দুদিন ধরে এখানে লেখা হচ্ছে না আমার(রায়হান আমার পেরেন্টসের ফোন নং খুঁজছে। বাসায় বলে দিবে আমি নাকি কিছু করিনা সারাদিন ব্লগিং ছাড়া এই ভয়ে)। আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাব বলে ৩টার দিকে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসার আগেই খুব ভাল একটা টপিক মাথায় চলে আসল। সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে মনে হলে এটা তাড়াতাড়ি না লিখলে আমার ঘুম আসবেনা। তাই উঠে আসলাম। ক্যাডেট কলেজের প্র্যাকটিক্যাল গুলা নিয়ে এই কাহিনী। এই একটা জায়গায় যারা স্যারদের কাছে ভাল তারা অনেক সুযোগ পেয়ে যায়। এখনই ক্যাডেট কলেজ বিদ্বেষী কেউ বলে উঠবে- ” বলেছিলাম না ক্যাডেট কলেজে বোর্ড পরীক্ষায় ওরা নিজেদের কলেজে পরীক্ষা দেয় বই খুলে। এরকম কথা আমি শুনেছি যখন আমাদের কলেজ থেকে সেন্টার সরিয়ে বাইরে নিয়ে গেল তখন। কিন্তু গাধাগুলা যদি জানত আমাদের জন্য সেটাই ভাল হয়েছে। ডান দিকে তাকালেই পাশের জনের খাতা পুরা দেখে ফেলছি। এক হাতের মধ্যে আরেকজনের খাতা। আমাদের অডিটোরিয়ামের বিশাল জায়গায় ৫০ জনের তুলনায় যে কত ভালো তা’ ওরা কি বুঝবে। যাই হোক এই লেখা তা নিয়ে নয়। এটা হল প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার মজার কাহিনী নিয়ে।
* ফিজিক্স ল্যাব
ইন্টার এর ফিজিক্স ল্যাব। আমার ভাগ্যে পড়েছে অনুনাদ।নিয়ম হল একটু একটু পানি বাড়িয়ে কমিয়ে অনুনাদ বের করে ডাটা নেওয়া। আমি আগে হিসাব করে ফেলেছি কতটুকু পানি হলে অনুনাদ পাওয়ার কথা। তারপর সেই হিসেবের সাথে এদিক ওদিক করে পরীক্ষা করছি।ডাটা বেশি ভাল হলে আবার সন্দেহ করবে external।তো অনুনাদ ঠিক মত পাচ্ছিনা। আমিও আমার ডাটা থেকে বেশি নড়ছিনা। তাও হালকা একটা আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমি বীরদর্পে স্যারকে ডাকতে গেলাম। আমাদের কলেজের স্যার তখন external কে বুঝাচ্ছে কে কত ভাল আমরা। উনি আসলেন আমার কাছে। এসে বললেন- শোনাও তোমার অনুনাদ। আমি ফর্কে দিলাম বাড়ি। ফ্যাসফ্যাসে একটা আওয়াজ পাওয়া গেল। আমি তো বিশাল সন্তুষ্টি নিয়ে স্যার এর দিকে তাকালাম। স্যার বললেন, কোথায় আওয়াজ? শোনা তো গেল না ঠিকমত। আমি তখন কি বলব। আকাশের দিকে তাকাতে গিয়ে খেয়াল হল উপরে ফ্যান ঘুরছে। সাথে সাথে বললাম- স্যার ফ্যান আওয়াজ করছে তো এই জন্য ভাল শোনা যাচ্ছেনা। ল্যাব এসিস্ট্যান্ট আমার প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে হাসি দেওয়ার আগেই external এর জবাব, ” অনুনাদ হলে তো ঐ দরজার কাছ থেকে আওয়াজ শোনা যাওয়ার কথা, কি বলেন স্যার?” স্যার তখন হে হে হাসিতে ব্যস্ত। আর আমি ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছি। যেন সব দোষ ওই ফ্যানের।
*কর্মমূখী শিক্ষা
