তিন বছর আগে যখন ডাক্তার জানালো যে তারা আমার হৃদয় খুলে দেখতে চায়, আমি অবাক হবার ভান করে বললাম – বলো কি? আমার স্ত্রী তো সব সময় বলে যে আমি হৃদয়হীন মানুষ। তোমরা কি তাকে যেয়ে বলবে যে আমার হৃদয়ের খোজ তোমরা পেয়েছো?
প্রথমে বুঝতে পারেনি, পরে বুঝতে পেরে ডাক্তার ও নার্স দু’জনেই হাসি দিল। বছর দু’য়েক ভালই চললো, তারপর তারা আবার আবিস্কার করলো যে, তারা যে তিনটি মেরামতির কাজ করে দিয়েছিল আমার হৃদয়ে, তার মধ্যে দু’টি আর কাজ করছে না। এ কথাটা শুনে আমি মোটেই বিচলিত না হয়ে প্রশ্ন করলাম – আমি কি তাহলে আংশিক টাকা ফেরত পেতে পারি?
ততদিনে ডাক্তার আমাকে ভাল করে চিনে গেছে। হাসি দিয়ে বললো – এভাবে মন খুশী রাখতে পারলে আর নিয়মিত কিছু ব্যয়াম ও খাবার দাবার নিয়ম করে খেলে, আশা করি ওসুধ দিয়েই চলবে। আবার কোন সার্জারি করতে হবে না বাকী যে ক’দিন তুমি বাঁচবে।
বুঝলাম, ডাক্তারও আমার মত কথা বলা শিখে গেছে। একেই বোধ হয় বলে সঙ্গদোষ। আরও কিছু রক্ত, ইত্যাদি পরীক্ষা করতে দিল। পরের শনিবার, আমার বন্ধের দিনে হাসপাতালে গেলাম পরীক্ষার জন্যে রক্ত দিতে। সূচ ঢুকিয়ে যে টেকনিশিয়ান মেয়েটি রক্ত সংগ্রহ করলো সে খুবই অভিজ্ঞ। একটুও ব্যাথা পেলাম না। তাকে বললাম – তুমি খুব ভাল ‘ভ্যাম্পায়ার’। রাগ না করে হাসি দিল সে। হাসির সময় তাকে আরও সুন্দরী মনে হলো।
যখন হাসপাতালের ল্যাব থেকে বেড়িয়ে আসছি তখন দেখলাম তিনটি বেশ ছোট বাচ্চা মেয়ে এক বৃদ্ধা মহিলাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে ঠেলে বাইরে নিয়ে আসছে। মেয়েগুলির বয়স ৮-১০ বছরের বেশী হবে না। হুইল চেয়ার ঠেলতে তাদের বেশ কষ্ট হচ্ছে বোঝা গেল। আমি এগিয়ে যেয়ে বললাম – “আমাকে দাও।” হাত বাড়িয়ে দিলাম হুইল চেয়ারের হাতল ধরার জন্যে। বাচ্চা মেয়ে গুলি ঠিক বুঝতে পারছিল না আমাকে ধরতে দেওয়া ঠিক হবে কিনা। বৃদ্ধা মহিলা বললেন – “দাও। ভদ্রলোককে সাহায্য করতে দাও।”
হুইল চেয়ার ঠেলে হাসপাতালে গেট থেকে বের হয়ে পার্কিং লটের দিকে নিয়ে এলাম মহিলাকে। তার গাড়ী কোথায় জিজ্ঞাস করাতে স্থান দেখিয়ে দিলেন তিনি। সামনে একটা ছোট রাস্তা অতিক্রম করার সময় দেখলাম পাশ থেকে একটা গাড়ী আসছে। সদা সতর্ক মেয়েরা চিৎকার শুরু করে দিল – “থাম, থাম, গাড়ী আসছে।”
মহিলা তাদেরকে বললেন – “উনিও দেখতে পারছেন। চিন্তার কিছু নেই।”
