শৈশবে যে মানুষটাকে সবচেয়ে ভয় পেতাম, সাথে সাথে ঘৃণাও করতাম সে আর কেউ নয়, আমার পরম শত্ত্রু; আমার বাবা!!! এই লোকটার চোখ একবার ফাঁকি দিতে পারলে আমার সারা দেহ-মনে এক অনন্য তৃপ্তির ছোঁয়া লাগত। মনে মনে কতবার যে তার অকাল মৃত্যু কামনা করেছি সে কথা ভাবলে এখন সত্যিই খুব হাসি পায়; শিশুমনে কতনা ভাবের উদয় হয়!!!!
ছোটবেলায় সবসময় তোমাকে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে দেখেছি,যাকে দেখে আমাদের বাড়ির সব ছেলে-মেয়ে সবসময় ভয়ে কাঁপে।পড়ার সময় তোমার ছায়া টের পেলে তাদের মুখদিয়ে ফেনা উঠে যায়, লুকোচুরি খেলার সময় তোমাকে দেখলে এমন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয় যে তার জয় সুনিচ্চিত।আমাদের সময় মারবেল খেলার খুব জোড় ছিল।বাড়ির কোন ছেলে ভুলেও পাড়ার ছেলেদের সাথে মারবেল খেলতে গেলে তাদের পরাজয় ছিল অবধারিত; কারন তোমার ভয়ে তাদের হাত যে কেঁপে যেত।
ছোটবেলায় সবসময় তোমাকে দূরের মানুষ মনে হত আমার; যে শুধু চোখ রাঙ্গিয়ে শাসন করতে পারে কিন্তু একটুও ভালবাসতে পারেনা।তোমার থেকে দূরে দূরে থাকতাম,ভয়ে তোমার কাছে যেতাম না,তোমার পাশে ঘুমুতে চাইতাম না।কেমন ভাবে আমি তোমার না হয়ে মায়ের ছেলে হয়েগেলাম। কিন্তু আজ আমার বড় ইচ্ছা হয় নতুন করে তোমার হতে,ইচ্ছা হয় তোমার পাশে শুয়ে গল্প করতে, তোমাকে জড়িয়ে ধরে,তোমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে।কিন্তু আমি জানি তা আর কখনও সম্ভব নয়; ২৫-২৬ বছর বয়সের কোন ছেলে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে না। এ দৃশ্য কল্পনা করা ও হাস্যকর। তবুও…… আমার যে খুব ইচ্ছা হয়।।
তুমি আমার অতিসাধারণ বাবা যে কোন বিরাট চাকুরীজীবী বা অঢেল সম্পদশালী ব্যাবসায়ী নয়।অতিসাধারণ মধ্যবিত্ত বাবা, যার প্রতিটি দিনশেষ হয়েছে মধুর প্রশান্তি নিয়ে নয়;আগামী দিনগুলোর সরল গতিময়তার চিন্তায় বিভোর হয়ে।মায়ের কাছথেকে তোমার জীবন সংগ্রামের কথা শুনেছি। সংসার সমুদ্রে তোমার ভাসানো তরীর উঠা-নামার গল্প শুনে চোখ ভিজে যায় আমার।তোমার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায় হাজারগুন। আজ আমি যখন আস্তে আস্তে জীবীকা অর্জন শুরু করলাম তখন একটু একটু বুঝতে শিখছি এ তরীর হাল ধরা কতনা কঠিন!
কিন্তু তুমি ঠিকই প্রায় চার দশক ধরে আগলে রেখেছ।
বাবা তোমার ভালবাসা প্রকাশে কখনও বাহুল্য দেখিনি তাই তোমাকে সবসময় দূরের মানুষ মনে হত আমার, কিন্তু তুমি কী গভীরভাবে-নীরবে অসীম ভালবাসায় ধরে রেখেছ সবাইকে।দিনেদিনে তোমাকে বুঝতে শিখছি,ঠিক তোমারমত করে……।।আমি জানি আমার এ ভালবাসা তোমারমত না বলাই থাকবে,কিন্তু থাকনা? অপ্রকাশিত ভালবাসা যে কতটা মধুর সেটা আমি জানি।এখন খুব বড় একটা রোগ তোমার শরীরে বাসা বেঁধেছে,তোমার ভিতরের
স্পষ্ট পরিবর্তন আমার চোখে পড়ে। সেই শাসন আজ তোমার নেই,চোখ রাঙ্গিয়ে কাউকে কিছু বলনা। খুব অবাক হই যখন দেখি আপুর বাচ্চা দু’টোর শত আবদার তুমি মহাআনন্দে পালন করছ।তারা তোমার দাঁড়ি ধরে টানে,তোমার পিঠে ঘোড়সাওয়ার হয়,তুমি বিরক্ত হওনা।বাজারে যেয়ে বাচ্চা মানুষের মত তুমিও ওদের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাবার খাও;
এসব দেখে আমার বড্ডও ভাললাগে,আবার হিংসাও লাগে……………।।
আজ আমার চাকুরীর কারণে বছরের অধিকাংশ সময় দেশের বাহিরে থাকা লাগে।মনে বড় ভয়হয় ভেবে যে তোমার জীবনের অন্তিম মুহূর্তে হয়ত তোমার সাথে আমার দেখা হবেনা…………………কিন্তু আমার খুব ইচ্ছা হয় তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলি, “তুমি আমার অস্তিত্বে কতটা জড়িয়ে আছ।”
আমার এইলেখা জানি কোন দিন তোমার পড়া হবে না, তুমি অন্য অনেক বাবাদের মত এত স্মার্ট নও যে ভার্চুয়াল জগতে বাবা-ছেলে বন্ধু হবো বা তোমার অবসর কাটবে ব্লগ পড়ে।……কিন্তু থাকনা এমন!!! কিছু ভালবাসা না হয় অপ্রকাশিত থাকল।
:boss: এই একটা দিক দিয়ে হয়তো বেশ লাকী বলা চলে। বেশ কিছু কারণেই হয়তো বলা চলে বাবার বেশ কাছাকাছি চলে এসেছি গত ক'বছরে। এই একটা কারণে হয়তো মাঝে মাঝে মনে হয় প্রায় সব হারানোর প্রবাস জীবনের পজিটিভ প্রাপ্তিগুলোর একটা হলো এটা।
একটা কাজ কর, এইটা প্রিন্ট করে পাঠিয়ে দে বাড়ির ঠিকানায়।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
শুধু ছোটবেলায় ভয় পেতাম বলে এখনও
যে পাই না তেমন নয়।এখন ও বাবাকে ভয় পাই,তবে দিনে দিনে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা সমানুপাতিক হারে বেড়েই চলেছে কিন্তু সেটা কোন দিন হয়ত বলা হবে না।প্রিন্ট দিতে চাই না দোস্ত 🙂
তানভীর আহমেদ
তোমার কথাগুলো আমারো কথা।
ছুঁয়ে গেলো।
:boss: :boss: :boss:
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমাদেরমত অনেকেই হয়ত আছে।
তানভীর আহমেদ
অসাধারন লিখেছো :boss:
:hatsoff: :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
তানভীর আহমেদ