এই একটা বিষয় ক্যাডেট কলেজ ছাড়া খুব কম স্কুল কলেজেই আছে। যাদের নাই তারা ঠিক বুঝবে না। একটা জিনিস আছে জোড় বলে (আমার এসএসসি তে ছিল)। কাঠের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় জোড়া দেওয়ার বিভিন্ন উপায় এর বিভিন্ন নাম আছে। যেমন একটা হল টি জোড় (t শেপের জোড়)। প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় জোড় বানাতে হত। বলা বাহুল্য এইগুলা বানানো থাকত আগে থেকেই। আমাদের ল্যাব এর এসিস্ট্যান্ট ভাইয়ারা আগেরদিন বানিয়ে রাখতেন। সেবার কেন যেন একটা জোড় শর্ট পড়ে গেছে। তো আগে থেকে বানানো একটা নমুনা ওই গ্রুপকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক এক গ্রুপ সেই জোড়ের মধ্যে নিজেদের নাম লিখে external এর কাছে গিয়ে জমা দিয়ে আসছে। একটা গ্রুপ গেল। তাদের জোড়টা হাতে নিয়ে external এর চোখ ছানাবড়া। উনি বলছেন- বাহ, আপনাদের ক্যাডেটরা দেখি অনেক করিৎকর্মা। তিন ঘন্টার মধ্যে জোড় বানিয়ে পালিশও করল আবার তাতে বার্নিশ ও করে ফেলল। সেই বার্নিশ আবার শুকিয়েও গেল। ল্যাব এসিস্ট্যান্টের জিহবায় কামড় আর কলেজের স্যারের চুলে চুলকানি শুরু হয়ে গেল। আর ক্যাডেটের কোন বিকার নাই। এমন ভাব যে এ আর এমন কি। আমরা ক্যাডেট, এগুলা তো আমাদের বাম হাতের কাজ।
আরেকটা কাহিনী। এক ক্যাডেট কে external এর প্রশ্ন, ” ভাল খাটের গুনাবলী কি?”( কথাটা খাট শোনালেও আসলে হবে কাঠ। কারণ সিলেটি ভাষায় ক এর উচ্চারণ খ এর মত) ক্যাডেট একটু অবাক, ” স্যার খাট?”। external দ্বিগুন উৎসাহে বলে, ” হ্যা হ্যা,খাট”। এরপর আর ক্যাডেটের কোন সন্দেহ নাই। তার উত্তর- ” ভাল খাট হওয়ার গুনাবলী হচ্ছে তার নিচে বক্স থাকবে। যাতে মশারী রাখা যায়। যাকে বলে বক্স খাট। সুন্দর কাজ করা থাকবে। আর জোড়গুলা থাকবে মজবুত। যাতে খাটের উপর নড়াচড়া করলে ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ না করে।
* কম্পিউটার শিক্ষা
আমাদের সময় এই বিষয় ছিল না। আমার ছোটভাইর মুখে শোনা। কম্পিউটার শিক্ষার প্র্যাক্টিক্যাল এ কি আসবে আগে থেকে সেটা বানিয়ে কম্পিউটার এর মধ্যে সেভ করা আছে। কিন্তু external সামনে থেকে নড়ছেনা। সেটাও কপি পেষ্ট করা যাচ্ছেনা। পোলাপান সব উশখুশ করছে। কলেজের স্যার externalকে বলছেন-” চলেন স্যার, আমার রুমে চলেন। এখানে ওরা কাজ করুক।” external এর জবাব- “নাহ থাক; আমার এখানেই ভাল লাগছে।” মহা বিপদ। স্যারও এবার উশখুশ করা শুরু করলেন। এমন সময় মিল্ক টাইম হয়ে গেল। তখন স্যার তো মহা ব্যস্ত। “চলেন চলেন ভিপি স্যার আপনাকে ডাকছে। চা খাবেন। ৫ মিনিট লাগবে।” একেবারে টেনে নিয়ে গেলেন। আতিথেয়তার চরম নিদর্শন। ক্যাডেটদের জন্য সেই ৫ মিনিটই দরকার ছিল।
হা হা হা... হেভী মজা পাইসি।
তপু ভাই,আমারো একটা ভাল খাট দরকার বিয়ের পর।যাতে narachara করলেও ক্যাচক্যাচ আওয়াজ না করে 😀
পোলাপান মানুষ হইলনা আমি আবছা একটা ইঙ্গিত দিলাম ঠিকই ধরে ফেলছে। নাহ বয়সের দোষ আসলে।
আওয়াজ না হইলে তো আমি খাটই কিনুম না। আরে মিয়া, ক্যাঁচক্যাঁচই যদি না করল, ঐডা আবার খাট হৈলো নাকি? 😉
আসলেই মানুষ হইলো না। ব্লগের এতোগুলা শব্দের মধ্যে শুধু খাট শব্দটা নিয়াই চিন্তা সবার। কি আর করার।
jotil hoise topu vai....
topu vai apny boss. aro lekha chai. ghumanor age pore sobshomoy lekhen. apnar ki dhoroner khat posondo?????
হাহাহাহা...
হাহাহা তপু ভাই... খাটের কাহিনীটা জটিল... এইটা কলেজে থাকার সময়তো শুনি নাই!
:just: :pira:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..