কে হায় হৃদয় খুঁড়ে – ২

হাউস বেয়ারা শুক্কুর আলি……………… গোমতী হাউসের । যে থাকলে হাউস সম্পূর্ণ স্বাধীন ঘোষনা করা যায়, আমাদের বিজয়ের তেরাংগা পতপত করে ওড়ে আকাশে বাতাসে।সিগারেট এনে দিতে হালকা পাতলা আপত্তির অধিকারী।বাদবাকি ব্যাপার বিন্দাস…।হাউস লাইব্রেরী লুট করা যায়, তাকে গার্ড হিসেবে বসিয়ে করিডোরে ক্রিকেট খেলা যায়, যার দরুন জুনিয়র ক্যাডেটকে জ্বালাতে হয়না, লেটেস্ট রিলিসড গানের সিডিগুলো পাওয়া যায় গরম গরম। আন্তঃহাউস আম-আটি হাত বদলে তার ভূমিকা অনন্য (আমরা সিডি প্লেয়ার কে বলতাম আম , আর সিডি গুলো সব আঁটি )।ছুটি থেকে ফেরার পর অবশ্যই ব্যাগ এর সংখ্যা হতে হবে দুই বা ততোধিক, যার একটিকে চেকিং এর সময় নিজ দায়িত্বে এগিয়ে দিতে হবে তার দিকে , তাতে থাকবে ৫০ / ১০০ টাকার ঝকঝকে নোট, যেটা কিনা খুব সহজেই তার চোখে ধরা পড়বে , এবং সে বাকি বাক্স পেটরাগুলোতে ভুলেও হাত দেবেনা। যদিবা দিয়েও ফেলে , সে চেইন খোলার সাথে সাথে নিজ উদ্যোগে চেইন লাগিয়ে ফেলতে হবে এবং তার দিকে কট্টর দৃষ্টিতে তাকাতে হবে (এই কট্টর দৃষ্টি দেবার জন্য অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের সিনিয়ারিটী থাকা বাঞ্ছনীয়)।ব্যাস, তাহলেই ওই টার্মের খোরাক নিয়ে চলে আসা যাবে লাল ঈগলের দুর্গে।

শুক্কুর আলি মোটামুটি সারাদিনই টাকার ধান্দায় থাকবে, কিন্তু তার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারলে নিজের বাড়ি থেকেও বাড়াবাড়ি পর্যায়ের আরাম আয়েসের ব্যাবস্থা করা সম্ভব। শুক্কুর আলীর শরীর খারাপ হলে আমরাই চিন্তায় পড়ে যাই, জ্বরবোধ করলে নিজেদের উদ্যোগে প্যারাসিটামল খাওয়াই।কারন মোবারকরে সাইজ করা একটু কঠিন, ( মোবারকের বিস্তর বিবরণ পরে দেব ) সে হাউসে থাকলে কিছুটা চুলকানিবোধ কাজ করে।
মাঝেমাঝেই তিন হাউসের হাউস বেয়ারার পারফেক্ট কম্বিনেশন পাওয়াটা দুরহ হয়, কিন্তু শুক্কুর আলি থাকাটাই যথেষ্ট বোধ করতাম। আমাদের ব্যাটিং, বোলিং তান্ডব অথবা মিউজিক কম্বিনেশন ( সিঙ্গেল বিটে – আল্লাহ, আল্লাহ…ডাবল বিটে- আহ আহ আল্লাহ, আহ আহ আল্লাহ, ফকিরা গান ঃপি ) অথবা স্লাইডিং জ্বরে ( করিডরে পাউডার ছিটিয়ে গেমস থেকে এসে স্লাইড করা) যখন নীচের তলায় শব্দের ঝড় বয়ে যায়, তখন তিতাস হাউসের মান্নান মিয়ার অভিযোগে শুক্কুর এর সহজ উত্তর ” আগে নিজের হাউস সামলান, কপালডা ভালা আপনের, আপনের নিচে কেউ নাই” ।

ছোটবেলায় সিনিয়র যখন পানিশমেন্ট দিত দেখতাম, অনুমান করতাম, শুক্কুর সিনিয়রকে মনে হয় অনুরোধ করত যাতে তিনি কম পানিশমেন্ট দেন। বড়বেলায় ধারনাটা সঠিক বুঝলাম, জুনিয়রকে পানিশমেন্ট দিতে গেলে একপাশে নিয়ে বলত ” হা-মীম ভাই, বাচ্চা মানুষ, বাপ-মা ছাইড়া আসছে, মারবেনও, আবার আদর ও করবেন, একটু কম পানিশমেন্ট দিয়েন” ।ব্যাপারটা ভাল ছিল। তার সামনে দিয়ে বীরদর্পে হাউসে কাঠালের আগমন ঘটানো যেত, কাঠাল খাওয়ানোও যেত।

শুক্কুর আলি প্রচুর এক্স ক্যাডেটদের গল্প শোনাত, ফারিয়াল ভাই, যহির ভাই, শামস ভাই, মেঘনা হাউসের তিন তলা থেকে মাটিতে লাফ মেরে উঠে দাঁড়িয়ে “শুক্কুর, আমি সপ্তধাতুর তৈরী” বলা ভাই, সাইফ ভাই, রওনক ভাই……… কত ভাইয়ের গল্প। শুনতাম আর অনুপ্রাণিত হতাম। ভাবতাম, এই কলেজেই তো তারা কত মজা করে গেছেন, আমরা কেন করব না। ধন্যবাদ শুক্কুর আলি, ভাইয়াদের ইতিহাস বলে আমাদের ক্যাডেট জীবনটাকে আরো উদ্দাম, আনন্দময় করতে সাহায্য করবার জন্য, অনুপ্রানিত করবার জন্য।ধন্যবাদ , রওনক ভাই , ফরিদ ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদে তোমার ছলছলে চোখের জন্যে।

তুমি কি এখন জুনিয়র ক্যাডেটদের ” হা-মীম ভাই, আরিফ ভাই, শারেক ভাই, নাহিদ ভাই……………” এদের গল্প শোনাও ? হয়তো…

১,৩৩৬ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “কে হায় হৃদয় খুঁড়ে – ২”

    • হা-মীম(২০০০-২০০৬)

      সিসিবিতে আপনাকে কি বলে সম্বোধন করব বুঝতে পারছি না । 🙂 ভাই ই বলি, যদিও আমি আপনার ছাত্র ছিলাম । আমি তানভীর হা-মীম। আপনি হয়তো তানভীর নামেই চেনেন আমাকে। 😀 ............ধন্যবাদ ভাই :boss: :boss: :boss:


      \\\"।নিউট্রন বোমা বোঝ. মানুষ বোঝ না ! ।\\\"

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।