বাচ্চাদের এই সতর্কতা ও দায়িত্ববোধ আমার ভাল লাগলো।
– মেয়েগুলি কি তোমার নাতি-নাতনী? – জিজ্ঞাসা করলাম মহিলাকে।
– একজন আমার, আর অন্যদেরকে দত্ত্বক নিয়েছি।
যাদের বাবা-মা না থাকায় দত্ত্বক হতে হয়েছে তাদের কথা ভেবে খারাপ লাগলো। এরা সবাই এত ছোট, অথচ এরাই এখন এই বৃদ্ধা মহিলাকে দেখা শোনা করছে। যখন তাদের গাড়ীর কাছে পৌঁছালাম, তখন মহিলা বললেন -“খোদা তোমার মঙ্গল করুক”। সবাই মনে হল খুশী হয়েছে আমার কাছ থেকে এই অপ্রত্যাশিত সাহায্য পেয়ে। আমিও তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে চলে এলাম।
আসলেই, মানুষকে খুশী করা কত সোজা। আমি নতুন করে অনুভব করলাম, অন্যকে খুশী করতে যেয়ে, আমার মনও যেন অনেক খুশী হয়ে গেল। আহা, কেন এই সোজা জিনিসটা আগে শিখিনি এবং আরও আগে থেকে করার অভ্যাস করিনি।
খুশী হওয়া আসলেই সহজ।
খুব পরিচিত নিত্যদিনের কথাগুলোই বললেন। হয়তো এভাবে কখনো ভেবে দেখা হয়নি ভাইয়া... খুশি হওয়া আসলেই খুব যে কঠিন, তা কিন্তু নয়। কাউকে খুশি করাটাও বোধহয় তেমন দুঃসাধ্য নয়। :-B
এক কাপ :teacup: পান করুন ভাইয়া।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
রকিব,
প্রথমে হাসি দিয়েই শুরু করো। অফিসে, বাড়ীতে, আড্ডায় - তুমিই সবার আগে অন্যকে দেখে হাসি দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করো। দেখবে সেও তোমার সাথে ভাল ব্যবহার করছে। ভাল লাগবে তোমার। এটা একটা ছোয়াচে ব্যাপার - তবে এ ছোয়াচ ভাল লাগবে।
হাসি ব্যাপারটাই এমন যেন চারপাশে একটা ঝলমল রেশ রেখে যায়। আমার মনে হয়, এটা কুশল জিজ্ঞাসার সবচেয়ে দারুণ বিশ্বজনীন ভাষা। পার্ট টাইম চায়ের দোকানে কাজ করার সুবাদে প্রতিদিন রাশি রাশি হাসি দিতে হতো; যতদূর মনে পড়ে খুব কম সময়ই হাসির বিনিময়ে হাসি (অন্তত চিলতে খানিক) পাইনি, এমনটা হয়েছে। 😀 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
রকিব,
আমেরিকা আসার পর অনেক কাজের মধ্যে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারী করার সময় লক্ষ্য করেছি যে সব সার্ভাররা (ওয়েটার/ওয়েট্রেস) বেশী হেসে হেসে কাস্টমারদের সাথে কথা বলছে তারা টিপস পাচ্ছে বেশী। এদের অনেকেই দিনে ৬ ঘন্টা কাজ করে ১০০ ডলারের মত আয় করতো।
কোথাকার এবং কি ধরনের চায়ের দোকানে কাজ করেছো তুমি? শংকরের 'চৌরঙ্গী' পড়েছো কি? তোমার লেখা গল্প কবে পড়তে পাবো?
