কাল্পনিক (১)

ডাকটা ঠিক কোথা থেকে আসছে আবীর তা বুঝে উঠতে পারল না। এই রকম মিষ্টি একটা গলায় কে ডাকে তাকে এই খোলা রাস্তায়? আর গলাটাও কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে তার। অনেক আগে শুনেছিল ,এখন ঠিক মনে করতে পারছে না। মুহূর্তের মধ্যেই এতসব ভেবে উল্টো ঘুরতেই যা দেখল তাতে তার চোখদুটো আপনাআপনি বড় হয়ে গেল আবীরের। রাস্তা দিয়ে একরকম  দৌড়েই তার দিকে আসছে একটি মেয়ে। একটি মেয়ে বললে অবশ্য ভুল হবে, মেয়েটির নাম অন্তরা। তার ছোট্টোবেলার …

 

কেমন আছ? ছোটখাটো একটা দৌড় শেষে হাল্কা হাঁপাতে  হাঁপাতে জিজ্ঞাসা করল অন্তরা। হুম?হ্যা ভালোই ,উপরআলার দয়ায় ভালোই আছি। এখন ও যেন ঠিক ঘোর কাটছে না আবীরের । আমি কেমন আছি জিজ্ঞাসা করলে না?অন্তরার গলায় হালকা অভিমানের সুর। ওহ হ্যাঁ, কেমন আছ? তোমার মতই, বেশ ভাল, অন্তরার ঝটপট উত্তর। সাথে আবার প্রশ্ন জুড়ে দেয় সে, পড়াশোনার খবর কি? আঙ্কেল ,আন্টি কেমন আছে?তোমার ভাই? এত গুলো প্রশ্ন একসাথে শুনে একটু হকচকিয়ে গেলেও বেশ গুছিয়েই উত্তর দিল আবীর । পড়াশোনা চলছে,বাবা,মা,অনিক সবাই যার যার মত ভাল আছে। আর কি যেন? ও হ্যাঁ ,থাকি এই কাছেই। কাছেই কোথায়? আবার প্রশ্ন অন্তরার। কেন , চেন এই এলাকা? এবার পাল্টা প্রশ্ন আবীরের। চিনি মানে, আমরা ও তো এই খানেই থাকি। ওই যে মসজিদটা দেখা যাচ্ছে না, তার ঠিক পিছনের বাড়িটায় । ও তাই? আমরা তাহলে তোমাদের বাড়ি থেকে মাত্র… ৪ কি ৫ বাড়ি পর ই থাকি। হিসাব করে বলল আবীর। এত কাছে তারপর ও… ওহ ও  তুমি তো বাড়ি আস অনেক দিন পড় পড় তাই এতদিন দেখা হয় নি হয়ত বা।হুম, তাই হবে হয়ত, বলল আবীর । তো ? ভাল আছ না? হেসে ফেলল আবীর। এক প্রশ্ন কয়বার করবা? প্রশ্ন আবীরের। আসলে কি যে বলব, আচ্ছা তাহলে ভাল থেকো, আমি আসি হ্যাঁ, আপু রিকশায় ওয়েট করতেছে হালকা নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে উলটো ঘুরে হাঁটতে শুরু করল অন্তরা। এই , অন্তরা শোন, হঠাৎ আবীরের ডাক তাকে থামিয়ে দিল। আবার পিছু ফিরতেই আবীর বলে উঠলো , না  আসলে তেমন কিছু না, আচ্ছা তুমি কি মোবাইল ইউস কর? ও এই কথা? তা বললেই হয় নাম্বার টা দাও, তুমি  না একটুও চেঞ্জ হও নি আবীর।

 

