-দেখ দেখ ঐ যে আসছে…
-কেমন ড্যাব ড্যাব করে তোর দিকে তাকায় দেখেছিস শাম্মী ?
-ধুর ! কি যে বলিস না, ল্যাংড়া’র আবার শখ…
-হি হি হি…
-চল চল ক্লাসের ঘন্টা পড়েছে,
-চল ।
-অন্তু, জানালার বাইরে তাকিয়ে আছ কেন ?
জামাল স্যারের হুঙ্কারে সম্বিত ফিরে পায় অন্তু ।
-সামনে আসো…আবার হুঙ্কার ।
অনেকেই ফিক ফিক করে হাসছে, আড়চোখে দেখতে পায় অন্তু শাম্মীও হাসছে ।
আবারও শাম্মীর সামনে অপদস্থ হতে হবে, লজ্জায় অন্তুর থুতনী প্রায় বুকের কাছে চলে আসে । স্যারের ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে নিচের ঠোট কামড়ে দাড়িয়ে থাকে সে । পরবর্তী দুই মিনিট কোন হুঙ্কারই তার কানে যায় না । শুধু টের পায় একটা উষ্ণ জলের স্রোত তার গাল বেয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে । না জানি শাম্মী কি ভাবছে !
টিফিনের ছুটির ঘন্টা পড়তেই হুড়মুর করে সব ছেলেরা মাঠের দিকে দৌড়ে চলে গেল । আর সবার পেছনের বেঞ্চে বসে জানালা দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অন্তু । একটু দূরে শাম্মীকেও দেখতে পাচ্ছিল সে, তার ক্লাসের অন্যান্য মেয়েদের সাথে সিড়ির পাশে পা দুলিয়ে দুলিয়ে গল্প করছে । একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বের হয়ে আসে অন্তুর বুক দিয়ে । প্রতিদিন স্কুলে এটা একটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । কোন না কোন ভাবে তাকে মেয়েদের সামনে হেনস্থ হতেই হয়, আর যখনই হয় তার আশে পাশে কোথাও না কোথাও শাম্মী থাকবেই ।
নিজের ডান পায়ের দিকে তাকিয়ে আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে তার, কেমন করে হাটুর কাছ থেকে শুকিয়ে গিয়েছে । ক্রাচ ছাড়া চলার কোন উপায় নেই, তাই চেষ্টা করে প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে মেয়েদের চোখ এড়িয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়তে । কিন্তু দূর্ভাগ্য কোনভাবেই তার পিছু ছাড়ে না । প্রতিদিনই তাকে মেয়েদের সামনে পরতে হয় আর তার হাটার ধরণ দেখে তারা হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর গড়িয়ে পরে । খুব কষ্ট হয় অন্তুর । বিশেষ করে যখন দেখে যে শাম্মীও তাদের মধ্যে থাকে । কিন্তু বিধাতা তো তাকে এভাবেই ভাগ্য লিখে দিয়েছেন এটা তারা কেন বোঝে না ? থাক , হয়তো এভাবেই তার নিয়তি লিখে রেখেছেন বিধাতা ।
ঘন্টার শব্দে আবার ক্লাসটা জমজমাট হয়ে যায় । ধুলো ঝারতে ঝারতে এক একজন ক্লাসে ঝড় তুলে ফেলে, আর অন্তু চুপচাপ পিছনের বেঞ্চে বসে থাকে । এই স্কুলে কেন যে আসতে হল ! বাবা থাকলে আজ তাকে এখানে এভাবে আসতে হত না । বাবা মারা যাবার পর মা নতুন চাকরী নিয়ে ঢাকা থেকে এভাবে চট্টগ্রাম না এলে হয়ত আজ তার পুরোনো বন্ধুদের নিয়ে ক্লাসে কত মজা করা হত , ইশ ! যদি বাবা আজ বেঁচে থাকত ! এই নতুন স্কুলে কাউকেই তার ভাল লাগে না , প্রায় দেড় মাস হয়ে গেছে অথচ এখনো ভাল কোন বন্ধু হয় নি । শুধু কয়েকজন এমনি এসে কথা বলে গেছে, তাও তার পায়ের প্রসঙ্গে যেটা নিয়ে তার আগের স্কুলে কেউ কোন দিন তাকে একটা কথাও জিজ্ঞাস করত না । সবাই এমন ভাবে মিশত যেন সে তাদের মতই । আর এখানে সবাই এমন ভাবে তাকায় যে তাদের দৃষ্টিই বলে দেয় যে সে আর সবার মত না ।
শুধু শাম্মীকেই তার একটু ভাল লেগেছিল, ভেবেছিল মেয়েটির চেহারার মধ্যে এমন মায়া মায়া ভাব, নিঃশ্চয়ই মনটাও সেরকম নরম । কিন্তু তার ধারনা ভুল প্রমানিত করে শাম্মীও তার বান্ধবীদের সাথে যোগ দিল । এমনকি অন্তু লক্ষ্য করেছে যে ওকে অপদস্থ হতে দেখলে সে ই সবথেকে বেশী খুশী হয় । যদিও তাতেও ওর ভাল লাগার পরিমান একটুও কমে নি । নাহ এভাবে চলতে দেয়া যাবে না, কিছু একটা ওকে বলতেই হবে …
-এই ছেলে…..
