মানুষ রাজনৈতিক জীব। যিনি এই অসাধারণ কথাটি বলেছিলেন সেই মহামনীষীর নামটি এই মুহূর্তে মনে নেই। এ্যরিস্টটল সাহেব হতে পারেন। যাই হোক তাকে এই মুহূর্তে সামনে পেলে যে আমি মোটেও খুশি হব না, তা জোর গলায় বলতে পারি। কারণটা আর কিছু না, রাজনীতি। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান সরকারি দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখে ভয় পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ক্যাডেট কলেজ ব্লগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম “আমি খুব ভয় পাই” এই শিরোনামে। তখন ভাবিনি আমার ভয়টা এত তাড়াতাড়ি চরম বাস্তব হয়ে সামনে আসবে।
ক্যাডেট কলেজের ১০১ একরের ক্ষুদ্র জায়গায় (যার অনেকখানিই এখনো অনাবিষ্কৃত !) ৬ টা বছর পার করার সময় অসীমতার স্বাদ পেয়েছিলাম তার বিশাল লাইব্রেরীর মধ্যে। যার ফলশ্রুতিস্বরূপ আমার বর্তমান উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা। অনেক বন্ধুদের মত সামরিক বাহিনীতে যোগদানে বাসনা আমাকে কখনো চেপে বসেনি। আমি বরং এমন একটা স্থান চেয়েছিলাম, যেখানে আমি স্বাধীন ভাবে নিজেকে সাজাতে পারব। চেয়েছিলাম দেশের নামকরা শিক্ষকদের সাহচর্যে এসে নিজেকে সমৃদ্ধ করব, তাদের জ্ঞানের সুবাসে নিজেকে সিক্ত করব।
ছা’ পোষা সরকারী চাকুরিজীবী বাবা সংসার চালানোতে শত কষ্ট সত্বেও দারিদ্রের স্পর্শ আমাকে কখনো তিনি পেতে দেননি। ২০০৫ সালে কলেজ থেকে বের হবার পর ঢাকায় কোচিং করার সময়ও তা বুঝতে পারিনি, তাই পড়ালেখার ধারের কাছেও যেতাম না, আফটার তখন ডিজুসের স্বর্ণযুগ । ফলাফল, ঢাকার মাঝে কোন ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের জায়গা করতে না পারা। যাই হোক, আব্বুকে পাঠালাম দেশের শীর্ষ স্থানীয় দুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সব খবর নিয়ে এসে বলল, “বাবা, ৪ বছরের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করতে ৫ লাখ আর তোমার যেহেতু ঢাকায় বাসা নাই তাই থাকা খাওয়া দিয়ে আরো ২ লাখ (হাসছেন! হাসারই কথা। কারণ ৪ বছরে এক জন মানুষ এই বাজারে ২ লাখ টাকায় থাক-খাওয়া !) লাগবে। বাবা, আমার এত টাকা নেই। তুমি পারলে কোন বিআইটি তে ঢোক। নইলে বাসার পাশের ডিগ্রী কলেজই তোমার ভরসা।” ধাক্কা খেয়েছিলাম, কিন্তু হতাশ হইনি। তাই বর্তমানে দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটা বিআইটি তে প্রথম সারির একটা সাবজেক্টই আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবন নির্ধারণ করছে। ভার্সিটিতে সিনিয়রদের কাছে শোনা রাজনীতিমুক্ত একটা ক্যাম্পাসই আমার মনে তখন গেঁথে গিয়েছিল।
সবই ঠিক ছিল। ঝামেলাটা হল নির্বাচনের পরে। রাজনীতির একের পর এক থাবা যেন ছাত্রদের জীবন অতিষ্ট করে তুলল। ইন্টার ডিপার্টমেন্ট ঝামেলাগুলো পরবর্তীতে রাজনীতিক ছত্রছায়ায় ডালপালা বিস্তার করতে শুরু করল বিপুল বিক্রমে। আগে যেখানে বছরে একটা রাজনৈতিক মিছিলও আতস কাঁচ দিয়ে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হত, বর্তমানে ক্যাম্পাসে জরুরী অবস্থা এবং সাময়িক কালের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও এখন আকাশে বাতাসে তাদের উদ্দীপ্ত কণ্ঠের প্রকম্পন শোনা যায়। রাজনীতির ছোবলে বারবার ক্যাম্পাস বন্ধ হতে থাকে। ছাত্রদের জীবন থেকে মূল্যবান কিছু সময় নষ্ট হয়ে যায়। আচ্ছা, এর দায়ভার কে নেবে ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাকি বিরোধী দলীয় নেত্রী !
আমি জানি আমার বাবা সামান্য কটি টাকা উপার্জনের জন্য সারাদিন কতখানি পরিশ্রম করেন। অফিস শেষে যখন বাসায় আসেন, আমি লজ্জায় তার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। কারণ, এত বড় হয়েও তার কাছে থেকে টাকা নিয়ে এখনো পড়ালেখা করছি। তাই আমার জন্য শিক্ষাবর্ষের একটি দিন অনেক অনেক মূল্যবান। কারণ, ওই একটি দিন আমি যে টাকা খরচ করব, তা আমার বাবার অনেক কষ্টার্জিত।
আমি রাজনীতির বিরুদ্ধে নই। আমি শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির বিরুদ্ধে। এতগুলো ব্রিলিয়ান্ট ছেলেকে রাজনীতি নামক বিষ খাইয়ে তাদের মুক্তচিন্তাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমার খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কাউকে বলতে পারি না। আমার চারপাশের সবাই যে এই অমৃতপিয়াসী।
🙂
১ম নাকি, মনসুর ভাই! বলি ফ্রিজে কি মিষ্টি আছে ? 🙂
আমার চারপাশের সবাই যে এই অমৃতপিয়াসী
🙂 😀 :shy:
:thumbup:
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপু, খালি ইমো দিলে খেলুম না 🙁
কষ্ট লাগে যখন দেখি আমার সাথে এইচ এস সি পাস করা আমার চাইতে অনেক বেশি ব্রিলিয়ান্ট বন্ধুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা এই আমার চেয়ে এক/দুই বছর পিছিয়ে পড়ছে কর্মক্ষেত্রে।অস্বীকার করবনা,একটু যে নিজের জন্যে স্বস্তি পাই,তা বুকে হলফ করে বলতে পারবনা!
