‘কাকুম ন্যাশনাল পার্ক’এ একটি বিকেল থেকে সন্ধ্যা -১
কেপ কোস্ট ক্যাসেল নিয়ে লেখার সময় ভাবছিলাম; ঘানার অপর পর্যটক কেন্দ্র -কাকুম এ অবস্থিত ‘ন্যাশনাল পার্ক’ সম্পর্কে দুচারটে কথা না লিখলে ঘানা ভ্রমন এর স্মৃতি রোমন্থনটা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। তাই এটাকে প্রচলিত ভ্রমন কাহিনীর রূপ দেয়া আমার পক্ষে একটু কঠিনই ঠেকছে। তাই সে চেষ্ঠা না করে আমি বরং লিখে যাই-আমার মত করে।
বিজ্ঞ পাঠকের প্রতি তাই অনুরোধ রাখছি এই বলে যে – আমার লেখাটা যেমন ইচ্ছে তেমন হোক; কিন্তু ‘কাকুম ন্যাশনাল পার্ক’ জায়গাটি সত্যি মনোরম। সে গ্যারান্টি দিয়েই শুরু করছি। ভূমিকাটা একটু বাহুল্য হলো হয়তো- কিন্তু তাগিদটা অনুভূত হচ্ছিল। কেননা, নড়বড়ে হলেও নিজস্ব ভাবনাটুকুর আত্মপ্রকাশ করবার জন্য একটা ভিত্তি থাকা প্রয়োজন।
আমার বন্ধু কেপকোস্ট ক্যাসেল থেকে বের হয়েই জানান দিল – তার পাকস্থলীতে ফোটায় ফোটায় অম্ল নির্গমন শুরু হয়ে গেছে। ঠিক এখনি কিছু পেটে না পড়লে পরিপাক তন্ত্রে আসন্ন বিপ্লব ঠেকানো মুশকিল হয়ে যাবে। অগত্যা রাস্তার ধারের রেস্তোরায় বসে পড়লাম। ঘুরাঘুরির জন্যই হয়তো ফ্রাইড রাইস আর কেপ কোস্ট চিকেন স্পেশাল খেতে খেতে আমার বন্ধু জানালো যে – সে অনেক দিন ধরে এমন অমৃত ও আর খায়নি। ওর বলার ভঙ্গীতে আমি হেসে ফেললাম । দোকানের মালিককে ইশারায় বুঝালাম- খুব ভাল হয়েছে রান্না। এর উত্তরে বয়ষ্কা ভদ্র মহিলা একটুকরো অকৃত্রিম হাসি উপহার দিলেন।
খাওয়া সেরে হাত ঘড়ি জানান দিল সাড়ে তিনটা বাজে। আমি তড়িঘড়ি করে একটা ট্যাক্সি ঠিক করে নিলাম। আমাদের গন্তব্য ‘কাকুম ন্যাশনাল পার্ক’।
আমি সামনে বসেছি আর আমার বন্ধুটি পেছনে। বোধকরি অমৃত খাওয়ার আবেশে- গাড়ী চলতে শুরু করার মিনিট দশেক পর সে নাক ডাকা শুরু করে দিল। তখনও আমরা শহর থেকে বেরিয়ে উপশহরে। হাল্কা ভীড় ঠেলে আমাদের যেতে হবে আরো ডাউনএ। বেশ খানিকটা পথ। স্থানীয় এফ এম রেডিও চলছে। কিছু ক্ষন বিজ্ঞাপনের পর গান শুরু হলো। ড্রাইভার কে দেখলাম- স্টিয়ারিং এ হাত রেখে ক’টি আঙ্গুল’কে গানের ছন্দের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে বেশ তাল দিচ্ছে। আমি জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছি। যতদূর চোখ যায় – সবুজ আর সবুজ।
কান্ট্রি মিউজিক এর আবেশে আমিও সারি সারি গাছ আর শ্যামল প্রান্তর দেখে দেখে পথ পাড়ি দিলাম। আমার বন্ধুটার জন্য আফসোস হলো। কেননা, এই পথে ফেরার সময় দিনের আলো আর থাকবে না। সে আর প্রকৃতির সবুজাভ এই ফ্রেম আর দেখতে পেল না। আমি চলমান গাড়ি থেকেই দুপাশের দৃশ্য কিছু ভিডিও করলাম।