শুভেচ্ছা রইল।
চমৎকার পন্থা... 🙂
আসলেই চমৎকার পন্থা।
খুব সাধারণ কিন্তু এসব সুন্দর সুন্দর দর্শন খুব ভালো লাগে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
একটু অভ্যাস করলেই দেখবে সহজে আয়ত্বে এসে গেছে। নির্ঝরের সাথেই শুরু করে দেখো।
আমাকে ফলাফল কিন্তু জানাতে ভুলো না।
খুব ভালো লাগলো ভাইয়া 🙂 :clap:
ধন্যবাদ নাজমুল।
জীবনে একটু সামান্য দেরীতে হলেও বুঝেছি, ভালো থাকার জন্য খুব বেশী কসরত করতে হয় না। তবে রিয়ালাইজেশানটা নিজের ভেতর থেকে আসাটা জরুরী, ভালো থাকার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আসলে কেবলমাত্র ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। আর অন্যকে শান্তি দেয়ার মত প্রশান্তির কাজ আসলেই নাই। এর জন্য কোনো টাকা কড়ি খরচ করতে হয় না। তবে শহীদ ভাই, আমাদের অনেকের মধ্যেই সূক্ষ রোস বোধের ভীষন অভাব... আপনারটা পড়ে খুব ভাল লাগলো।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
আমাদের আর একটা অসুবিধা আছে। জাতিগত ভাবে আমাদের কিছু সমস্যা আছে। আর একদিন সময় হলে বলবো।
তবু তুমি আমার চাইতে অনেক কম বয়সে বুঝে ফেললে। শুভেচ্ছা রইল।
প্রতীক্ষায় থাকলাম।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
সংক্ষেপে ব্যাপারটা হচ্ছে এ রকম - আমরা যেন অন্যের সাথে সব সময় বেশি তুলনা করতে পছন্দ করি। পৃথিবীর অন্য দেশের লোকেরাও করে, তবে আমাদের মত অতটা বেশি করে নয়। আমাদের নিজের সুখ আমরা অন্যের মানদন্ডে মাপতে পছন্দ করি বেশী।
আরও হয়তো কয়েক পুরুষ লাগবে এটা থেকে বেড়িয়ে আসতে।
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস!
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
একদম আমার মনের কথাটা বলেছেন ভাই। আমরা আসলেই অনেক তুলনাপ্রবণ। খুবই বাজে অভ্যাস। :salute:
বরাবরের মতই চমৎকার লেখা সাইফুদ্দাহার ভাই। ভালো করে নিজের যত্ন নিয়েন।
ধন্যবাদ মইনুল। নিয়মিত অনেকগুলি অসুধ ছাড়াও কাজের পর সাধারনত হেটে (সিড়ি দিয়ে নয়) ৭ তলার পার্কিং লটে উঠি। ইচ্ছা করে ওখানেই গাড়ী পার্ক করি। এছাড়া চেষ্টা করি সপ্তাহে ৪/৫ বার করে বাড়ীর কাছের পার্কে হেটে যেতে। আগের মত পাহাড়ে ওঠা তেমন হয়ে ওঠে না। এই টুকুতে শরীরটা অনেক ঝ্ড়ঝড়ে লাগে।
আশা করি তোমরাও এখন থেকে নিয়মিত শরীরের যত্ন নিচ্ছ।
লেখাটা খুব ভাল লাগল।
কি সহজেই আপনি সাধারন কথাগুলোকে অসাধারনভাবে তুলে ধরলেন।
আপনার এই দর্শনটা আমিও অনুসরন করি।
বেশ মজা লাগে অন্যকে হাসতে দেখলে বা অন্যকে কিছুটা খুশি হতে দেখলে।
৫তারা+প্রিয়তে যোগ।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
আমি আসলেই খুব সাধারন মানুষ। সবার সাথে বন্ধুত্ব করতে ভাল লাগে। আর একটা কথা - কিছু পাবার চিন্তা করে বন্ধুত্ব করিনা।
খুশী হলাম শুনে।
চেষ্টা করব এখন থেকে এই অভ্যাস করার জন্য 🙂
ছোট একটা উদাহরণ দিই। কিছুক্ষণ আগে হেটে কাছের এক দোকান থেকে একটা স্যান্ডউইচ কিনতে গিয়েছিলাম। সাইন-বোর্ডে লেখা মূল্য ৩.৪৫ ডলার, কিন্তু দেখলাম কার্ডে চার্জ করেছে ৫ ডলারের উপরে। তখনি চেচামেচি না করে (বাংলাদেশে থাকলে হয়তো করতাম), একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম - 'তোমরা কি দাম বাড়িয়ে দিয়েছো?'
