আজব দুনিয়ার কিছু ভুয়া “গজব” এর কাহিনী!

এক সপ্তাহের মাথায় আবার লিখতে বসলাম। পড়াশোনার চাপ মনে হয় কম, এইজন্য এখন ব্লগর ব্লগর করতে মজা লাগে মনে হয়! যাই হোক বেশী কথা বাড়াবো না; আমার অন্যান্য ব্লগ দেখে ধারণা করতে পারবেন আমার কাজ বাইরের পত্র-পত্রিকা বা নেট থেকে আর্টিকেল চুরি (!) করে এখানে লেখা… আমার তো আবার “ক্রিয়েটিভিটি” একটু কম কিনা!  :-B

আজকে লিখব ‘শেষ বিচারের দিন’ নিয়ে। না ভাইয়া এ্যান্ড আপুরা, আমি ধর্মীয় কোন টপিক তুলছি না (যদিও বিষয়টার সাথে হাজারো ধর্মীয় বিশ্বাস ভালভাবে জড়িত!)। আমি বরং একটা ফর্দ বানাবো – এই ফর্দ, অর্থাৎ লিস্টে যা তুলে ধরব তা হচ্ছে, সেই হাজার বছর আগে থেকে হয়ে আসা কিছু বিজ্ঞ মানুষের কিছু অজ্ঞ যোগ-বিয়োগের ভুল নিয়ে… যেখানে তারা একদম সঠিক হিসাব করে (!) “শেষ বিচারের দিন”, বা “কেয়ামত” বা সহজ কথায় পৃথিবী ধ্বংসের দিন-ক্ষণ তো ঠিকই বলেছিলেন, কিন্তু কি কারণে জানি তাদের উপাস্য’রা ঐদিন গুলোতে কিছু আর করেননি।

করলে নিশ্চয়ই আমি এখন আর এই ব্লগ লিখতাম না!

লেখা শুরুর আগে বলে নেই, এইখানে কোন ধর্ম কেই হেয় বা তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে না – তা সে ইসলাম হোক, খ্রীস্টধর্মই হোক, কিম্বা নাম না জানা লাতিন আমেরিকার কোন এক গোত্রের বিশ্বাসই হোক! এইখানে যতগুলা ভুল হিসাবের ঘটনা দেওয়া আছে সবই খেয়াল করলে দেখবেন কোন নির্দিষ্ট এক ব্যাক্তির মতামতের উপর ভিত্তি করেই কিন্তু ছড়িয়েছে – কোন ধর্মের প্রতিষ্ঠিত মতবাদের উপর কিন্তু নয়!!

যাই হোক, শুরু করা যাক…

খ্রীষ্টপুর্ব ৭৯: রোমের কাছে মাউন্ট ভেসুভিয়াস’এর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাত কে ঐ সময় পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়েছিল।

৩০ খ্রীষ্টাব্দ: খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র বাইবেল’এর লেখা যদি আক্ষরিক অর্থে হিসাব করা হয়, তাহলে সে অনুযায়ী এই ৩০ সালের মধ্যেই ঈশ্বরের “মুক্তির বাণী” নিয়ে যিশু খ্রীষ্ট (বা ঈসা নবী) এর পৃথিবী’তে ফেরত আসার কথা। এখন “আব্রাহামীয় ধর্মসমূহ”, অর্থাৎ ইহুদিধর্ম, খ্রীষ্টধর্ম, ও ইসলাম অনুযায়ী তখনই “শেষ বিচারের সময় শুরু হয়ে যাওয়ার কথা… বাইবেলের ম্যাথিউ অধ্যায়ের ২৪:৩৪ অনুচ্ছেদে এমনটা বলা হয়, যে “…যদি [এসব] শর্তাবলী পালিত না হয় [তোমাদের দ্বারা], তবে তোমাদের প্রজন্ম আর পরবর্তি অধ্যায়ে পা দিবে না…” [অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম আসবে না]তো তখন মানুষের গড় আয়ু ছিল ৩০ এর মত, আর ঈসা নবী বা যিশু খ্রীষ্ট দেহান্তরের পর অন্তত শত বছর লেগে যায় তার চালু করা মতবাদ খ্রীষ্টান ধর্ম রূপে প্রতিষ্ঠা পেতে, সেই হিসেবে এক প্রজন্মের শর্ত পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী নতুন দিন দেখেছে…

৬০ খ্রীষ্টাব্দ: তারসাস’এর পল এর বিশ্লেষন (Epistles of Paul of Tarsus) অনুযায়ী প্রথম শতাব্দীর মাঝামাঝি কোন এক সময় পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কথা। অবশ্যই হয়নি!

৯০ খ্রীষ্টাব্দ: প্রথম সেন্ট ক্লামেন্ত (St. Clement I) ধারণা করেছিলেন কিছু বছরের মধ্যে যেকোন মুহুর্তে পৃথিবী ধ্বংস হতে পারে।

২য় শতাব্দী: এই সময়ের বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব (“Prophets”) মেনে নিয়েছিলেন, যে তাদের জীবদ্দসায়ই ঈসা নবী ফেরত আসবেন, ও নিম্ন এসিয়ায় (Asia Minor) কোন এক জায়গায় নতুন জেরুজালেম প্রতিষ্ঠা করবেন। যে ঘটনার পর শেষ বিচার শুরু হওয়ার কথা, হয়নি।

৩৬৫ খ্রীষ্টাব্দ: পয়্‌টিয়ের্‌স এর হিলারী নামক এক ব্যাক্তি ঘোষণা দিয়েছিলেন ঐ বছরই পৃথিবীর শেষ বছর। হিসাবে ভুল ছিল নিশ্চিত।

৩৭৫ থেকে ৪০০ খ্রীষ্টাব্দ: ট্যুর্‌স এর সেন্ট মার্টিন, উপরের ঐ হিলারীরই এক ছাত্র বিশ্বাস করতেন ৪০০ সালের মধ্যের পৃথিবীর অন্ত ঘটবে, ঘটেনি!

