সেইবার ফজলুল হক হাউস চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বেশ ঘটা করে হাউস পার্টি হবে।
চার দিকে সাজ সাজ রব। আমরা সবাই ঈদ ঈদ ভাব নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছি।
হাউসের পিছনে মাঠের মধ্যে প্যান্ডেল লাগিয়ে বিশাল আয়োজন।
গানের স্কেল সংক্রান্ত কিছু জটিলতা আছে আমার। উঁচু ক্লাসে পড়ার সুবাদে ততদিনে বাথরুম সিঙ্গার হিসেবে মনোবল দৃঢ় হয়ে উঠেছিল দিনে দিনে। কিন্তু গান নিয়ে যে ‘স্টেজ ফোবিয়া’ দানা বেধেছিল আমার মগজে তা জয় করাটা একটু কঠিন ঠেকছিল।
আর পুরানো সেই ট্রাজেডী’র কথা আমি প্রিয় বন্ধু’টিকে আবার মনে করাই বা কেমনে ?
আর ঐদিকে মুজিব ততক্ষনে- ‘সন্ধান’ আর ‘সংগ্রাম’ পর্ব শেষ করে আমায় নিয়ে ‘বিজয়’ ঘোষনা করবার পাঁয়তারা করছে।
ঠিক হলো। আমি গাইবো- প্রমিথিউস এর ‘নির্জন শালবন’। খুব মিষ্টি একটা গান। তালটাও জোস্।
আমাদের প্রায় সবারই পুরা গানটা মুখস্থ তখন। সবচেয়ে বড় আশার কথা হলো এই যে; মুজিব আমাকে বোঝালো -‘এই গানটা সহজ হবে আর এটা তোর গলায় ভাল যাবে।’
ততদিনে কলেজে হারমোনিয়াম তবলা ছাড়াও কী বোর্ড, ড্রামস্ আর ইলেক্ট্রিক গীটার এসে গেছে। সাথে সাউন্ড সিস্টেম। সব মিলিয়ে সব কিছুই পজেটিভ টাইপ আওয়াজ দিচ্ছে। নিজের একটু সাহস কিংবা দুঃসাহস করে শুধু গান’টা গেতে হবে। এই যা।
চললো প্র্যাকটিস। সময় – অসময়ে। মুজিবের অসীম ধৈর্য আর উৎসাহে আমি মোটামুটি বশ করে ফেললাম নির্জন শালবনের সব জোনাকীকে।
আসলো উৎসবের দিন। হরেক রঙের মরিচ বাতির ঝিকিমিকি আলোয় চমৎকার মায়াবী পরিবেশ তৈরী হয়েছে।
শুরু হলো অনুষ্ঠান। ফয়েজ ভাই হাওয়াইন গীটার বাজালেন। মুজিবও একটা গান গেল। যতদূর মনে পড়ছে- আমাদের প্রিয় জহিরুল ভাই # একটা গান গেলেন।
এরপর আমার পালা। মুজিব শিস বাজিয়ে লীড ধরলো। আমি দুরু দুরু বুকে শুরু করলাম।
নির্জন শালবনে
গুঞ্জন মনে মনে
মন যেন চায়
কিছু বলতে তোমায়…।
ঠাহর করলাম স্কেল-তাল সব লাইনেই আছে। দর্শকদের হাতে দেয়া রজনীগন্ধার স্টিক ড্রামস এর তালে তালে উঠানামা করছে। আমি আড় চোখে মুজিব কে দেখলাম। ও মাথা নেড়ে ইশারা করলো। (যার অর্থ- চালায়ে যা দোস্ত…) এই টুকু দেখেই আমি পরম আশ্বস্ততায় পুরা গানটা শেষ করলাম।
বলা বাহুল্য- বেশী আবেগ চলে আসলে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। তাই এর পর দর্শকদের রিঅ্যাকশন আর দেখতে পাইনি। এমনকি গান শেষে আমি আমার রেকর্ড ঘুচাবার আনন্দে এতটাই ঘোরে ছিলাম যে – দর্শকদের হাততালি চোখে দেখলেও আমি কিছুই শুনতে পারছিলাম না।
:party:
সম্বিত ফিরে পেয়ে আমি মুজিব কে জড়িয়ে ধরালাম। ও’র সাবাশি নিলাম। তারপর ওকে বললাম-
‘দোস্ত তুই আমায় আজ সত্যি একটা বিরাট ব্রেক দিলি।‘
উত্তরে মুজিব তার মিষ্টি হাসি দিয়ে হাল্কা ভাবের কথা বলে জয়োৎসবে মেতে উঠলো।
এরপর আমিও ভীরে মিশে গেলাম। বুকের উপর থেকে একটা ভারী বোঝা নেমে গেলে যেমন লাগে; আমিও ঠিক সেই অনুভূতি নিয়ে ফুরফুরে মন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম।
মুজিব, দোস্ত তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
😀
আসলে আমাদের বন্ধুরাই আমাদের সব সময় এভাবেই আগলে রাখে।
