মজার ঘটনা (আইসিসি পার্ট)


এখানে কিছু আইসিসিতে ঘটা কিংবা শোনা মজার ঘটনা লিখি।
ICCFM(Inter Cadet College Football Meet). ফৌজদারহাটে হচ্ছে ২০০১ সালে। আমাদের কলেজ টিমে আমার সাথে আমার ছোটভাই রায়হান (কনক) ও আছে। ঐ পিচ্চি শরীর নিয়ে ও কেমনে জানি বলটা নিজের পায়ে রাখতে জানে এইটা স্যার থেকে শুরু করে আমাদের কোচের ও খুব চিন্তা। ওর থেকে বড় বড় ডিফেন্ডার এর পাল্লায় পড়ে ও পড়ে যাচ্ছে , হোঁচট খাচ্চে কিন্তু শেষে দেখা যাচ্ছে বলটা ওর কাছেই। ফরোয়ার্ড রা যেমন হয় আর কি গোল মিস করলে কোন কথা আর মনে থাকে না কারো। হাউস টিমে খেলার সময় আমার পাস পেয়ে ও একবার গোল মিস করল তখন সবাই বলে দুই ভাই মিলে গোল মিস করে। আমার কি দোষ আমি বুঝলাম না। যাই হোক আইসিসিতে আমার সাথে কুমিল্লার পোলাপানের বহুত খাতির। সারাদিন ওদের সাথেই থাকি আমি। অনেকে আমাকে কুমিল্লার বলে ভুল করে। তো আমরা খেতেও বসি পাশাপাশি দুই কলেজ। একদিন বেশ মিলেঝিলে আমরা খাচ্ছি। কুমিল্লার আহসান না যেন শাহরিয়ার কনক কে জিজ্ঞেস করছে তুমি কোন ক্লাসে। কনকের উত্তর ভাইয়া ক্লাস নাইনে। বাহ কোথায় থাক তোমরা? ভাইয়া ঢাকা বাসাবোতে। আরে তাই নাকি বাসাবোতে তো কামরুল ও থাকে চিন নাকি? কনকের সরল উত্তর হ্যা ভাইয়া চিনি। পরে আমাকে এসে ঐ কথা বলার সময় বললাম শালা ও তো আমার ছোট ভাই। জমল না? ওকে আরেকটা ।
ICCHM(হকি) এ শোনা কাহিনী। রংপুর ক্যাডেট কলেজের কাহিনী। রংপুরের খুব জনপ্রিয় ক্যাডেট সাদিক ওমর ফারুক হাউসের সম্ভবত। ওরা ৪ ভাই একই কলেজের ছিল। সবার নামই নাকি সাদিক ছিল। যাই হোক ও ক্লাসের সবাইকে ২৯ খেলা শিখাইছে। ১১ এ এসে কার্ড খেলা না পারাটা একটা বিশাল লজ্জার বিষয়। কলেজে থাকতে আমিও তখন অনেক কে শিখিয়েছিলাম। কিন্তু সাদেক এর মত পোংটামি করতে পারিনাই। সাদিক তো খেলা শিখাইছে ও যদি খেলা তুলতে না পারে কেমন দেখায়। খেলা চলছে কিন্তু ও দেখল যে খেলা তুলতে পারবেন। এই সময় ওর পার্টনার রঙের রাজা খেলেছে। ওর কাছে আসার পর ও খুব ভাবের সাথে কার্ড দিল রঙের রানী। তারপর হেভী ভাব মেরে যাহ ম্যারিজ করাই দিলাম। ওহ তোদের তো ম্যারিজ শিখানো হয়নাই। এইটা হইল ম্যারিজ। খেলা উঠে গেল । আরো একটা জনপ্রিয় নিয়ম ছিল ম্যারিজ হলে ওদের ১৬ হয়ে যেত। যতই হোক ১৬ পাইলেই হবে। তো দুজন এর মধ্যে কলাকলি হচ্ছে। দুজনই ম্যারিজ নিয়ে ডাকছে। কেউ আর থামেনা। ২৮-২৯ করে ৩২ ও পার হয়ে গেছে কাউকে থামানো যাচ্ছেনা। পরে ওই খেলাই বাদ দিতে হইছে। সেই থেকে আমরা যতদিন ২৯ খেলতাম কেউ রাজা দিলেই রানীটা মেরে বলতাম যাহ সাদিকের ম্যারিজ পড়াই দিলাম।
২৯ খেলার কথায় অন্য একটা কথা মনে পড়ল। কলেজ থেকে বের হয়ে গেছি। মির্জাপুরে আমাদের সংবর্ধনা দিবে। গেছি মির্জাপুরে। সেখানে আমার ছোটভাই ও এসেছে ওদের এসএসসি র সংবর্ধনা ও দিবে। ওরা তখন নতুন ১১ খুব ভাব। আমি আর জাহিদ গেলাম ওদের সাথে দেখা করতে হাসপাতালে সম্ভবত। জাহিদ আবার খুব ধার্মিক হয়ে গেছে। আমাকে একদিন বলছিল তুই আমার সব খারাপ কাজের কথা জানিস। কাউকে বলিস না পরকালে সাক্ষী হয়ে যাবে। আমিও