৫০০ খ্রীষ্টাব্দ: অর্ধ-সহস্রাব্দ – শুধু এই কারণেই অনেকেই ধরে নিয়েছিল, “এই শেষ!” এদের মধ্যে সবচেয়ে জোড় গলা ছিল হিপোলিটাস নামক এক পোপবিরোধীর, ও এক খ্রীষ্টান পন্ডিত সেক্সটাস জুলিয়াস আফ্রিকানাস এর। আবারো ভুল।

৯৬৮ খ্রীষ্টাব্দ: জার্মান সম্রাট তৃতীয় অটো এর সেনাবাহিনী এক সুর্যগ্রহনকে পৃথিবী ধ্বংসের শুরু হিসেবে ধরে নিয়েছিল।

৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ: প্রথমবারের মত ‘পবিত্র শুক্রবার’ (Good Friday), ও ‘অভিযাত্রার উৎসব’ (Feast of Annunciation) একই দিনে পরায় অনেকেই ধারনা করেছিল এ্যান্টি-ক্রাইস্ট (বা সহজ বাংলায় ‘দাজ্জাল’) এর আবির্ভাব ঐ দিনই ঘটবে, ও পৃথিবীর ধ্বংসলীলা শুরু হবে; গুজব আছে ঐ দিন নাকি জার্মানিতে সুর্য উত্তর দিকে উঠেছিল, এবং আকাশে ৩টা চাঁদ (!) ও ৩টা তারা বিধ্বংসী রূপে পরিণত হয়েছিল! এখন যেহেতু কেউ ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখেনি, আমরা কেউই এ ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পারছি না…  😛

১লা জানুয়ারী, ১০০০: পুরো উত্তর ইউরোপ জুড়ে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে হাহাকার লেগে যায়, কারণ স্বয়ং চার্চগুলো থেকে আগেই অফিসিয়াল ঘোষণা দেওয়া হয়, যে শেষ বিচার ঐ দিনই হবে! এমনকি দিনটার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে উত্তরের গ্রামগুলোতে হামলা করতে শুরু করে খ্রীষ্টান সেনারা, যেন ঐ গ্রামবাসীদের ধরে ধরে খ্রীষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা যায়। অন্যদিকে অনেক পরিবারই তাদের ধনসম্পত্তি, জমিজমা ইত্যাদি সব চার্চের নামে দান করে দিতে শুরু করে, শেষ মুহুর্তে কিছু পুণ্যের আশায়! তবে এর মধ্যে খারাপের ভাল এতটুকুই ছিল, যে সাধারণ মানুষ এতই অশিক্ষিত ছিল যে তারা পুরো ঘটনার বিবরণও জানত না, শুধু জানত প্রার্থণা করতে হবে – তাই এক অদ্ভুত কারণে তাদের ভয়ের পরিমাণ তুলনামুলক ভাবে কম ছিল। যাই হোক শেষের দিকে এই পটভূমি পুরো পাল্টাতে থাকে, আর মানুষের মাঝে হাহাকার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়! কিন্তু যখন ১লা জানুয়ারী বাদ দিন, পুরা জানুয়ারী কি জুন কি পুরো ১০০০ সালেই কিছু হলো না, তখন চার্চ ভয়াবহ সমালোচনার সম্মুখীন হতে থাকে, অনেক মানুষ চার্চকে ছাড়তে শুরু করে। এসব থামানোর একমাত্র উপায় হিসেবে চার্চ নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করে, এবং আগে যারা পৃথিবী ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছিল, তাদেরকে ভন্ড বলে নির্বাসিত করে দেয়। মানুষের মাঝেও হাহাকার কমে আসে, এবং ২০০০ সালের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে!

১০০৫ থেকে ১০০৬: পুরো ইউরোপ জুড়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় – ধর্মভীরুদের চোখে যা ছিল কেয়ামতের লক্ষণ।

১০৩৩: ঈসা নবীর দেহান্তরের হাজার বছর পূর্তিতে অনেকেই এই সালকে তাঁর ফেরত আসার সাল হিসেবে গণ্য করত। ধারণা করা হয়ে, ২৭ থেকে ৩৩ খ্রীষ্টাব্দের মাঝে কোন এক সময় ঈসা নবীকে ক্রুসে চড়ানো হয়।

১১৪৭: পোহ্‌ল্ডে’র (Pohlde) জেরার্ড মতবাদ দিলেন, যে কন্‌স্টান্টিন-এর শাসনামল থেকেই নতুন সহস্র শুরু – অর্থাৎ ৩০৬ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১০০০ হাজার বছর পর ১৩০৬ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে।

১১৭৯: টোলেডো’র জন ঘোষণা দিলেন ১১৮৬ সালে পৃথিবী শেষ হবে। তার ঘোষণার ভিত্তি, ঐ বছর বেশ কয়েকটা গ্রহের একই রেখায় আবর্তনের উপর।

১২৮৪: পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট, ৬১৮ – ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক সালের সাথে বহুল প্রচলিত ‘শয়তানের সংখ্যা’ ৬৬৬ যোগ করে এই সালে পৃথিবী শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

১৩৪৬ ও পরবর্তী: পুরো ইউরোপ জুড়ে কুখ্যাত ‘ব্লাক প্লেগ’ ছড়িয়ে পরে, যা স্বাভাবিক ভাবেই খ্রীষ্টান প্রধান জনসাধারনের কাছে শেষ দিনের শেষ প্রস্তুতি হিসেবে মনে হতে থাকে। এবং এই প্লেগ, বা মহামারীতে মারাও যায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষ! কষ্টের ব্যাপার হল, এই প্লেগের শুরুই একটি কুসংস্কার থেকে, যার জন্য আগের যুগে খ্রীষ্টানরা ডাইনী হিসেবে ধরে নিয়ে (!) প্রচুর বিড়াল (!!) হত্যা করে…! যার ফলে পরবর্তীতে ইঁদুরের সংখ্যা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়, আর ইঁদুরের গায়ে থাকা পোকা থেকেই ছড়ায় এই ব্লাক প্লেগের জীবাণু!