নাহ, আবীর সেই রকম ই রয়ে গেছে। এত বছর পর আমাকে দেখেও একটুও ভাবান্তর হল না ওর। ছেলেটা এমন কেন? রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে পুরানো  দিন গুলার কথা ভাবছিল অন্তরা। কত সুন্দর ই না ছিল দিন গুলো। ও আর আবীর। মাঝে মাঝে অবশ্য শীলা টা ওদের মধ্যে এসে কাবাব মে হাড্ডি হবার চেষ্টা চালাত, কিন্তু মেয়েটা ওদের ভালোই চাইত। ও কত চেষ্টা করেছে আবীর কে বুঝানোর যে অন্তরা ওকে কতখানি পছন্দ করে, কিন্তু হায় রে বিধি বাম, কেউ যদি নিজে থেকেই কিছু বুঝতে না চায় , স্বয়ং বিধাতার ও বোধহয় সাধ্য নেই যে তাকে বুঝাবে। আচ্ছা সব ছেলেরাই কি এমন হয়? কই না তো, ওদের বান্ধবীদের মধ্যে পিয়া তো কি সুন্দর একটা প্রেমিক ই না পেল। ওদের দেখলে মাঝে মাঝে হিংসাই হত অন্তরার।তবে  ওদের প্রেমের মধ্যে সবসময় কেমন যেন একটা আহ্লাদী আহ্লাদী ভাব। দুজনের মুখের মিল হয়েছিল ঠিক ই কিন্তু মনের মিল কি ঠিক হয়েছিল? ঠিক যেন বসন্ত কে ঘটা করে বরণ করা হয়েছে ঠিক ই কিন্তু তারপর ও কেন যেন প্রকৃতি এখন ও ফাগুনের ডাকে সাড়া দেই নি। আর রুবির ঘটনাটা?   অতিরিক্ত বাস্তববাদী ওর প্রেমিক টা, রুবি ওর থেকে বেটার পজিসনে ছিল বলে সম্পর্কটাই ভেঙে দিল? বেচারা রুবি মেয়েটা। অনেক কেঁদেছিল। অনেক বুঝিয়েছিল ছেলেটাকে , কিন্তু তার সেই এক কথা। ইনফেরেওরিটি কমপ্লেক্স। তার বউ এর থেকে সে কখনই ছোটো হয়ে থাকতে পারবে না। পুরুষ মানুষ বলে কথা। এইসব কাহিনী দেখলে খুব ই রাগ লাগে অন্তরার। মাঝে মাঝে আবার হতাশ ও লাগে। কি দরকার এইসব করে শুধু শুধু নিজের জীবন টাকে এলোমেলো করে দেবার। আবীর অবশ্য মোটেও এরকম নাহ। ভদ্র, তবে একটু বেশি ই। ও যে আসলে কি চায় ও নিজেই মনে হয় জানে না। গরু, হ্যাঁ ওর সাথে গরুর ই মিল আছে। মানুষের কত্ত উপকারে আসে, কিন্তু বেচারা নিজে এর বিন্দুমাত্র ধারনাই রাখে না । কি সুন্দর করেই না ওকে ভুলে যেতে পারল আবীর। আরে বাবার বদলি হয়েছে তো কি হয়েছে? যোগাযোগ করা কি এতই কঠিন ? কালিদাস কোথায় তার প্রেয়সীর জন্য আস্ত মেঘটাকেই পাঠিয়ে দিল। আর এত একটা ফোন। অবশ্য ছেলেটা ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারণে ফোন নিতে পারত না। তাতে কি? ছুটিতে কি বাসায় আসতো  না? পথ হারাবার ইচ্ছা না থাকলে সুড়ঙ্গের শেষ মাথার এক বিন্দু আলোই যথেষ্ট পথ খুজে নেবার জন্য। ধুরও! এসব কি আবোল তাবোল ভাবছে অন্তরা? ও তো মেনেই নিয়েছিল সব কিছু। কিন্তু আবার কেন পথ তাদের মিলিয়ে দিল আজ? কি দরকার ছিল তার আজকে এই পাগলামি টুকু করবার? ‘ভাল শুধু বেসে যেতে হয় ,  পাবার আশা করতে নেই ‘ এই খোঁড়া যুক্তিতে বিশ্বাসী নয় অন্তরা। এক হাতে যেমন তালি বাজে না, তেমনি এক পক্ষেও ভালবাসা হয় না। হটাত করে মোবাইলের বিপ বিপ শব্দে আকাশ কুসুম চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল অন্তরার। মেসেজ!! এত রাতে? এত রাতে তো কারো তাকে মেসেজ পাঠানোর কথা নয়। লক টা খুলে স্ক্রিনে যার নামটা দেখতে পেল তাতে চমকে উঠল অন্তরা। হটাত করে যেন শিরা-উপশিরা দিয়ে বয়ে যাওয়া রক্তের গরম স্রোত অনুভব করতে শুরু করল সে।

 

আবীর!আবীর তাকে মেসেজ পাঠিয়েছে?

 

১,২০৩ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “কাল্পনিক (১)”

  1. সামিউল(২০০৪-১০)

    শুরুর দিকে ভাল লাগছিলো।
    হুট করে শেষ করে দিলা কেন??

    ব্লগে স্বাগতম।
    অ্যাডজুটেন্ট আসার আগেই গোটা দশেক ফ্রন্ট্রোল লাগায়া দাও।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    যেহেতু প্রচুর কথোপকথন আছে তাই বঙ্কিম স্টাইল ফলো করতে পারো।
    পড়তে আরাম হয়। (সম্পাদিত)


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. শাহরিয়ার (০৬-১২)

    লেইট হয়ে গেলেও স্বাগতম। ফ্রন্টরোল দে বেশী কইরা। :clap: :clap:


    • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।