টিজ নেম

ক্যাডেট কলেজের সবচেয়ে অবিচ্ছেদ্য অংশ টিজ নেম। ক্লাস সেভেনের প্রথম কয়েকদিন বাদ দিলে বাকি ৬ বছরের প্রতিটা সময় মনে হয় টিজ নেম বানান ওইটার modification আর নতুন নতুন শানে নুযূল সহ নাম এ ছাড়া ক্যাডেট দের ভাত হজম হয়না। এখানে সিলেটের কিছু টিজ নেম এবং যতটা মনে আছে শানে নুযূল দিলাম।

*ডিম

দেবব্রত মল্লিক স্যার। আর্টস এন্ড ক্র্যাফটস। মির্জাপুর এর পোলাপান বুঝতে পারবে কেন ওনার নাম ডিম ওহহ নাও বুঝতে পারে। দেবব্রত মল্লিক স্যার এর অদ্যাক্ষর ছিল ডি এম। উনি নিজেও প্রথমে আমাদের খাতায় সাইন করত শুধু ডিএম দিয়ে। বোর্ডে স্যারের ক্লাসে স্যারের নামের জায়গায় অদ্যাক্ষর লিখারই নিয়ম ছিল। আমাদের জনৈক তার প্রতিভার বিষ্ফোরণ করেছিল মাঝখানে আই টা লাগিয়ে দিয়ে। এরপর থেকে স্যার পুরা নামে সাইন করতেন এবং বোর্ডে ও ওনার নাম পুরাটা লিখতে হত। কিন্তু ক্যাডেটদের মুখে উনি হয়ে গেলেন ডিম। এমন কি ওনার আর্ট পরীক্ষায় আমাদের কেউ কেউ শুধু বৃত্ত দিয়ে নকশা করত। ফলাফল ৪০। ফেল করালে সমস্যা তাই গিরিগিরি পাশমার্ক।

* পামোশ

এটা আমাদের আবিষ্কার না। আমাদের ভিপি হয়ে আসলেন রফিকুল ইসলাম স্যার। মনে হয় মির্জাপুর থেকে। ওখান থেকেই এই নামটাও আসলো । পাছা মোটা শয়তান। এইটার কারণ আমার আর বলতে হবে না আশা করি।

*ভূত

শরীফউদ্দীন স্যার। রসায়ন। উনিও এসেছিলেন মির্জাপুর থেকে। এবং সাথে করে এই নাম টা নিয়ে। আমরা ঢুকেই ওনাকে পেয়েছি তার এই নামসহ। কারণ আমার অজানা।

* কলা

এই স্যারের আসল নাম আমার মনে নাই। কারণ আমরা তখন ক্লাস ১০ এ উঠে গেছি আর্টস নাই। র উনি দেবব্রত স্যারের বদলা এসেছেন। ক্যাডেটমুখে শোনা উনি একদিন ডিউটি মাষ্টার থাকার সময় টি এর সময় কলা হাতে নিয়ে বলেছিলেন ,”কলা কি আমি খাব নাকি আমাকে কলায় খাবে” । সত্য কিনা জানিনা উনি দেখতেও লম্বা ঐ গল্প শুনে সবাই আবিষ্কার করে ফেলল ওনার দেহ কলার মতই। কোন সিলেটিয়ান থাকলে একটু স্যার টার নাম বলে দিস তো।

* আর কি

আগের ব্লগটাতে বলেছি মকবুল স্যারের কথা। উনি সব কথায় আর কি বলতেন। এই জন্য ওনার নাম আর কি। ওনার বিখ্যাত ডায়ালগ আমি আর কি বলা ছেড়ে দিয়েছি আর কি।

* বা–উ

জাহাংগীর আলম । বায়োলজী। উনি কেন যেন বায়ু কে বাউ বলতেন। র ক্যাডেট দের মুখে এর পর থেকে সব কথাই ওইরকম হয়ে গেল। যেমন। জাহাংগীর আলম বাওলোজি। য় এলেই আমার তাই স্যারের কথা মনে পড়ে

* জেমস বন্ড

এই স্যার এর নামটাও মনে পড়ছেনা। ইতিহাসের স্যার ছিলেন। উনি আমাদের কলেজে আসার সাথে সাথে ওনাকে একটা তদন্ত কমিটিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। মনে হল যেন ঐ জন্যই ওনাকে হায়ার করে আনা হয়েছে। সেই থেকে উনি জেমস বন্ড।

* solitary reaper

জুনিয়র রা এইটা নাও বুঝতে পারে। আমাদের সময় ইংরেজির একটা কবিতা ছিল the solitary reaper। এই স্যার আমাদের ওই কবিতা টা পড়িয়েছিলেন। সেই থেকে উনি সলিটারি রিপার। যদিও উনি সলিটারি ছিলেন না। ওনার wife হালিমা ম্যাডাম ও তখন আমাদের টিচার।স্যারের নাম ছিল ধুত্তোরিকা ভুলে গেছি…(পোস্ট করে দেওয়ার পর ওনার নাম মনে পড়ল রওশন স্যার।ইংরেজি)

