প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
৩
রাতের খাবার এর পাট চুকে গেছে বেশ কিছুক্ষন আগে। দেয়াল ঘড়িটা সশব্দে জানান দিল এখন এগারটা বাজে। যাক্। শেষ হলো লেখাটা! আকাশ স্বস্তিতে একটা সিগারেট ধরিয়েছে। এরপর শর্ত অনু্যায়ী বাবার কাছে যেতে হবে। দাঁত ব্রাশ করে বেশ আয়োজন নিয়ে সদ্য রচিত লেখাটি নিয়ে সে বাবা’দের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজায় মৃদু টোকা দিতেই বাবা বললেন, ‘কি শেষ হলো! Come in my dear.’ আকাশ রুমে ঢুকে বিছানায় বসে উঠলো। লেখাটা হাতে নিয়েই সীমান্ত চৌধুরী পড়া শুরু করলেন-
একটি ইন্টারভিউ…
তোমার নাম ?
– ‘মানব’’।
তোমার বাসভূমি ?
– প্রকৃতি।
তোমার ধর্ম?
– মানবতা।
তোমার বিশ্বাস?
– সৃষ্টিকর্তা।
তোমার সম্বল?
– অভিজ্ঞতা।
তোনার চাওয়া?
– বাবা-মা’র আশীর্বাদ।
তোমার পাওয়া?
– অফুরন্ত অনুগ্রহ।
তোমার সাহস?
-বন্ধুর আশ্বাস।
তোমার ভয়?
– নারী’র মন।
তোমার বন্ধু?
– নিজের মনোবল।
তোমার শত্রু?
– আমার ক্রোধ।
তোমার লোভ?
-আত্মার শান্তি।
তোমার ক্ষোভ?
-দেশের অশান্তি।
তোমার শক্তি?
-বিন্দুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববৃত্ত রচনা।
তোমার দুর্বলতা?
-মানুষের নিঃস্বার্থ ভালবাসা।
তোমার লক্ষ্য?
-সত্যের জয়যাত্রা।
তোমার পরিণাম?
-আরেকজন ‘সংশপ্তক’’।।
…পড়া শেষ করেই তিনি চোখ তুলে আকাশ’কে বললেন, হুম্ম। ভাল। কম কথায় অনেক কথা বলার চেষ্টা করেছো। আকাশ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। বাবা বললেন, প্রতিটি প্রশ্ন ব্যাপক এবং উত্তর গুলোও হয়েছে গভীর। আকাশ বললো, আসলে লেখাটিতে প্রতিটি প্রশ্নের আড়ালে যে কৌতুহল থাকে আর সব উত্তরের পেছনে যে ভাবনা থাকে – সেগুলোই আমাকে বেশ আলোড়িত করেছে। বাবা মুচকি হাসলেন। এতক্ষনে মা আকাশকে শুধালেন, কিরে তোর নায়কটা কি শেষে চাক্রী পেল? সে একটা লাজুক হাসি উপহার দিয়ে উঠে পড়লো। বাবা বললেন, Good night buddy.
-‘শুভ রাত্রি তোমাদেরকেও’ বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো আকাশ। সে গুনগুন করে তার প্রিয় একটা গানের তাল তুল্লো-
কত দূর আর যাওয়ার আছে,
কত পথ রয়েছে বাকি?