১৪৯৬: ঈসা নবীর আনুমানিক ১৫০০তম জন্মবার্ষিকী – অনেকের চোখে এটাও তাঁর প্রত্যাবর্তনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল। অবশ্যই… বাস্তবে তা ছিল না!

১৫৩৩: জার্মানির মেল্‌কিওর হফ্‌ম্যান ধারণা করলেন এই বছর ঈসা নবী প্রত্যাবর্তন করবেন, ও জার্মানির স্ট্রস্‌বার্গে নতুন জেরুজালেম প্রতিষ্ঠা করবেন! তার ‘অপপ্রচার’এর জন্য পরে হফ্‌ম্যানকে স্ট্রস্‌বার্গেই এক জেলে পাঠানো হয়, এবং সে সেখানেই মারা যায়।

১৬৬৬: এই সালের সংখ্যায় ৬৬৬ আছে, আর ঠিক আগের বছরই লন্ডনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শহর পুড়ে বলতে গেলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়… তাই স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ একটু বেশীই প্রার্থনা করেছে এই বছরটি সুস্থভাবে পার করার জন্য!

১৬৬৯: এবার রাশিয়া’র বেশ কিছু ধর্মযাজক ঘোষণা দিলেন পৃথিবী ধ্বংসের! দাজ্জালের হাত থেকে বাঁচতে ১৬৬৯ থেকে ১৬৯০ সালের মধ্যে কয়েক হাজার ধর্মভীরু মানুষ আগুনে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে এর জন্য!

১৩ অক্টোবর, ১৭৩৬: উইলিয়াম হুইট্‌সন নামের এক বৃটিশ চিন্তাবিদ ও গণিতবিদ হিসাব করে জানালেন ঐ দিন নূহ নবীর আমলের মত আবারো একটা ‘মহাপ্লাবন’ হবে। মনে হয় সামান্য বৃষ্টিও হয়নি!!

১৭৯৪: মেথোডিস্ট চার্চের প্রতিষ্ঠাতা চার্ল্‌স উইস্‌লি ঘোষণা দিলেন এই বছর শেষ বছর!

১৮০৬: ইংল্যান্ডের লীড্‌স’এর একটা মুরগীর ডিমে নাকি লেখা ছিল, “যীশু আসছে!” ব্যাস! আর কি লাগে? অবশ্য শেষ পর্যন্ত বোঝা গেল ডিমের তথ্যে কোন ভুল ছিল!  😛

১৮৩২: যোশেফ স্মিথ – ধর্মের ইতিহাসে একটা বড় নাম। এই মার্কিন ধর্মযাজক বিখ্যাত Church Of Christ প্রতিষ্ঠা করেন, যার উপসাকরা পরবর্তীতে ‘সংস্কারক আন্দোলন’ (Restorationist Movement) নামে একটা ধর্মীয় আন্দোলন শুরু করে; পরবর্তীতে এই আন্দোলনই নতুন ‘মরমন’ ধর্ম (Mormonism) নামে জন্ম নেয়। যোশেফ স্মিথের লেখা বেশ কিছু বাণী ও খ্রীষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল থেকে নেওয়া নির্বাচিত অংশ মিলিয়ে একটা সংকলন হয় তাদের নিজস্ব নতুন ধর্মগ্রন্থ। আর এর সবই ঘটে এই ১৮০০ এর শতাব্দীতেই! তো পৃথিবীর সবচেয়ে নতুন এই ধর্মের ধর্মগ্রন্থটিতেও স্মিথ শেষ দিনের ইঙ্গীত দেন, কোন সাল উল্লেখ না করেই। বরং তার বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ শিষ্যই বাণীগুলো হিসাব করে দেখান যে ১৮৩২ সালের কথাই স্মিথ বলতে চেয়েছিলেন। উল্লেখ্য ১৮৩২ সালে তখনও স্মিথ জীবিত, এবং অবশ্যই পৃথিবীর কছুই হয়নি ঐ বছর। পরে আবার নতুন এক দল বিশেষজ্ঞ বলে ১৮৯০ এর কথা – এবং এটাও ভুল ছিল!

১৮৫০: বিখ্যাত Seven Day Adventist চার্চের প্রতিষ্ঠাতা এলেন হোয়াইট এই বছরের ২৭ জুনের এক লেখায় কয়েক মাসের মধ্যে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা দেখালেন।

১৮৮১: মাদার শিপ্‌টন নামক ষোড়শ শতাব্দীর এক তান্ত্রিক এই বছরকে শেষ বছর হিসেবে গণণা করেছিলেন। গণণায় নিশ্চয়ই মারাত্নক ভুল ছিল!

১৯১০: ১৮৮১ সালে একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী অনেক গবেষণা করে দেখাল যে আমাদের সৌরজগতের আপন ‘হ্যালির ধুমকেতু’র লেজে সায়ানোজেন (cyanogen) নামক বিষাক্ত গ্যাস আছে, যা পৃথিবীর একটু কাছে আসলেই এখানকার জীবজগত ধ্বংস করে দিবে! ১৯১০ সাল ছিল এই ধুমকেতু’র সবচেয়ে কাছে আসার বছর; এবং কক্ষপথ ঘুড়ে এসেছিলও – কিন্তু পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব একে ধ্বংস করার মত যথেষ্ট কাছে ছিল না। বাঁচা গেল!!

১৯১৪: ওয়াচ্‌-টাওয়ার সোসাইটি নামে একটা বহুল সমালোচিত চার্চ, যার শিষ্যরা নিজেদের ‘যেহোভার সাক্ষী’ (Jehova’s Witnesses) হিসেবে দাবী করে, তারা ঘোষণা দিল এ বছর পৃথিবী ধ্বংস হবে। ব্যর্থ ঘোষণার পর অবশ্য এই চার্চ দমে যায়নি, বরং আরো দম্ভের সাথে পরবর্তীতে ১৯১৫, ১৯১৮, ১৯২০, ১৯২৫, ১৯৪১, ১৯৭৫ এবং ১৯৯৪ সালেও একইরকম ভাবে পৃথিবী ধ্বংসের কথা বলে আসছে – প্রতিবারই বাজেভাবে ব্যর্থ হয়ে!! উল্লেখ্য, ইহুদীধর্মে ঈশ্বরকে ‘যেহোভা’ বলা হয়, যদিও মূলধারার ইহুদীধর্মের সাথে এই চার্চের কোন সম্পর্ক নেই।

১৭ ডিসেম্বর, ১৯১৮: আবহাওয়াবিদ আলবার্ট পোর্তা পুর্বাভাস দিলেন যে ৬টি গ্রহের একই রেখায় আসায় ঐদিন এক ভয়াবহ ম্যাগ্‌নেটিক ঝড়ের সৃষ্টি হবে যা পৃথিবী ধংসের জন্য যথেষ্ট! অবশ্যই, আবহাওয়াবিদদের ভুল হওয়া নতুন কিছু নয়!!

১৯৮০ এর দশক: এ সময় বেশকিছু ব্যাক্তিত্বই পৃথিবী ধ্বংসের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নামকরা ধর্মীয় টিভি উপস্থাপক প্যাট রবার্টসন, ও বহুল সমালোচিত “মে ২১” ঘোষণাকারী হ্যারল্ড ক্যাম্পিং।

১৯৯৭: আবারো ধুমকেতু! এবার হল হ্যালে-বপ্‌ ধুমকেতু নিয়ে, এবং এর কাহিনী পুরাই ভিন্ন, আর উদ্ভট! সব জায়গায় গুজব ছড়াতে লাগলো যে এবার এই ধুমকেতুর লেজ ধরে একটা ভিনগ্রহী স্পেস্‌শিপ আসছে, অবশ্যই পৃথিবী ধ্বংস করতে! এবং, নিশ্চিতভাবেই NASA এটা জানে, কিন্তু সাধারন মানুষের কাছ থেকে ওরা এই ঘটনা লুকিয়ে রাখছে… একটা রেডিও অনুষ্ঠান থেকে প্রথম এমন সব গুজব ছড়ালেও খুব দ্রুত অনেক মানুষ এতে সত্যতা দেখতে শুরু করে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ডিয়েগোতে একটা দলও তৈরী হয়ে যায় মানুষকে এ সম্পর্কে সচেতন করতে! এর সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক অংশ হল, ঐ বছর ২৬ মার্চ এই দলের ৩৯ সদস্য একসাথে আত্মহত্যা করে, তাদের কথিত এলিয়েনদের হাত থেকে বাঁচতে!

আগস্ট ১৯৯৯: এবার আসলো বিখ্যাত নস্ত্রাদামাস এর বছর – তাঁর অনেক বিখ্যাত ঘটনার অনুমান মোটামুটি কমবেশী সঠিক হলেও (বা সঠিক মনে হলেও আর কি) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অনুমানটি ভুল হিসেবে প্রমাণিত হল – ‘৯৯ এর আগস্টে পৃথিবীর কিছুই হল না!

জানুয়ারী ১, ২০০০: সহস্র ঘুড়িয়ে আবারো তিনটি শূণ্যের সাল – আবারো মানুষে আতঙ্ক! অবশ্য এবার আর কোন চার্চ কিছু ঘোষণা দেয়নি – মানুষের নিজের আতঙ্কই যথেষ্ট! তার উপর নতুন নতুন ইন্টারনেটের যুগ, সাথে কম্পিউটার প্রযুক্তিতে নতুন মিলেনিয়াম এর এই সংখ্যাটি কিভাবে প্রভাব ফেলবে – সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে নাকি – স্যাটেলাইটের কোন ক্ষতি হবে নাকি ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারো আতঙ্কের জবাব একদিনেই মিলল – নববর্ষের দিন যখন কিছুই হল না – সবই স্বাভাবিক রইল – সব আতঙ্কিত মানুষের আতঙ্ক এবার আনন্দ ফুর্তিতে রূপ নিল! বিচিত্র এই দুনিয়া…!

মে ৫, ২০০০: মানুষের হারিয়ে যাওয়া আতঙ্ক আবার ফিরিয়ে আনতে বেশী সময় নেয়নি রিচার্ড নোন নামের এক লেখক। তার এক বইয়ে তিনি দাবি করলেন যে ৫/৫/২০০০ – এই তারিখে আবারো বেশ কিছু গ্রহ এবার সরাসরি স্বর্গের দিকে একই রেখায় দাঁড়াবে, আবার ঐদিকে পৃথিবীর উত্তরপ্রান্তে আর্কটিক সাগরের বরফ ততদিনে ৩ মাইলের চেয়েও বেশী গভীর হয়ে যাবে – যার ফল: পুরো মানবজাতি, আক্ষরিক অর্থে জমে যাবে! … তার এই ব্যাখ্যার কিছুই জমেনি ঐদিন!

৬ জুন, ২০০৬: ৬/৬/০৬ – এই হচ্ছে ঐদিনের তারিখ। আশা করি আর বলা লাগবে না কেন মানুষ ঐ দিনটায় একটু সন্ত্রস্ত ছিল!

হেমন্ত, ২০০৮: রবার্ট উইন্‌ল্যান্ড নামক এক ধর্মযাজক বেশ জোড়েসোড়েই বলেছিলেন যে সবার মুখে মুখে আওড়ানো ২০১২ এর আগেই পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে; এবং একটা ক্ষেত্রে এসে তিনি ২০০৮ এর আগস্ট – সেপ্টেম্বরের কথাই আনছিলেন… অবশ্য তিনি বেশ চালাকি করেই কোন নির্দিষ্ট তারিখ বা সাল এড়িয়ে গেছেন, তাই ২০১২ এর আগ পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না!

সেপ্টেম্বর, ২০০৯: সুইজ্যারল্যান্ডের জেনেভায় “লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার” (Large Hadron Collider) আনুষ্ঠানিক ভাবে চালুর মাস। ‘বিগ ব্যাং’ বা মহাবিস্ফোরোণের সূত্র পরীক্ষা ও প্রমাণের জন্য মূলত এই আজদাহা যন্ত্র চালু করাকে অনেকেই ভাল চোখে দেখেনি – ধর্মভীরুদের চোখে এটা ছিল ঈশ্বর এর শক্তি নিয়ে খেলা করার শামিল, অন্যদিকে সাধারন মানুষ, এমনকি নাস্তিকরাও ভয়ে ছিল যে এ জিনিস চালু করলে হয়তোবা ‘ব্লাক হোল’ জাতীয় কিছু তৈরী হতে পারে – এই পৃথিবীতেই। এখন নিশ্চয়ই বিজ্ঞানীরা এসব কিছু হিসাবেই রেখেছেন, নইলে আজ ২ বছর হল, কিন্তু এখনও কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি ওখানে।

২১ মে, ২০১১: এটা হচ্ছে সবচেয়ে তরতাজা!! হ্যারল্ড ক্যাম্পিং, যে ধর্মযাজক সেই ১৯৮৩ তেও একদম হুবহু একই তারিখ দিয়ে ব্যার্থ হয়েছিলেন, এবং বলেছিলেন যে তার হিসেবে ‘সামান্য’ একটা ভুল ছিল, সেই ক্যাম্পিং-ই, ঐ সময়ই তার ‘ভুল’ শুধরালেন, বললেন সালটা হবে ২০১১, ১৯৮৩ নয়! তার মতে ২১ মে যীশু খ্রীষ্ট তার চার্চের বিশ্বাসীদের পৃথিবী থেকে মুক্ত করিয়ে স্বর্গের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাবে, আর ২১ অক্টোবর পৃথিবী, সব পাপীদের নিয়ে ধ্বংস হবে! এখন এই ২১ মে’র পর নতুন এক সাক্ষাতকারে তিনি দাবি করেন ঈসা নবী এসেছেন, কিন্ত আক্ষরিক অর্থে নয়, এসেছেন চুপিসারে, অদৃশ্য হয়ে – আর ২১ অক্টোবরের কথায় তিনি এখনও অবিচল! … ভয়াবহ!!

_______

আপাতত আর যা বাকি আছে এই মুহুর্তে, গরম গরম:

২১ অক্টোবর, ২০১১: আগে যা লিখলাম আর কি – হ্যারল্ড ক্যাম্পিং এর মতে ঐ দিন সকল পাপীদের (অর্থাৎ যারা তার চার্চে নাই) নিয়ে পৃথিবী ধ্বংস হবে…

