“জল দেখলেই আর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি না, আমাদের পকেটের দামী মুঠোফোন খানা যে ভিজে রদ্দি হয়ে যাবে। ইন্সট্যাগ্রামে না দেয়া পর্যন্ত অ্যাডভেঞ্চার গুলো আর সত্যি হচ্ছে না। সব কিছুই কেবল কতগুলো ঘটনা হয়ে আটকে থাকছে ফেসবুকে অথবা হ্যাশট্যাগ হয়ে টুইটারে। প্রযুক্তি আমাদের এই সব ছোটখাট রোমাঞ্চগুলোকে কেড়ে নিয়েছে আর প্রতিবার গুগল, চেক ইন দিয়ে সে ধ্বংসের পথটা আমরাই সুগম করে দিচ্ছি।”–কথাগুলো জেরেমি গ্লাস নামে এক ব্লগারের,কি সহজ অথচ নির্মম সত্যি।
২০০৫ কি ২০০৬ সালের দিকে, কোন এক কোরবানি ঈদের ছুটিতে আমরা ১০ বন্ধু সাগর দেখতে বের হলাম। ক্যাডেট কলেজের সবাই, তখন হয়ত থার্ড ইয়ারে পড়ি। হ্যাপাজার্ড এক ব্যানার (সাইন বোর্ডও নয়) স্বর্বস্য মৌসুমী হোটেলে থাকা, সস্তা হোটেলে ৫ বাটি তরকারী ভাগাভাগি করে খাওয়া, কাটপিস সমৃদ্ধ বাংলা ছবি “একরোখা” দেখে জীবনের ভিন্ন মানে খুঁজে পাওয়া, সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার পথে সি ট্রাকের রান্নাঘরে মাঝি মাল্লাদের ঘুষ দিয়ে তাদের খাবার খাওয়া, দামের কারণে হোটেলে না থেকে বাজার থেকে দূরে এক কথিত মেম্বারের বাড়ির সামনের একটা ঘরে ২ বিছানায় ১০ জন,রাত্তিরে তার বাড়ির সামনের নারকেল গাছে অভিযান…স্মরণীয় প্রতিটি মুহূর্ত। আমাদের অনেকের তখন মোবাইল ফোনই নেই, মোবাইলে ক্যামেরা থাকার প্রশ্নও আসে না। সম্বল আমাদের একজনের ইয়াশিকা এমএফ টু, সেটাও সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে চুরি হয়ে গেল। সেই ট্যুরের একটা ছবিও আমাদের কারো কাছে নেই, ফেসবুক অ্যালবামে থাকা তো দূরের কথা। তবুও আজকে যখনি আড্ডা হয়, সেই ট্যুরের কথা ঘুরে ফিরে আসে, প্রতিটা মুহূর্ত জ্বলজ্বল করে। সেই একটা সপ্তাহ একটা ঘোর লাগা সময়…। ছবিগুলো না থাকায় এখন মনে হয় ভালোই হয়েছে। থাকলে হয়তো বারবার কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের সংঘর্ষ হতো।
৮ টি মন্তব্য : “আমরা আর হারিয়ে যেতে পারি না”
মন্তব্য করুন
কল্পনাপুর সাথে আরো সংঘর্ষের কথা জানবার মুঞ্চায়। 😀
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
জেরেমি গ্লস এর কথাগুলো নিদারুন সত্য। মিলে গেছে।
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
তখনকার না থাকার হতাশা এখন ব্লগ লিখে পুরণ করে দিলেন। 😀
কালকে বৃষ্টিতে ভিজার খুব শখ হইসিলো। কিন্তু ব্যাগে ল্যাপটপ থাকায় সেই আশা আর পূরণ হইলোনা
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
দিন দিন কেন জানি যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। যন্ত্রের সাথে সখ্যতা বাড়ছে, মানুষের সাথে না............
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
ঘটনা হচ্ছে, একটা ডি এস এল আর ছিল- মাস খানেক আগে বেঁচে দিছি। সুন্দর কোন জায়গায় গিয়ে ক্যামেরায় শত শত ক্লিক আর সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে সৌন্দর্য দেখানোর কাজটা করতে গিয়ে সেই জায়গার কিছুই আর দেখা হত না।
আলহামদুলিল্লাহ, এখন কোথাও গেলে শান্তি লাগে। নির্ভার লাগে। যা দেখি, মনে গেঁথে যায়।
প্রযুক্তি আর এই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপণের ঘেরাটোপে বন্দী জীবন। আসলেই বন্দী লাগে। মুক্তি চাই।
যত যোগাযোগ, তত প্রতিশ্রুতি এবং সেটা পূরণের চাপ......
আসলেই আমরা আর হারিয়ে যেতে পারি না, সবসময় কানেক্টেড থাকার আপ্রান চেষ্টা 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
খুব জটিল কথা। ভালো লাগলো