কত মেঘ এই আকাশে ওড়ে,
আজ রোদের হাসি কাল বৃষ্টি…।
গানটি রূপম’এর গাওয়া। গানটির কথা-সুর সুন্দর, আর গায়কও তার আবেগ দিয়ে যেন পুরো ষোল আনা ঢেলে দিয়েছেন। ওর ধারনা, যে কোন ডাক্তার ‘মন খারাপ করা’ রোগের প্রেসক্রিপশন হিসেবে এই গানটি লিখে দিতে পারেন অনায়াসে।
:guitar:
৪
ফেব্রুয়ারী মাস এলেই চারিদিকে বেশ পরিবর্তন চোখে পড়ে। অমর একুশ’কে ঘিরে বইমেলা, সেমিনার, আলোচনা অনুষ্ঠান, কবিতা উৎসব আর স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে বিশেষ নাটক কিংবা টেলিফিল্ম এর কারনে ভাষা আন্দোলন এর চেতনা পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস প্রকট ভাবে প্রতীয়মান হয়। ইদানীং কালে যোগ হয়েছে ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’। আবেগ, অনুরাগ, ভাবনা আর আহবান নিয়ে ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম তেরটি দিন পেরিয়ে গেছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো আকাশ। দূরে কোথাও কোন নৈশ প্রহরীর বাঁশীর শব্দ শোনা গেল। নিস্তব্ধ রাতে- সেই শব্দ সকলকে জানান দেয় যে, ‘আমি আছি। তোমারা নিশ্চিন্ত মনে নিদ্রা যাও’। বিকট শব্দ তুলে একটা প্লেন উড়ে গেল ওদের বাড়ীর ঠিক উপর দিয়ে।
আকাশ তার হাত ঘড়িতে সময় দেখলো। এখন রাত ১১টা ৪৭ বাজে। আর কিছু সময় বাদে ঘড়িতে ১২টা বাজার সাথেই আকাশ ২৬’এ পা দিবে। সে জানে বাবা-মা সারপ্রাইজ দিবেন। এখন বাইরে বের হলে সব মজা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আকাশ নিজের রুমেই বসে রইলো। বাবা’র মুখে সেই পঁচিশ বছর আগের ঘটনাটি এতবার শোনার পর থেকে -সে যেন কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পায় সেই ছবি।
বৃহত্তর টাংগাইলে পাকুল্লা’র চৌধুরী বাড়ীতে সবাই তখন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিল। রাতের আঁধার মিলিয়ে যাবার ক্রান্তি লগ্নে একটি শিশু সকলের প্রতীক্ষার ইতি টেনে চিৎকার করে কেঁদে আত্মপ্রকাশ করেছিল। সকলেই একত্রে বলেছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ্। ধাত্রী এসে জানালো যে- চৌধুরী’সাব, আপনার ফুটফুটে একটা পোতা হইছে- মাশআল্লাহ্ । চৌধুরী সাহেব খুশী হয়ে তাকে দশ টাকা বক্শিস দিলেন। বাচ্চার কানে আযান দেয়া হলো। ততক্ষনে আকাশে আলো ফুটেছে। চৌধুরী সাহেব তার ছেলে’কে কাছে ডেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ঝাপসা হয়ে আসা চোখ দুটো মুছে তিনি বললেন, নবজাতকের নাম রাখা হবে-আকাশ চৌধুরী। আকাশের বিশালতাকে বক্ষে ধারন করে যে অনেক বড় হবে ইনশাআল্লাহ্।…
দেয়াল ঘড়ির বার’টা বাজার সংকেত এ আকাশের কল্পনার ছবিতে ছেদ পড়লো। প্রায় এক সাথেই ডাইনিং রুম থেকে ভেসে আসলো জন্মদিনের কোরাস। অতঃপর ওর দরজায় টোকা পড়লো।
সে বাইরে এসে দেখে বাবা-মা ডাইনিং টেবিলে কেক সাজিয়ে মোমবাতি জ্বালাচ্ছে। কাছে এসে দেখা গেল, নীল আর সাদা রং এর ক্রীমে ঢাকা একটি কেক। মনে হচ্ছে -এক টুকরা আকাশ যেন। আকাশ বললো, অপূর্ব হয়েছে মা- ‘The best cake that I have ever seen, Maa’!