২১ ডিসেম্বর, ২০১২: এখন পর্যন্ত এই প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে বিখ্যাত ও সমালোচিত ‘অনুমান’! রহস্যে মোড়ানো এক বিশেষ মায়ান ক্যালেন্ডার নিয়েই যত্তসব হিসাব নিকাশ; লাতিন আমেরিকার প্রাচীন মায়ান সভ্যতায় দিন গণণার ব্যাবস্থা ছিল, যার সাথে বর্তমান ক্যালেন্ডারের গণণার কোন মিলই নেই! তো অনেক বছর গবেষণার পর নৃতত্ববিদরা আমাদের বর্তমান ক্যালেন্ডারের সাথে ঐ ক্যালেন্ডার সমান্তরালে হিসাব করার বেশ কিছু সুত্র বের করলেও একটা সুত্র যেন খাপে খাপে মিলে যায় (বা অন্তত মনে হয় তাই!)। ঐ সুত্র অনুযায়ী, এই প্রাচীন মায়ান লোকেরা কোন এক উপায়ে ভবিষ্যত অনুমান করতে পারত, আর তাদের ক্যালেন্ডারে ঐসব বিশেষ ঘটনার দিনগুলো একটা চক্রে এসে মিলে যায়!! (অর্থাৎ, তাই মনে হয়!) সবচেয়ে আজব অংশ হচ্ছে, এসব দিনগুলোর প্রায় সবগুলোতেই কোন না কোন বিশেষ ঘটনা ঘটেছে – টাইটানিক ডোবার ঘটনা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, হিরোশিমা’র ঘটনা… আবার এমনও হতে পারে, এটা খালি মনে হচ্ছে এমন – বাস্তবে হয়তো এর অর্থ পুরাই আলাদা! যাই হোক, যেহেতু চক্রাকার, এই ক্যালেন্ডার এক জায়গায় শেষ হয়, এবং ঐ সুত্র অনুযায়ী হিসাব করলে সেই তারিখ হচ্ছে ২০১২ সয়ালের ২১ ডিসেম্বর। — অর্থাৎ পৃথিবীর শেষ দিন!!!
এই কাহিনী এত স্পটলাইট পাওয়ার অবশ্য কারণও আছে – তা হল, এক, এখন মিডিয়া একটু কিছু নিয়েই অনেক হইচই করতে পছন্দ করে – আর এটাতো পৃথিবী ধ্বংসের কথা – ব্যাপারই আলাদা!! আর দুই, ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া হলিউড ব্লকবাস্টার মুভি ‘২০১২’ এর জন্য; আমি বলব অনেকে এটা সম্পর্কে জানতও না এই মুভি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত! এখন মুভি তো মুভিই – নেহাত ফিক্‌শন। কিন্তু যেভাবে এর পরিচালক কাহিনীর পরিবর্তন দেখিয়েছেন মুভিটাতে, তার সবই বাস্তব, ও… বৈজ্ঞানিক (!)… সৌররশ্নির বিকীরণের পরিমান আসলেই বেড়েছে, যেমন বেড়েছে ভুমিকম্পের পরিমান; এমনকি জেগে উঠতে শুরু করেছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিগুলোও!! এভাবে চিন্তা করতে থাকলে তো অবশ্য ২০১২ কে আসলেই পৃথিবী ধ্বংসের সবচেয়ে Best ক্যান্ডিডেট বলা যায় এ পর্যন্ত!!

২০১৪: পোপ নবম লিও ১৫১৪ সালে বলেছিলেন তখন থেকে ঠিক ৫০০ বছর পর পৃথিবী ধ্বংস হবে।

২০২৮: এলাই এশোহ্‌ নামক এক মার্কিন এর আগেও ১৯৯৮ সালে ‘৬৬৬’ সংখ্যাটির একটা গাণিতিক বিশ্লেষণ দেখিয়ে বলেছিলেন ঐ বছর পৃথিবী ধ্বংস হবে… কিন্তু সেই অনুমান ব্যার্থ হওয়ায় তিনি আবার ২০২৮ সালের কথা বলেন!

২৬ অক্টোবর, ২০২৮: প্রাথমিক গবেষণায় ধারণা করা হচ্ছিল যে ১৯৯৭ এক্স.এফ.আই নামের এক গ্রহাণু ঐ দিন পৃথিবীতে বিধ্বংসী আঘাত হানবে। অবশ্য পরবর্তীতে আরো হিসাব নিকাশ করে অনেক গবেষকই নিশ্চিত করেছেন যে ঐ গ্রহাণু পৃথিবী থেকে অন্তত ৫ লাখ মাইল দূরে থাকবে, যা কিনা একটা নিরাপদ দূরত্ব… যেন তাই হয়!!

২২৮০: ইসলামের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন এর ৬৯ নং সূরার ১৩ থেকে ১৫ নম্বর আয়াত বিশ্লেষন করে মিসরীয় গণিতবিদ ডক্টর রাশাদ খলীফা ধারণা করেন, যে ২২৮০ সাল শেষ বিচারের বছর হতে পারে। তার মতে কোরআনে উল্লিখিত কেয়ামতের আগে দু’টি বিশেষ ঘটনা অলরেডী ঘটে গেছে: এক, চাঁদের ‘দ্বিখন্ডন’, যার সাহিত্যিক অর্থ মানুষের ১৯৬৯ সালে প্রথম চাঁদে পদার্পন; ও দুই, এমন এক ‘জন্তু’র জন্ম যা কোরআনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ‘গোপন সূত্র’ বের করে ফেলতে পারবে – ডক্টর রাশাদের মতে সাহিত্যিক অর্থে জন্তুটি হচ্ছে আধুনিক কম্পিউটার, আর সেই ‘গোপন সূত্র’টি হচ্ছে কোরআনের বহুল আলোচিত ১৯ সংখ্যার জটিল গাণিতিক অন্ত্যমিল (যা কম্পিউটার সফ্‌টওয়্যার এর মাধ্যমে আবিষ্কার করেন ডক্টর রাশাদ নিজেই!)। এখন ১৯ সংখ্যার এই গাণিতিক অন্ত্যমিল অনেক সঠিক ও এক কথায় “মানুষের পক্ষে অসম্ভব” হলেও, ২২৮০ সালের এই অনুমান কতটুকু সঠিক ও সম্ভব সেটাই দেখার বিষয়!

৩৭৯৭: নস্ত্রাদামাসের আরো একটা গণণা… অন্যটা যেহেতু ব্যার্থ, এটা সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না!

১০,০০,০০০ খ্রীষ্টাব্দ: এক হিসেবে সবচেয়ে বেশী বৈজ্ঞানিক – সুর্যের আলোর ক্ষতিকর রশ্নিগুলোর মধ্যে এই মুহুর্তে সবচেয়ে কম পরিমানে থাকা, কিন্তু সবচেয়ে মারাত্নক গামা রশ্নি প্রতিদিনই বাড়ছে, তবে এত সামান্য হারে যে মানুষের বা জীবজগতের ক্ষতি করতে পর্যাপ্ত পরিমানে পৌঁছাতে এর লেগে যাবে অন্তত ১০ লাখ বছর!! তো এইটা মোটামুটি নিশ্চিত অনুমান বলা যায়! 😀

যদি কিনা এর আগের গুলোর মধ্যে কোন একজনের গণণা ঠিক হয়ে যায়!!!

কিন্তু না, আমি এটা বিশ্বাস করতে রাজী নই… পৃথিবী এরকম বাজে সময় দিয়ে এই প্রথম যাচ্ছে না। যদি নূহ’এর মহাপ্লাবনের কাহিনী সত্য হয়, তবে ওরা ঐ যুগে বাঁচলে আমরা কেন পারব না? আর যদি নাই বা পারি, তাহলে আমাদের এখনই কি কিছু করা উচিৎ নয় যাতে শেষ সময়ে আমরা সবাই বলতে পারি যে এই পৃথিবীতে মানুষ থাকত, সেরা সৃষ্টি, সেরা জীব, বিবর্তনের সবচেয়ে সেরা উদাহরণ??

আসুন একে অন্যকে ঘৃণা করা বন্ধ করি, নইলে ২০১২ পর্যন্ত যাওয়া লাগবে না, কারণ আমরা আমাদের এই আত্মাকে মেরে ফেলতে শুরু করেছি অনেক আগেই, অনেক অনেক আগেই… ২০১২ হোক, ২০০১২২০০২১ হোক… আমাদের পৃথিবী আমরা অনেক আগেই ধ্বংস করে ফেলছি – এখনও সুযোগ আছে নিজেদের জন্য, নইলে এই ‘জড়’ পৃথিবী টিকে থেকে লাভই বা কি??
_______________________________

LiveScience, ReligiousTolerance.org, Yahoo! News ও National Geographic Society’র প্রতি কৃতজ্ঞ।

 

৩০ টি মন্তব্য : “আজব দুনিয়ার কিছু ভুয়া “গজব” এর কাহিনী!”

  1. ২২৮০ সালের এই অনুমান কতটুকু সঠিক ও সম্ভব সেটাই দেখার বিষয়!

    তুই দেখবি কেমনে??? :-/
    অনেক অজানা জিনিস জানা হল। কলেজে থাকতে একটা তারিখ পাইছিলাম মনে করতে পারছি না, খুব সম্ভবত ২৩ জুন, ১৯৯৮ দুপুর ২:০০টায় সব গ্রহ একরেখায় চলে আসার কথা ছিল.....সেদিন খুবই ভয় পাইছিলাম। :goragori: কিন্তু মরি নাই।

    জবাব দিন
  2. আরেফিন

    Qur'an:

    7:187
    They ask you about the hour, when will be its taking place? Say: The knowledge of it is only with my Lord; none but He shall manifest it at its time; it will be momentous in the heavens and the earth; it will not come on you but of a sudden. They ask you as if you were solicitous about it. Say: Its knowledge is only with Allah, but most people do not know.

    33:63
    Men ask you about the hour; say: The knowledge of it is only with Allah, and what will make you comprehend that the : hour may be nigh.

    When Jibreel asked prophet Muhmmad (sas) about the hour in popular hadith Jibreel:
    He (Jibreel) said, "Inform me about the Hour." He (the Messenger of Allah) said, "About that the one questioned knows no more than the questioner."

    Another amazing hadith pertaining to last hour and positive act of muslim: “If you have a sapling(a young tree) , if you have the time, be certain to plant it, even if Doomsday starts to break forth.” (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • রাফী (০৪-০৮)

      আমিও তাই ধারণা করি (যে পৃথিবী ধ্বংসে schedule বানানো কোন ভাবেই সম্ভব না), তবে ঐ ডাক্তার কিন্তু বলেননি যে "২২৮০ তে এমন ঘটবেই ঘটবে"!! তাঁর সূত্র নিয়ে আমি এখনো ঐভাবে ঘাটাইনি, যে কোন লজিকে সে ২২৮০ কে 'সাম্ভাব্য সাল' হিসেবে নির্ধারণ করল, তবে তাঁর কোরআনের ভেতর ১৯ সংখ্যাটির "মানুষের-পক্ষে-বানানো-অসম্ভব" অন্ত্যমিলের একটা ব্রীফ আর্টিকেল পড়েছি - যা আসলেই প্রশংসার যোগ্য!!

      যদিও গণিতের এই জটিলতার সাথে বিশ্বাসের কোন তুলনা হয় না, কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কার কোরআনের মাহাত্ন্য সাধারন মানুষের কাছে সামান্য হলেও বাড়িয়েছে... এবং তাঁর উপর সেই ধারণা থেকেই বলতে পারি যে ২২৮০'র কথাটি তিনি সাধারন একটা অঙ্কের মিল হিসেবেই দেখিয়েছেন, নিশ্চয়ই ভবিষ্যত্বাণী হিসেবে নয়!

      আর অন্যান্যগুলা? ভাই প্রথমেই লিখেছিলাম এগুলা সবই কোন নির্দিষ্ট ব্যাক্তি বা সংগঠনের অনুমানের সমষ্টি - বাইবেলেও কোথাও দিন তারিখ অনুমানের নিশ্চয়তা দেয়নি, এটা খালি এসব মানুষের ... বলব "নেশা" !!
      :-B

      জবাব দিন
  3. তানভীর (০২-০৮)

    এগুলো উলটা পাল্টা গুজব ছাড়া আর কিছুই না । কিছুদিন পর পর ই একেকটা গুজব ওঠে, আর দুনিয়া তোলপাড় হয় 😛
    বর্তমানে ২০১২ নিয়ে মুভি , গান সবকিছু হয়ে গেছে। দেখা যাক আর কি হয়!
    রাশাদ খলীফা তার গবেষণায় তার সুবিধা মতো কাজ করেছে। তার ওইটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই না । এটা নিয়ে সিসিবি তে একটা ভালো লেখাও আছে।

    জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর আমার ২৮তম জন্মদিন-খবরদার কৈতাছি ওইদিন আমার বাড্ডে পার্টিতে :just: ফ্রেন্ডদের নিয়া মৌজ-মাস্তি করতে না পারলে ব্লগারের খবরাছে 😡

    জবাব দিন
    • রাফী (০৪-০৮)

      এই দেশে ২০১২ নিয়া দুই রকমের পাবলিক আছে যারা লাফাইতেসে - এক, যারা এইটা বিশ্বাস করে, তাই ইদানীং চার্চ-মসজিদ-মন্দিরে যাওয়া বাড়ায়া দিসে, আর ঐ রাতে দোয়া কালাম পইড়াই পার করার প্ল্যান করতেসে...
      দুই, যারা বিশ্বাস করে, আর তাই এখন খালি ফুর্তি আর ফুর্তিই চিনে, আর কিছু না! আর ঐ রাত্রের জন্যও দামি পার্টি থ্রো কইরা ফেলসে, এখনই!!

      আর একটা থার্ড গ্রুপ আছে, যারা লাফাইতেসে না, কিন্তু মনে মনে ঠিকই ঠিক কইরা রাখসে ঐ রাত্রে চরম ফাটাইয়া কিছু করার জন্য - যাতে প্রথম গ্রুপ লজ্জা পায় তাদের বোকামীর জন্য...

      আমি ৩ নম্বর গ্রুপে আছি, আপনিও চাইলে ২ অথবা ৩ নম্বরটায় জয়েন করতে পারেন (৩ নম্বরটাতেই মেম্বার বেশী!)

      রেবেকা ব্ল্যাক এর মত বলেন "Partying, partying... Yeah!"
      নাইলে আরো চরম জে শন্‌ এর মত - "Party like it's 2012!!"

      আমি তো কমু আপনার চেয়ে লাকি আর কেউ নাই!!!

      :awesome:
      (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  5. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তুমি এই বছরের ২১শে মের কথা উল্লেখ করোনি। আমার ছেলে আর তার পাড়ার বন্ধুরা মিলে ব্যাকপ্যাকে সব খাবার দাবার নিয়ে গ্যারেজে বসে ছিল।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
      • রাফী (০৪-০৮)

        উল্লেখ করেছি আপু,

        ২১ মে, ২০১১: এটা হচ্ছে সবচেয়ে তরতাজা!! হ্যারল্ড ক্যাম্পিং, যে ধর্মযাজক সেই ১৯৮৩ তেও একদম হুবহু একই তারিখ দিয়ে ব্যার্থ হয়েছিলেন, এবং বলেছিলেন যে তার হিসেবে ‘সামান্য’ একটা ভুল ছিল, সেই ক্যাম্পিং-ই, ঐ সময়ই তার ‘ভুল’ শুধরালেন, বললেন সালটা হবে ২০১১, ১৯৮৩ নয়! তার মতে ২১ মে যীশু খ্রীষ্ট তার চার্চের বিশ্বাসীদের পৃথিবী থেকে মুক্ত করিয়ে স্বর্গের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাবে, আর ২১ অক্টোবর পৃথিবী, সব পাপীদের নিয়ে ধ্বংস হবে! এখন এই ২১ মে’র পর নতুন এক সাক্ষাতকারে তিনি দাবি করেন ঈসা নবী এসেছেন, কিন্ত আক্ষরিক অর্থে নয়, এসেছেন চুপিসারে, অদৃশ্য হয়ে – আর ২১ অক্টোবরের কথায় তিনি এখনও অবিচল! … ভয়াবহ!!

        :salute: (সম্পাদিত)

        জবাব দিন
  6. আসিফ খান (১৯৯৪-২০০০)

    ভাই,অত্যন্ত সৌন্দর্য্য লেখা হইছে। পৃথিবী যতদিন আছে বেকুব ততদিন আছে। দুঃখিত শুধু নাই মহাসমারোহে আছে। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে এটা জেনে যে প্লেগের কারণ ছিল ডাইনী আখ্যা দিয়ে প্রচুর বিড়াল মেরে ফেলায়। ::salute::
    দুঃখ হইল এখনও মানুষ এর কাছাকাছি কুসংস্কারে বিশ্বাস করে।

    জবাব দিন
  7. মো: রাশিদুল হাসান

    ডক্টর রাশাদের কোরআনের বহুল আলোচিত ১৯ সংখ্যার জটিল গাণিতিক। ২২৮০ সালের এই অনুমান কতটুকু সঠিক ও সম্ভব সেটাই দেখার বিষয়? তার আগে ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর ধারনা মায়ানদের কাছ থেকে এসেছে আর আমার মতে এরাই হলো নুহ (আঃ) -এর সেই জাতি, যারা খুব ছোট অংকের মাধ্যমে তারা গ্রহের আসা যাওয়ার গণনা করতে পারত, ওরা এতটাই উন্নত ছিল যে ওরা জানত পৃথিবীর কক্ষপথ অনেকটা গোলাকার, ওদের মধ্যে যে কেউ ভবিষ্যত গণনা করতে পারত, স্বল্প সংখ্যক যারা বেচেছিল তারাই তাদের ভবিষ্যত গণনা করে বলেছিল এই নিবিরু আবার ২০১২ তে আসবে যার ফলে ভয়াবহ দুরঅবস্থার দেখা দিবে। এই আদিম মায়ানরাই হল কুরআন এ বর্নিত নুহ নবীর উম্মত যাদেরকে আল্লাহ মহাপ্লাবন দ্বারা ধ্বংস করেছিলেন।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।