অঙ্কের জহির স্যারের বাজখাই গলার আওয়াজে স্কুল গেটের থেকে অন্তুর দৃষ্টি চলে আসে সরাসরি ক্লাসে ।
-কি বলেছি শুনেছ ? মন কই থাকে তোমার ? বাইরে কি দেখছ ? দাঁড়াও, কানে ধরে দাঁড়াও , হ্যা দরকার হলে ক্রাচে ভর দিয়েই দাঁড়াও, কোন দিন ক্লাসে মনযোগ দেখি না তোমার । পুরো ক্লাস আজকে দাঁড়িয়ে থাকবে ।
ক্লাসে যে একটা চাপা হাসির রোল পরে গেছে সেটা টের পেতে একটুও কষ্ট হয় না অন্তুর । ও শুধু মনে মনে প্রার্থনা করছিল শাম্মীর চোখে যেন চোখ না পরে ।
ঘন্টার আওয়াজ যেন অনেক দূর থেকে এসে অন্তুর কানে লাগল । একে একে সবাই বের হয়ে গেল ক্লাস থেকে । শুধু অন্তু রয়ে গেল, এখনও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে সে । কি যেন ভাবছে ।
“নাহ, আজকে কিছু একটা বলতেই হবে, এভাবে আর না । কিন্তু কিভাবে ? ” ভাবতে ভাবতেই আনমনে স্কুল ব্যাগটা কাধে তুলে নিল । হাতটা কেমন যেন অবশ হয়ে গেছে, কাধের কাছে তীক্ষ্ম একটা ব্যাথা, বোধহয় এতক্ষন একটানা ক্রাচের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকার ফল । ক্লাস থেকে বের হয়ে কম্পাউন্ডে এসে দেখল আবার ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমে পরেছে ছেলেরা, আর মেয়েরা একপাশে বসে চিৎকার করছে । এরা সবাই স্কুলবাস দল । অনেকেই অবশ্য চলে গেছে । অন্তুও স্কুল গেটের কাছে চলে এল, মা’র গাড়ি দেখা যাচ্ছে না, সাধারনত মা কখনও দেরী করেন না, বোধহয় আজকে ট্রাফিক বেশী । সাধারনত কম্পাউন্ডের বাইরে ও যায় না, শুধু মা আসলে গাড়িতে উঠে যায় । আজ হঠাৎ করে রাস্তার ওপারের আইসক্রীমের দোকান দেখে অন্তুর মাথায় একটা বুদ্ধি এল । ও খেয়াল করেছে প্রায় দিনই শাম্মী এখানকার কোন আইসক্রীমটা খায়, এটা ওর খুব পছন্দের ।
“এক কাজ করলে কেমন হয়, আজ ওকে একটা আইসক্রীম কিনে দেই, তাহলে কথা বলার একটা সুত্র খুজে পাওয়া কঠিন হবে না, কিন্তু……ওর পাশের ওই বাঁদর গুলো যদি কিছু বলে ? নাহ দারওয়ান আঙ্কেলকে দিয়ে পাঠিয়ে দেব… ” ভাবতে ভাবতে রাস্তার অন্যপারের উদ্দেশ্যে হাটা দেয় অন্তু ।
গেটের ওই পাশে তুমুল হইচই শুনে সবার চোখই ওইদিকে ঘুরে গেল, শাম্মী দেখল স্যাররাও বের হয়ে এসেছেন টিচার্স রূম থেকে । উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইল ওরা । একটু পর দৌড়াতে দৌড়াতে এসে সজল খবরটা দিল,
-জানিস শাম্মী, আমাদের ক্লাসের ওই ল্যাংড়াটা মাত্র রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করেছে, মনে হয় মরে গেছে ।
-আহহা বেচারা, হাটতেই পারে না ঠিকমত, রাস্তা পার হতে গেল কেন ?
-এই শাম্মী থামবি ? খালি ওকে নিয়ে ফাজলেমি, ইশ !! বেচারা !!!
শাম্মী জানল না ওর জন্য কতটুকু ভালবাসা বুকে নিয়ে অন্তু এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল, কোনদিন জানতেও পারবে না………
এইবার
:bash: :bash: :bash:
খুব তুমি জিতছ,
তাই খুশীতে বাংলাদেশ :awesome: :awesome:
:grr: :grr:
x-( x-(
ধুরু ভাবছিলাম হ্যাট্রিক করুম।আপ্নে করতে দিলেন না।
এই জন্যে আপনার ব্যাঞ্চাই
তাইলে আমারো হ্যাট্রিক হত ।
অসাধারণ ।
থ্যাঙ্কসসসস 😀
কিন্তু মুন্টা খা্রাপ কইরা দিলো।
রেজওয়ান ভাইকে বাদ দিলে আমি ৩য় 🙂 🙂 ঐটাতেই খুশি....