মা বললেন, আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী। ‘শুভ জন্মদিন বাবা’। এরপর ওরা তিনজনে মিলে মোমবাতি নেভানোর পালায় মাতলো। বাবা-মা দু’জনই আকাশ’কে কেক খাওয়ালেন। সেও তাদের’কে কেক খাওয়ালো। আকাশ বাবা-মা’কে পা ছুঁয়ে সালাম করলো। বাবা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। পরম স্নেহে কপালে চুমু খেলেন। মা আদর করলেন আর একটা সুন্দর গিফ্ট বক্স উপহার দিয়ে বললেন, কই খোল্।
আকাশ বক্স খুলে দেখে ভেতরে একটা চাবি। মনে হয় এটা Toyota গাড়ীর চাবি। সে এ জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। আকাশ অবাক দৃষ্টিতে চাবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। সম্বিত ফিরতেই সে দেখলো বাবা-মা দরজা খুলে প্রায় গাড়ী বারান্দায় পৌঁছে গেছেন। সেখানে যেয়ে ও ধপাস করে সিড়ির উপর বসে পড়লো। একটা Toyota Carina-My Road রাখা আছে সেখানে; গাড়ীটা কালো রং এর মডেল ১৯৯৩। অবিশ্বাস্য! মা তার ছেলেকে শুধালেন, কি আমাদের তোর গাড়ীতে চড়াবি না?
কিছুক্ষন পরে দেখা গেল, উত্তরা রোডে আকাশের গাড়ীটি ছুটে চলেছে। আকাশের বাবা এসি অফ্ করে জানালা খুলে দিলেন। রাতে ঢাকার ফাঁকা রাস্তা। নিয়ন লাইটের আলোয় বড় মায়াবী দেখাচ্ছে চারিপাশ।
আকাশ অডিও সেটের Play বোতাম চাপতেই; গান শুরু হলো-
বন্ধ হয়ে গেছে
সব কফি আর রেস্টুরেন্ট।
বৃষ্টি ভেজা রাস্তা
ফাঁকা হয়ে গেছে বাস স্ট্যান্ড। …
এটা আকাশের অন্যতম প্রিয় একটি গান। পার্থ’র গাওয়া গানটির ছন্দের তালে Carina গাড়ীটা যেন উড়ে চলেছে। জানালা খোলা ছিল বলে, সবার চুল বড্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতি নেই। গাড়ীর তিনটি প্রান যেন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। বলা বাহূল্য , প্রত্যেকের চোখে জল। এর নাম আনন্দ অশ্রু! এই অশ্রুপাত সেই কবে থেকে শুরু হয়েছে কে জানে? তবে আমাদের জীবনে এর প্রচলন ছিল, আছে এবং থাকবে…।
:-B
(চলবে)
1st.
সাব্বাশ।
এইবার তুমি জিতছো আমিন।
:clap:
সৈয়দ সাফী
প্রশ্ন আর উত্তরগুলো অসাধারণ।
পরের দিকের গল্পটাও ভালো লেগেছে। শুঢু গাড়ির বয়াপারটা আমার লজিক গুলিয়ে দিল।
যা হোক গল্প শেষ হলে ডিটেইলস মন্তব্য করবো।
ধন্যবাদ আমিন।
"জগতে সকলি মিথ্যা
সব মায়াময়
কেবল স্বপ্ন শুধু সত্য
অন্য কিছু নয়।"
গাড়ী কিনতে তো পয়সা লাগলো না - দিয়ে দিলাম আর কি ! 😛
সামনে গাড়ীটার প্রয়োজন আছে- 😉 ।
শিরোনাম দ্রষ্টব্য। 😀
এখনও কামরুল পড়ে নি - আমি নিশ্চিত ও পড়ে এইবার মন্তব্য করতে পারে যে -
শুধু চরিত্রের নামই না - কাহিনীটাও বহুত ফিল্মী। 🙂
শুভেচ্ছা নিও।
তবে তোমার ডিটেইলস মন্তব্য শোনার ইচ্ছে থাক্লো ভাইয়া।
সৈয়দ সাফী
এত সুন্দর লেখা ...
