৬ বছর বা ২২০৩ দিন – ১১তম পর্ব

আজকের বিষয়ও আগের পোষ্টের মত ভুত বা ভয় দেখানো নিয়ে। তবে এই কাহিনীটা আগেরটার মত নয়, একটু ভিন্ন। তবে জানা যাক কি সেই ভিন্ন কাহিনী।

এই কাহিনীটাও ঘটেছিল সেই ৩১১ নং রুমে। আর রুমের বাসিন্দারাও ছিলাম আমরা চারজনই(এই সিরিজের আগের পোষ্টে দেখুন, জানতে চাইলে)। তবে এবার কাকে গিনিপিগ বানানোর আয়োজন করা হয়েছিল তা এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। তবে মাঠে আরো কিছু নতুন খেলোয়াড় আমদানি করা হয়েছিল। কারণ তখন সেভেনের জুনিয়রগুলোরে ভয় দেখানোর মৌসুম যাচ্ছিল।

মূল গল্পে যাওয়ার আগে ছোট কিছু বিচ্ছিন্ন স্মৃতির কথা বলে নেই। জুনিয়র ব্লকে কয়েকজন মিলে যেসব খন্ড খন্ড আড্ডা হত কিংবা ফল ইনে সেভেনের পেছনে আমরা কিছু উটকো গুজবকে তিল থেকে তাল বানানোর প্রতিযোগিতায় নামতাম। উদাহরণ হিসেবে বলি, আমরা একবার শুনেছিলাম(জনৈক ক্লাসমেট) যে কোন স্যারের ছেলে আরেক স্যারের মেয়ের সাথে টাংকি মারত।তো এই কাহিনী পরে ফুলে-ফেপে হল তারা নাকি পালিয়ে বিয়েও করে ফেলেছিল( যদিও এমন কিছু আসলে আদৌ ঘটেনি)। তো জুনিয়র ব্লকেও এমন কিছু গুজবের মধ্যে ছিল যে আমাদের ড্রাইং রুমে কোন এক কালে এক বড় ভাই( আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারণ এই কাহিনী সত্যতা সম্পর্কে আমার জানা নেই) ফ্যানের সাথে ফাস নিয়ে আত্মহত্যা করেছিল এবং তার ভুত নাকি জুনিয়র ব্লকে ঘুরে বেড়াত। তো আমরাও এই কাহিনীগুলোকে এডিট করে গল্প ফাদতাম যে আমরা কয়েকজন সেই বড় ভাইয়ের ভুতও দেখেছি। তো সেভেনের পোলাপাইনগুলোও এই কাহিনী শুনে একটু ভয়ে ভয়ে থাকত। এবার মূল গল্পে ফিরে যাই………

তো আমাদের নতুন বান্দাদের মধ্যে ছিল ২৫তম ব্যাচের রেজওয়ান, রুবেল, আরিফ, নাফিজ, আহসান সহ আরও অনেকে(সবার নাম মনে পড়ছে না)। সেই ৩১১ নং রুমে আমরা মোট ১৩-১৪ জন ছিলাম।

আমাদের পরিকল্পনা ছিল লাইটস আউটের পর রুমের বাতি নিভিয়ে দরজা খোলা রেখে আমরা সবাই রুমের বিভিন্ন স্থানে( চার বেডের নিচে, লকারের ভেতরে, দুই লকারের চিপায়) লুকিয়ে থাকব। আর বাতির সুইচের সাথে একটি সুতা বেধে রাখা হয়েছিল। সেভেনটা রুমে ঢোকার সাথে সাথে একজন রুমের দরজা বন্ধ করে দেবে। তারপর শুরু হবে আসল খেলা। কেউ অট্টহাসিতে, কেউ অঙ্গভঙ্গিতে, কেউ মেঝেতে নানা রকম জিনিস ফেলে শব্দ করে, শিষ বাজিয়ে বিভিন্নভাবে ভয় দেখনো হবে। তো যথাযথ সময়ে সেভেনটা এসে হাজির। এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা পোলাটারে তীব্র আকারে ভয় দেখনো আরম্ভ করলাম( পরে সেভেনটা অবশ্য সেদিন কতখানি ভয় পেয়েছিল তা পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি)। হঠাৎ করে রুমের দরজায় শাহরিয়ার ভাইয়ের(২২তম ইনটেক ও আমাদের তৎকালীন হাউস প্রধান) করাঘাত।

রুমের নেভানো বাতি কেউ একজন জালিয়ে দিল।অন্য কেউ দরজা খুলে দিয়ে লুকিয়ে পড়ল। আমি আমার পাশের বেডে( ফেরদৌসের বেড) শুয়ে ঘুমের ভান করতে থাকলাম। আর মনে মনে চিন্তা করছিলাম যে শাহরিয়ার ভাই অত্যন্ত ভালমানুষ, অতএব আমাদের শাস্তির পরিমান কম হওয়ার একটা সম্ভবনা আছে। তো শাহরিয়ার ভাই প্রথমে মনে করেছিল এখানে সেভেনটারে পাঙ্গানো হচ্ছে। পরে সে যখন উক্তি করল যে তাকে ভয় দেখানো হচ্ছিল তখন ভাই তাকে ধমক দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলেন।

এরপর শাহরিয়ার ভাই আমাদের সবাইকে লুক্কায়িত স্থানগুলো থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেষ দিলেন।সবাই একে একে বেডের নিচ থেকে, লকারের ভেতর থেকে, লকারের চিপা থেকে বেরিয়ে এল। আর যারা ভালমানুষের মত বেডে ঘুমানোর ভান করছিল তাদের এক এক করে উঠানো হল। আমাকে বলা হল ঘুমের ভান না করে উঠে ব্লকে গিয়ে সবার সাথে গিয়ে দাড়াতে। তো সবার এই বিভিন্ন চিপা থেকে বেরিয়ে আসার দৃশ্যটা ছিল অসাধারণ। পরে শাহরিয়ার ভাই আমাদেরকে ব্লকে লং আপ করিয়ে হাল্কা পাঙ্গিয়ে ছেড়ে দেন। কারণ এইসব দৃশ্য দেখে ভাইয়েরও হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল…………………( চলতে থাকবে )

১,২৮০ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “৬ বছর বা ২২০৩ দিন – ১১তম পর্ব”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।