কলেজে প্রথম যেদিন ঢুকলাম সেদিন খুব বেশী কারও সাথে পরিচয় হয় নি । অপিরিচিত একটা জায়গায় গিয়ে সব কিছু কেমন জেন আজব আজব লাগছিল । আর তাছাড়া এমনিতি মনটাও খারাপ থাকার কারনে ( যেহেতু বাবা, মা কে ছাড়া প্রথমবারের মত থাকতে যাচ্ছি ) কোনদিকে খুব একটা মন ছিল না। শুধু দুয়েকজন যাদের কোচিং থেকে চিনতাম তাদের সাথেই কথা বলছিলাম। আর রুম লিডার মাঝে মাঝে এটা সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। রুমে জিনিসপত্র রেখে আমরা যখন ডাইনিং হলের দিকে পা বাড়াচ্ছি তখন দুই তলা থেকে আরও একটি পরিবার আমাদের সাথে এসে যুক্ত হল। ছেলেটিকে দেখে আমি বেশ চমকে গেলাম…এই মোটাসোটা নাদুস নুদুস মার্কা চেহারার চাকমা একটা ছেলে । আমরা গল্প করতে করতে রওনা হলাম । এভাবেই দর্পণের সাথে আমার পরিচয় । আজ হঠাৎ করে দর্পণের কথা খুব মনে পরছিল । আর ওর কথা মনে পরলে নিজে নিজেই হেসে লুটোপূটি খাবে না এমন ক্যাডেটদের সংখ্যা আমাদের ব্যাচে কম । ্যাই হোক , সেই কাহিনি গুলোর কয়েকটা আজ আপনাদের শুনাই তাহলে…
১. দর্পনের নাম আমাদের কলেজে জয়েন করার আগেই ভাইয়ারা যেহেতু পেয়ে গিয়েছিলেন তাই অনেকেই অপেক্ষা করে ছিল ওকে দেখার জন্য । বিশেষ করে শের-ই-বাংলা হাউসের এথলেটিক্সের রাজারা , তাদের মনে সুপ্ত একটা আশংকা ছিল যে, চাকমারা তো পাহারের লোক, নিশ্চয়ই ছেলেটা তাদের ভাত মারবে, আর এথলেটিক্সের মেডেল গলায় ঝুলানো হবে না । যাই হোক জয়েনিং এর দিন দর্পনের রুমের সামনে ভীড় আর তাদের হাসির ঘটনাটা ওই দিন না বুঝলেও পরে যখন শুনলাম তখন ভাইয়াদের খোচা মারার লোভ খুব অল্প কয়েকজনই সংবরন করতে পেরেছিল ।
২. প্রথম যে দিন বাংলার আখতার স্যার ক্লাস নিতে এলেন তিনি ওকে দেখে ভাবলেন , এই ছেলে বোধহয় কলেজে আসার জন্যই পাহার থেকে নেমে এসেছে । তাই প্রথমেই তিনি ওকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই ছেলে তুমি বাংলা লিখতে পারো?”
দর্পন বলল পারি । তারপর তিনি তাকে বললেন , “আসো এইদিকে, বোর্ডে বড় করে লিখো, বাংলাদেশ”
আমরা অনেকেই সেদিন ভাবছিলাম, তার মাথায় কি একবারও আসল না যে সে কি তাহলে চাকমা ভাষায় ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে ঢুকেছে !!!