তাই বোধহয়,
ট্যাগে সামুতে প্রকাশিত দেখে ঈর্ষান্বিত হলাম।
তবে ওবায়দুল্লাহ ভাই (স্যার) আপনি বস ... :boss:
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
সুপ্রিয় তাইফ,
এখন তো আর লেখালেখি কিছুই বাইর হয় না।
আর কি করা - পুরাতন গুলা দিয়া সিসিবি'তে চক্কর কাটি।
ঈর্ষা করিস না রে -
আগে জানলে সব এখানেই পুস্টাইতাম । 😕
ভালো থাকিস।
ভালমত বাড়ী ফিরে যা ইনশাআল্লাহ।
আমাদের জন্য দোওয়া করিস।
সৈয়দ সাফী
বস্, অসাধারন লাগছে :thumbup: , প্রশ্নোত্তর পর্বটা দারুন। পরের পর্বও নিশ্চই আসছে শীঘ্রই।
অফটপিকঃ আপনার লোকেশন কোথায় এখন?
ধন্যবাদ রহমান।
পরের টা দিয়ে দিলাম। 🙂
আমার বর্তমান অবস্থান - স্যাকলেপিয়া, লাইবেরিয়া।
:-B
সৈয়দ সাফী
ভাইয়া, আপনার লেখা পড়লাম একটানে, একটা ঘোরলাগাকে সাথে নিয়ে।
খুব ভাল লাগছে। :clap: :clap:
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে তানভীর।
স্বপ্ন গুলো সব সময় ঘোরাক্রান্ত ! 😐
শুভেচ্ছা নিও ভাইয়া।
সৈয়দ সাফী
ভাই,
সিরিজটা ভালো লাগতেসে...
আকাশের স্বপ্নের মত জীবন দেখে হিংসা লাগে...
আমাদের বাস্তবটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বপ্নের বিপরীত বলেই হয়তো...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
খুব ঠিক বলেছো সাকেব।
রবি বাবু তাই জোর করে স্বপ্নকেই সত্য বলে আঁকড়ে ধরতে বলেছিলেন।
🙁
ভাল থেকো ভাইয়া।
:thumbup:
সৈয়দ সাফী
:boss:
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ফাহিম।
শুভেচ্ছা।
🙂
সৈয়দ সাফী
:boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:
চমৎ কার লাগল...বিশেষ করে প্রশ্নোত্ত্র পর্বটা যাক্কাসসসসসস :clap: :clap: :clap:
তোমার ঝাক্কাস মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ রেজওয়ান।
শুভ কামনা জানালাম।
🙂
সৈয়দ সাফী
দুই পর্ব গেল গা, এখনো নায়িকা আসে না কেনো ?
আমি তো ভাবছিলাম এই পর্বের শুরুতেই নায়িকার সাথে ধাক্কা লাগবে 😉 😉
:thumbup:
যথার্থ বলেছো কামরুল।
ধাক্কা খাইছে এইবার। 😡
সময় করে দেখে এসো প্রিয়।
🙂
সৈয়দ সাফী
আকাশ ভাইদের দেখি পুরা সুশীল পরিবার... :-B
কাল কমেন্ট করতে পারিনি... :shy:
আজ করে গেলাম... B-)
যাই, পরের পর্ব পড়ি... ;;)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
স্বপ্ন নিয়েই যখন লিখতেছি - সম্পূর্ণ রঙ্গীন করতে দোষ কি ? 😛
🙂
সৈয়দ সাফী
বন্ধ হয়ে গেছে
সব কফি আর রেস্টুরেন্ট।
বৃষ্টি ভেজা রাস্তা
ফাঁকা হয়ে গেছে বাস স্ট্যান্ড।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
বাকি মন্তব্যটা দেখি গায়েব?? ঘটনা কি?
একটা মায়াময় ভালোলাগা বোধ জড়িয়ে আছে :hatsoff:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
:guitar:
সৈয়দ সাফী
অনেক অনেক ধন্যবাদ সানাউল্লাহ ভাই।
মাঝে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।
এখন ফিরে এসেছি আস্তানায়।
প্রত্যাবর্তন পরিপূর্ণ হলো সিসিবিতে আবার ঢু মারার মধ্যে দিয়ে।
আপনার প্রশ্রয়ের জন্য যথারীতি বিগলিত হইলাম।
😀
সৈয়দ সাফী