আনন্দে মাতিয়ে রাখে।
আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।
কাছে দূরের- সব বন্ধুদের অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
সবাই ভাল থাকিস। সব সময়- সারা বেলা।
:hug:
# আজ এতদিন পর কলেজের স্মৃতিচারন করতে যেয়ে কথা প্রসঙ্গে নাম এলো জহির ভাইয়ের। অসম্ভব ভাল এবং শান্ত একজন মানুষ ছিলেন তিনি। জহির ভাই আমাদের হাউসে ছিলেন। কলেজের প্রথম দিনগুলো কেটেছে তাদের দেখানো রাস্তায়। উনি কলেজ এর পর মেরিনে জয়েন করেছিলেন। শুনেছিলাম ভালও করছিলেন। তারপর একদিন খবর পেলাম। হঠাৎ তার জাহাজে অগ্নিকান্ডের দূর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অচিন দেশে। তার জন্য আমরা অন্তর থেকে দোওয়া করি।
ওনাদের ব্যচের আমার এস্কর্ট জহিরুল ভাই একটা গানটা খুব দরদ দিয়ে গাইতেন-
“স্মরণের জানালায় দাঁড়িয়ে থেকে শুধু আমায় ডেকো…”
ঠিক সেই ভাবেই আপনাকে আজো মনে পড়ে জহির ভাই।
আল্লাহ আপনাকে বেহেশ্ত নসীব করুক।
পরিচিত যাদেরকেই হারিয়েছি আল্লাহ সবাইকে বেহেশ্ত নসীব করুক।
আমিন।
ভাবছিলাম- আজ মজার লেখাটা দিয়েই পোস্টটা শেষ করবো।
কিন্তু শেষে এসে কষ্টের কথাটা লিখতে হলো।
আসলে আমাদের জীবন মুদ্রার এ’পিঠ আর ও’পিঠে সমান্তরালে বাস করে-
আনন্দ 🙂 আর বেদনা 🙁 ।
সময়ের ঘূর্ণিতে অবিরত চলে টস্।
কখনো ‘হেড’ তো কখনো ‘টেইল’।
সময় ব্যাটা’টা আসলেই মহা ফাজিল!
শুধুই টিক টিক… টিক টিক…
😕
(শেষ)
মজা নিয়েই পড়ছিলাম...
জহিরুল ভাইয়ের কথা জেনেছিলাম মেকার গ্রুপ মেইল থেকে।
উনি যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন...
আর তিনটা পর্বই খুব জোস হইসে। 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
অনেক ধন্যবাদ জিহাদ।
তোমার ভাল লেগেছে জেনে সুখী হলাম ভাইয়া।
🙂
ভাল থেকো সারাক্ষন.. সারা বেলা...
সৈয়দ সাফী
সব গুলা পর্বই অসাধারণ।
পড়ে বেশ ভাল লাগছে।
আরো লেখা চাই।
😀
তোমার ভাল লাগলো জেনে খুশী হলাম।
হুম্ম দেখি -চাওয়া পূরনের চেষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ ।
শুভেচ্ছা।
সৈয়দ সাফী
ওবায়দুল্লাহ ভাই, অন্যান্য(!) মনা মনটার বিড়ম্বনার অপেক্ষায় রইলাম......
🙂
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
😀
শুভেচ্ছা নাও।
সৈয়দ সাফী
জটিল লিখা!ওবায়েদুল্লাহ ভাই,অবশেষে সত্যি ব্রেক পেলেন তাহলে!!খুব মজা পেলাম পড়ে!
হুম্ম মাসরুফ,
অবশেষে ব্রেক পেলাম মানে...
একেবারে ভেঙেচুরে একাকার রে ভাই... 😀
শুভেচ্ছা নাও।
সৈয়দ সাফী
আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।
জহিরুল ভাই যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন…
কামরুল,
অনেক ধন্যবাদ তোমায়। ছবিতেই বুঝে নিলাম তুমি অনেক আগ্রহ নিইয়ে পরছো।
জহিরুল ভাই সহ সকল প্রয়াত ক্যাডেটদের জন্য দোওয়া করি।
আমার দুই বন্ধুর জন্য দেখি- কিছু লেখার চেষ্ঠা করবো।
স্মৃতিতে ধূলা পড়ার আগেই ধরে রাখতে চাও আমার ভাবনাটুকু...!
সবাই ভাল থাকুক - সব খানে...
সৈয়দ সাফী
"সময়ের ঘূর্ণিতে অবিরত চলে টস্।
কখনো হেড তো কখনো টেইল।
সময় ব্যাটাটা আসলেই মহা ফাজিল!
শুধুই টিক টিক… টিক টিক…"
-ঠিক ঠিক।
হুম্ম...খুব ঠিক রে ভাইয়া।
🙂
শুভেচ্ছা নিও।
সৈয়দ সাফী