সৌরজগতের ঘটে যাওয়া সবচেয়ে রহস্যজনক ঘটনাগুলোর একটি হল বৃহঃস্পতির এই মহা লাল বিন্দু। এটি মূলত একটি অতি শক্তিশালী ঝড় যা সপ্তদশ শতাব্দী থেকে একটানা বয়ে চলেছে বলে ধারণা করা হয়। বৃহঃস্পতির বায়ুমন্ডল বিভিন্ন অক্ষাংশে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত যেগুলো বেশ সহজেই চোখে পড়ে। এ কারণে একটি ব্যান্ডের সাথে অন্য আরেকটি ব্যান্ডের সংযোগস্থলেএরকম ঝড়-ঝঞ্ঝাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে।এই ভয়াবহ আকৃতির ঝড়, যা হতে বিজ্ঞানীরা ফ্লুইড ডাইনামিকসের নানা খুঁটিনাটি জানতে পেরেছেন, সমগ্র পৃথিবীকে প্রায় তিন বার গ্রাস করার ক্ষমতা রাখে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হল প্রায় তিনশ বছর ধরে চলে আসা এই ঝড়ের বহু আগেই থেমে যাবার কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বিজ্ঞানীদের চিন্তার কারণ হয়ে বহাল তবিয়তে টিকে আছে।কি সেই রহস্য যা এই দানবীয় ঝড়কে এতগুলো বছর ধরে জ্বালানির যোগান দিয়ে যাচ্ছে? হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পেদ্রাম হাসানজাদেহ এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্লুইড ডাইনামিকসের প্রফেসর ফিলিপ মারকাস বেশ কয়েক বছরের গবেষণার শেষে এর পেছনের কারণ উদঘাটন করতে পেরেছেন বলে মনে করছেন। তাদের গবেষণায় তারা এই প্রকৃতির ঘূর্ণাবর্ত কিভাবে গ্রহ ও নক্ষত্র সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে তার উপরেও আলোকপাত করেছেন। ডঃ হাসানজাদেহের মতে ” তৈরি হবার মাত্র কয়েক দশকের মাঝেই এই ঝড়ের থেমে যাওয়া উচিত ছিল। বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তা টিকে আছে। তার মতে বেশ কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে যা এই লাল বিন্দুরুপী ঝড় কে ক্ষয় করে ফেলে। এর চারপাশের উত্তাল আবহাওয়া এর বায়ুপ্রবাহের শক্তিকে শুষে নেয়। বিকিরণের মাধ্যমেও এই ঘুর্ণাবর্ত শক্তি হারায়।সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এই লাল বিন্দু প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া দুইটি শক্তিশালী বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহের মধ্যে অবস্থিত যা ওই ঝড়ের গতিকে অনেকাংশেই কমিয়ে দিতে পারে।কিছু কিছু বিজ্ঞানিরা দাবি করেন যে, “ এই বিশাল ঝড় ছোট ছোট ঘূর্ণিঝড় কে গ্রাস করার মধ্য দিয়ে তার ক্ষুধা মেটায়”।প্রফেসর মার্কাসের মতে, “কিছু কিছু কম্পিউটার মডেল অনুসারে এই লাল বিন্দু আকারে তুলনামুলক ছোট আকৃতির ঘুর্ণিঝড় গুলোর সাথে একীভূত হবার ফলে কিছু শক্তি অবশ্যই অর্জন করে, কিন্তু তা কখনই এর দীর্ঘায়ুর উপযুক্ত ব্যাখ্যা হতে পারে না।
শেষ পর্যন্ত প্রফেসর হাসানজাদেহ এবং মার্কাস বর্তমান মডেল থেকে আলাদা সম্পূর্ণ নিজেদের একটি মডেল তৈরি করেছেন। এই নতুন মডেলটি আগের মডেল থেকে অনেক বেশি গ্রহনযোগ্য। আগের বেশির ভাগ মডেলই শুধুমাত্র অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল,যেখানে এই ঘুর্ণিপাকের বেশির ভাগ শক্তি থাকে। ডঃ হাসানজাদেহর মতে, “অতীতে বিজ্ঞানিরা উলম্ব প্রবাহটাকে বাদ দিয়েছিল।হয়ত বা তাঁদের কাছে ওইঅংশটুকুকে বেশি গুরুত্বপুর্ণ বলে মনে হয় নি, কিংবা তাঁরা কোন সহজ সমীকরণ ব্যবহার করেছিল”।
