একটা সময় যখন যশোর শহরে প্রায় অনেকেই আমাকে অন্তত নামে চিনতো। আমাকে না চিনলেও আমার বাবার নামে চিনে ফেলতো।
– খোকা, কোন বাড়ীর ছেলে তুমি?
বাড়ীর নাম বলতেই বলে উঠতো – ওহ, তুমি শহীদুল্লাহ সাহেবের ছেলে। উনি আমার হেড মাস্টার ছিলেন। স্যার কেমন আছেন।
কিন্তু এটাতো ৫০ বছরের আগের কথা। এখন আর কেউ চিনবে না আমাকে। আর চিনবেও বা কেন? প্রায় বিশ বছর দেশে যাওয়া হয়নি।
কত কিছু কত বদলে গেছে এর মধ্যে।
গুগল ম্যাপ খুলে ১২,০০০ মাইল দূরে বসে দেখতে চেষ্টা করলাম আগের স্মৃতির রাস্তা-ঘাট কিছু খুঁজে পাই কিনা।
ভৈরব নদী খুজে পেলাম। কিন্তু মনে হল আগের পরিচিত রাস্তাগুলি ঠিক আগের স্থানে নেই। যেখানে এক সময় হৈহৈ করে ফুটবল খেলতাম মনে হল সেখানে বড় বড় বাড়ী উঠে গেছে। এই উন্নয়নে তো আমার খুশী হবার কথা – কিন্তু কেন যেন কেমন মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমার যে অনেক স্মৃতির ছিল সেই মাঠ। ঐ মাঠে দাঁড়িয়ে কবরীর হাতে প্রথম ভয়ে ভয়ে একটা গোলাপ দিয়ে দৌঁড়ে ছুটে পালিয়ে গিয়েছিলাম। এর পর ভাগ্য চক্রে আর কখনো দেখা হবার সূযোগ হয়নি তার সাথে। আচ্ছা কবরীরা কি এখনো সেখানে আছে? নাকি অন্য অনেক হিন্দু পরিবারের মত তারাও ভারতে চলে গেছে। ওই বার বছর বয়সের একটা ছেলে যে একদিন তার হাতে গোলাপ ফুল দিয়ে ভীষন লজ্জ্বায় পালিয়ে গিয়েছিল – তাকে কি সে কখনো ভেবেছে।
আজ ৫০ বছর পরে হঠাৎ করে তার কথা মনে হল কেন? নাহ, মরার আগে একবার যেতে চাই আমার প্রিয় জন্মভূমি যশোরকে আর একবার দেখতে।
সংক্ষিপ্ত কিন্তু অনেক গভীর একটা লেখা। সবাইকেই নিজ নিজ জন্মভূমি সম্পর্কে স্মৃতি কাতর করবে! :boss: :boss:
আশা করি অচিরেই যশোর ভ্রমণ করবেন।
ধন্যবাদ তানভীর। আসলেই দেখতে চেয়েছি কম কথায় বেশী বলা যায় কিনা সেটা দেখতে।
স্মৃতি কাতর হয়ে যাবার মত লেখা ভাইয়া। আমিও গুগল ম্যাপ এ বসে বসে সেই ৫০০ মাইল দূরের কলেজটা দেখার চেষ্টা করি। চলে যাওয়া দিন গুলো কখনই ফিরে পাব না। মন ও খারাপ হয়ে যায়।
সাকিব,
৫০০ মাইল দূরে?? আমিও গুগল খুঁজে দেখার চেষ্টা করলাম কোথায় হতে পারে। ভারত, নেপাল না মায়ানমার?
সাকিব এই ৫০০ মাইল নাকি?
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
শিকড় ভিটেমাটির টান অদ্ভুত এক সংযোগ। আমার গ্রাম কপোতাক্ষের তীরে।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী,
নিজের 'আইডেন্টিটি' নিয়ে মাঝে মাঝে নিজেকেই প্রশ্ন করি। জন্ম ব্রিটিশ ইন্ডিয়া-তে, ফলে জন্মসূত্রে ভারতীয় বললেও আইনত মিথ্যা হবে না। আবার ৬ মাস না যেতেই - আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা না করে আমাকে পাকিস্তানী বানিয়ে ফেললো।
জীবনের তারুন্যে গর্ব করতে শিখেছিলাম নিজেকে পাকিস্তানী ভেবে। ২৫শে মার্চের এক কাল রাতেই বদলে গেল সেটা। যে পরিচয়ে গর্ব করতাম, তাকেই শিখলাম চরম ঘৃণা করতে। ৯ মাস পর নতুন পরিচয় লাভ করলাম। 'জয় বাংলা' শ্লোগান আর 'জাগো বাঙ্গালী জাগো' নতুন উদ্দিপনা এনে দিল জীবনে।
'৭৫-এ আবার পরিচয় একটু পরিবর্ধিত হয়ে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' বলতে শিখলাম। '৭৪-এ 'ফ্যানের অভাবে রাস্তায় পরে থাকা মৃতদেহের' ছবি খুব অল্প সময়ে মুছে গেল মন থেকে।
ঢাকা ক্লাব আর গুলশান-বনানীর গভীর রাতে শেষ হওয়া নাচ-গান ও রঙ্গিন পানীয়-এর পার্টি থেকে বিদায় নেবার সময় 'খোদা'-কে বিদায় দিয়ে আবার সেই জায়গা দখল করে নিল 'আল্লাহ'। আমি আজও বুঝি না 'খোদা হাফেজ' বলাতে আল্লার এমন কি ক্ষতি হত।
অনেক কিছুই বুঝি না আমি। আমি বুঝিনা প্রফেসর ইউনুসকে এমন ভাবে বিদায় দিয়ে হাসিনার কি লাভ হল। আসলে বহু দিন আগে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে যে কথাটা বলেছিলাম সেটাই সত্য। ক্যাডেট কলেজের শিক্ষা আমাদেরকে এই সমাজের অনুপযুক্ত করে দিয়েছে।
শপথ নিয়ে এখন আমি আমেরিকার নাগরিক। কিন্তু আমিতো সেই আমিই রয়ে গেছি। জীবনে কিছুই কি তাহলে চিরন্তন নয়??
তবে এটা ঠিক যে যত পরিবর্তনই হোক না কেন - আমার জন্মস্থান সব সময়ই রয়ে যাবে যশোর। তুমিও তেমনি যদি কখনো মাইকেলের মত তোমার জাত, ধর্ম, বিশ্বাস যতই পরিবর্তন করোনা কেন, তোমার কপোতাক্ষের তীরের জন্মস্থান কখনো পরিবর্তন করতে পারবে না।
সাইফ ভাই, আপনি হয়তো ঠিকই বলেছেন। আমি যতটুকু বুঝি আত্ম-পরিচয় সবসময়েই বহুমাত্রিক এবং পরিবর্তনশীল। এটি শুধু জাতীয়তা দিয়ে নির্ধারিত নয়। কিন্তু পরিচয়ের কিছু উপাদান থাকে যেগুলো অপরিবর্তনশীল, যেমন ধরুন জন্মস্থান, জাতিগত জন্ম পরিচয়। আপনার জাতীয়তা পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু আপনি আমি বাঙ্গালি ঘরে জন্মেছি তা কোনদিন পরিবর্তন হয় না।
'আল্লাহ-হাফেজ' এবং 'খোদা-হাফেজ' বিভাজন মূলতঃ ধর্মীয় রাজনীতির। একটি দেওবন্দী এবং অন্যটি আলীগড় ঘরনার। একটি রক্ষনশীল অংশ প্রতিনিধিত্ব করে এবং অন্যটি অপেক্ষাকৃত উদার আধুনিক অংশ প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেটাই প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
ভাল থাকুন। দেশে ঘুরে আসুন। শুভকামনা।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
যশোরে কিন্তু এখন বানিজিক্য ভাবেই ফুলের চাষ হয়। তাই যশোরের গোলাপ মনে হয় এখন অনেক রমনীর খোপায় খোপায়।
উন্নতির এই জায়গায় তৃপ্তির অবকাশ কিন্তু থাকেই, কি বলেন। 🙂
আপনার পোস্ট দেখে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ,
তোমার দেশপ্রেম আমাকে সব সময় খুব গর্বিত করে। সূযোগ করে নেবার ক্ষমতা থাকা সত্বেও তুমি কখনো দেশ ছাড়তে চাও না - এটা এক বড় মনের পরিচয়।
ঠিকই বলেছো - যশোরের ফুলের চাষ অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। এ ছাড়াও বিগত দশকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রশংসনীয় - এবং এগুলির অনেকটায় হয়েছে সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে।
ভাইয়া আমার এলাকায় এখনও সবাই সবাইকে নামে চেনে। লেখাটা পড়ে কিছু ক্ষণের জন্য জেন জয়পুরহাটে ফিরে গিয়েছিলাম।
বিশ বছর কিন্তু ভাইয়া অনেকটা সময়...।।
রেজা,
তুমি সৌভাগ্যবান। পারলে তাদের জন্যে কিছু করার চেষ্টা করো। এর জন্যে অবশ্য নির্বাচনে দাঁড়াবার দরকার নেই।
সাইফ আই,
৫০ বছর তো অনেক সময়, আমার এলাকায় ৪ বছর পরে যেয়েই দেখি কোন ফাঁকা যায়গা নাই, সবাই পাগলের মতন ঘর-বাড়ি বানাচ্ছে।।
লেখাটা ভালো লাগলো, দেশে চলে আসেন একবার সময় করে। পরিবর্তন নিজের চোখেই দেখে যান। আমি শিউর কোথায় যেয়ে দেখবেন কিছু একটা চেঞ্জ হয়নি, আগের মতন'ই আছে।
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
কিবরিয়া,
পৃথিবীতে একটা জিনিসই চিরন্তনী - সেটা হচ্ছে "সব কিছুই পরিবর্তনশীল।"
আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে রেখে সহজে কোথায় যেতে পারিনা - না হলো ইচ্ছামত যেতাম নিশ্চয়।
:boss: :boss:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
😮 😮 ভাইয়া বিশ বছর?