আমরা যখন কাকুম পার্কে এসে পৌঁছুলাম, তখন বিকাল পাঁচটার উপরে বেজে গেল। মেইন গেট এর কাছে আসতেই জানা গেল পার্ক বন্ধ হয়ে গেছে। মন খারাপ করে আমরা ট্যাক্সি থেকে নেমে কাউন্টারে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে আমার বন্ধুটি তখন বেশ চনমনে আমেজে আছে। কাউন্টারের কাছে এসে ও সেখানকার ইন চার্জ এর সাথে আলাপ জুড়ে দিল। আমি চারপাশাটা দেখলাম। আমাদের থেকে একটু দূরে তিনজন বয়ষ্কা মহিলা পর্যটক বিমর্ষ মনে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়ানোর নির্লিপ্ততা দেখে বোঝা যাচ্ছে -তারাও দেরীতে আসায় পার্কে প্রবেশের জন্য এখন পর্যন্ত কোন আশ্বাস পায়নি।
এদের কে পেরিয়ে আমি কাউন্টারে আমার বন্ধুর পাশে যেয়ে দাঁড়ালাম। চেহারায় যতখানি সম্ভব কোমলতা এনে একটা বিগলিত হাসি ঝুলিয়ে আবেদন করলাম – প্রস্থানরত মহিলা ম্যানেজারের কাছে। বললাম, ‘ম্যাডাম আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি। আগামীকালই চলে যাব। এই পার্কের কথা শুনে আসলাম। দেরী হয়ে গেছে সত্যি, কিন্তু গেট থেকে ঘুরে যাওয়ার দুঃখটা হয়তো সারাটা জীবন তাড়া করে ফিরবে !’
মহিলা একটু ভাবলেন। তারপর হেসে দিলেন। একটু গলার স্বর উঁচুতে তুলে একজন ট্যুর গাইডকে ডাকলেন। বলে দিলেন আমরা দুজন আর ঐ বিদেশী তিন বয়ষ্কা মহিলাদের নিয়ে একটা দল বানিয়ে পার্কটা ঘুরিয়ে আনার জন্য। আমি পূর্বের থেকেও অধিক তরল একটা হাসি দিয়ে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে টিকেট কাটার জন্য এগিয়ে গেলাম।
পাঁচ জনের এই দল নিয়ে আমাদের গাইড হাঁটা ধরলো। প্রথমে ক্যানোপী ওয়াক আর পরে হাইকিং। সময় কম বলেই গাইড একটু জোরে হাঁটছিল। আমরা দুজন তার সাথে বেশ স্বাচ্ছন্দেই তাল মিলাচ্ছিলাম। কিন্তু বাকি তিন জন স্বাভাবিক ভাবেই একটু পিছিয়ে পড়ছিল। এতে করে গাইডকে বারবার থেমে ওদের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। আমার বন্ধুটি একটু বিরক্ত হয়েই তাকিয়েছিল পিছিয়ে পড়া তিনজনের দিকে। আমি বললাম -‘ উপায় নাইরে ! যদি আমরা এই পার্ক ঘুরে দেখতে চাই; এই পুরা দলকে নিয়েই যেতে হবে। তাই প্রয়োজন টীম ওয়ার্ক।‘ অগত্যা আমরা নিজেরাই যেচে যেয়ে তাদের ট্র্যাভেলিং ব্যাগ নিয়ে নিলাম।
এই অনাকাঙ্খিত সাহায্যটুকু পেয়ে তারা খানিকটা উৎসাহিত হয়ে চলার গতি বাড়িয়ে দিল। আমরা ক্যানোপী ওয়াক এর কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আলাপের পর্বটা সেরে নিলাম। তারা তিন বান্ধবী। সবাই আমেরিকান। এখন ঘানায় একটা এন জি ও’র সাথে দুজন আছেন । আরেকজন এসেছেন বেড়াতে। এই বয়সে এরকম জায়গায় বেড়ানোর পরিকল্পনাই বলে দেয় এদের মনোবল পোক্ত আর জীবনটাকে উপভোগ করার স্পৃহা অদম্য । আমরা বাংলাদেশী শুনে তারা বললেন যে -এই দেশ সম্পর্কে খবরে দেখেছেন আর পড়েছেন। আজই প্রথম এই দেশের মানুষের সাথে দেখা হলো।
:hatsoff:
(২ আসছে)
:clap:
এটি মির্জাপুর এর ১০০তম পোস্ট।
😀
সৈয়দ সাফী
:clap: :clap: :clap:
কংগ্রেটস বস্
সেঞ্চুরীর অভিনন্দন রইল :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
:thumbup: :thumbup:
ভাইয়া ব্যাট থুক্কু হাত তুলেন...