🙁 🙁 🙁 🙁
আনন্দের লেখা লিখবি না?
নাহ... মনে আনন্দ নাই...মন খারাপ কইরা দেওয়া আরো একটা লেখা ফালাইয়া রাখলাম...পরে একদিন দিমু নে...
অনেএএএএএএএএএএএক দিন পর ব্লগে আসছি...সব নতুন নতুন লাগে...
তাও আসছি একদিনের লাইগ্যা :(( খালি এই ব্লগের টানে 😀
এতো ব্যস্ত ক্যান? রিবেল হান্ট?
বা* হান্ট... x-(
😡 😡
কিছু না বুঝলি...সবি ফাউল...খালি আমাগো চিন্তা করতে না দিয়া বিজি রাখা... 😡
আমি রংপুরে নাই...কুরিগ্রাম আছি...নেট বিচ্ছিন্ন অবস্থায় :((
ভাই অসাধারণ হইসে...
🙁 🙁 🙁
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
অতি ধন্যবাদ 😀
আচ্ছা একটা ব্যাপার বুঝলাম না, এই তরুন সমাজের সবাই ছ্যাকা খাওয়া নাকি???? ভাই প্রেমের গল্প লিখছো ভালো কথা কেউ কি কোনো স্ফল প্রেমের গল্প লিখতে পার না ????
আমি ছ্যাকা খাই নাই :))
B-) B-) B-)
এইটাই হয় রে,জানবে না, জানার চেষ্টা করবেনা বা করলেও তা হেলা করে নিষ্ঠুর আনন্দে মেতে উঠবে আপন মনে...
তার চেয়ে এই বেশ ভাল আছি...যাস্ট ফ্রেন্ড নিয়ে যাস্ট জীবন পার...নো উয়োম্যান(ইন লাভ) নো ক্রাই...
অফ টপিক-আমি পিসিসি না কেউ উল্টা সিধা চিন্তা কইরেন না।
আর রেজু,লিখাটা অদ্ভুত সুন্দর হইসে রে...ভাল আছস নাকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত ডিজুস?
:hug: গুরু......... :hug:
কেমন আছেন ? আমি কি অবস্থায় থাকতে পারি এই ঘটনার পর তা আপনার ভালই বোঝার কথা 😉 নাকি ???
আমারে একখান জাস্ট ফেরেন্ড দেয়ার কতা কইয়া এত্তদিন ধইরা ঘুরাইতে আছেন x-(
আপ্নে কি চান না আমরাও ভালা থাকি 😡
:dreamy: :dreamy:
তুমুল হয়েছে এইটা, আপনাত্র আগের সিরিজটা অনেকদিন দেখি না তো 🙁 ।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ভালা নাই রে......মন ভালা নাই 🙁 🙁 🙁
দেখি এট্টু সময় নেই...ঠিক হইলে পরে লিখুম নে 😀
আপনি কি এখন বান্দারবনে??
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
বান্দার্বানে থাক্মু কির্লাই ???? x-( x-( x-(
আমি কুড়িগ্রাম 😀
ওই রকিব, বান্দার্বান হইলো কবে থিকা। আমি তো জানতাম নামটা বান্দরবন :-/ ।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো মিয়াভাই 🙁 🙁
আমারো 😀
দূর মাইরা ফেলছে নায়করে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
এইটাই হয় বুজলেন্নি মেয়াবাই... 🙁
দুনিয়া বড়ই আজিইইইব... ;))
এই সবাই খালি কষ্টের কথা লিখে কেন?
আপ্নে খালি কষ্টই দেক্লেন...... :((
আনন্দের জিনিস্টা দ্যাক্লেন না :(( :((
কোন জায়গাটা আনন্দের ছিলো ????????????????
😉 বুজলেন না মিয়াবাই...... 😉 😉
😐 🙁 😕 =(( :no: :((
কাইন্দেন না ভাই , কাইন্দেন না...... :(( :(( :(( :((
কিরে অনেকদিন পর দেখলাম 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
হ !!! এখন ফিরা আইসি ঘরে :tuski: :awesome:
কেমন আছিস রে দোস্ত। তোরে বহুদিন পর ব্লগে দেখলাম।
বুকে চাকু মাইরা দিলিরে গল্পটা দিয়া।
ভালা আছি । তুই ??
ধুর! খালি বিরহের গল্প! 🙁 🙁
লেখা ভাল হইছে রেজওয়ান। :clap: :clap:
:hatsoff:
এইটা কোন কথা হইলো x-(
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
😀 এইটাই কথা আর এই রকমই হয় :grr: :grr: