ছোটবেলায় আব্বার কাছে শুনতাম ‘কলেজের বারান্দায় পা না রাখলে নলেজ হয়না’।১৯৯৩ সালের ২০শে মে সপ্তম শ্রেনীতেই ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের আঙ্গিনায় পা রাখার মাধ্যমে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয়।নলেজ হয়েছে কিনা জানিনা কিন্তু আমার কলেজ যে অনেক নলেজেবল স্যারের উপস্থিতিতে নলেজের আধার ছিল তা বেশ বুঝতে পারি।
কলেজে গিয়েই হাউস মাস্টার হিসেবে পাই ইংরেজীর হাবিবুল্লাহ স্যার কে।অনেক জ্ঞানী,ড়ায়নামিক,মানষিকভাবে অনেক তরুন সেইসাথে কড়া।একদিন উইকএন্ড মুভি শো হচ্ছিল অডিটরিয়ামে।আমি তখনো যাইনি,হাউসে ফাঁকি মারছিলাম।হাউসের সামনে স্যারের কাছে ধরা।স্যার খুব শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন কেন যাইনি।আমি আমতা আমতা করে কিছু বলতে গেলেই আমাকে ধরার জন্য থাবা দিয়েছেন।আমি যখন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলাম স্যারও আমাকে ধরার জন্য রীতিমত দৌড়।ধরতে না পারলেও ঐ বয়সে ভালই ধাওয়া দিয়েছিলেন আমাকে।স্যার কোন এক টার্মে আমার রেজাল্ট শীটে হাউস মাস্টারের কমেন্টে লিখলেন “সম্ভাবনাময় ক্যাডেট” যা আমার মনে খুব দাগ কেটেছিল।কালে কালে বেলা অনেক গড়িয়েছে স্যারও অবসর জীবনে চলে গিয়েছেন।গত রিইউনিয়নে(ডিসেম্বর ২০০৯)অনেকদিন পর স্যারের সাথে দেখা।সালাম দেয়ার পর স্যারকে বললাম, আপনি ত আমাকে সম্ভাবনাময় ক্যাডেট বলেছিলেন এখনো সম্ভাবনাময়ই রয়ে গেলাম।শুনেই স্যার তাঁর স্বভাবজাত অট্টহাসি।বুঝলাম বয়স তাঁকে হার মানাতে পারেনি তখনো।অনেকদিন পর স্যারকে দেখে অনেক ভাল লাগলো।
হঠাত গত শুক্রবারে নুরুল হক স্যারের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানতে পারলাম স্যার অনেক অসুস্থ।চট্টগ্রামে রাস্তায় হাটার সময় পেছন থেকে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান।হাতের উপর দিয়ে ট্রাকের চাকা চলে যায়।খুব সিরিয়াস অবস্থা।উনাকে ঢাকায় গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে,আইসিইউ তে আছেন।আমি টাঙ্গাইল থেকে গতকাল এসেই ভাবলাম স্যারকে দেখে আসি।অনেক কথা মনে পড়ে গেল।হাউস এসেম্বলিতে স্যারের দাঁড়ানো এবং কথা বলার ভঙ্গি,হাউসের সব ইভেন্টের আরো অনেককিছু ফ্ল্যাশব্যাক হচ্ছিল।সন্ধ্যায় নুরুল হক স্যারকে ফোন দিলাম হাসপাতালের সব ইনফরমেশন জানার জন্য আর বললাম আমি স্যারকে দেখতে যাচ্ছি।স্যার যা বললেন তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।সবকিছু কেমন যেন শুন্য মনে হলো।গতকালই সিএমএইচে নেয়া হয়েছিল ওখানেই স্যার আমাদের সবার মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান।মাথায়ও নাকি আঘাত পেয়েছিলেন।ততক্ষনে স্যারকে দেখারও সুযোগ নেই।
কলেজে স্যারের চোখ ফাঁকি দেয়ার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু স্যারই আমাদের সবাইকে সবচেয়ে বড় ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন! শেষ দেখাও দেখতে পারলাম না।রিইউনিয়নে কি বুঝতে পেরেছিলাম সেটিই হবে স্যারের সাথে আমার শেষ দেখা!এখন আমাদের দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।কতটুকু মানুষ হয়েছি না হয়েছি সে বিচারে না গিয়ে বলতে পারি,মানুষ গড়ার কারিগর এই স্যার ম্যাডামরাই আমাদের হাতে কলমে,ঠেলা ধাক্কা দিয়ে,শাসন আর সোহাগে মানুষ করার চেষ্টা করে গেছেন।কাছের মানুষের অতি সহজ চলে যাওয়া মেনে নেয়া অনেক কঠিন।
২৫ টি মন্তব্য : “হাবিবুল্লাহ স্যারের অপ্রত্যাশিত চিরবিদায়”
মন্তব্য করুন
আল্লাহপাক স্যারকে জান্নাতবাসী করুক.....আমাদের দোয়া স্যারের সাথে আছে....আমিন
স্যার আমার প্রথম হাউসমাস্টার ছিলেন। ইংরেজী যা কিছু শিখেছি স্যার-এর কাছেই।
স্যার এর আত্নার শান্তি কামনা করছি...
ইন্নাইল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন।
শান্তিতে ঘুমান স্যার .........
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
My heart goes out to our dearest House master Habibullah Sir and his family. It's difficult to find words that could be of any comfort. Dear Sir, please know that you will be in our hearts and prayers forever wherever you might be right now. May Allah give you the best place in the Jannah. Ameen!
স্যার আমারো প্রথম হাউস মাস্টার।যতদূর জানা যায়,আশির দশকে আরসিসি থেকে স্যার আমাদের এখানে আসেন।রবীন্দ্র হাউসেও দীর্ঘদিন হাউস মাস্টার ছিলেন বুঝা যায়।স্যারের সাথে সব স্মৃতি এখনো বাস্তবের মতই পরিস্কার।খুব বড় একটা ধাক্কা খেলাম।মানুষ চলে গেলেই আমরা তার অভাব ভালমত বুঝতে পারি।
হমমমম ! মানুষের এই চলে যাওয়া টা মানতে পারিনা আমি কখনই !!
মানতে পারিনা, কিন্তু এটাই কঠিন বাস্তবতা 🙁
ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন।
স্যারের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
শিরোনামে স্যারের মৃত্যুর খবরটা দিলে আমার ধারনা পোস্টটা আরও অনেকেই পড়বে এবং শেয়ার করবে। তোমার পোস্টের মূল বক্তব্যের সংগে শিরোনামটা একদমই মানানসই হয়নি।
অযাচিত উপদেশের জন্য কিছু মনে করিও না, মন্তব্যটা মুছে দিও।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
Imran,as i was progressing reading your comment I went back to that golden time 1993-1999.I pray to Allah to take good care of his departed soul!!
And one thing i wanna say that I never knew you have wonderful writing capacity!!!wow! man i am so impressed! Just awesome! keep it up!I must say You are promising!Sir did the correct prediction about you! you are a star!!
আশফিক,
আর লজ্জা দিসনা
লজ্জা পাবার মত কিছুই বলিনাই রে ইমরান ! আমি যা কিছু বলছি তা এক্কেবারে সততি বলছি !! এখন আস্তে আস্তে তোদের মেধা সম্পর্কে জানব !অনেক ভাল্লাগে ভাবতে যে তোরা সবাই একেকটা বাংলাদেশের সম্পদ!
ashfique
আমরা ন্যাশনাল হলে তুই ইন্টারন্যাশনাল।
বুঝছি তোর গালি খাওয়ার ইচ্ছা হইছে, প্রাইভেটে দিয়ে দেব। :shy:
ফয়েজ ভাই, ::salute::
উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।খুব ক্যাজুয়ালি তাড়াতাড়ি লেখা,এখন বুঝতে পাচ্ছি।শিরোনাম বদলে দিলাম।আপনাদের উপদেশ থেকে যদি কিছু শিখতে পারি তাহলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
আল্লাহপাক স্যারকে জান্নাতবাসী করুক…..আমিন
আল্লাহ স্যার এর আত্মা শান্তিতে রাখুক, এই কামনা করছি।
আচ্ছা, কেউ কি বলতে পারবে, স্যার এর কোন ছেলে সেনাবাহিনীতে আছে কিনা?
ঠিক জানিনা মেহেদী।খোজ নিয়ে দেখি
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।
স্যারের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
মানুষ গড়ার এই কারিগররাই আমাদের গড়ে তুলাছেন। যার সুফল আজও আমরা পাচ্ছি, এবং চিরদিন পেয়ে যাব।
আল্লাহপাকের কাছে প্রার্থনা করি, স্যারকে বেহেস্ত নসীব করুন।
অনেক বড় সত্যি।দেরিতে হলেও বুঝতে পারি এখন
গত রিইউনিয়নে গিয়ে আমাদের সময়কার কয়েকজন স্যার ম্যাডামকে পেলাম।অনেক পুরাতন ডাইনিং হল বেয়ারা/বাটলার ভাই।সেই আমাদের সময়কার পিয়ন। আমরা ক্যাডেট লাইফে এক্সট্রা খাওয়ার জন্য ট্রাই করতাম কিন্তু এখানে চিত্র আলাদা।তারাই জোর করে খাওয়ানোর জন্য ব্যস্ত।সেই অকৃত্রিম ভালবাসা।আর স্যারদের মাঝেও তাদের জব নিয়ে তৃপ্তির শেষ নাই।আমাদের লাইফস্টাইল অনেক চেঞ্জ হয়েছে কিন্তু তাঁরা আগের মতই বছরের পর বছর কিভাবে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন সেই ক্যাম্পাসে!নিজের চিন্তা না করে ক্যাডেটদের গড়ে তোলাই যেন তাঁদের জীবনের সেরা প্রাপ্তি।এই ভালবাসা কেমনে ভুলি ! আমি কলেজ থেকে বিদায়ের সময় কাঁদিনি(সেভাবে ফেয়ারওয়েলও হয়নি বিশেষ কারনে।পানি সমস্যার কারনে কলেজ ফাঁকা ছিল)।কিন্তু গত রিইউনিয়নে কলেজ থেকে আসার সময় কেঁদেছি।কেন জানিনা,শুধু জানি আমার হোম ছেড়ে আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে।এখনো লিখতে গিয়ে চোখ ভিজে গেল।
ভাবতে খুব ভাল লাগে কলেজের এডজুট্যান্ট আমাদের দুই ব্যাচ সিনিয়র মেজর আনোয়ার ভাই যার সাথে চার বছর একই হাউসে কাটিয়েছি।আমাদের হাউস মাস্টার এই হাবিবুল্লাহ স্যার।আনোয়ার ভাইকে আমি মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে কলেজের খবর জানতে পারি।অবশ্য তাকে খুব লাকি মনে হয় আর হিংসেও হয় মাঝে মাঝে।আজ খুব ইচ্ছে করছে ফোন দিব।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।
স্যারের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আল্লাহ স্যার কে বেহেশতবাসী করুন।।।
সাহেদ (৬০৫) ১২ তম ব্যাচ পিসিসি
লেখাটা পড়ে খুব খারাপ লাগছে।হাবীব উল্লাহ স্যার আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে চিন্তা করতে পারছিনা।আমি একদম-ই রেগুলার না ব্লগে। আব্দুল্লাহ তোমাকে ধন্যবাদ লেখাটা পোস্ট করার জন্য।ক্লাস সেভেন আর এইটে স্যারের ইংরেজীর ক্লাসগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে।অনেক মজা করে ইংরেজী পড়াতেন।একবার Parents Day-তে আমার কাছে এসে আমাদের সাথে, আমার মায়ের সাথে অনেক গল্প করেছিলেন।ওনেক ভাল লোক ছিলেন।আল্লাহ স্যারকে বেহেস্ত নসীব করুক। (সম্পাদিত)