সংসদ অধিবেশনে প্রধান বিরোধী দল বি এনপির যোগদান বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও একটি আশান্বিত হওয়ার মতো বিষয়। সংসদে সরকারি বা বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখা প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে বিরোধীদল সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য সংসদ অধিবেশন বর্জন করে। সংসদীয় রীতিতে এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নহে। এবার জাতীয় সংসদের ২৮৫ কার্যদিবসে বিরোধী দলের উপস্থিতি মাত্র ৫৫ দিন। অধিকাংশ দিন অনুপস্থিতির জন্য বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, গুপ্তহত্যাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু চাপা পড়ে গেছে। অথচ বিরোধীদল দেশবাসীর সামনে এইসব বিষয় তুলে ধরতে পারত সংসদে উপস্থিত থেকে। প্রায় ১২ মাস পরে যখন বিরোধীদল গত ১৮ই মার্চ সংসদে যোগ দিল আমিও আর পাঁচজনের মত মুখচেয়ে ছিলাম তাদের গঠনমূলক সমালোচনা শোনার জন্য। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি!!!!!! আবার সেই পুরাতন দৃশ্য। কাদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া আর কি থাকতে পারে!!!!!! বারবার স্বপ্ন দেখি এই দেশটার একদিন পরিবর্তন আসবে, দেশের রাজনীতিবিদরা দেশের কথা ভাববে, দেশের মানুষের কথা ভাববে, কিন্তু আবার ভেঙে যায় আমার এই দিবাস্বপ্ন…………………………………।।
দৃশ্যপট- একঃ
জাতীয় সংসদ আমাদের এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে একটি তীর্থস্থান। এখান থেকেই এদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ হয়। সুতরং সকল সাংসদ এখানে গঠনমূলক কথা বলবেন এটাই কাম্য। কিন্তু গত ১৮ ই মার্চ বিরোধীদলীয় নারী সদস্য রেহেনা আক্তারের বুলিশুনে বাকরুদ্ধ হলাম। রাষ্ট্রপতির ধন্যবাদ প্রস্তাব সম্পর্কিত আলোচনার সময় তিনি বললেন, “ মইন- ফকরুদ্দিনের কোলে বসে ক্ষমতায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু কোলে নয় আর কোথায় বসেছেন কে জানে।” তিনি আরও বললেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাসি দেখলে মানুষ টিভি বন্ধ করে দেয়।” প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ তুতু তু তুতুতারা, মরজিনার মা মার্কামারা, আর জনগণ বলছে- শেখ হাসিনা মার্কামারা।” একপর্যায়ে তিনি বলেন, “ বি এন পি খালেদা জিয়ার নির্দেশে চলে, জামায়েত ইসলামীর নির্দেশে নয়।” এই সময় সরকারী দলের নারী সদস্য ফযিলাতুন্নেসা আঙুল উচিয়ে বলেন, “ চুপ কর, চুপ কর।” তখন দুই বিরোধীদলীয় সাংসদ শাম্মি আক্তার ও সৈয়দা আসিফা আশরাফি ফযিলাতুন্নেসার দিকে তেড়ে যান। তাঁরা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে যান। বিরোধীদলীয় হুইপ এসে পরিস্থিতি সামালদেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিপু মনি তার ভাষণে বলেন, “ প্রথমবার সংসদে এসে যা শুনলাম তাতে মানুষ রাজনীতি বিমুখ হবে। এই রকম ভাষা নিষিদ্ধ পল্লীতেও ব্যবহার করা হয়না।”
দৃশ্যপট – দুইঃ
১৯শে মার্চ। আজও দৃশ্য একই। শুধু চরিত্র ভিন্ন। আর অশালীন ভাষার ব্যবহার আজ যেন আরও বেশী। বিরোধীদলীয় সাংসদ সৈয়দা আসিফা আশরাফি রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রপতি।” সাথে সাথে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সংসদ। স্পীকার এক্সপাঞ্জ করলেন। সরকারীদলের সাংসদরা বললেন, “ অসত্য বক্তব্য, অসত্য বক্তব্য। চুপ কর, চুপ কর।” তিনি আজ যেন গতকালের রেহেনা আক্তারের কথাগুলো আরও বিস্তারিত ও টক-ঝাল মিশিয়ে বললেন। তিনি বললেন, “১৯৮৬ সালে এরশাদের কোলে বসে লং ড্রাইভে গিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, ১৯৯৬ সালে গোলাম আযামের কোলে বসে ক্ষমতায় গিয়েছিলেন। যৌবনে আর কত জনের কোলে বসেছেন কে জানে? মতিউর রহমান এর বইয়ে পড়েছি কোন বেয়াই এর কোলে বসার দৃশ্য দেখে চাকর আত্মহত্যা করেছেন।”