আরে, মাস্ফুদা যে ! বলি, ক্যামন অচেন, দাদা? 🙂
দাদা, বড় কষ্ট থেকে লিখছি। গতকাল রাত্রে দুই সংগঠনের চিৎকারে পড়তে পারিনি, আজ আবার একটা কঠিন পরীক্ষা আছে। এরা কেন যে এগুলো করে !!
আমার বস্তাপচা লেখা পড়ার জন্য অনেক অনেক থ্যাঙ্কু..... 😀 😀
বস্তাপচা বলচিস ক্যানো হে এ তো বাস্তব সত্য কথা!রাজনীতির ব্যাঞ্চাই
🙂 :hug:
:thumbup:
অই, ইমো দ্যাস্ ক্যালা x-(
যাউগ্গা, পড়ছস যে তাতেই আইঁ খুস 🙂 :hug:
.......
😐
ভালো লিখছস জাবরা.. :thumbup:
mcc rocks :awesome:
সাম্প্রদায়িকতা Banned.r kormu na :hug: :khekz:
আরে, মাহমুদ ভাই যে ! কেমন আছেন ?
🙂 😀
থ্যাঙ্কু বস্ :hug:
ভালো লিখেচিস। অনেকাংশে একমত :thumbup: :thumbup:
থ্যাঙ্কু, আমি তো পুরাই একমত :))
তোর প্রোফাইল Pic টা দারুণ হইছে :thumbup:
শিক্ষার্থীদের দলীয় রাজনীতি একেবাবে বন্ধ করতে হবে। আমি এর কোনো ইতিবাচক ফল দেখি না। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংগঠন থাকতে পারে শুধু শিক্ষা ও শিক্ষার্থী সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য। শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিবছর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচিত হবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করবে।
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আমার মত এরকমই। এর বাইরে কোনো শিক্ষার্থীর রাজনীতিতে বা রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে বাধা নেই। কারণ তারা প্রাপ্তবয়স্ক ও ভোটের অধিকার পাচ্ছে। তবে সেই দলীয় রাজনীতি হবে শিক্ষাঙ্গনের বাইরে। শিক্ষাঙ্গনে এর কোনো প্রভাব থাকবে না।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সানা ভাই, মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ 🙂 । একটা কথা কি জানেন ? গত তিন-চার দিন ধরে শান্তিতে কিছু করতে পারছি না এদের অত্যাচারে। ক্যাম্পাসকে এরা রাজনীতির লেবাসে প্রতিহিংসা আর ক্ষমতার লোঙ্গরখানা বানিয়েছে। সারাক্ষণ ভয়ে আছি কখন মারামারি লাগে, আর ক্যাম্পাস বন্ধ হয়। ওরা এটা বুঝতে পারছে না যে, এখন ওদের সময় না। ~x( এ থেকে মুক্তির পথ কোথায়?????
দূরে বসে শুধু পরামর্শই দিতে পারি, বাস্তবতা তো জানি না। সাবধানে থাকো। নিজেকে সামলে রাখো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
জ্বী, লাবলু ভাই। দোয়া করবেন। 🙂
সম্পূর্ন একমত। এরকম থাকা উচিত। আমাদের শিক্ষাঙ্গনে এরকম ছিলো। যাতে কাজ করে অনেক কিছুই শিখেছি।
আমাদের ক্যাম্পসে আগে ছাত্র সংসদ ছিল। এ ব্যাপরে ফয়েজ ভাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু বিভিন্ন দাবীর জন্য তা পরবর্তীতে নিষিদ্ধ করা হয়। তারপর দলীয় রাজনীতি জোরপূর্বক প্রবেশ করানো হয়। সেটাও প্রশাসনের বিপক্ষে গেলে শুরু হয় ডিপার্টমেন্টভিত্তিক বিভাজন। একেকটি ডিপার্টমেন্টকে একেকটি হলে অ্যাসাইন করানো হয়। ফলে নতুন করে শুরু হয় ডিপার্টমেন্টভিত্তিক ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। তার জন্য প্রায় ৬ মাস আগে ক্যাম্পাস ১ মাসের জন্য বন্ধ হয়। নির্বাচনের পর সেই আধিপত্যই বর্তমানে রাজনৈতিক রূপ নেয়। এই চক্র থেকে মুক্তি কবে ???!!!!
:thumbup: :thumbup: :thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
মাথা ব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলা যেমন ঠিক না, তেমনই - শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি চলবে না সেটা ও ঠিক না। দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করা রাজনীতির কাজ না - সেটাকে থামানো আর রাজনীতি সম্পূর্ন বন্ধ করা এক কথা না। আমরা মনে হয় অতিষ্ঠ হয়ে এই দুইএর পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি না।
"The unexamined life is not worth living."
- Socrates
সহমত