একটু থতমত খেয়ে মেয়েটি বললো -'ক্যাশ রেজিস্টারে হয়তো বোতাম টিপতে ভুল হয়ে গেছে।'
সত্যি বোতাম টিপতে ভুল হয়েছে না অন্য কিছু সে তর্কে না যেয়ে বললাম -'হ্যা, ভুল সবারই হয়।'
দুই টাকা ফেরত পেয়ে তার থেকে একটি টাকা তাকে টিপস হিসাবে দিলাম, যদিও সাধারণত বসে না খেলে টিপস দেবার বাধ্যবাধকতা নেই।
খুশী হলো মেয়েটি।
বেশ ভালো লাগল :boss: :boss: ।
Life is Mad.
ধন্যবাদ সায়েদ।
চমৎকার লেখা ভাই ।
লেখাটা খুবই ভালো লাগলো শহীদ ভাই, এখন থেকে অবশ্যই চেষ্টা করবো।
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
আশহাব,
খুশী হলাম তোমার কথা শুনে। দেখবে আনন্দটা তোমার কাছেই ফিরে আসছে বারে বারে।
লেখাটা ভাল লাগল শহীদ ভাই
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ রাশেদ।
খুব ভাল ,মন ভরে গেল।আমরা যে মন থেকে চাইলে ভাল থাকতে পারি,নিজেরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই।খুব ভাল থাকুন আর ভাল রাখুন আপনার কাছের মানুস কে।
লুবনা,
ধন্যবাদ তোমাকে। তবে চাইলেও যে সব সময় খুশী থাকা যাবে, তা হয়তো না। চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?
খুশি হওয়া/থাকা আসলেই অনেক সহজ, যদি আমরা থাকতে চাই... :-B
সাইফ ভাই, আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি...
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ধন্যবাদ জুনায়েদ। তবে এটাও মানি, যে পরিবেশে বাস করছো তার প্রভাব কিছুটা পড়তে বাধ্য। এই বাংলাদেশের গরমে, যদি বিদ্যুৎ না থাকে, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতে হয় - তবে অনেক সহজে মন খুশীতে রাখা সম্ভব নাও হতে পার।
ভীষণ একটা বিরক্তিকর জীবনযাপন করছি। আজকাল খুব সহজেই ক্ষেপে যাই। ভালো থাকার এতো চেষ্টা করি তবু সামান্য কিছুতেই বিরক্ত হয়ে যাই। আপনার দর্শনটা চমৎকার লাগলো সাইফ ভাই। নিজে ভালো থাকার জন্য আসলেই খুব বেশি কিছু করতে হয় না। নিজেকে নিয়ে একটু চেষ্টা করলেই ভালো থাকা যায়। এখন থেকে সচেতনভাবেই সে চেষ্টা করবো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু,
আমার অভিজ্ঞতা বলে - গরুর গোস্ত খাওয়া বাঙ্গালীরা কম বেশী সবাই খুব সহজেই ক্ষেপে যায়। আমারও এই সমস্যা ছিল। অনেক চেষ্টা করে কিছুটা কমাতে পেরেছি।
এ ছাড়া তোমার এই বয়সে পারলে ব্লাড প্রেসারটা চেক করে দেখ। একই সাথে সুগার লেভেলটা। কাজের স্থানের কারনেও মেজাজ খারাপ হতে পারে।
কারন যেটাই হোক ক্ষতিটা কিন্তু তোমারই হচ্ছে।
ওহ, তোমার ব্যাপারে হয়তো প্রযোজ্য নয়, কিন্তু অনেক স্ত্রীরা কিন্তু স্বামীর মেজাজ খারাপের বড় কারন।
সুখে থাকা অনেক সহজ শহীদ ভাই, জীবনে জটিলতা যদি আমরা কমিয়ে আনতে পারি আর অন্যের কাছে প্রত্যাশা কমিয়ে ফেলতে পারি।
লেখাটা খুব ভালো লাগল। 🙂
খুব ভালো লাগলো লেখাটা.........আপনার লেখায় একটা মায়া মায়া ভাব আছে.........আপনার সবগুলো লেখা তাই খুব সময় নিয়ে পড়ি.........মায়ার আবেশটা যেন অনেকক্ষণ থাকে !!!!! 🙂
হাসি সবসময়ই মধুর । আপনার সুস্থতার জন্য শুভকামনা ।