বলেছিলাম ওকে আমিও ভুলে যেতে চেষ্টা করব। কিন্তু এইসব কথা ভুলি কেমনে। যাহোক ১১ এর নতুন পাঙ্খাওয়ালা ক্যাডেটরা আমাদের সামনে এসে বলে ভাইয়া আমরা ২৯ খেলি এখন কলেজেও। আমার ছোটভাই ও নাকি খুব ভালো খেলোয়াড়। জাহিদ আর আমি হাসি দুজনে। ওরা বলে ভাইয়া আসেন একটু আপনাদের সাথে খেলব। আমরা ভালো খেলি এইটা না বলে এটুকু বলি আমি ক্লাস ৪ থেকে কার্ড খেলি আর জাহিদ ও বহুত পুরান পাপী। আমরা বসলাম ওদের সাথে। কনকের সাথে ওদের আরো একজন খুব ভালো খেলোয়ার বসে গেল। খুব উৎসাহ ওদের। ১৫ মিনিটে লাল পাতা আর ঐদিকে কালো পাতার কোনায় নিয়ে গিয়ে আমি আর জাহিদ উঠে বললাম এখনো বয়স হয়নাই।
সেইসময়েরই আরেকটা কাহিনী। রাতের বেলা আমরা সবাই মিলে অন্তাক্ষরী খেলছি। ওই পাশে দুজন বাঘা বাঘা গায়ক তার মধ্যে ঝিনাইদহ এর আন্দালিব হেন গান নেই সে জানেনা। রবীন্দ্র থেকে শুরু করে হিন্দি সব সিনেমার গান। আমার পাশে আমি পেয়েছি JCC র ফাহাদ কে। আমি আবার এই খেলায় খুবই ভাল। গানের সুর আমার আসেনা কিন্তু গান বলে যেতে (লক্ষণীয় গেতে নয় কিন্তু) আমি বেশ এক্সপার্ট। সেইগুলার মধ্যে এমন কিছু গান আছে যেগুলা অনেকেই জানে না তার মধ্যে উদাহরণ দেই একটা (লক্ষীটি আঁচল টেনে ধরোনা , লোকে দেখলে বলবে কি দুষ্টুমি আর করোনা)। কিন্তু আমাকেও ছাড়িয়ে গেল ফাহাদ। ও একের পর এক গান গেয়ে যাচ্ছে। কেউই শুনেনি। আমিও ওর লাইনে চলে গেলাম। যেটাই মনে আসে আমরা গেয়ে ফেলি। সুর একটাই ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায় এই গানের সুরে সব চালিয়ে দিচ্ছি। রাত পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওরা আর আমাদের থামাতে পারছেনা। খেলাটা শেষ হতনা যদি না ফাহাদ একেবারে শেষে ঐ গান টা না গাইত। দ দিয়ে গান গাইতে হবে। আমাদের স্টক শেষ বানাতেও পারছিনা। হঠাৎ ফাহাদ গেয়ে উঠল ” দাদা গাছ কাটে দাদী বইসা দেখে… ” তারপর আমাকে বলে ওই এই গানটার পরের লাইনটা যেন কি আমি ভুলে গেছি। আমি আর পারলাম না । হাহাহাহাহা করে হেসে দিলাম। বাকি সবার অবস্থাও তখন একই।

৮ টি মন্তব্য : “মজার ঘটনা (আইসিসি পার্ট)”

  1. কলেজে থাকতে আমিও কয়েকবার টুয়েন্টি নাইন খেলেছিলাম। কিন্তু বের হওয়ার পর আর খেলা হয় নাই। তাই সব ভুলে গেছি। টুয়েন্টি নাইনের বিষয়টা তাই ঠিকমতো বুঝতে পারি নাই।

    মজার মজার সব কাহিনী পড়ে খুব ভালো লাগছে। ব্লগটা এতোটা হিট করবে স্বপ্নেও ভাবতে পারি নাই। এখন মনে হচ্ছে হিট করা তো সবে শুরু করলো।

    জবাব দিন
  2. হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দেই।

    বুয়েটে ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে আমাদের এই কামরুল ইসলাম তপু এবং জাহিদুল ইসলাম কিন্তু একবার এটিএন বাংলাতে গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। ওদের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে বুয়েটের ক্যাফের ওয়েটাররা এসে ওদের কে বলল.. কি গান গাইলেন...দিলেন তো হারাইয়া আমাগো....

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।