* চল্লিশা

নাজমুল ইসলাম। পদার্থবিজ্ঞান। সদ্য চাকরিতে যোগ দিয়ে আমাদের কলেজে এসেছেন। ওনার হাসির সাথে সাথে সবাই লক্ষ্য করে ফেলল মানুষের দাত থাকে বড়জোড় ৩২ টা ওনার আছে ৪০ টা। কে যে গুনেছিল আমি জানিনা কিন্তু আমাদের সবাই এককথায় ওর কথা মেনে নিলাম। সেই থেকে উনি হয়ে গেলেন চল্লিশা।

* ব্যাটারি

শামসুল হক স্যার। গণিত। উনি দেখতেও পিচ্চি ছিলেন আর ওনার নাম হক সেই থেকে উনি আমাদের ব্যাটারি।

অনেক লিখে ফেললাম। আজ শুধু স্যারদের গুলা। পরে একদিন ক্যাডেটদের গুলা লিখা যাবে। তবে স্যারদের গুলা লিখতে গিয়ে দেখলাম বেশিরভাগ স্যার এর ই আসল নাম ভুলে গেছি। মনে আছে শুধু টিজ নেম গুলা। আরো অনেক গুলা নাম আছে যেগুলা ঠিক বলে বুঝানো যাবে না সাথে ক্লিপ জুড়ে দিতে হবে।

১১ টি মন্তব্য : “টিজ নেম”

  1. দেবব্রত মল্লিক স্যার রে নিয়া আমার অনেক বাজে স্মৃতি আছে।আমার জীবনে খাওয়া কয়েকটা চরের মালিক তিনি।
    তার নাম আমরাও ডিম বলতাম।স্পেসিফিক্যালি ডিম ডিম,সিন্দবাদ এর একটা জাদুকর এর নামে। আর উনার সাইজও তো ডিম টাইপ ই ছিল।

    শরিফ উদ্দিন স্যার রে আমরা ভুত না,ভুতের ছানা বলতাম।উনার চেহারার সাথে ভুতের ছানার কোথায় যেন একটা মিল আছে!! তাকে নিয়ে আমার একটা ব্লগও আছে।

    শামসুল হক স্যাররে আমরা মরহুম বলতাম।কারণ তিনি যখন ক্লাস নিতেন আমরা সবাই ভয়ে ভয়ে থাকতাম এই বুঝি ক্লাস শেষ হবার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।সবসময় ফোঁস ফোঁস শব্দ করে শ্বাস নিতেন।মনে হত প্রাণ বায়ু যে কোন টাইমে বাইর হয়া যাইতে পারে।
    স্যারের আরেকটা ডায়লগ যেটা সিলেট ক্যাডেট কলেজে থাকতে হাউস এসেম্বলিতে দিয়েছিলেন সেটা আমাদের মধ্যেও হেভী হিট করছিল...। রাইতের বেলা ডিশ দেখ... আর দিনের বেলা জুনিয়রের... মারো 😀

    বাকি নিকগুলা পড়েও অনেক মজা পাইলাম।দুর্দান্ত...

    জবাব দিন
  2. ধন্যবাদ জিহাদ। আমার তো হাত খুলে গেছে। ঘুমাতেই যেতে পারছিনা। একটা লিখতে গেলেই অন্য জিনিস মাথায় চলে আসে। এখন রাতের একটা না ঘুমালেই নয়। নতুন একটা তাও লিখে ফেললাম।

    জবাব দিন
  3. হা হা হা ।ভাল ভাল।খুলে গেলে আমাদেরই ভাল।নতুন নতুন ব্লগ পাবো তাইলে।তয় রয়ে সয়ে করাই ভাল।সব যদি এক দিনেই শেষ করে ফালান তাইলে পরে লিখবেন কি...

    আপনাদের দুই ভাই সম্পর্কেই আগে থেকে জানি।সামির-সাব্বির টুইন রে তো চিনেন?? সামির আই ইউ টি তে আমার রুম মেট।তবে আপনার সম্পর্কে বেশি শুনেছি সালেহীন এর কাছ থেকে।

    জবাব দিন
  4. "কে যে গুনেছিল আমি জানিনা কিন্তু আমাদের সবাই এককথায় ওর কথা মেনে নিলাম।" - এই জিনিসটা সবচেয়ে মজার।

    কলেজে এটা খুব বেশি হয়। সত্যি না মিথ্যা তা আসল নয়। কেউ একটা কিছু ছড়ালে যদি সবার ভাল লেগে যায় তো আর যায় কই। সেটা জনপ্রিয় হয়েই ছাড়বে। এ জন্যই "আজকে থার্ড প্রেপ" নেই বলে প্রচুর গ্যাজ ছড়ানো যেতো। কারণ সবাই গ্যাজটা পছন্দ করছে, ছড়াতে বাধ্য।

    দেবব্রত মল্লিকের হাতে চড় খাওয়ার হতভাগ্য আমারও হয়েছে।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।