মোর্শেদ_(৯৮-০৪)পাবনা ক্যাডেট কলেজ
তাইতো - দেখতে দেখতে কতগুলি বছর চলে গেল...
ভাইয়া, দুই বছর পর ময়মনসিংহে গিয়ে নিজের ভালোবাসার শহরকে চিনতে পারি নাই। ময়মনসিংহের আকাশ এখন ক্রংক্রিটের দখলে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, ময়মনসিংহের মতো নিরিবিলি শহরে এখন ৩০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট বিক্রি হয়, সেটার জন্য ক্রেতাও থাকে। বাংলাদেশ একদিন জনসংখ্যার ভারে দেবে যাবে- এরকম চলতে থাকলে।
তৌফিক,
ময়মনসিংহ আমার এক বিশেষ পছন্দের শহর। বেশ কয়েকবার গিয়েছে এবং এখনো মনে পড়ে নদীর ধারের সুন্দর পার্কে বসে সময় কাটাবার কথা। জানিনা ভবিষ্যতের বাংলাদেশের চেহারা কেমন হবে।
আমার জন্মস্থান বগুড়ার কথা মনে পড়ে গেল।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
সাইফ ভাই, লেখাটা পড়েছি অনেক আগেই। আলসেমিতে মন্তব্য করা হয়ে উঠেনি।
লেখাটা যতো ছোটই হোক একটা অদ্ভূত রেশ থেকে যায় মাথায় দীর্ঘক্ষণ। জন্মভূমি, শৈশব, ওই বয়সের ভালোলাগা আর ২০ বছরের প্রবাস জীবনে গুগল ম্যাপে প্রিয় স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেরানো........। যশোর আমার কাছে, অ্যালেন গিনসবার্গ আর মৌসুমী ভৌমিকের 'যশোর রোড'।
মাঝখানের ৬ বছর ফৌজদারহাটের সময়টা বাদে আমার জন্ম, বেড়ে উঠা এবং হয়তো মৃত্যুও হবে এই কংক্রিটের বস্তি ঢাকাতেই! আর স্মৃতিগুলোও সব এতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে- মতিঝিল কলোনী, খিলগাঁও, মিরপুর-১২ আর এখন শহরের এক কোনায় পল্লবী। একটু খোলামেলা, আলো-বাতাসের উৎসবে নতুন বাসস্থানটাই আমাকে স্বস্তি দেয়, টানে।
যশোর বেরালেই হবে না কিন্তু এরপর এলে ঢাকাটাও দেখে যাবেন। হা....হা.....
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ঠিক না, ঠিক না x-( x-(
আমার বন্ধুয়া বিহনে
লাবলু,
অনেক ধন্যবাদ তোমার এই মন্তব্যের জন্যে। আমার এই 'অনুগল্পের' একটা উদ্দেশ্য ছিল - সফল হয়নি। পরের লেখাতে সেটা বলবো।
তবে হাজার হলেও ঢাকা হচ্ছে ঢাকা। এর কোন তুলনা হয়না। আমি হয়তো পৃথিবীর গোটা ৫০ শহরে ঘুরেছি - কিন্তু ঢাকা হচ্ছে সম্পূর্ণ নজীর বিহীন শহর (এখন মেগা-শহর)। এত বৈচিত্র একই শহরে পৃথিবীর আর কোথায় হয়তো পাওয়া যাবে না।
আমার জীবনের স্মরনীয়তম ৪০+ বছর কেটেছে এই 'তুলনাহীনা' ঢাকা শহরে। পলাশী, সেখ সাহেব বাজার, ভুতের গলি থেকে শুরু করে ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, উত্তরা - সব যায়গাতেই থেকেছি।
এখন হয়তো বিশ্বাস করা কষ্টকর - কিন্তু সেদিনের ঢাকাতে এমন কখনো হয়নি যে নিউ মার্কেট-বলাকা বা গুলিস্তান/মধুমিতাতে যেয়ে পরিচিত কারও সাথে দেখা হয়নি।
আজকের ঢাকাতে যেয়েও যশোরের মতই অবস্থা হবে - কেউ চিনবে না আমাকে। এমনকি হয়তো তোমরাও না...