৩. আর একদিন ইতিহাসের মুজিব স্যার ওকে ক্লাশে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই ছেলে তুমি কিভাবে ভর্তি হলে ” দর্পন বলল, “কোতায় স্যার” আসলে ও বলতে চেয়েছিল ‘কোঠায়’ কিন্তু ওর উচ্চারনে একটু সমস্যা থাকায় হয়ে গেল ‘কোতায়’ ।
তো স্যার আবার বললেন “এইখানে” আর ওর একি উত্তর “কোতায়”
স্যার আবার বললেন” আরে বাবা কলেজে” ওর আবারো একি উত্তর। শেষমেশ আরেকজনকেই ইন্টারফেয়ার করে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিতে হল।
৪. বাংলার আবুল হোসেন স্যারের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে দর্পন ছুটিতে গেলে খাগড়াছড়ির পার্বত্য অঞ্চলে নেংটি পরে বন বাদার দাপড়ে বেড়ায়(বেচারা ঢাকায় বড় হয়েছে,ঢাকাতেই বাসা) তাই প্রতিবার ছুটি যাবার সময় তার কথা, ” বাবা, আমার মেয়েটার একটা ময়না পাখির খুব শখ, শুনেছি তোমাদের পাহাড়ী এলাকায় অনেক বর জাতের ময়না পাওয়া যায়, একটা এনে দিও না বাবা ” আর বরাবরে মত দর্পন বলত, ” স্যার আরও অনেক কিছুই তো পাওয়া যায়, শুকর, হরিন, এই গুলা লাগবে না? ”
৫. ক্লাস এইটের কালচারাল শো’তে দর্পনকে স্যার বললেন ” তোমাকে এবার একটা চাকমা ভাষায় গান গেতে হবে ” বেচারা পরল বিপদে, কারন চাকমা হলেও ভাষাটা তার আদৌ রপ্ত ছিল না । কিন্তু কয়েকদিন পুরা তুলকালাম প্র্যাক্টিসের পর ঠিকই গেয়ে ফেলল, “উতন পেগে মেগে মেগে…” সবাই তো বেশ চমক খেল, কি চমৎকার গান, কি সুন্দর ভাষা ।সবার মুখে মুখে তখন বাজা শুরু করল । ঘটনাটা হল সেবার ছুটিতে গিয়ে, আমাদের সোহেল কি মনে করে রেডিও শুঞ্ছে, চট্টগ্রাম স্টেশন, হঠাত করে দেখল গান হচ্ছে ‘ উতন পেগে মেগে মেগে’ ভাল কথা, সেও সাথে সাথে ঠোট মেলাচ্ছে ভাবের সাথে, কিন্তু দুই লাইন পরই আর মেলে না, কি ব্যাপার ! ! নাহ একদমই ঠিক নাই…কলেজে আসার পর জেরার মুখে পরে বেচারা দর্পনকে অবশেষে মানতেই হ্ল, ” পুরোটাই তার নিছক কল্পনা মাত্র !!! ”
৬. আমি জানতাম যে ওরা জমজ দুই ভাই, কিন্তু সেই দিন ফেসবুকে ঢুকে হতবাক হয়ে গেলাম, দেখেন আপনারা,
৭. ওর চুল খাড়া থাকায় ক্লাসে ওর ডেস্কের পিছনে যারা বসতাম সবারই শখ ছিল কাগজের ছোট ছোট বল বানিয়ে ওর মাথা লক্ষ্য করে মারা, কি সুন্দর আটকে যেত বল গুলা । মাশাল্লাহ চুল যে ছিল,
৮. পরিক্ষা আসলেই আমরা মসজিদে দৌড়াদৌড়ি শুরু করতাম, বিভিন্ন হাউসের মসজিদেও আমরা ঢু মারতাম । একদিন শের-ই-বাংলা হাউসের দাওয়াত আসল, আমরা গিয়ে বাকহারা হয়ে গেলাম, “কি সুন্দর টুপি পরে আমাদের চাকু নামাজ পরতেসে…!!!!!! ”
আরো কত যে মজার মজার কাহিনী আছে, সব না হয় আজকে নাই বললাম, আরও তো দিন পরে আছে…তবে আমরা সবাই এখন ওকে খুব মিস করি, যে কোণ গ্যাদারিং এ আমাদের আলোচনার একটা পর্ব থাকে দর্পনকে নিয়ে……চাকু উই মিস ইউ ব্রো……
৪৩ টি মন্তব্য : “চাকু উই মিস ইউ”
মন্তব্য করুন
এইটুকু মাত্র -একটাই ছোট্ট জীবন!
সিল্ভার
আবার ১ম ..............................।। :)) :)) :)) :))
এবার ভাত রান্না করতে যাই
তার আগে......
এইটা আপনার জন্য......
ধন্যবাদ ... কলেজে এরপর আর যাই নাই। এবার দেশে গেলে একবার যাব
ইস..........কলেজের কথা মনে পইড়া যায় :(( :(( ।
Life is Mad.
চাকুরে আমিও মিস কর্তাছি 🙁
দর্পণ থিকা চাকু আস্লো ক্যাম্নে ??
ডাক নাম নাকি ??
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
আরে বস, চাকমা থিকা চাকু...... 😀 😀
একবার একটা কমেন্ট কইরা দেখি কমেন্ট অপশন বন্ধ। বহুত কিছু লেইখা ফালাইছিলাম ঐখানে আবার লেখতে ভাল লাগছে না। যাইহোক চাকুরেও এখানে ডেকে আনো। ওর থেকে তোমার কাহিনী শুনি।
কইসিলাম......আবার কমু নে দেখি......