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
রহমান আর রকিব কে ধন্যাদ ভাইয়া।
🙂
শুভেচ্ছা নিও।
সৈয়দ সাফী
কনগ্র্যাটস চমৎকার একটা ল্যান্ডমার্কে পা দেয়ার জন্য।
বর্ণনা বেশ ভালো লাগছে ভাইয়া। :clap: :clap:
ধন্যবাদ তানভীর।
তোমাদের নিয়মিত উপস্থিতি খুব ভাল লাগে।
শুভেচ্ছা নিও।
🙂
সৈয়দ সাফী
সেঞ্চুরীর অভিনন্দন। 😀
ভ্রমনের গল্প ভালো হচ্ছে 😀
মির্জাপুর এর সেঞ্চুরী -আপ আপ :clap: 😀
গল্প ভালো লাগায় ধন্যবাদ।
🙂
সৈয়দ সাফী
'শততম' পোস্টের ব্যাপারটিকে বেশি গুরুত্ব দেবার কারণে আপনার ব্যান চাই... 😀
ভ্রমণ কাহিনী ভাল লাগছে... B-)
মেরিকান আপুদের ছবি নাই?? 😉
শততম পোস্টের জন্য মির্জাপুরকে অভিনন্দন... :clap:
মির্জাপুর আপ আপ... :thumbup:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
জুনায়েদ তোর দুয়েকদিনের মধ্যেই ব্যান চাই কমেন্টের সেঞ্চুরী হবে... :-B
তোরে অগ্রীম অভিনন্দন 😛
ওবায়দুল্লাহ ভাইকে অভিনন্দন লেখাটির জন্য :hatsoff: :hatsoff:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
অগ্রীম অভিনন্দন দেয়ার জন্য টিট ভাইএর ব্যান চাই... B-)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
জুনায়েদ,
পরেরটা তে যাও।
মেরিকা'ন আপু না বড় আম্মাদের সালাম দিও।
😀
সৈয়দ সাফী
এইরকম কিছু একটাই সন্দেহ করছিলাম 😀 😀 :)) :)) ।
Life is Mad.
:(( :(( :((
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
টিটো,
তোমায় ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভাল থেকো অনেক।
🙂
সৈয়দ সাফী
জুনায়েদ,
ঠিক কথা ' আমার ব্যান চাই'।
তয় আগের কবিতা টা দেয়ার পর মির্জাপুর ৯৯ দেইখ্যা হাত নিশপিশ করতেছিল।
তাই এই ধাক্কায় আরেকটা লেখা নামায় দিলাম।
লাগাতার ব্লগ দেয়ার কোন নিয়ম লঙ্ঘিত হইলো কি না কে জানে 😛
যাই হোক - লেখা ভাল লাগলো জেনে অপরাধ কমলো একটু।
শুভেচ্ছা নিও।
🙂
সৈয়দ সাফী
সিরিজটা শেষ করে মন্তব্য করবো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
:salute:
আলবৎ বস।
বিনীত ধন্যবাদ।
🙂
সৈয়দ সাফী
আপনার লেখাও মনোরম 😀 😀 অতীব সুস্বাদু...........পড়া শুরু করে কখন যে শেষ করে ফেলেছি বুঝিই নাই।
যাই নেক্সটটা পড়ি।
Life is Mad.
সুপ্রিয় সায়েদ,
প্রীত হইলাম ভাইয়া।
ধন্যবাদ নিও।
🙂
সৈয়দ সাফী
সেঞ্চুরী জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আর সেই সাথে ব্লগ ইঞ্জিনিয়ারিং করে সেঞ্চুরীর "তেব্ব পেতিবাদ কচ্চি"
ছবি এত কম ক্যানো তোমার লেখায়? 🙁
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
বস্,
এ গর্ব সিসিবি'র।
ধন্যবাদ।
আর ইঞ্জিনিয়ারিং বস - সব জায়গাতেই হইতেছে - তাই ঐ দিকে নজর দিয়েন না। সবাই অভ্যস্ত হয়ে পড়তেছি। 😛
ছবি গুলো সাথে নাই বস। তাই ক্ষমাপ্রার্থনা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।
ক'ন তো ক'য়টা :frontroll: দিয়া লই।
:salute:
সৈয়দ সাফী