নিজে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন শক্তি বহন না করলেও এই উলম্ব প্রবাহকেই এখন এই মহা লাল বিন্দুর স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠি বলে গন্য করা হচ্ছে। যে সময়ই ঘুর্ণিপাক শক্তি হারাতে শুরু করে ,তখনই উলম্ব প্রবাহ উপর থেকে উষ্ণ গ্যাস আর নিচ থেকে শীতল গ্যাস এর কেন্দ্রবিন্দুতে বয়ে এনে একে পুনরায় চাঙ্গা করে তোলে। এই একই কারণকে তিনি আটলান্টিক মহাসাগরে জিব্রাল্টার প্রণালীর কাছে গড়ে ওঠা সামুদ্রিক ঘুর্ণিপাকের এত বছর ধরে টিকে থাকার কারণ হিসেবে দাবি করছেন। এমনকি এই উলম্ব প্রবাহ পরিপোষক পদার্থ গুলোকে পৃষ্ঠতলে তুলে এনে সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমেও এক বিশাল ভুমিকা রাখে। আবার এইরকম ঘুর্ণিঝড়ই আন্তর্নক্ষত্রিক ধুলিকণা ও পাথর কে একজায়গায় জড় করে বড় ও শক্তিশালি ভরে পরিণত করে। বহু বছর ধরে টিকে থাকা তারা ও গ্রহসমূহের গঠনের কারণও এরা হতে পারে বলে তাদের ধারণা। হাসানজাদেহ এবং মার্কাস জানেন যে তাদের প্রস্তাবকৃত মডেল সম্পুর্ণ ভাবে ওই বিন্দুরুপী ঘুর্ণিঝড়ের এত দীর্ঘ অস্তিত্বের ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারছে না। তবে তারা বিশ্বাস করেন যে, মাঝে মাঝে অপেক্ষাকৃত ছোট ঘুর্ণিঝড়কে গ্রাস করা এবং সেই সাথে নিয়মিত শক্তির স্থানান্তরকরণ এই ঝড়কে এতগুলো বছর ধরে টিকে থাকার ফুয়েল যোগান দেবার জন্য যথেষ্ট।
হয়তবা কোন একদিন বৃহঃস্পতির এই মহা লাল বিন্দু তার সম্পুর্ণ রহস্য নিয়ে আমাদের কাছে ধরা দেবে।
কিছু ছবি দিয়া দিতে পারতা।
যারা জ্যোতি বিজ্ঞান কম বুঝি তারা একটু বুঝতে চেষ্টা করতাম।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ধন্যবাদ ভাই ...
বোঝেন ই তো বাচ্চা-কাচ্চা মানুষ... 🙂
মুক্তি হোক আলোয় আলোয়...
:thumbup:
আমি নিজে এখন ফাউন্ডেশনের ৪ নম্বর পার্ট পড়তেছি।
ফাউন্ডেশন না পড়ে থাকলে ট্রাই করতে পারো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
লেখা ভালই লাগছে, তবে রাজীব ভাইয়ের মতই বলছি... কিছু ছবি দিয়ে দিলে বুঝতে সুবিধা হত।
ইন্টারনেট এ তো ছবির অভাব নাই। ঘাটাঘাটি করে কিছু দিয়ে দিতা।
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
দিয়ে দিছি ভাই 🙂
মুক্তি হোক আলোয় আলোয়...
ভাল করছো। এরপর থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে লিখলে আরও বেশি করে ছবি সহ ব্যাখ্যা করে দিও।
😀
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
থ্যাঙ্কু ভাই...
:boss:
মুক্তি হোক আলোয় আলোয়...
সৌরভ লেখাটি পড়েই বুঝেছি অনেক পরিশ্রম আছে লেখাটির পিছনে। বেশ ভালো লাগলো, আমাদের মতো নন ফিজিক্স লোকেদের জন্য ছবি আর ব্যাখা থাকলে আরো ভালো হইত, ব্লগে তোমাকে আগে দেখিনাই, স্বাগতম জানাই। বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখা চালিয়ে আশা রাখি। আমাদের প্রচুর বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখার প্রয়োজন।
লেখা চমৎকার হইসে। :clap:
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
অনুপ্রেরণা পেলে সবার ই ভাল লাগে...ধন্যবাদ টা আসে ভাইয়া...
🙂 🙂 🙂
মুক্তি হোক আলোয় আলোয়...
এই বিষয়ে কিচ্ছু না বোঝা মানুষ আমি,তবুও লেখা পড়ে ভাল্লাগছে।
আরো লেখো ।
আমি চোখ মেললুম আকাশে
জ্বলে উঠলো আলো পূবে পশ্চিমে
পাঠকের তৃপ্তি ই লেখকের পুরষ্কার... 🙂
মুক্তি হোক আলোয় আলোয়...