিয়ত দিতে হবে না আপুসোনা। আমি সবই বুঝি কিন্তু তাও অভিমানটা হয়েই যায়। আর রাগ? ওই একটা জিনিস তোর সাথে আমি করতে পারি না।
– তুই তো আমার লক্ষী ভাইয়া।
-তুই কেমন আছিস আপুসোনা। কতদিন পর আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তোর সাথে কথা বলছি।
-ঐ তোকে না আমি প্রতিদিন মেইল করি। অফিসে গিয়ে আমার প্রথম কাজই তো হল তোকে মেইল করা।
-ঐটা দিয়েই তো বেঁচে আছি। নইলে তোকে আমি যে প্রচন্ড মিস করি। তবে মেইলে কি আর মনের কথা সব বলা যায়। সাথে সাথে কোন উত্তার আসে না যে।
– তুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি
– আমি তোর কাছে আজীবন বাচ্চাই থাকব আপুসোনা।
– থাক তুই আমার পিচ্চিসোনা হয়ে।
-আপুসোনা ভাল আছিস তুই? নতুন জীবন কেমন লাগছে।
– নতুন কইরে? ১ বছর তো প্রায় হয়ে গেল।
– তাই? ইশশ কতদিন তোকে দেখি না।
– তুই এবার দেশে আসলি না তাইনারে?
– এবার এত ঝামেলা কাটালাম আমার মনে হচ্ছে যুগ যুগ দেশে যাই না।
– তোর শরীর এখন কেমন রে ভাইয়া? পেইন কি আর হয়?
– নাহ এখন আর অত হয় না। তবে বেশি প্রেসার পড়ে গেলে রাতে একটু ব্যাথা করে।
– কেন? প্রেসার পড়বে কেন? তুই হচ্ছিস একেবারে একটা কেয়ারলেস ছেলে। নিজের কথা সবার আগে মনে করবি না? খাওয়া দাওয়া করেছিস আজ?
– আমি প্রতিদিনই খাওয়া দাওয়া করি কিন্তু তুই এমন দিন শুধু জিজ্ঞেস করিস যেদিন কেন যেন আমার খাওয়া হয় না।
– তুই হচ্ছিস ফাজিলের ফাজিল…
– প্লিজ আপুসোনা এখনই খেতে যেতে বলিস না? কথা দিলাম তোর সাথে কথা বলে ফ্রিজে যা আছে সব খেয়ে ফেলব তাও আজ এখনই আমাকে খেতে পাঠাস না।
– তোর মাথায় গিটার স্ম্যাশ করা দরকার।
– যাই করিস আপুসোনা তোকে নেটে রেখে এখন খেতে গেলে আমার হজম হবে না।
– তুই এভাবে কথা বলিস এত মায়া লাগে ভাইয়া।
– আপুসোনা তোর সাথে প্রতিটা সেকেন্ড আমার অনেক ইম্পর্ট্যান্ট । একটা সেকেন্ডও আমি মিস করতে চাই না। তার উপর আজ কতদিন পর তোকে পেলাম।
– তুই আমাকে এত মিস করিস পিচ্চি… তোর আপুসোনাটা খুব খারাপ।
– এই কথাটা যদি তুই ছাড়া অন্য কারো মুখ থেকে বের হত তার জিহবাটা টান দিয়ে ছিড়ে ফেলতাম। আমার আপুসোনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আপু।
– বিচারকটা কে ছিল তুই? তোর তো একচোখা বিচার।
– বিচারক লাগবে না আমার আপুসোনা কেমন তা তো আমি জানি।
– এই যে তোকে সময় দেই না। তুই যতটা মিস করিস তার ফিডব্যাক দিতে পারি না। মাঝে মাঝে তোর এসএমএস রিপ্লাই দিতে ভুলে যাই…
– যত যাই করিস তুই যে আমাকে আদর করিস, ভালবাসিস এই বিশ্বাস তো ভাঙতে পারিস নাই এখনো। আমি জানি তুই আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভালবাসিস। আমিও যদি অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন হয়ত আমিও তোকে এত মিস করব না আর তাই বলে কি তোর প্রতি ভালবাসা কমে যাবে?
– ঐ তুই আবার কখন ব্যস্ত হবি? আমাকে ভুলে যাবি মানে? এমন মাইর দেব…
– হাহাহা তোকে ভুলতে পারলে তো আমার ভালই হত। এত মিস করতে কষ্ট হয় আপুসোনা।
– বড় হওয়া ভাল নারে পিচ্চি। এত সব আজাইরা কাজ বাড়ে। নিজের ইচ্ছামত থাকা যায় না একেবারেই।
– আমি অনেক লাকি আপুসোনা তোকে পেয়ে।
– তুই আমাকে এত ভালবাসিস কেন বাবুয়া?
– আমার ছোটবেলা থেকে অল্প অল্প করে বানানো আপুসোনা তুই। তোকে ভাল না বেসে আমি কই যাব আপুসোনা।

৪১ টি মন্তব্য : “আমার আপুসোনা – ৬”

  1. রকিব (০১-০৭)

    বহুতদিন পর ঘুম থেকে জাগলেন তপু ভাইয়া। কেমন আছেন আপনি এবং আপনার আপুরা????
    এখন আর আপনাকে ঈর্ষা করি না, আমারো আছে আপুসোনা :goragori: :goragori: :goragori:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. ভাইয়া, অনেকদিন পর এই সিরিজ দেখে কমেন্ট করার লোভ সামলাতে পারলাম না... বরাবরের মতনই অনেক ইমোশোনের বন্যা... 😛

    আমার আপুটাও পচা হয়ে গেছে। যেই আপুর সাথে আমার প্রতিদিন অন্তত সকাল বিকেল দুইবার কথা হত, এখন তিনদিন একবার কয়েকমিনিট করেও হয়না! 🙁 ওর বাবুটা ওকে নতুন করে অনেক ব্যস্ত রাখে-- সেইটা আর বলতে...

    আমার আপুটাও অনেক সুইট 😉 আর আমার কাছে আমার সবচাইতে প্রিয় 😀
    ভালো লাগলো ভাইয়া। আমার আপুকে যদি এইটা পড়াইতে পারতাম! তাইলে একটু আহলাদ করা শিখত। এমনি অসম্ভব আদর করবে সে ঠিকই, কিন্তু আহলাদ করলে বলে, "ফয়সাল, ঢং করবি না বেশি" 🙁 আমি যে ওরে আসলেই অনেক মিস করি, সেইটা বললেও দোষ...

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।