– অ্যাই অন্তু! নামবি না?
বারান্দার রেলিঙ এ গাল ঠেকিয়ে বৃষ্টি দেখছিল অন্তু। নিজের নাম কানে আসতেই নিচের দিকে তাকাল। পাশের বিল্ডিঙের রাকিব ডাকছে ওকে।
– বৃষ্টির ভেতর নিচে নেমে কী করবো? খেলা হবে নাকি? আর কেউ নেমেছে খেলতে?
– পলাশ ভাই ব্যাট বল নিয়ে উনাদের সিঁড়িতে বসে আছে। চার পাঁচজন হলে শর্ট পিচ খেলা হবে।
– দাঁড়া দেখি আম্মা নামতে দেয় নাকি
অন্তুর আম্মা পাশের বাসায় গেছেন। ঘরের দরজা খোলা। চামড়ার স্যান্ডেল পায়ে গলিয়ে নেয় অন্তু। কী মনে করে আবার খুলে ফেলে। নীল রঙের চপ্পলজোড়া হাতে নিয়ে নিঃশব্দে নেমে যায় তাদের তিন তলার বাসা থেকে।
অন্তু ক্লাস ফোরে পড়ে। রাকিব ওর ক্লাসমেট। এই কলোনিতে ওর আরো অনেক ফ্রেন্ড আছে। কিন্তু রাকিব ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। গত রোজার ঈদে সে পাঁচটাকার ঈদকার্ড গিফট করেছে তাকে। সাদা খামের ওপর লিখে দিয়েছে, “আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাকিব K অন্তু”। আসলে অন্তু নিজের হাতে লেখেনি। লিখে দিয়েছে পাশের বাসার লুবনা আপা। আপা কলোনির সবচেয়ে সুন্দরী তরুণী। ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে বাসায় বসে সেলাই আর কম্পিউটার চালানো শিখছেন। উনি বলেছেন, ঈদকার্ডে ‘অমুক K তমুক’ এভাবে লিখতে হয়। দুটো নামের মাঝে K লেখাটাই এখনকার ফ্যাশন।
– পলাশ ভাই কই? অন্তুর বিরক্তিভরা প্রশ্ন।
– একটু আগেই তো এইখানে ছিল
রাকিব এলোমেলো ভাবে উত্তর দেয়।
– এখন এই বৃষ্টির ভেতর কী করবো? খালি খালি আমারে বের করলি!
– দোস্ত, স্কুলের পুকুরের পারে কদম গাছে আজকেই ফুল ফুটছে, আমি নিজে দেখে আসছি, যাবি ফুল পাড়তে?
– এই বৃষ্টির ভেতর?
– আরে বৃষ্টি তো ঝিরঝির, কিচ্ছু হবে না, চল।
স্কুলের কাছাকাছি গিয়ে অন্তু চমকে যায়। প্রত্যেকটা কদমগাছে থোকা থোকা ফুল। যেন সাদা সাদা টেনিস বল। দুই বন্ধু খুঁজতে থাকে কোন গাছে সবচেয়ে বড় ফুল গুলো ফুঁটেছে। রাকিব গাছ বাইতে পারে ভালো। মুহূর্তেই সে একটা গাছের মগডালে উঠে যায়। অন্তু কিছুটা ভয়ে ভয়েই গাছে ওঠে। বৃষ্টিতে ভিজে আছে গাছটা। বারবার পিছলে যাচ্ছে পা।
গোটা পাঁচেক ফুল নিচের ঘাসে ছুঁড়ে মারে অন্তু। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। নেমে যাওয়া দরকার।
– অ্যাই অন্তু নেমে যাচ্ছিস কেন?
– আর দরকার নাই, বৃষ্টি জোরে আসছে
– আচ্ছা আমিও নেমে যাচ্ছি
নামতে গিয়ে দূরের ডালে একই থোকায় তিনটে বড় বড় কদম চোখে পড়ে অন্তুর। তার পাড়া পাঁচটি ফুলের চেয়ে এগুলো অনেক বড়। অনেক বেশি সুন্দর। বাসায় গিয়ে পাতাগুলো গুছিয়ে নিতে হবে, কয়েকটা পাতা ছেঁটে ফেলতে হবে। এরপর তিনটে ফুলের ডাটা একসাথে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে নিতে হবে। ছোট্ট একটুকরো কাগজ সুতো দিয়ে বেঁধে দিতে হবে ফুলের ডাটায়। সেই কাগজে সুন্দর করে লেখা থাকবে, ”লুবনা আপা K অন্তু”।
অন্তু চিকন একটা ডাল ধরে এগিয়ে যায়। তার পায়ের নিচের ডালটা দুলছে। ভেজা চুল বেয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছে তার কপালে। কপাল থেকে চোখে, গালে, থুঁতনিতে। অন্তুর হাত পা কাঁপতে থাকে ঠাণ্ডা বাতাসে। আর এক পা এগোলেই সে ধরে ফেলবে ফুলগুলোকে।
বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। কালো মেঘের অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ। এলোমেলো বাতাস হঠাৎ দিক পাল্টে ফুলগুলোকে সরিয়ে নিয়েছে খানিকটা দূরে। অন্তু হাত বাড়িয়েও নাগাল পাচ্ছেনা।
নিজের শরীরটাকে বাঁকিয়ে প্রাণপণে হাত বাড়িয়েই রয়েছে সে।
অন্তু জানে, বাতাসের দিক বদলাবে। অবশ্যই বদলাবে।
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ !
তোমার লেখার হাত ভালো। গল্পটা পড়তে ভালো লাগছিলো। কিন্তু মনে হলো হুট করে যেন শেষ হয়ে গেলো। গল্পের ডালপালা আরেকটু বাড়াতে পারতে। 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
বাহ্! :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