ওরে নারে ... ওরা জমজ ভাই কয় জন?
হুমম... ওর উতন পেগে মেগে মেগে ভালই হিট করছিল, আর হাউসে তারপর অরে সামনে পাইলেই ওই গান শোনানোর অর্ডার হইত
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
খালি আগে যদি জান্তেন... :)) :))
চাপা কেম্নে মারত... :khekz: :khekz:
আহারে দর্পন...
ছবিটা হালায় ফটোশপে এডিট করছে।
লেখা ভালো হইছে- তয় আরও ভালো করার ... :-B
😀 😀 😀 😀 😀 😀
আইজকা জিমে ঠিক এইরকম মোটাসোটা এক চাকমা ভাইরে দেইখা ভাবলাম নক করি-"এই দর্পন এই"বইলা ডাক দিলাম।কটমটায় আমার দিকে তাকানোর পর বুঝলাম রং নাম্বার 🙁
আর্কতচাপ্মার্বেন? 🙁
বস এই কাম ভুলেও কইরেন না... 😕 😕
অর জমজ ভাই একটা সত্যি আসে...আর সে ঢাকাতেই থাকে 😀 😀 😀
ইমো মিসিং ~x(
আমি দিয়া দেই :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome: :awesome:
চাকুর উজ্জ্বল (স্টেইনলেস!!! :khekz: ) ভবিষ্যত কামনা করছি... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ভাই :pira: :goragori: :goragori:
চাকু'র জন্যে শুভকামনা 😀
আমাদের কলেজে একবার জুনিয়র একটা চাকমারে গ্রাউন্সম্যান গালি দিসিল..
:khekz: :khekz: :khekz:
😮
চাকু এখন কোতায়?
🙂
যেখানেই যে থাকুক - সবাই ভাল থাকুক - অনেক ভাল।
সৈয়দ সাফী
চাকু একন অস্ট্রেলিয়ায়... 😀
পেট খুলে হাসলাম =)) =)) :khekz: :khekz: ।
চাকুর জন্য শুভকামনা।
Life is Mad.
😀 😀 😀 😀 😀 😀
পৌছে দিবো নে...
চাকুর সাথে সপ্তাহ খানেক আগে ফোনে কথা হইছিল। ও মেলবর্ন থাকে। ওরে আমরাও খুব মিস করি। ওতো শেরে বাংলা হাউসের হিট পোলা আছিল। অবশ্য শেরে বাংলা হাউসের সবাই হিট B-) B-) যেমনঃ সায়েদ ভাই, আহসান ভাই, মর্তুজা ভাই, আহসান আকাশ, আমার নাম টা না হয় নাই কইলাম B-)
সাব্বির ভাই, টুশকি জুনিয়রের কী আর বাচ্চা কাচ্চা হবে নাহ :-B :-B ?
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
সোহরাওয়ার্দী হাউসের ক্যাডেটের পোস্টে শের-ই-বাংলার গুনকীর্তন করায় সাব্বির ভাইএর ব্যাঞ্চাই... :gulli2: :gulli2: :gulli2:
সাব্বির ভাই আমার নেবার জন্য আপনাকে :salute:
আর আপনার নামটাও না হয় আমিই নিই... শেরে বাংলার সব পোলাই হিট যেমন সাব্বির ভাই।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
এইটাই কি সন্তু লারমার নাতিটা না??
তাইলে তোদের ব্যাচ কেন সিনিয়রদেরও ওর কথা মনে পরলে নিজে নিজেই হেসে লুটোপূটি খাবে
:khekz: :khekz: :khekz: :khekz:
লেখা ভাল হইছে
শেরেবাংলা হাউস :salute:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
😮 😮 😮 😮 😮 😮
এই গুঢ় রহস্য আপনে জানলেন কেম্নে ???????
শুনছি সন্তু লারমা এফসিসির ক্যাডেট ছিল, ওনারেও এই ব্লগে দেখতে চাই...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
খুব মজা পেলাম চাকুর কাহিনী পড়ে আর ছবি দেখে।
আমাদের প্রণব চাকমার কথা মনে পইড়া গেল।
মনে পরলে হইবে 😀 ......লিখা ফালান... 😀 😀
উতন পেগে মেগে মেগে...
আসলটা, দর্পনেরটা না
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