এরপর সীমান্তের উত্তেজনা প্রসঙ্গে বললেন, “ তার সরকার ক্ষমতায় আসলে এই সরকারের দুইজন মন্ত্রীকে ( নারী) বিবস্ত্র করে ইন্ডিয়ার মহিলা পুলিশ দিয়ে পেটাবেন।”
শেষকথাঃ
সংসদে বিজেপির সাংসদ আন্দালিব রহমান বললেন, “ রাজনীতিবিদদের উপর মানুষ আস্থা নষ্ট হয়েছে। এর জন্য সরকারী দল বা বেসরকারি দলের কোন দোষ নাই। দোষ জনগণের কেননা তারা বারবার ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করে।” সত্যই দোষতো আমাদেরই। যে দেশের একজন জনপ্রতিনিধি সংসদের মত পবিত্র জায়গায় যেয়ে এমন আশালীন ভাষা ব্যবহার করেন তাকেই আবার আমারা বাহবা দিব। ঠিক বলেছেন বলে উৎসাহ দিব সেই দেশে তো সবই সম্ভব।
দেশের প্রথম সারির পত্রিকা প্রথম আলোতে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের একটা কলাম পড়ছিলাম এই বিষয়ে। তিনি বলছিলেন, “ দয়া করে অপ্রাপ্তবয়স্করা এই লেখা পড়বেন না।” তিনি এই ঘটনার বর্ণনা দিতে যেয়ে আকার – ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন ওই সাংসদ কি জানেন না যে সারাদেশে বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে জাতীয় সংসদের প্রতিটি অধিবেশন? আর এমন রসময় কথা গুলো তো তার সন্তান বা বাবা-মার বয়েসী লোকজন ও শুনতে পারে। যে ভাষা নিষিদ্ধ পল্লীতেও বেমানান তেমন ভাষা জাতীয় সংসদে ব্যবহার করতে আপনার বিবেকে কি একবার ও বাধেনি? সংসদে ব্যক্তিগত বিষয় বাদ দিয়ে আইন – শৃঙ্খলা, শেয়ার বাজার, বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধি, ট্রানজিট, সীমান্তের হত্যা, প্রশাসন প্রভৃতি বিষয়ে কথা কি বলার ছিল না?
আসলে আমাদের দেশের সাধারণ লোকজন এই দেশটাকে খুব বেশী ভালবাসে। আমি মনেকরি আমার মত সবাই চায় এই দেশের একদিন পরিবর্তন আসবে। আজ হোক আর কাল হোক। তাই বারবার আমরা স্বপ্ন দেখি আর ভাবি এবার স্বপ্নটা ভেঙে গেলেও পরে আবার ঠিক হয়ে যাবে সব। সবশেষে একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। আমাদের ক্রিকেট নিয়ে অনেক দিন অনেকের নিরাশ হওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু আমার মত অনেকের মনে ঠিকই আশা ছিল একদিন আমাদের পরিবর্তন হবেই। দেখুন সেই দিন কিন্তু ঠিকই এসেছে। আরও একবার আসুন এই দেশের পরিবর্তনের স্বপ্নবুনি। দেখবেন এই দেশ একদিন ঠিকই সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে।
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ধন্যবাদ ভাইয়া।
তানভীর আহমেদ
তানভীর, ভালো লাগলো।
তবে সংসদ জিনিসটা অনেকটাই বোগাস। আমার 'গনতন্ত্রের তন্ত্র-মন্ত্র' সিরিজে পরবর্তিতে এই সম্পর্কে লিখব।
রাজনীতিতে অশালীন ভাষার ব্যবহার ও মিথ্যাচার নতুন কিছু নয়। চিরকালইতো দেখে এসেছি।
আমার ও আপনার মন্তব্য পেয়ে ভাল লাগল।
আমি এত বুঝিনা ভাই। যেটা আমার কাছে মনেহয়েছিল তাই লিখছি।
আর আপনার লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
তানভীর আহমেদ
আমি একজন আশাবাদী মানুষ। কোন কিছু নিয়েই আশা ছাড়তে রাজী না। তাই তোমার মতন আমারও আশা সেদিন আর অনেক বেশী দেরি নাই যেদিন আমরাও সভ্য হয়ে উঠব।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
ধন্যবাদ আপু লেখাটা পড়ার জন্য।
আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশর প্রত্যাশায় রইলাম।
তানভীর আহমেদ
ভাল লেখা ভাইয়া।
ভাইয়া তাছাড়া জনগণের আর কি করার আছে? জনগণ তো পরিস্থিতির স্বীকার
শারিফ, শুনে ভাল লাগল যে তোমার ভাল লেগেছে। আসলে আমাদের দেশ কয়েকটি পরিবারের লোলুপ থাবার মধ্যে আড়ষ্ট হয়ে আছে। তাছাড়া অন্যান্য রাজনীতিবিদরাও নিজেদের আখের গোছানোর কাজে সর্বদা ব্যস্ত। এই মানসিকতার পরিবর্তন একদিন ঠিকই হবে।সেই দিনের প্রত্যাশায় আছি আমি, তুমি ও সকলে।
তানভীর আহমেদ